এম এস রানা
চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। ইহজগতের মায় ত্যাগ করে দিলীপ কুমার ঠাঁই নিলেন ইতিহাসের পাতায়। কিংবদন্তির জন্ম আছে মৃত্যু নেই। ভক্তদের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন। গতকাল সকাল ৮টার কিছু সময় পরে হিন্দুজা হাসপাতাল থেকে যখন নিশ্চিত করা হলো কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুসংবাদ, শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ল বলিউড ইন্ডাস্ট্রি। পুরো ভারতে নেমে এল শোকের ছায়া।
১৯৪৪ সালে ‘জোয়ারভাটা’ ছবির মাধ্যমে দিলীপ কুমারের চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। পেশওয়ারের ছেলে দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। বাবার নাম মোহাম্মদ সারোয়ার খান। তিনি ছিলেন একজন ফল ব্যবসায়ী। কৈশোরে মুম্বাই থেকে পুনে গিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান। কিছুদিন পর আবারো মুম্বাইয়ে ফিরে বাবার সাথে ফলের ব্যবসায় যোগ দেন। ব্যবসায়িক কারণে মুম্বাই যেতেন তিনি। একসময় পরিচয় হয় সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সঙ্গে। তিনিই ইউসুফকে পরিচয় করিয়ে দেন 'বোম্বে টকিজ'–এর সঙ্গে। ১৯৪৩ সালে 'বোম্বে টকিজ'-এ চাকরি খুঁজতে গেলে সেখানকার স্বত্বাধিকারী অভিনেত্রী দেবিকা রানী তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। দেবিকা রাণীই মনে করেছিলেন ইউসুফ খান নামটি রোমান্টিক হিরোর জন্য মানানসই নয়। তার অনুরোধেই হিন্দি কবি নরেন্দ্র শর্মা তিনটি নাম প্রস্তাব করেন- জাহাঙ্গীর, বাসুদেব ও দিলীপ কুমার। এর মধ্যে দিলীপ কুমার নামটিই নিজের জন্য পছন্দ করেন ইউসুফ খান। নাম পরিবর্তনের আরেকটি বড় কারণ ছিলো রক্ষণশীল বাবা যেন ইউসুফের নতুন পেশার কথা জানতে না পারেন। সেই থেকে মুসলিম পরিবারের ইউসূফ হয়ে উঠলেন দিলীপ কুমার। যদিও সারাজীবনে মাত্র একবার মুসলিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সেটি হলো ‘মুঘল-ই-আযম’। প্রথম দিকের ছবিগুলো খুব একটা ব্যবসাসফল ছিল না। তবে ১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা 'মুঘল-ই-আজম' দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
অভিনয় স্টাইল
দিলীপ কুমার তাঁর ছয় দশকের ক্যারিয়ারে মাত্র ৬৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। হিন্দি সিনেমায় অভিনয় শিল্পকে দিয়েছেন নতুন রূপ। দিলীপ কুমার যখন ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন তখনকার বেশিরভাগ অভিনেতা উচ্চস্বরে একের পর এক সংলাপ বলে যেতেন। এ ধরনের অভিনয়কে বলা হতো ‘লাউড অ্যাক্টিং’। এটি এসেছিলো মূলত পার্সি থিয়েটারের প্রভাবে। অথচ, দিলীপ কুমার ছিলেন অনেকটাই ধীর স্থির আর শান্ত অথচ বলিষ্ঠ। দিলীপ নিচু স্বরে অভিজাত ও দৃঢ়তার সাথে এমনভাবে সংলাপ ছুড়ে দিতেন যা দর্শকের ভক্তি কুড়িয়েছে। খ্যাতিমান লেখক সেলিম খান বলেছিলেন, ‘দিলীপ কুমার যেসব চরিত্রে অভিনয় করতেন তার সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব হয়ে যেতেন অথচ সেটাও দর্শকের ওপর গভীর ছাপ রেখে যেত।’
ট্রাজেডি কিং
দিলীপ কুমার অভিনীত অনেক ছবিই রয়েছে যার চরিত্রগুলো ট্রাজিক। মারা গেছেন এমন অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একটা সময় প্রতি দুটি ছবির একটিতে তিনি এমন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রগুলোতে তাঁর অভিনয় দর্শকের চোখ ঘোলা করেছে, বুক ভাড়ি করেছে অবিরাম। এসব ছবি তাঁকে ট্রাজেডি কিং পরিচিতি এনেছিল। অভিনয়ে দিলীপ এতটাই বাস্তবিক ছিলেন যে এক সময় মৃত্যুর দৃশ্য করতে করতে ‘ডিপ্রেসড’ হয়ে পড়েছিলেন। পরে লন্ডন থেকে বিষণ্ণতার চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেশে ফিরে ‘কোহিনুর’, ‘আজাদ’, ‘রাম অর শ্যাম’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন যেগুলোতে কিছুটা কমিক উপাদান ছিলো।’
চরিত্রের প্রয়োজনে
দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রতিটি চরিত্রকেই তিনি সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলতে চাইতেন। চরিত্রের প্রয়োজনেই ওস্তাদ আব্দুল হালিম জাফর খানের কাছে বেশ কয়েক বছর সেতার শিখেছেন ‘কোহিনূর’ ছবির জন্য। লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে সলিল চৌধুরীর লেখা একটি দ্বৈত গান গেয়েছিলেন হৃষিকেষ মুখার্জির ‘মুসাফির’ ছবির জন্য। ঘোড়ার গাড়ি চালানো শিখেছিলেন ‘নয়াদৌড়’ সিনেমার জন্য। নির্মাতা সত্যজিৎ রায় তাই দিলীপ কুমারকে বলেছিলেন ‘মেথড অ্যাক্টর’।
স্টাইল আইকন
মূলত ‘মুঘল-ই-আজম’-এর পর ব্যাপক পরিচিতি পান দিলীপ কুমার। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন সবোর ফ্যাশন আইকন। কপালে ভি-শেপে একগুচ্ছ চুল আছড়ে পড়া তখন যেন জাতীয় ক্রেজে পরিণত হয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে দিলীপ কুমার সাদা রং পছন্দ করতেন। প্রায়ই সাদা জামা ও কিছুটা ঢোলা সাদা প্যান্ট পড়তেন। উর্দু সাহিত্যে ব্যাপক আগ্রহ ছিলো তাঁর। তিনি একই সাথে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, পাঞ্জাবী ও পশতু ভাষা জানতেন। এমনকি মারাঠি, ভোজপুরি ও ফরাসিও বুঝতেন, বলতে পারতেন।
মধুবালার সঙ্গে প্রেম, সায়রা বানুকে বিয়ে
অভিনেত্রী নার্গিসের সঙ্গে ৭টি ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন দিলীপ। কোনো একক অভিনেত্রীর সাথে এটাই তাঁর সবচেয়ে বেশি জুটি বাঁধা। তবে মধুবালার সঙ্গে তাঁর জুটি বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলো। এমনকি মধুবালার প্রেমেও পড়েছিলেন দিলীপ। মধুবালার বাবার কারণে এই প্রেমের গল্প বেশিদূর এগোয়নি। মধুবালার বাবা মনে করতেন দিলীপ কুমারের বয়স মধুবালার চেয়ে অনেক বেশি। তার উপরে বি আর চোপড়ার ‘নয়া দৌড়’ সিনেমা নিয়ে আইনগত সমস্যার উদ্ভব হলে মুধবালার বাবা ও দিলীপ কুমারের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়। যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরপর বিয়ের প্রস্তাব দিলে দিলীপকে মধুবালা বলেন, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করব কিন্তু তার আগে তোমাকে বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।’ দিলীপ তাতে রাজি হননি। তাই ভেঙে যায় দু’জনের সম্পর্ক। তাদের সম্পর্ক এতোটাই বৈরি হয়ে ওঠে যে ‘মুঘল ই আযম’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতেন না। পরে ১৯৬৬ সালে অভিনেত্রী সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার।
আগে থেকেই দিলীপ কুমারের প্রেমে পাগল ছিলেন অভিনেত্রী সায়রা বানু।। ‘ঝুক গ্যায়া আসমান’ ছবির সেটে যখন দিলীপ কুমার তাঁকে প্রোপোজ করেন, তৎক্ষণাত ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিলেন তিনি। নিজের চেয়ে ২২ বছরের ছোট সায়রাকে বিয়ে করে সংসার বাঁধেন দিলীপ। ১৬ বছর সংসার করার পর তাঁকে ত্যাগ করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসমা রেহমানকে। পরে নিজেই স্বীকার করেন এটা তার ভূল সিদ্ধান্ত ছিল। আবারো ফিরে গিয়েছিলেন সায়রা কাছে। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দিলীপকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছিলেন সায়রা। হিন্দুজা হাসপাতালে ডাঃ জালিল পারেকার সর্ব প্রথম সায়রাকে দিলীপের মৃত্যু সংবাদ দিলে তিনি আর্তনাদ করে ওঠেন, ‘ভগবান আমার বেঁচে থাকার কারণটাই কেড়ে নিল…।’
শেষ দিন পর্যন্ত সায়রা বানু যেভাবে দিলীপকে আগলে রেখেছিলেন তার প্রশংসা করছেন সবাই। তবে সায়রা বানু বলেছিলেন, দায়িত্ব ভেবে নয় দিলীপ কুমারকে ভালোবাসেন বলেই এভাবেই আগলে রেখেছেন।
শেষ বিদায়ের বেলায়
মৃত্যুকালে দিলীপ কুমারের বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই তিঁনি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ৬জুন শ্বাসকষ্ট হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১১জুন তিনি বাড়ি ফিরে যান। ৩০ জুন অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হিন্দুজা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ৫ জুন তার স্ত্রী সায়রা বানু এক টুইটে জানান, অভিনেতার অবস্থা এখন ভালোর দিকে। ৭ জুন সকাল ৮টার কিছু সময় পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেন দিলীপ কুমার মারা গেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি প্রোস্টেট ক্যানসারে ভূগছিলেন যা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। গত ৩-৪ মাস ধরে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তিনি কিডনির সমস্যায় ভূগিছিলেন এবং ফুসফুসে পানি এসে গিয়েছিল।
চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। ইহজগতের মায় ত্যাগ করে দিলীপ কুমার ঠাঁই নিলেন ইতিহাসের পাতায়। কিংবদন্তির জন্ম আছে মৃত্যু নেই। ভক্তদের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন। গতকাল সকাল ৮টার কিছু সময় পরে হিন্দুজা হাসপাতাল থেকে যখন নিশ্চিত করা হলো কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুসংবাদ, শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ল বলিউড ইন্ডাস্ট্রি। পুরো ভারতে নেমে এল শোকের ছায়া।
১৯৪৪ সালে ‘জোয়ারভাটা’ ছবির মাধ্যমে দিলীপ কুমারের চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। পেশওয়ারের ছেলে দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। বাবার নাম মোহাম্মদ সারোয়ার খান। তিনি ছিলেন একজন ফল ব্যবসায়ী। কৈশোরে মুম্বাই থেকে পুনে গিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান। কিছুদিন পর আবারো মুম্বাইয়ে ফিরে বাবার সাথে ফলের ব্যবসায় যোগ দেন। ব্যবসায়িক কারণে মুম্বাই যেতেন তিনি। একসময় পরিচয় হয় সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সঙ্গে। তিনিই ইউসুফকে পরিচয় করিয়ে দেন 'বোম্বে টকিজ'–এর সঙ্গে। ১৯৪৩ সালে 'বোম্বে টকিজ'-এ চাকরি খুঁজতে গেলে সেখানকার স্বত্বাধিকারী অভিনেত্রী দেবিকা রানী তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। দেবিকা রাণীই মনে করেছিলেন ইউসুফ খান নামটি রোমান্টিক হিরোর জন্য মানানসই নয়। তার অনুরোধেই হিন্দি কবি নরেন্দ্র শর্মা তিনটি নাম প্রস্তাব করেন- জাহাঙ্গীর, বাসুদেব ও দিলীপ কুমার। এর মধ্যে দিলীপ কুমার নামটিই নিজের জন্য পছন্দ করেন ইউসুফ খান। নাম পরিবর্তনের আরেকটি বড় কারণ ছিলো রক্ষণশীল বাবা যেন ইউসুফের নতুন পেশার কথা জানতে না পারেন। সেই থেকে মুসলিম পরিবারের ইউসূফ হয়ে উঠলেন দিলীপ কুমার। যদিও সারাজীবনে মাত্র একবার মুসলিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সেটি হলো ‘মুঘল-ই-আযম’। প্রথম দিকের ছবিগুলো খুব একটা ব্যবসাসফল ছিল না। তবে ১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা 'মুঘল-ই-আজম' দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
অভিনয় স্টাইল
দিলীপ কুমার তাঁর ছয় দশকের ক্যারিয়ারে মাত্র ৬৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। হিন্দি সিনেমায় অভিনয় শিল্পকে দিয়েছেন নতুন রূপ। দিলীপ কুমার যখন ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন তখনকার বেশিরভাগ অভিনেতা উচ্চস্বরে একের পর এক সংলাপ বলে যেতেন। এ ধরনের অভিনয়কে বলা হতো ‘লাউড অ্যাক্টিং’। এটি এসেছিলো মূলত পার্সি থিয়েটারের প্রভাবে। অথচ, দিলীপ কুমার ছিলেন অনেকটাই ধীর স্থির আর শান্ত অথচ বলিষ্ঠ। দিলীপ নিচু স্বরে অভিজাত ও দৃঢ়তার সাথে এমনভাবে সংলাপ ছুড়ে দিতেন যা দর্শকের ভক্তি কুড়িয়েছে। খ্যাতিমান লেখক সেলিম খান বলেছিলেন, ‘দিলীপ কুমার যেসব চরিত্রে অভিনয় করতেন তার সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব হয়ে যেতেন অথচ সেটাও দর্শকের ওপর গভীর ছাপ রেখে যেত।’
ট্রাজেডি কিং
দিলীপ কুমার অভিনীত অনেক ছবিই রয়েছে যার চরিত্রগুলো ট্রাজিক। মারা গেছেন এমন অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একটা সময় প্রতি দুটি ছবির একটিতে তিনি এমন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রগুলোতে তাঁর অভিনয় দর্শকের চোখ ঘোলা করেছে, বুক ভাড়ি করেছে অবিরাম। এসব ছবি তাঁকে ট্রাজেডি কিং পরিচিতি এনেছিল। অভিনয়ে দিলীপ এতটাই বাস্তবিক ছিলেন যে এক সময় মৃত্যুর দৃশ্য করতে করতে ‘ডিপ্রেসড’ হয়ে পড়েছিলেন। পরে লন্ডন থেকে বিষণ্ণতার চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেশে ফিরে ‘কোহিনুর’, ‘আজাদ’, ‘রাম অর শ্যাম’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন যেগুলোতে কিছুটা কমিক উপাদান ছিলো।’
চরিত্রের প্রয়োজনে
দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রতিটি চরিত্রকেই তিনি সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলতে চাইতেন। চরিত্রের প্রয়োজনেই ওস্তাদ আব্দুল হালিম জাফর খানের কাছে বেশ কয়েক বছর সেতার শিখেছেন ‘কোহিনূর’ ছবির জন্য। লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে সলিল চৌধুরীর লেখা একটি দ্বৈত গান গেয়েছিলেন হৃষিকেষ মুখার্জির ‘মুসাফির’ ছবির জন্য। ঘোড়ার গাড়ি চালানো শিখেছিলেন ‘নয়াদৌড়’ সিনেমার জন্য। নির্মাতা সত্যজিৎ রায় তাই দিলীপ কুমারকে বলেছিলেন ‘মেথড অ্যাক্টর’।
স্টাইল আইকন
মূলত ‘মুঘল-ই-আজম’-এর পর ব্যাপক পরিচিতি পান দিলীপ কুমার। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন সবোর ফ্যাশন আইকন। কপালে ভি-শেপে একগুচ্ছ চুল আছড়ে পড়া তখন যেন জাতীয় ক্রেজে পরিণত হয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে দিলীপ কুমার সাদা রং পছন্দ করতেন। প্রায়ই সাদা জামা ও কিছুটা ঢোলা সাদা প্যান্ট পড়তেন। উর্দু সাহিত্যে ব্যাপক আগ্রহ ছিলো তাঁর। তিনি একই সাথে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, পাঞ্জাবী ও পশতু ভাষা জানতেন। এমনকি মারাঠি, ভোজপুরি ও ফরাসিও বুঝতেন, বলতে পারতেন।
মধুবালার সঙ্গে প্রেম, সায়রা বানুকে বিয়ে
অভিনেত্রী নার্গিসের সঙ্গে ৭টি ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন দিলীপ। কোনো একক অভিনেত্রীর সাথে এটাই তাঁর সবচেয়ে বেশি জুটি বাঁধা। তবে মধুবালার সঙ্গে তাঁর জুটি বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলো। এমনকি মধুবালার প্রেমেও পড়েছিলেন দিলীপ। মধুবালার বাবার কারণে এই প্রেমের গল্প বেশিদূর এগোয়নি। মধুবালার বাবা মনে করতেন দিলীপ কুমারের বয়স মধুবালার চেয়ে অনেক বেশি। তার উপরে বি আর চোপড়ার ‘নয়া দৌড়’ সিনেমা নিয়ে আইনগত সমস্যার উদ্ভব হলে মুধবালার বাবা ও দিলীপ কুমারের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়। যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরপর বিয়ের প্রস্তাব দিলে দিলীপকে মধুবালা বলেন, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করব কিন্তু তার আগে তোমাকে বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।’ দিলীপ তাতে রাজি হননি। তাই ভেঙে যায় দু’জনের সম্পর্ক। তাদের সম্পর্ক এতোটাই বৈরি হয়ে ওঠে যে ‘মুঘল ই আযম’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতেন না। পরে ১৯৬৬ সালে অভিনেত্রী সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার।
আগে থেকেই দিলীপ কুমারের প্রেমে পাগল ছিলেন অভিনেত্রী সায়রা বানু।। ‘ঝুক গ্যায়া আসমান’ ছবির সেটে যখন দিলীপ কুমার তাঁকে প্রোপোজ করেন, তৎক্ষণাত ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিলেন তিনি। নিজের চেয়ে ২২ বছরের ছোট সায়রাকে বিয়ে করে সংসার বাঁধেন দিলীপ। ১৬ বছর সংসার করার পর তাঁকে ত্যাগ করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসমা রেহমানকে। পরে নিজেই স্বীকার করেন এটা তার ভূল সিদ্ধান্ত ছিল। আবারো ফিরে গিয়েছিলেন সায়রা কাছে। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দিলীপকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছিলেন সায়রা। হিন্দুজা হাসপাতালে ডাঃ জালিল পারেকার সর্ব প্রথম সায়রাকে দিলীপের মৃত্যু সংবাদ দিলে তিনি আর্তনাদ করে ওঠেন, ‘ভগবান আমার বেঁচে থাকার কারণটাই কেড়ে নিল…।’
শেষ দিন পর্যন্ত সায়রা বানু যেভাবে দিলীপকে আগলে রেখেছিলেন তার প্রশংসা করছেন সবাই। তবে সায়রা বানু বলেছিলেন, দায়িত্ব ভেবে নয় দিলীপ কুমারকে ভালোবাসেন বলেই এভাবেই আগলে রেখেছেন।
শেষ বিদায়ের বেলায়
মৃত্যুকালে দিলীপ কুমারের বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই তিঁনি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ৬জুন শ্বাসকষ্ট হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১১জুন তিনি বাড়ি ফিরে যান। ৩০ জুন অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হিন্দুজা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ৫ জুন তার স্ত্রী সায়রা বানু এক টুইটে জানান, অভিনেতার অবস্থা এখন ভালোর দিকে। ৭ জুন সকাল ৮টার কিছু সময় পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেন দিলীপ কুমার মারা গেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি প্রোস্টেট ক্যানসারে ভূগছিলেন যা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। গত ৩-৪ মাস ধরে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তিনি কিডনির সমস্যায় ভূগিছিলেন এবং ফুসফুসে পানি এসে গিয়েছিল।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে নায়ক রুবেলের মৃত্যুর খবর। এমন ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশের পাশাপাশি যাঁরা মিথ্যা ছড়াচ্ছেন, তাঁদের হুঁশিয়ার করে দিলেন রুবেলের বড় ভাই অভিনেতা, প্রযোজক ও নির্দেশক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা।
৯ ঘণ্টা আগেভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর নয়া দিল্লি পাকিস্তানের সঙ্গে ৬ দশকের পুরোনো সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। তবে সেই ঘোষণা কতটা কার্যকর হয়েছে তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। দুই দেশের মূল ধারার গণমাধ্যম এই বিষয়ে সেই অর্থে কোনো তথ্য দেয়নি।
১১ ঘণ্টা আগেঈদে মুক্তি পাওয়া আফরান নিশো অভিনীত ‘দাগি’ সিনেমায় জেফার রহমানের গাওয়া ‘নিয়ে যাবে কি’ শিরোনামের গানটি ইতিমধ্যেই শ্রোতাদের মন ছুঁয়েছে। অনলাইনেও গানটি নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। ‘নিয়ে যাবে কি আমায় দূরে কল্পনায়, তোমার আর আমার গল্পে কি আবার হবে নতুন সূচনা’ এমন কথায় গানটি লিখেছেন বাঁধন, সুর করেছেন জেফার
১৯ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে নতুন উদ্যোগের কথা জানালেন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী উম্মে হাবিবা। রাজধানীর নিকেতনে শুরু করেছেন নিজের নৃত্য প্রতিষ্ঠান। টিম কালারস ড্যান্স ক্লাস নামের এই প্রতিষ্ঠানে ভরতনাট্যম, সেমি-ক্লাসিক্যাল, কনটেম্পরারি ও বলিউড নৃত্যশৈলীতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
১৯ ঘণ্টা আগে