Ajker Patrika

অনেক না–পাওয়া জড়িয়ে আছে দিলদারের ক্যারিয়ারজুড়ে

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
অনেক না–পাওয়া জড়িয়ে আছে দিলদারের ক্যারিয়ারজুড়ে

দিলদারের জন্ম-মৃত্যুর সঙ্গে ১৩ সংখ্যাটি খুব কাকতালীয়ভাবে লেপ্টে আছে। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৪৫ সালে জন্মেছিলেন তিনি। চলে গিয়েছিলেন যেদিন, সেদিনও ছিল ১৩ জুলাই, ২০০৩। দিলদারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঢাকাই সিনেমার একটি অধ্যায়। বাংলা ছবিতে কমেডি চরিত্র যে এতটা ব্যাপক অবস্থান নিতে পারে, দিলদারের আগে সেটা ছিল প্রায় অবিশ্বাস্য।

চার দশকেরও কম সময়ে দিলদার দেখা দিয়েছেন ৫০০-র বেশি ছবিতে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে রাজত্ব করতে হয়। কীভাবে কমেডিয়ানের গণ্ডি ডিঙিয়ে হয়ে উঠতে হয় একচ্ছত্র নায়ক। ‘আব্দুল্লাহ’ ছবিতে যদিও তিনি নায়ক হয়েছেন, কিন্তু অন্য ছবিগুলোতে দিলদার কি কেবলই কমেডিয়ান? বড় প্রশ্ন। কারণ, দিলদার ছাড়া একসময়ের বাংলা চলচ্চিত্র কল্পনাই করা যেত না। দিলদার আছেন মানেই ছবি হিট–এটা ছিল একসময়ের ঢাকাই ছবির সমীকরণ।

প্রযোজক-পরিচালকদের তো বটেই, বহুগুণ ভরসা ছিল তাঁর নিজের ওপর। তাই তো ‘আব্দুল্লাহ’ ছবির শুটিংয়ের আগেই প্রযোজকের সঙ্গে বাজি রেখেছিলেন, ছবি হিট হলে তবেই পারিশ্রমিক নেবেন। তারপরের ইতিহাস তো সবারই জানা। হইহই করে চলেছে ছবিটি। সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারে জমেছিল দীর্ঘ লাইন। দর্শকেরা সবটুকু ভালোবাসা নিংড়ে দিয়েছিলেন ‘নায়ক দিলদার’-এর জন্য। কিন্তু শেষপর্যন্ত পারিশ্রমিক তিনি পাননি।

এমন অনেক না–পাওয়া জড়িয়ে আছে দিলদারের ক্যারিয়ারজুড়ে। তাঁর বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা একবার খুব আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘বাবা কখনো কারও কাছে এক-দুবারের বেশি টাকা চাইতেন না। অনেক সময় পরিচিত, কাছের প্রযোজকদের কাছ থেকেও অগ্রিম টাকা নিতেন না। এভাবে বাবার পাওনা জমা হয়েছিল ৮০ লাখ টাকা।’ মৃত্যুর পর তাঁর বকেয়া চেক জমেছিল প্রায় ৩৫ লাখ টাকার। এক টাকাও পায়নি তাঁর পরিবার।

যোগ্য সম্মান কি পেয়েছেন তিনি? এত বছর ধরে বাংলা চলচ্চিত্রকে এত কিছু দিয়ে গেলেন যে মানুষটা, বিনিময়ে কী পেলেন বাংলা ছবির আঁতুড়ঘর এফডিসি থেকে? বছরে একবার মনেও করা হয় না এই মানুষটাকে। অথচ এই এফডিসিই ছিল দিলদারের একসময়ের বাড়ি-ঘর-সংসার।

তাঁর মৃত্যুর পর বাংলা ছবিতে ওইভাবে কমেডি চরিত্র আর আসেনি। বিভিন্ন সময় অনেকে চেষ্টা করেছেন দিলদারের বিকল্প তৈরির। কিন্তু সব চেষ্টা হয়েছে ব্যর্থ। তাই মৃত্যুর ১৮ বছর পরেও দিলদার এখনো সমান প্রাসঙ্গিক। সমান জনপ্রিয়।

একনজরে দিলদার

জন্ম: ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি, চাঁদপুর

মৃত্যু: ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই, ঢাকা

প্রথম ছবি: অমল বোস পরিচালিত ‘কেন এমন হয়’

মোট ছবি: ৫০০-র বেশি

শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি

পরিবার: স্ত্রী রোকেয়া বেগম। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার। ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরিন

জাতীয় পুরস্কার: ‘তুমি শুধু আমার’, ২০০৩ সালে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত