Ajker Patrika

কিংবদন্তির মহাপ্রয়াণ

এম এস রানা
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২১, ১৩: ০২
কিংবদন্তির মহাপ্রয়াণ

চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। ইহজগতের মায় ত্যাগ করে দিলীপ কুমার ঠাঁই নিলেন ইতিহাসের পাতায়। কিংবদন্তির জন্ম আছে মৃত্যু নেই। ভক্তদের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন। গতকাল সকাল ৮টার কিছু সময় পরে হিন্দুজা হাসপাতাল থেকে যখন নিশ্চিত করা হলো কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুসংবাদ, শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ল বলিউড ইন্ডাস্ট্রি। পুরো ভারতে নেমে এল শোকের ছায়া।

১৯৪৪ সালে ‘জোয়ারভাটা’ ছবির মাধ্যমে দিলীপ কুমারের চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। পেশওয়ারের ছেলে দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। বাবার নাম মোহাম্মদ সারোয়ার খান। তিনি ছিলেন একজন ফল ব্যবসায়ী। কৈশোরে মুম্বাই থেকে পুনে গিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান। কিছুদিন পর আবারো মুম্বাইয়ে ফিরে বাবার সাথে ফলের ব্যবসায় যোগ দেন। ব্যবসায়িক কারণে মুম্বাই যেতেন তিনি। একসময় পরিচয় হয় সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সঙ্গে। তিনিই ইউসুফকে পরিচয় করিয়ে দেন 'বোম্বে টকিজ'–এর সঙ্গে। ১৯৪৩ সালে 'বোম্বে টকিজ'-এ চাকরি খুঁজতে গেলে সেখানকার স্বত্বাধিকারী অভিনেত্রী দেবিকা রানী তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। দেবিকা রাণীই মনে করেছিলেন ইউসুফ খান নামটি রোমান্টিক হিরোর জন্য মানানসই নয়। তার অনুরোধেই হিন্দি কবি নরেন্দ্র শর্মা তিনটি নাম প্রস্তাব করেন- জাহাঙ্গীর, বাসুদেব ও দিলীপ কুমার। এর মধ্যে দিলীপ কুমার নামটিই নিজের জন্য পছন্দ করেন ইউসুফ খান। নাম পরিবর্তনের আরেকটি বড় কারণ ছিলো রক্ষণশীল বাবা যেন ইউসুফের নতুন পেশার কথা জানতে না পারেন। সেই থেকে মুসলিম পরিবারের ইউসূফ হয়ে উঠলেন দিলীপ কুমার। যদিও সারাজীবনে মাত্র একবার মুসলিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সেটি হলো ‘মুঘল-ই-আযম’। প্রথম দিকের ছবিগুলো খুব একটা ব্যবসাসফল ছিল না। তবে ১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা 'মুঘল-ই-আজম' দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

অভিনয় স্টাইল

দিলীপ কুমার তাঁর ছয় দশকের ক্যারিয়ারে মাত্র ৬৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। হিন্দি সিনেমায় অভিনয় শিল্পকে দিয়েছেন নতুন রূপ। দিলীপ কুমার যখন ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন তখনকার বেশিরভাগ অভিনেতা উচ্চস্বরে একের পর এক সংলাপ বলে যেতেন। এ ধরনের অভিনয়কে বলা হতো ‘লাউড অ্যাক্টিং’। এটি এসেছিলো মূলত পার্সি থিয়েটারের প্রভাবে। অথচ, দিলীপ কুমার ছিলেন অনেকটাই ধীর স্থির আর শান্ত অথচ বলিষ্ঠ। দিলীপ নিচু স্বরে অভিজাত ও দৃঢ়তার সাথে এমনভাবে সংলাপ ছুড়ে দিতেন যা দর্শকের ভক্তি কুড়িয়েছে। খ্যাতিমান লেখক সেলিম খান বলেছিলেন, ‘দিলীপ কুমার যেসব চরিত্রে অভিনয় করতেন তার সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব হয়ে যেতেন অথচ সেটাও দর্শকের ওপর গভীর ছাপ রেখে যেত।’

ট্রাজেডি কিং

দিলীপ কুমার অভিনীত অনেক ছবিই রয়েছে যার চরিত্রগুলো ট্রাজিক। মারা গেছেন এমন অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একটা সময় প্রতি দুটি ছবির একটিতে তিনি এমন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রগুলোতে তাঁর অভিনয় দর্শকের চোখ ঘোলা করেছে, বুক ভাড়ি করেছে অবিরাম। এসব ছবি তাঁকে ট্রাজেডি কিং পরিচিতি এনেছিল। অভিনয়ে দিলীপ এতটাই বাস্তবিক ছিলেন যে এক সময় মৃত্যুর দৃশ্য করতে করতে ‘ডিপ্রেসড’ হয়ে পড়েছিলেন। পরে লন্ডন থেকে বিষণ্ণতার চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেশে ফিরে ‘কোহিনুর’, ‘আজাদ’, ‘রাম অর শ্যাম’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন যেগুলোতে কিছুটা কমিক উপাদান ছিলো।’

চরিত্রের প্রয়োজনে

দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রতিটি চরিত্রকেই তিনি সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলতে চাইতেন। চরিত্রের প্রয়োজনেই ওস্তাদ আব্দুল হালিম জাফর খানের কাছে বেশ কয়েক বছর সেতার শিখেছেন ‘কোহিনূর’ ছবির জন্য। লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে সলিল চৌধুরীর লেখা একটি দ্বৈত গান গেয়েছিলেন হৃষিকেষ মুখার্জির ‘মুসাফির’ ছবির জন্য। ঘোড়ার গাড়ি চালানো শিখেছিলেন ‘নয়াদৌড়’ সিনেমার জন্য। নির্মাতা সত্যজিৎ রায় তাই দিলীপ কুমারকে বলেছিলেন ‘মেথড অ্যাক্টর’।

স্টাইল আইকন 

মূলত ‘মুঘল-ই-আজম’-এর পর ব্যাপক পরিচিতি পান দিলীপ কুমার। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন সবোর ফ্যাশন আইকন। কপালে ভি-শেপে একগুচ্ছ চুল আছড়ে পড়া তখন যেন জাতীয় ক্রেজে পরিণত হয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে দিলীপ কুমার সাদা রং পছন্দ করতেন। প্রায়ই সাদা জামা ও কিছুটা ঢোলা সাদা প্যান্ট পড়তেন। উর্দু সাহিত্যে ব্যাপক আগ্রহ ছিলো তাঁর। তিনি একই সাথে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, পাঞ্জাবী ও পশতু ভাষা জানতেন। এমনকি মারাঠি, ভোজপুরি ও ফরাসিও বুঝতেন, বলতে পারতেন।

মধুবালার সঙ্গে প্রেম, সায়রা বানুকে বিয়ে

অভিনেত্রী নার্গিসের সঙ্গে ৭টি ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন দিলীপ। কোনো একক অভিনেত্রীর সাথে এটাই তাঁর সবচেয়ে বেশি জুটি বাঁধা। তবে মধুবালার সঙ্গে তাঁর জুটি বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলো। এমনকি মধুবালার প্রেমেও পড়েছিলেন দিলীপ। মধুবালার বাবার কারণে এই প্রেমের গল্প বেশিদূর এগোয়নি। মধুবালার বাবা মনে করতেন দিলীপ কুমারের বয়স মধুবালার চেয়ে অনেক বেশি। তার উপরে বি আর চোপড়ার ‘নয়া দৌড়’ সিনেমা নিয়ে আইনগত সমস্যার উদ্ভব হলে মুধবালার বাবা ও দিলীপ কুমারের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়। যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরপর বিয়ের প্রস্তাব দিলে দিলীপকে মধুবালা বলেন, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করব কিন্তু তার আগে তোমাকে বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।’ দিলীপ তাতে রাজি হননি। তাই ভেঙে যায় দু’জনের সম্পর্ক। তাদের সম্পর্ক এতোটাই বৈরি হয়ে ওঠে যে ‘মুঘল ই আযম’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতেন না। পরে ১৯৬৬ সালে অভিনেত্রী সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার।

আগে থেকেই দিলীপ কুমারের প্রেমে পাগল ছিলেন অভিনেত্রী সায়রা বানু।। ‘ঝুক গ্যায়া আসমান’ ছবির সেটে যখন দিলীপ কুমার তাঁকে প্রোপোজ করেন, তৎক্ষণাত ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিলেন তিনি। নিজের চেয়ে ২২ বছরের ছোট সায়রাকে বিয়ে করে সংসার বাঁধেন দিলীপ। ১৬ বছর সংসার করার পর তাঁকে ত্যাগ করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসমা রেহমানকে। পরে নিজেই স্বীকার করেন এটা তার ভূল সিদ্ধান্ত ছিল। আবারো ফিরে গিয়েছিলেন সায়রা কাছে। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দিলীপকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছিলেন সায়রা। হিন্দুজা হাসপাতালে ডাঃ জালিল পারেকার সর্ব প্রথম সায়রাকে দিলীপের মৃত্যু সংবাদ দিলে তিনি আর্তনাদ করে ওঠেন, ‘ভগবান আমার বেঁচে থাকার কারণটাই কেড়ে নিল…।’

শেষ দিন পর্যন্ত সায়রা বানু যেভাবে দিলীপকে আগলে রেখেছিলেন তার প্রশংসা করছেন সবাই। তবে সায়রা বানু বলেছিলেন, দায়িত্ব ভেবে নয় দিলীপ কুমারকে ভালোবাসেন বলেই এভাবেই আগলে রেখেছেন।

শেষ বিদায়ের বেলায়

মৃত্যুকালে দিলীপ কুমারের বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই তিঁনি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ৬জুন শ্বাসকষ্ট হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১১জুন তিনি বাড়ি ফিরে যান। ৩০ জুন অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হিন্দুজা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ৫ জুন তার স্ত্রী সায়রা বানু এক টুইটে জানান, অভিনেতার অবস্থা এখন ভালোর দিকে। ৭ জুন সকাল ৮টার কিছু সময় পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেন দিলীপ কুমার মারা গেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি প্রোস্টেট ক্যানসারে ভূগছিলেন যা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। গত ৩-৪ মাস ধরে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তিনি কিডনির সমস্যায় ভূগিছিলেন এবং ফুসফুসে পানি এসে গিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা ও করাচির দুই উৎসবে বয়াতির ‘নয়া মানুষ’

বিনোদন প্রতিবেক, ঢাকা
‘নয়া মানুষ’ সিনেমার পোস্টার; ছবি: সংগৃহীত
‘নয়া মানুষ’ সিনেমার পোস্টার; ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ও করাচির দুটি উৎসবে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে সোহেল রানা বয়াতির সিনেমা ‘নয়া মানুষ’। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এতে বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগে প্রতিযোগিতা করবে সিনেমাটি। অন্যদিকে, করাচির ওয়ার্ল্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হবে ২৭ নভেম্বর বিকেল ৪টায়।

২০২৬ সালের ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৪তম আসর। উৎসবে থাকবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্মাতাদের চলচ্চিত্র। এতে বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগে প্রতিযোগিতা করবে নয়া মানুষ।

‘নয়া মানুষ’ সিনেমায় রওনক হাসান। ছবি: সংগৃহীত
‘নয়া মানুষ’ সিনেমায় রওনক হাসান। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, আর্টস কাউন্সিল অব পাকিস্তানের (এসিপি) আয়োজনে ৩১ অক্টোবর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত করাচিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল। ৩৮ দিনব্যাপী এই উৎসবে থাকছে বিশ্বের নানা প্রান্তের শিল্প, সংগীত, নাটক ও নৃত্যের সমন্বয়। শতাধিক দেশের শিল্পীরা এই উৎসবে অংশ নেবেন। উৎসবের অংশ হিসেবে প্রতি সপ্তাহে থাকছে দুই ঘণ্টার একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী পর্ব। এরই অংশ হিসেবে ২৭ নভেম্বর বিকেল ৪টায় প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’। 

এর আগে ভারতের কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও কানাডার টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছে নয়া মানুষ।

নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, ‘আমরা একটা সহজ-সরল গল্প সাধারণভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছি। আমাদের এই প্রচেষ্টাকে সবাই উৎসাহিত করছে। দেশ ও বিদেশে আমার প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে, যা আমার পরবর্তী চলচ্চিত্র নির্মাণের উৎসাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

‘নয়া মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে মৌসুমী হামিদ। ছবি: সংগৃহীত
‘নয়া মানুষ’ সিনেমার দৃশ্যে মৌসুমী হামিদ। ছবি: সংগৃহীত

প্রসঙ্গত, সুপার সাইক্লোন ‘সিত্রাং’ চলাকালে চাঁদপুরের একটি চরে শুটিং হয় নয়া মানুষের। সিনেমায় গান গেয়েছেন শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাশা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।

আ মা ম হাসানুজ্জামানের ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন মাসুম রেজা। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশিস খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কবরীর শেষ সিনেমার প্রিমিয়ার হবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
অভিনেত্রী কবরী। ছবি: সংগৃহীত
অভিনেত্রী কবরী। ছবি: সংগৃহীত

অভিনেত্রী কবরী পরিচালিত শেষ সিনেমা ‘এই তুমি সেই তুমি’। তবে সিনেমাটি শেষ করতে পারেননি তিনি। কিছু অংশের শুটিং বাকি থাকতে ২০২১ সালে মারা যান। কবরীর মৃত্যুর পর সিনেমাটির নির্মাণ শেষ করেন তাঁর ছেলে শাকের চিশতী।

২০২৩ সালে এই তুমি সেই তুমি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন শাকের চিশতী। এবার মুক্তির পালা। তবে দেশে মুক্তির আগে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনীর চেষ্টা করছেন শাকের চিশতী। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক উৎসবে জমা দিয়েছেন সিনেমাটি। এরপর দেশের হলে মুক্তির পরিকল্পনা করবেন।

শাকের চিশতী গণমাধ্যমে জানান, সিনেমাটি শেষ করা ছিল তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘আম্মুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করাই আমার জন্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। একটু সময় নিয়ে কাজ শেষ করেছি। দেশের বাইরে কয়েকটি আন্তর্জাতিক উৎসবে সিনেমাটি জমা দিয়েছি। ওই উৎসবগুলোতে প্রদর্শনী হলে দেশে সিনেমাটি মুক্তি পাবে।’

তবে ঠিক কবে নাগাদ দেশের হলে মুক্তি পাবে সিনেমাটি, তা জানাননি শাকের চিশতী। তিনি জানান, সবকিছু নির্ভর করছে এই তুমি সেই তুমি সিনেমার আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর ওপর।

পরিচালনার পাশাপাশি এই তুমি সেই তুমি সিনেমার কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছিলেন কবরী। দুটি সময়কে তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। বর্তমান সময়ের গল্পের পাশাপাশি উঠে আসবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ের গল্প। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিশাত নাওয়ার সালওয়া ও রায়হান রিয়াদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিলারা জামানকে নিয়ে ৭ পর্বের ধারাবাহিক

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘দাদীর ভাগ’ ধারাবাহিকের শুটিংয়ে দিলারা জামান ও মুন। ছবি: সংগৃহীত
‘দাদীর ভাগ’ ধারাবাহিকের শুটিংয়ে দিলারা জামান ও মুন। ছবি: সংগৃহীত

অভিনেত্রী দিলারা জামানকে নিয়ে তৈরি হলো ৭ পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘দাদীর ভাগ’। ধারাবাহিকের মূল চরিত্র দাদিকে ঘিরে এগিয়েছে গল্প। দাদির চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলারা জামান। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন জামিল হোসেন, মুনমুন আহমেদ মুন, নরেশ ভূঁইয়া, রেশমা আহমেদ, মম শিউলী, আমিন আজাদ, সূচনা প্রমুখ। অভিনেতা জামিল হোসেনের গল্প ভাবনায় নাটকটি রচনা করেছেন বিদ্যুৎ রায়, পরিচালনায় মাহফুজ ইসলাম। প্রকাশ করা হবে জামিল’স জু নামের ইউটিউব চ্যানেলে।

ধারাবাহিকটির দুটি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুনমুন আহমেদ মুন ও জামিল হোসেন। চলতি বছর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার’খ্যাত অভিনেতা জামিল হোসেন ও অভিনেত্রী মুনমুন আহমেদ মুন। স্ত্রী মুনমুনের সঙ্গে একসঙ্গে জুটি বেঁধে বেশ কিছু নাটকে কাজ করেছেন জামিল। সেখান থেকেই দুজনের পরিচয়। আর সেই পরিচয় একটা সময় গড়ায় ভালো লাগায়।

মুনের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন মালয়েশিয়াতে। বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে পরিচিতি পেয়েছেন মুনমুন। সাবলীল অভিনয় তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে নাটকেও। দাদীর ভাগ ধারাবাহিকে দিলারা জামানের সঙ্গে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে একটি স্বপ্ন পূরণ হলো তাঁর। অভিনেত্রী দিলারা জামানের ভক্ত তিনি। তাঁর ব্যক্তিত্ব আর অভিনয় মুগ্ধ করে মুনকে। তাই স্বপ্ন দেখতেন দিলারা জামানের সঙ্গে অভিনয়ের। দাদীর ভাগ ধারাবাহিকে মুন অভিনয় করলেন দিলারা জামানের নাতনির চরিত্রে। তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা আর নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা বলতে গিয়ে মুনমুন আহমেদ মুন বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় দিলারা জামান বাংলাদেশের নাটক-সিনেমার গর্ব।

জামিল হোসেন
জামিল হোসেন

মাশাআল্লাহ এখনো কী সুন্দর তিনি। কী সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন, আন্তরিকতায় পূর্ণ তাঁর ব্যবহার। ভীষণ ইচ্ছে ছিল তাঁর সঙ্গে অভিনয় করার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তাও আবার আমি তাঁর নাতনির চরিত্রেই অভিনয় করেছি। কী যে আদরে, মায়ায় তিনি আগলে রাখেন সব সময়, সেটা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি। এত বড় মাপের শিল্পী, অথচ কী সাধারণ জীবনযাপন। আমি তাঁর বিনয়, হাসি আর অভিনয়ে মুগ্ধ। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে ধন্য, গর্বিত এবং ভীষণ উচ্ছ্বসিত। এটা আমার জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি।’

দিলারা জামান বলেন, ‘দাদীর ভাগ নাটকটার গল্প খুব সুন্দর। মৃত্যুর আগে দাদা সব সম্পত্তি দাদিকে লিখে দেয়। সেই সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়েই গল্প। কাজটা করে ভীষণ ভালো লেগেছে। সবাই এত আন্তরিক ছিল যে আমাকে কোনো রকম কষ্ট পেতে দেয়নি। মুনমুন খুব লক্ষ্মী আর মিষ্টি হাসির এক মেয়ে। দোয়া করি ও যেন অনেক বড় শিল্পী হতে পারে, অভিনয়কে ঘিরে তার স্বপ্ন পূরণ হোক।’

উল্লেখ্য, দীপ্ত টিভির ‘বকুলপুর’ ধারাবাহিকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে দিলারা জামানের অভিনয়। অন্যদিকে মুনমুন আহমেদ মুন অনেক দিন পর অভিনয় করেছেন সাগর জাহান পরিচালিত ধারাবাহিকে। আরটিভির প্রচার চলতি ধারাবাহিকটির নাম ‘বিদেশ ফেরত’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কনসার্টের জন্য প্রস্তুত আজম খানের ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পর আজম খানের পরিবার, ব্যান্ড ও এজেন্সির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পর আজম খানের পরিবার, ব্যান্ড ও এজেন্সির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

গত জুনেই জানা গিয়েছিল আবার শুরু হচ্ছে আজম খানের উচ্চারণ ব্যান্ডের কার্যক্রম। আজম খানের মেয়ে অরণী খান জানিয়েছিলেন, নতুন উদ্যমে ফিরছে ব্যান্ডটি। এবার জানা গেল, দেশ-বিদেশে কনসার্টের জন্য প্রস্তুত উচ্চারণ। ৮ নভেম্বর উচ্চারণ ব্যান্ডের কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে আজম খানের পরিবার, ব্যান্ড সদস্য ও একটি এজেন্সির মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, আজম খানের নাম, ছবি ও সৃষ্টির সব কপিরাইট এবং মালিকানা থাকবে তাঁর পরিবারের। উচ্চারণ ব্যান্ড তাঁর গান পরিবেশন ও প্রচারে সক্রিয় থাকবে; আর কুল এক্সপোজার পরিচালনা করবে সমস্ত প্রচার, রয়্যালটি ব্যবস্থাপনা, কনসার্ট এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম।

আজম খানের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর কন্যা অরণী খান, উচ্চারণ ব্যান্ডের প্রধান দুলাল জোহা এবং কুল এক্সপোজারের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সিইও এরশাদুল হক টিঙ্কু চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

উচ্চারণ ব্যান্ডের প্রধান দুলাল জোহা বলেন, ‘এই চুক্তি আজম খানের সংগীত ঐতিহ্যকে নতুনভাবে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। আমরা তাঁর গানগুলো দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছড়িয়ে দিতে চাই।’

মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে তিন বন্ধু নীলু, সাদেক ও মনসুরকে নিয়ে আজম খান গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ড উচ্চারণ। ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করা ব্যান্ডটি ওই বছর বিটিভিতে গায় ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ এবং ‘চার কলেমা সাক্ষী দেবে’। এই দুটি গান জনপ্রিয় করে তোলে আজম খান ও উচ্চারণ ব্যান্ডকে। এরপর উচ্চারণকে সঙ্গে নিয়ে আরও বহু গান উপহার দিয়েছেন আজম খান। ২০১১ সালের ৫ জুন আজম খানের মৃত্যুর পর থেমে যায় ব্যান্ডের কার্যক্রম। গত ২২ জুন আজম খানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গুরু রিলোডেড’ নামের অনুষ্ঠানে ১৪ বছর পর মঞ্চে পারফর্ম করে উচ্চারণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত