বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
ঢাকা: আলাপ শুরুর আগে, একটু হেসে, বলে নিলেন, ‘যদি কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যাই জাগিয়ে দেবেন।’ ১৫ নভেম্বরের ভরসন্ধ্যায় কেন তাঁকে এমন ঘুমে পেয়ে বসেছিলো, সেটার ব্যাখ্যাও দিলেন, ‘আজকে ভোর সাড়ে চারটায় প্রেমেন (প্রেমেন্দ্র মজুমদার, চলচ্চিত্র সমালোচক) আমাকে ফোন করেছে।
সকাল আটটায় ফ্লাইট। অথচ সেই ভোর চারটায় জাগিয়ে বসিয়ে রেখেছে!’
ক্লান্তির আরও একটা কারণ রয়েছে।
এর আগের রাতেই নিজের নতুন ছবি ‘টোপ’-এর রাফকাট শেষ করেছেন বুদ্ধদেব। সেটার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছিলেন, ‘গত এক মাস কলকাতা থেকে বেশ কিছুটা দূরে আমার ছবিটির শুটিং করছিলাম। কখনো কখনো এক শ কিলোমিটার গিয়ে মাত্র দু ঘণ্টা শুটিং করে, আবার সেই পথ ধরে ফিরে আসতে হয়েছে। খুবই ক্লান্তিকর।’
প্রেমেন যখন আমাকে বললো, ‘যেতে হবে’। আমি আর জিজ্ঞেস করিনি কোথায় যেতে হবে। ঢাকা যেতে হবে শুনে আমি লাফিয়ে উঠলাম নিশ্চয়ই। কেননা এখানকার মাটির সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ। আসতে ভালো লাগে।
এখন যে ছবি করছি, ‘টোপ’, সেটা নিয়ে ভাবছি গত পনেরো বছর ধরে। যতবার শুরু করবো ভেবেছি, পিছিয়েছি তার চেয়ে বেশিবার! আমার মনে হয়েছে, সময় হয়নি। সময় হয়নি এই কারণে, বহুদিন পর অন্য কারও গল্প নিয়ে ছবি করছি।
অন্যের গল্প নিয়ে কাজ করার নানান ঝামেলা আছে। মুশকিল আছে। বিপদও আছে। কারণ, গল্পকে আমি সম্পূর্ণ বদলে দেই। এই বদলে দেওয়াটা অনেক সময় লেখক পছন্দ করেন না। লেখক না থাকলে লেখকের স্ত্রী পছন্দ করেন না। লেখকের শ্যালিকা পছন্দ করেন না। মহা মুশকিল।
সেজন্য নিজের গল্প নিয়েই করি। তাতে আরেকটা সুবিধা, আমার যে ভাবনা, তা নতুন করে করতে পারি। পনেরো বছর ধরে ভেবে, কোন কূল-কিনারা করতে পারছিলাম না। এবার তিন-চার মাস আগে মনে হলো যে, কাজটা করার সময় এসেছে।
প্রাথমিক খসড়ার পর মুশকিল হলো, কাকে নিয়ে কাজটা করব? অভিনেতা কে হবে? কলকাতার কাউকেই আমার মনে ধরল না। অনেকেই করতে চেয়ে ফোন করলেন, কিন্তু না করে দিলাম। আমি চাইছিলাম সম্পূর্ণ নতুন। আমি সিনেমা করি পুরোপুরি নিজের শর্তে। বলি, আপনারা আমার সঙ্গে ছবি করতে চাইলে, খুব ভালো। পয়সা কম দিন ঠিক আছে। কিন্তু আমার শর্তগুলো মেনে নিতে হবে। যদি মেনে নেন, তাহলে আছি।
কারণ, আমার খুব বেশি পয়সা লাগে না। লাগে একটা জিনিস, সেটা হলো শর্তপূরণ। মুশকিল হলো, অনেক খুঁজে নতুন একজনকে পেলাম। কিন্তু তাকে নিয়ে ছবি করতে কেউ রাজি নয়। কারণ, প্রত্যেকেরই ধারণা, নতুন মুখ হলে ছবি চলবে না।
কিন্তু কলকাতায় অদ্ভুত কতগুলো ঘটনা ঘটছে। কারও নামেই ছবি চলছে না। যখন প্রসেনজিৎ থাকে, তখনও কেউ ছবি দেখতে আসে না। আর কি যেন নাম...
দেবের ছবি চলে না। ছবিগুলো সত্যিই চলে না। ছবি চলে ছবির গুণে। অন্য কারও থাকা না থাকা, ছবি চলায় প্রভাব ফেলে না। তো প্রযোজক বললো যে, ‘আপনি যা চাইছেন সেভাবেই করবো। কিন্তু আমার খুব কম টাকা আছে।’
আমি বললাম, ঠিক আছে। তাই সই। সেই কম টাকা দিয়ে ছবি করতে যা হয় আর কি, নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়! তারপর আবার পান্তা তৈরি করতে সময় লাগে। এসব করে করে ছবি শেষ করতে গলদঘর্ম ছুটে গেল।
আমি চাইছিলাম এমন একটা মুখ, যাকে দেখে কিচ্ছু বলা যাবে না। কি যে করবেন, কি যে করবেন না, তা কিন্তু আমরা ধরতে পারবো না। তাকে পাওয়া গেলো। তিনি নাটক করেন। আমাকে বললেন, আমার নাটকটা দেখতে আসবেন। বললাম, ঠিক আছে যাবো। নাটক দেখতে গিয়ে, সে নাটক অসম্ভব খারাপ! দেখাই যায় না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো, আমিই মঞ্চে উঠে যাই!
যারা আমার সঙ্গে কাজ করেন, তারা বললেন, ‘দাদা এটা হতে পারে না। একে নিয়ে আপনি কিছুতেই এই সিনেমা করতে পারবেন না।’ এমন নিরুৎসাহ দিতে শুরু করলেন! আমিও ঘাবড়ে গেলাম।
তারপর যাই হোক, আরও অনেক খোঁজাখুঁজির পর, আমার নায়ককে পেলাম। ভদ্রলোককে দেখতে একেবারেই মিরাকল। ওয়ান্ডারফুল অ্যাক্টর। বহুকাল বিদেশে থেকেছেন। নাটক পড়িয়েছেন। কিন্তু একেবারে আনপ্রেডিক্টেবল যে ব্যাপারটা, সেটা আমি তাকে দিয়ে করাতে পারলাম।
আরেকটা চরিত্র আমার দরকার ছিল, যে দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটে। আমার টিম শহর তোলপাড় করে চারটি মেয়েকে নিয়ে এলো আমার কাছে। বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে। বয়স কারও নয়-দশ। একটা মেয়েকে আমার ভীষণ ভালো লাগলো।
এরা প্রত্যেকে কিন্তু একটাই কাজ করে- দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটে। খেলাগুলো দেখায়। এটাই ওদের কাজ। আর কিছু জানে না। এই মেয়েটি, যাকে আমি পছন্দ করলাম, কথা বলেই না প্রায়। অক্ষর চেনে না। পড়াশোনা কিছুই জানে না। দড়ির ওপর দাঁড়িয়ে নানান কসরত করে।
কিন্তু অভিনয়টা করতে হবে তো। সংলাপ বলতে হবে তো। ভয়ংকর ভয় হচ্ছিল। ওয়ার্কশপ করালাম। মেয়েটি যখন অভিনয় করতে শুরু করল, ভাবা যায় না। মানে প্রত্যেক দিন উন্নতি করছে। এই বাচ্চা মেয়েটি, এগারো বছর বয়স, ও আমার ছবির নায়িকা।
আমি দেখেছি, আমার ছবি নিয়ে যখনই কেউ কিছু বলতে চান, যখন আলাপ করিয়ে দেন, পুরস্কারের কথা বলেন। আমি জানি না কি পুরস্কার পেয়েছি, জানতেও চাই না। সেদিন কাগজে দেখলাম, ভারতবর্ষে আমি নাকি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পেয়েছি সত্যজিৎ রায়ের পর।
এটা কোনো বিষয়ই না আমার কাছে। কেননা আমি জানি, এসব পুরস্কার আমাকে তৈরি করতে পারে না। অনেক পরিচালককে দেখেছি, এই পুরস্কার নিয়ে গর্ব করতে। তারা মনে করেন, পুরস্কার তাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকবে! তাদের গায়ে আঁচ লাগতে দেবে না। তা কখনও হয় না। পুরস্কার কেউ মনে রাখেন না। না সাহিত্যে মনে রাখেন, না সিনেমায়, না সংগীতে।
বাণিজ্য ছাড়া হয় না। দীর্ঘ সময় আমি অর্থনীতি পড়িয়েছি। পড়েছি তারও আগে দীর্ঘ সময়। যেটা বুঝেছি যে, বাণিজ্য ছাড়া কবিতা লেখা যায়। যখন কবিতা লিখি তখন বাণিজ্যের কথা ভাবি না। যখন সিনেমা করি, তখন এটা ভাবতে হয়। কেননা দিনের শেষে এটা একটা পণ্য।
আমাকে এটা বিক্রি করতে হবে। তো, কোথায় আমি বিক্রি করব? জায়গা একটা দরকার। আজকেও একজন বলছিলেন, বহুকাল ধরে, ঢাকায় এলেই, একটা খুব দুঃখের কথা শুনি, ছবি দেখানোর জায়গা নেই। সিনেমা হল নেই। বা হল থাকলেও সব ছবি দেখানো যায় না।
এর চেয়ে দুঃখের কথা আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু কলকাতায়, ভারতবর্ষে এই অবস্থাটা তৈরি হয়নি এখনও। ছবি করলে দেখানো যায়। হ্যাঁ, কেউ হয়তো তিন শটা হলে মুক্তি দেন, কেউ হয়তো ত্রিশটা হলে। কিন্তু ছবি দেখানো সম্ভব। বাণিজ্য করা সম্ভব। কিন্তু তাহলে কী করা যায়? তাহলে কি বাংলাদেশে ছবি হবে না? ছবি কেউ করবেন না? আমার মনে হয় বাজারটা খুঁজে পেতে হবে। বাজার কিন্তু আছে।
আমার প্রথম ছবি ‘দূরত্ব’। চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়ে, তার আগে আমি ডকুমেন্টারি ফিল্ম করেছি। তারপর ‘দূরত্ব’¡ করলাম, তো একটা ঘোর থাকে না? আমিও ওই ঘোরের মধ্যে শুরু করেছিলাম, আজও ওই ঘোরের মধ্যেই আছি।
‘দূরত্ব’ করার জন্য কেউ আমাকে টাকা দেয় নি। দেওয়ার কথাও নয়। আমাকে কেউ চেনেন না তখন। নিজে টাকা যোগাড় করে, ধার নিয়ে, মায়ের গয়না বন্ধক রেখে, ছবিটি করেছিলাম। কিন্তু ‘দূরত্ব’ বিদেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, বাজার একটা আছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত, আমার প্রত্যেকটা ছবি কিন্তু বিদেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে।
যেমন ধরুন আরেকটা ছবির কথা বলি ‘উত্তরা’, প্রযোজক এসে টাকা দিয়ে গেলেন। আমি পাঠিয়ে দিলাম শিল্প নির্দেশককে, লোকেশন দেখতে। তারপর একদিন প্রযোজক বললেন, ‘আমার ভীষণ ক্ষতি হয়ে গেছে ব্যবসার। ছবিটা করতে পারছি না।’
সাংঘাতিক অবস্থা। তখন আমি বললাম, ঠিক আছে। অফিসে বসে কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম, আমিই প্রযোজনা করব। এর আগেও প্রযোজনা করেছি। তিনটে ছবি। ‘দুরত্ব’ আমার, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘ফেরা’ এবং ‘উত্তরা’ও করলাম।
এই ‘উত্তরা’ শুরু করতে করতেই কিন্তু আরেকটা কাজ করলাম। সেটা দিয়ে যে টাকাটা পেলাম, তাতেই খরচ উঠে গেল। তারপর ভেনিসে সেটা দেখানো হলো। অ্যাওয়ার্ড পেলো, এবং সে ছবি হটকেকের মতো বিক্রি হয়ে গেল। প্রত্যেকটা ছবি কিন্তু এভাবে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, এখন আমি জানি যে বাজারটা আছে।
মুশকিল হচ্ছে যে, এখন কলকাতায় আমাকে অনেকেই বলেন, তাদের ছবি বিক্রি করে দিতে। হয় না। সব জিনিস বিক্রি হয় না। সেজন্য কতোগুলো গুণের দরকার হয়। যেমন মনে আছে, বহুকাল আগে, সে বছর বার্লিনে যাবো আমার ছবি নিয়ে। একজন তামিল পরিচালক, তার একটা ছবি তামিল বা তেলুগু, বললেন, ‘আপনার সঙ্গে যাবো। আপনি খালি একটু সাহায্য করবেন। আপনার পরিবেশকদের যদি একটু আমন্ত্রণ জানান।’ আমি বললাম, ঠিক আছে চলুন। কিন্তু ছবিটা বিক্রি হবে কি-না আমি জানি না।
ছবিটা আমি দেখেছিলাম। বিষয় হচ্ছে, আপনি জানেন যে, ভারতবর্ষ একটা অদ্ভুত দেশ। ভারতবর্ষের নানান বিষয়। যেমন, কেউ যদি কাউকে ছুঁয়ে দেন, তাহলে তার খাওয়াই বন্ধ হয়ে যায়। স্নান-টান করে আবার খেতে বসেন।
ছবিটা দেখার পর আর কেউ কিনলেন না। কিনলেন না তো বটেই। আমার পরিবেশকরা এত বিরক্ত হলেন! ওরা ভাবতেই পারেন না, একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে স্পর্শ করলে, এমন কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বিষয়টা তো মিথ্যে না। ভারতবর্ষে তো ঘটনাটা ঘটছে। ফলে পরিচালক বলতেই পারেন যে, আমার দেশে যা ঘটছে, সেটা নিয়েই ছবি করছি। আমার বক্তব্য, এমন অনেক ঘটনাই ঘটে। ভারতবর্ষে ঘটে, বাংলাদেশে ঘটে- সব দেশেই ঘটে। কিন্তু সব ঘটনা নিয়ে ছবি করলেই যে বাজার আসবে, তা কিন্তু নয়।
বাজারটা খুঁজে বের করতে হবে। কেননা, এই বাজার ছাড়া কিন্তু আমাদের দেশের সংস্কৃতির এগিয়ে যাওয়া সম্ভবই নয়। সেজন্য সবাইকে বলি, কলকাতার নতুন পরিচালকদের, কি ছবি করবেন, সেজন্য সময় দিন। অনেক সময় ধরে ভাবুন। কি ছবি করবেন, কেন করবেন, কাদের জন্য করবেন এবং কোন বাজারের জন্য করবেন, ভাবুন। আমি জানি, আমার ছবি কলকাতায় রমরমিয়ে চলবে না। কিন্তু আমার ছবি থেকে ঠিকই টাকা রোজগার করতে হবে। আমার ছবি এমনই হবে যে, সারা পৃথিবীর মানুষকে স্পর্শ করবে। এটা কিন্তু হওয়া দরকার। এটা যদি হয়, বাজারটাও তৈরি হয়ে যায়।
সিনেমা করতে গিয়ে দেখেছি- ক্যামেরার সামনে যে মুখ, সেটা কিন্তু আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে, উৎসাহ জোগাবে। আপনি অনেক কথা বলবেন, যা আপনি ভাবেন নি। কথাগুলো, মনে হবে, আপনি মুখ দিয়ে বলবেন না, (বুকের কাছে হাত রেখে) এই জায়গা দিয়ে বলবেন। বাংলাদেশে এমন একজন অভিনেতা আছেন যিনি আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, আসাদ (রাইসুল ইসলাম আসাদ)। আসাদ আমার দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন (‘লাল দরজা’ ১৯৯৭ ও ‘উত্তরা’ ২০০০)। ওকে দেখেও আমার মনে হয়েছিল, অনেক কাজ ওকে দিয়ে করানো যায়। অসামান্য কাজ করেছিল।
মোবাইল রেকর্ডারে টাইম বাড়তে বাড়তে মিনিট পেরিয়ে ঘণ্টার কাছাকাছি। শিল্পকলা একাডেমীর সন্ধ্যায় বসে বুদ্ধদেব স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে চলে গেলেন সেই কতকাল আগে! সেদিনটাও এমনই বোধহয়। শান্ত সন্ধ্যা। বাইরে থেকে ফিরেছেন। বাড়িতে কেউ নেই। বুদ্ধদেবের ফ্ল্যাটের ডিজাইনটা আবার এমন- দরজা খুলেই বড় ড্রয়িংরুমের মতো জায়গা। ওখানে আড্ডা-গল্প-গবেষণা-খাওয়া দাওয়া চলে। পেরিয়ে, তারপরই রুমগুলো।
দরজা খুলে ঢুকেই বুদ্ধদেব দেখলেন, কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। ড্রয়িংরুম ভর্তি আসবাবপত্র-টিভি-বই; কিচ্ছু নেই। পুরোটা ফাঁকা। উল্টো একটা মাঠ এসে হাজির! বিস্তীর্ণ মাঠ। সবুজ। বুদ্ধদেবের সেই ছেলেবেলার মাঠটার মতো। যেখানে তিনি খেলতেন। বিকেলবেলায়। ছোট লাল-লাল পোকাগুলো উড়ছে। ওই পোকাগুলো হাতের তালুতে নিয়ে বুদ্ধদেব খেলতেন ছোটবেলায়। মাঠের আশপাশে গাছগুলো আছে। আর আছে তার বন্ধুরা। ছেলেবেলার বন্ধু। তারা বুদ্ধদেবকে ডাকছেন হাত নেড়েনেড়ে।
‘পনেরো-বিশ সেকেন্ড’, বুদ্ধদেব বললেন, ‘এরকমটা আমি দেখলাম। তারপর সব ঠিকঠাক। আগে যা ছিল, সবই আছে। এই যে আমি দেখলাম, এ ব্যাপারটি কিন্তু আমার সিনেমায় চলে এল।’
যে জন্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সিনেমা-কবিতায় আরও বেশি করে আকৃষ্ট হয় মানুষ। মুগ্ধ হয়। এটাই সেই এক্সটেনডেড রিয়েলিটি, ম্যাজিক রিয়েলিজম। বুদ্ধদেব বুঝিয়ে দিলেন মাত্র একটি উদাহরণে, কত সহজে!
তারপরও যদি আরও প্রশ্ন জাগে, কীভাবে ভাবেন তিনি এতোসব গল্প? কীভাবে নির্মাণ করেন এত দুর্দান্ত সব সিনেমা? বুদ্ধদেব বলেন, ‘কিছুটা বাস্তবতা মিশাই, কিছুটা স্বপ্ন, আর কিছুটা ম্যাজিক। মিশিয়ে একটা মিছরি তৈরি করি। সেটাই আমার ছবি।’
ঢাকা: আলাপ শুরুর আগে, একটু হেসে, বলে নিলেন, ‘যদি কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যাই জাগিয়ে দেবেন।’ ১৫ নভেম্বরের ভরসন্ধ্যায় কেন তাঁকে এমন ঘুমে পেয়ে বসেছিলো, সেটার ব্যাখ্যাও দিলেন, ‘আজকে ভোর সাড়ে চারটায় প্রেমেন (প্রেমেন্দ্র মজুমদার, চলচ্চিত্র সমালোচক) আমাকে ফোন করেছে।
সকাল আটটায় ফ্লাইট। অথচ সেই ভোর চারটায় জাগিয়ে বসিয়ে রেখেছে!’
ক্লান্তির আরও একটা কারণ রয়েছে।
এর আগের রাতেই নিজের নতুন ছবি ‘টোপ’-এর রাফকাট শেষ করেছেন বুদ্ধদেব। সেটার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছিলেন, ‘গত এক মাস কলকাতা থেকে বেশ কিছুটা দূরে আমার ছবিটির শুটিং করছিলাম। কখনো কখনো এক শ কিলোমিটার গিয়ে মাত্র দু ঘণ্টা শুটিং করে, আবার সেই পথ ধরে ফিরে আসতে হয়েছে। খুবই ক্লান্তিকর।’
প্রেমেন যখন আমাকে বললো, ‘যেতে হবে’। আমি আর জিজ্ঞেস করিনি কোথায় যেতে হবে। ঢাকা যেতে হবে শুনে আমি লাফিয়ে উঠলাম নিশ্চয়ই। কেননা এখানকার মাটির সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ। আসতে ভালো লাগে।
এখন যে ছবি করছি, ‘টোপ’, সেটা নিয়ে ভাবছি গত পনেরো বছর ধরে। যতবার শুরু করবো ভেবেছি, পিছিয়েছি তার চেয়ে বেশিবার! আমার মনে হয়েছে, সময় হয়নি। সময় হয়নি এই কারণে, বহুদিন পর অন্য কারও গল্প নিয়ে ছবি করছি।
অন্যের গল্প নিয়ে কাজ করার নানান ঝামেলা আছে। মুশকিল আছে। বিপদও আছে। কারণ, গল্পকে আমি সম্পূর্ণ বদলে দেই। এই বদলে দেওয়াটা অনেক সময় লেখক পছন্দ করেন না। লেখক না থাকলে লেখকের স্ত্রী পছন্দ করেন না। লেখকের শ্যালিকা পছন্দ করেন না। মহা মুশকিল।
সেজন্য নিজের গল্প নিয়েই করি। তাতে আরেকটা সুবিধা, আমার যে ভাবনা, তা নতুন করে করতে পারি। পনেরো বছর ধরে ভেবে, কোন কূল-কিনারা করতে পারছিলাম না। এবার তিন-চার মাস আগে মনে হলো যে, কাজটা করার সময় এসেছে।
প্রাথমিক খসড়ার পর মুশকিল হলো, কাকে নিয়ে কাজটা করব? অভিনেতা কে হবে? কলকাতার কাউকেই আমার মনে ধরল না। অনেকেই করতে চেয়ে ফোন করলেন, কিন্তু না করে দিলাম। আমি চাইছিলাম সম্পূর্ণ নতুন। আমি সিনেমা করি পুরোপুরি নিজের শর্তে। বলি, আপনারা আমার সঙ্গে ছবি করতে চাইলে, খুব ভালো। পয়সা কম দিন ঠিক আছে। কিন্তু আমার শর্তগুলো মেনে নিতে হবে। যদি মেনে নেন, তাহলে আছি।
কারণ, আমার খুব বেশি পয়সা লাগে না। লাগে একটা জিনিস, সেটা হলো শর্তপূরণ। মুশকিল হলো, অনেক খুঁজে নতুন একজনকে পেলাম। কিন্তু তাকে নিয়ে ছবি করতে কেউ রাজি নয়। কারণ, প্রত্যেকেরই ধারণা, নতুন মুখ হলে ছবি চলবে না।
কিন্তু কলকাতায় অদ্ভুত কতগুলো ঘটনা ঘটছে। কারও নামেই ছবি চলছে না। যখন প্রসেনজিৎ থাকে, তখনও কেউ ছবি দেখতে আসে না। আর কি যেন নাম...
দেবের ছবি চলে না। ছবিগুলো সত্যিই চলে না। ছবি চলে ছবির গুণে। অন্য কারও থাকা না থাকা, ছবি চলায় প্রভাব ফেলে না। তো প্রযোজক বললো যে, ‘আপনি যা চাইছেন সেভাবেই করবো। কিন্তু আমার খুব কম টাকা আছে।’
আমি বললাম, ঠিক আছে। তাই সই। সেই কম টাকা দিয়ে ছবি করতে যা হয় আর কি, নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়! তারপর আবার পান্তা তৈরি করতে সময় লাগে। এসব করে করে ছবি শেষ করতে গলদঘর্ম ছুটে গেল।
আমি চাইছিলাম এমন একটা মুখ, যাকে দেখে কিচ্ছু বলা যাবে না। কি যে করবেন, কি যে করবেন না, তা কিন্তু আমরা ধরতে পারবো না। তাকে পাওয়া গেলো। তিনি নাটক করেন। আমাকে বললেন, আমার নাটকটা দেখতে আসবেন। বললাম, ঠিক আছে যাবো। নাটক দেখতে গিয়ে, সে নাটক অসম্ভব খারাপ! দেখাই যায় না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো, আমিই মঞ্চে উঠে যাই!
যারা আমার সঙ্গে কাজ করেন, তারা বললেন, ‘দাদা এটা হতে পারে না। একে নিয়ে আপনি কিছুতেই এই সিনেমা করতে পারবেন না।’ এমন নিরুৎসাহ দিতে শুরু করলেন! আমিও ঘাবড়ে গেলাম।
তারপর যাই হোক, আরও অনেক খোঁজাখুঁজির পর, আমার নায়ককে পেলাম। ভদ্রলোককে দেখতে একেবারেই মিরাকল। ওয়ান্ডারফুল অ্যাক্টর। বহুকাল বিদেশে থেকেছেন। নাটক পড়িয়েছেন। কিন্তু একেবারে আনপ্রেডিক্টেবল যে ব্যাপারটা, সেটা আমি তাকে দিয়ে করাতে পারলাম।
আরেকটা চরিত্র আমার দরকার ছিল, যে দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটে। আমার টিম শহর তোলপাড় করে চারটি মেয়েকে নিয়ে এলো আমার কাছে। বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে। বয়স কারও নয়-দশ। একটা মেয়েকে আমার ভীষণ ভালো লাগলো।
এরা প্রত্যেকে কিন্তু একটাই কাজ করে- দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটে। খেলাগুলো দেখায়। এটাই ওদের কাজ। আর কিছু জানে না। এই মেয়েটি, যাকে আমি পছন্দ করলাম, কথা বলেই না প্রায়। অক্ষর চেনে না। পড়াশোনা কিছুই জানে না। দড়ির ওপর দাঁড়িয়ে নানান কসরত করে।
কিন্তু অভিনয়টা করতে হবে তো। সংলাপ বলতে হবে তো। ভয়ংকর ভয় হচ্ছিল। ওয়ার্কশপ করালাম। মেয়েটি যখন অভিনয় করতে শুরু করল, ভাবা যায় না। মানে প্রত্যেক দিন উন্নতি করছে। এই বাচ্চা মেয়েটি, এগারো বছর বয়স, ও আমার ছবির নায়িকা।
আমি দেখেছি, আমার ছবি নিয়ে যখনই কেউ কিছু বলতে চান, যখন আলাপ করিয়ে দেন, পুরস্কারের কথা বলেন। আমি জানি না কি পুরস্কার পেয়েছি, জানতেও চাই না। সেদিন কাগজে দেখলাম, ভারতবর্ষে আমি নাকি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পেয়েছি সত্যজিৎ রায়ের পর।
এটা কোনো বিষয়ই না আমার কাছে। কেননা আমি জানি, এসব পুরস্কার আমাকে তৈরি করতে পারে না। অনেক পরিচালককে দেখেছি, এই পুরস্কার নিয়ে গর্ব করতে। তারা মনে করেন, পুরস্কার তাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকবে! তাদের গায়ে আঁচ লাগতে দেবে না। তা কখনও হয় না। পুরস্কার কেউ মনে রাখেন না। না সাহিত্যে মনে রাখেন, না সিনেমায়, না সংগীতে।
বাণিজ্য ছাড়া হয় না। দীর্ঘ সময় আমি অর্থনীতি পড়িয়েছি। পড়েছি তারও আগে দীর্ঘ সময়। যেটা বুঝেছি যে, বাণিজ্য ছাড়া কবিতা লেখা যায়। যখন কবিতা লিখি তখন বাণিজ্যের কথা ভাবি না। যখন সিনেমা করি, তখন এটা ভাবতে হয়। কেননা দিনের শেষে এটা একটা পণ্য।
আমাকে এটা বিক্রি করতে হবে। তো, কোথায় আমি বিক্রি করব? জায়গা একটা দরকার। আজকেও একজন বলছিলেন, বহুকাল ধরে, ঢাকায় এলেই, একটা খুব দুঃখের কথা শুনি, ছবি দেখানোর জায়গা নেই। সিনেমা হল নেই। বা হল থাকলেও সব ছবি দেখানো যায় না।
এর চেয়ে দুঃখের কথা আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু কলকাতায়, ভারতবর্ষে এই অবস্থাটা তৈরি হয়নি এখনও। ছবি করলে দেখানো যায়। হ্যাঁ, কেউ হয়তো তিন শটা হলে মুক্তি দেন, কেউ হয়তো ত্রিশটা হলে। কিন্তু ছবি দেখানো সম্ভব। বাণিজ্য করা সম্ভব। কিন্তু তাহলে কী করা যায়? তাহলে কি বাংলাদেশে ছবি হবে না? ছবি কেউ করবেন না? আমার মনে হয় বাজারটা খুঁজে পেতে হবে। বাজার কিন্তু আছে।
আমার প্রথম ছবি ‘দূরত্ব’। চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়ে, তার আগে আমি ডকুমেন্টারি ফিল্ম করেছি। তারপর ‘দূরত্ব’¡ করলাম, তো একটা ঘোর থাকে না? আমিও ওই ঘোরের মধ্যে শুরু করেছিলাম, আজও ওই ঘোরের মধ্যেই আছি।
‘দূরত্ব’ করার জন্য কেউ আমাকে টাকা দেয় নি। দেওয়ার কথাও নয়। আমাকে কেউ চেনেন না তখন। নিজে টাকা যোগাড় করে, ধার নিয়ে, মায়ের গয়না বন্ধক রেখে, ছবিটি করেছিলাম। কিন্তু ‘দূরত্ব’ বিদেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, বাজার একটা আছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত, আমার প্রত্যেকটা ছবি কিন্তু বিদেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে।
যেমন ধরুন আরেকটা ছবির কথা বলি ‘উত্তরা’, প্রযোজক এসে টাকা দিয়ে গেলেন। আমি পাঠিয়ে দিলাম শিল্প নির্দেশককে, লোকেশন দেখতে। তারপর একদিন প্রযোজক বললেন, ‘আমার ভীষণ ক্ষতি হয়ে গেছে ব্যবসার। ছবিটা করতে পারছি না।’
সাংঘাতিক অবস্থা। তখন আমি বললাম, ঠিক আছে। অফিসে বসে কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম, আমিই প্রযোজনা করব। এর আগেও প্রযোজনা করেছি। তিনটে ছবি। ‘দুরত্ব’ আমার, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘ফেরা’ এবং ‘উত্তরা’ও করলাম।
এই ‘উত্তরা’ শুরু করতে করতেই কিন্তু আরেকটা কাজ করলাম। সেটা দিয়ে যে টাকাটা পেলাম, তাতেই খরচ উঠে গেল। তারপর ভেনিসে সেটা দেখানো হলো। অ্যাওয়ার্ড পেলো, এবং সে ছবি হটকেকের মতো বিক্রি হয়ে গেল। প্রত্যেকটা ছবি কিন্তু এভাবে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, এখন আমি জানি যে বাজারটা আছে।
মুশকিল হচ্ছে যে, এখন কলকাতায় আমাকে অনেকেই বলেন, তাদের ছবি বিক্রি করে দিতে। হয় না। সব জিনিস বিক্রি হয় না। সেজন্য কতোগুলো গুণের দরকার হয়। যেমন মনে আছে, বহুকাল আগে, সে বছর বার্লিনে যাবো আমার ছবি নিয়ে। একজন তামিল পরিচালক, তার একটা ছবি তামিল বা তেলুগু, বললেন, ‘আপনার সঙ্গে যাবো। আপনি খালি একটু সাহায্য করবেন। আপনার পরিবেশকদের যদি একটু আমন্ত্রণ জানান।’ আমি বললাম, ঠিক আছে চলুন। কিন্তু ছবিটা বিক্রি হবে কি-না আমি জানি না।
ছবিটা আমি দেখেছিলাম। বিষয় হচ্ছে, আপনি জানেন যে, ভারতবর্ষ একটা অদ্ভুত দেশ। ভারতবর্ষের নানান বিষয়। যেমন, কেউ যদি কাউকে ছুঁয়ে দেন, তাহলে তার খাওয়াই বন্ধ হয়ে যায়। স্নান-টান করে আবার খেতে বসেন।
ছবিটা দেখার পর আর কেউ কিনলেন না। কিনলেন না তো বটেই। আমার পরিবেশকরা এত বিরক্ত হলেন! ওরা ভাবতেই পারেন না, একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে স্পর্শ করলে, এমন কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বিষয়টা তো মিথ্যে না। ভারতবর্ষে তো ঘটনাটা ঘটছে। ফলে পরিচালক বলতেই পারেন যে, আমার দেশে যা ঘটছে, সেটা নিয়েই ছবি করছি। আমার বক্তব্য, এমন অনেক ঘটনাই ঘটে। ভারতবর্ষে ঘটে, বাংলাদেশে ঘটে- সব দেশেই ঘটে। কিন্তু সব ঘটনা নিয়ে ছবি করলেই যে বাজার আসবে, তা কিন্তু নয়।
বাজারটা খুঁজে বের করতে হবে। কেননা, এই বাজার ছাড়া কিন্তু আমাদের দেশের সংস্কৃতির এগিয়ে যাওয়া সম্ভবই নয়। সেজন্য সবাইকে বলি, কলকাতার নতুন পরিচালকদের, কি ছবি করবেন, সেজন্য সময় দিন। অনেক সময় ধরে ভাবুন। কি ছবি করবেন, কেন করবেন, কাদের জন্য করবেন এবং কোন বাজারের জন্য করবেন, ভাবুন। আমি জানি, আমার ছবি কলকাতায় রমরমিয়ে চলবে না। কিন্তু আমার ছবি থেকে ঠিকই টাকা রোজগার করতে হবে। আমার ছবি এমনই হবে যে, সারা পৃথিবীর মানুষকে স্পর্শ করবে। এটা কিন্তু হওয়া দরকার। এটা যদি হয়, বাজারটাও তৈরি হয়ে যায়।
সিনেমা করতে গিয়ে দেখেছি- ক্যামেরার সামনে যে মুখ, সেটা কিন্তু আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে, উৎসাহ জোগাবে। আপনি অনেক কথা বলবেন, যা আপনি ভাবেন নি। কথাগুলো, মনে হবে, আপনি মুখ দিয়ে বলবেন না, (বুকের কাছে হাত রেখে) এই জায়গা দিয়ে বলবেন। বাংলাদেশে এমন একজন অভিনেতা আছেন যিনি আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, আসাদ (রাইসুল ইসলাম আসাদ)। আসাদ আমার দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন (‘লাল দরজা’ ১৯৯৭ ও ‘উত্তরা’ ২০০০)। ওকে দেখেও আমার মনে হয়েছিল, অনেক কাজ ওকে দিয়ে করানো যায়। অসামান্য কাজ করেছিল।
মোবাইল রেকর্ডারে টাইম বাড়তে বাড়তে মিনিট পেরিয়ে ঘণ্টার কাছাকাছি। শিল্পকলা একাডেমীর সন্ধ্যায় বসে বুদ্ধদেব স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে চলে গেলেন সেই কতকাল আগে! সেদিনটাও এমনই বোধহয়। শান্ত সন্ধ্যা। বাইরে থেকে ফিরেছেন। বাড়িতে কেউ নেই। বুদ্ধদেবের ফ্ল্যাটের ডিজাইনটা আবার এমন- দরজা খুলেই বড় ড্রয়িংরুমের মতো জায়গা। ওখানে আড্ডা-গল্প-গবেষণা-খাওয়া দাওয়া চলে। পেরিয়ে, তারপরই রুমগুলো।
দরজা খুলে ঢুকেই বুদ্ধদেব দেখলেন, কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। ড্রয়িংরুম ভর্তি আসবাবপত্র-টিভি-বই; কিচ্ছু নেই। পুরোটা ফাঁকা। উল্টো একটা মাঠ এসে হাজির! বিস্তীর্ণ মাঠ। সবুজ। বুদ্ধদেবের সেই ছেলেবেলার মাঠটার মতো। যেখানে তিনি খেলতেন। বিকেলবেলায়। ছোট লাল-লাল পোকাগুলো উড়ছে। ওই পোকাগুলো হাতের তালুতে নিয়ে বুদ্ধদেব খেলতেন ছোটবেলায়। মাঠের আশপাশে গাছগুলো আছে। আর আছে তার বন্ধুরা। ছেলেবেলার বন্ধু। তারা বুদ্ধদেবকে ডাকছেন হাত নেড়েনেড়ে।
‘পনেরো-বিশ সেকেন্ড’, বুদ্ধদেব বললেন, ‘এরকমটা আমি দেখলাম। তারপর সব ঠিকঠাক। আগে যা ছিল, সবই আছে। এই যে আমি দেখলাম, এ ব্যাপারটি কিন্তু আমার সিনেমায় চলে এল।’
যে জন্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সিনেমা-কবিতায় আরও বেশি করে আকৃষ্ট হয় মানুষ। মুগ্ধ হয়। এটাই সেই এক্সটেনডেড রিয়েলিটি, ম্যাজিক রিয়েলিজম। বুদ্ধদেব বুঝিয়ে দিলেন মাত্র একটি উদাহরণে, কত সহজে!
তারপরও যদি আরও প্রশ্ন জাগে, কীভাবে ভাবেন তিনি এতোসব গল্প? কীভাবে নির্মাণ করেন এত দুর্দান্ত সব সিনেমা? বুদ্ধদেব বলেন, ‘কিছুটা বাস্তবতা মিশাই, কিছুটা স্বপ্ন, আর কিছুটা ম্যাজিক। মিশিয়ে একটা মিছরি তৈরি করি। সেটাই আমার ছবি।’
একসময়ের টিভি নাটকের নিয়মিত মুখ অভিনেতা ওমর আয়াজ অনি থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। পাঁচ বছর পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। আবার দেশের মিডিয়ায় নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন অনি। ইতিমধ্যে বিজ্ঞাপন, ওটিটি ও সিনেমা নিয়ে নির্মাতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা।
১০ ঘণ্টা আগেসোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করলেও চলচ্চিত্র অভিনেতা আলমগীরের নামে রয়েছে বেশ কিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট। আছে ফ্যান গ্রুপও। আলমগীরের ছবি ও নাম ব্যবহার করে তৈরি এসব আইডি ও গ্রুপ নিয়ে সতর্ক করলেন তাঁর মেয়ে সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর।
১০ ঘণ্টা আগেওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে প্রকাশ পেল ফিডব্যাক ব্যান্ডের ভোকালিস্ট শাহনুর রহমান লুমিনের মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘ফিরে এসো’। গানটি লিখেছেন ও সংগীতায়োজন করেছেন অটমনাল মুন। মিউজিক ভিডিও নির্দেশনা দিয়েছেন রাজিবুল হোসেন। মডেল হয়েছেন লুমিন ও নীলাঞ্জনা নীল।
১০ ঘণ্টা আগেবিভিন্ন সময় বলিউড তারকাদের অনর্থক চাহিদার সমালোচনা করেছেন পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ, ফারাহ খান, অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীসহ অনেকে। তাঁদের দাবি, তারকাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের খরচ মেটাতে হয় সিনেমার প্রযোজকদের। বেশির ভাগ তারকা শুটিং সেটে চার-পাঁচটি করে ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে যান...
১০ ঘণ্টা আগে