Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পেরেছি: ড. মো. মশিউর রহমান

নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পেরেছি: ড. মো. মশিউর রহমান

দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, অধিভুক্ত কলেজগুলোর মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ২ হাজার ২৭৫টি অধিভুক্ত কলেজের মাধ্যমে এর শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানান বিষয়ে কথা বলেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গাজীপুর প্রতিনিধি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান

প্রশ্ন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এর অর্জন কী?
মশিউর রহমান: প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নানান বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে একধরনের ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে যায়। একপর্যায়ে সেখানে গতি সঞ্চার হয়েছে। ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতার দিকে এগিয়েছে। বর্তমানে আমরা বহুমুখী কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি; বিশেষ করে দুটো বিষয়—একটি হলো প্রশাসনিক দুর্বলতা বা অদক্ষতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি সেশনজটের মধ্যে পড়ে ছিল। আমার আগের উপাচার্য ড. হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন থেকেই সেশনজট অনেকটা কমিয়ে আনতে পেরেছি। আরেকটি হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা সেটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।

বর্তমান ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকালে এখানে আর্থিক সচ্ছলতা আনার চেষ্টা করেছেন এবং তাতে সফল হয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর একেক সময় একেকজন উপাচার্য অনেক ভালো কাজ করেছেন। সেসব কাজের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আমরা একাডেমিক এক্সিলেন্স বা গুণগত শিক্ষা দেওয়ায় মনোনিবেশ করেছি। যদি আগে সেশনজট না কমানো হতো বা আর্থিক সচ্ছলতা প্রতিষ্ঠিত না হতো, তাহলে আজ আমাকে সেই কাজগুলো করতে হতো। আগের দুজন উপাচার্য যে কাজগুলো করে গেছেন, আমরা এখন সেগুলো ধরে রেখে শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করছি, শর্ট কোর্স প্রবর্তন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। বিআইডিএস দীর্ঘদিন গবেষণা করে আমাদের একটি পরামর্শমালা দিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়গুলো আমরা জানতাম না। পরামর্শগুলো জানার পর যাচাই করে দেখেছি, ইতিমধ্যে আমরা এসব পরামর্শের বেশির ভাগের কাজ করে ফেলেছি। শিক্ষার মানোন্নয়নে নতুন নতুন বিভিন্ন পরিকল্পনা নিতে পেরেছি এবং মনে হচ্ছে, আমরা ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। 

এসব দিক আমাকে আশাবাদী করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের উচ্চশিক্ষার যে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী আছে, তাদের নিয়ে একটি পর্যায়ে পৌঁছানোর যে যাত্রা, তাতে আমরা সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।

 প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মশিউর রহমান: আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অবশ্য পাঠ্য করেছি। এখন আইসিটি, সফট স্কিল—এসব অবশ্য পাঠ্য করতে যাচ্ছি। আমরা অ্যালামনাই গঠনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আগে আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বৃত্তি দিতে পারিনি। বর্তমানে দরিদ্র প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের প্রায় সাত কোটি টাকার বৃত্তি দিচ্ছি। 

আমাদের একাডেমিক ও ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান ইতিমধ্যে করা শেষ হয়েছে। আইসিটি ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম পরিবর্তনের মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। ভালো কিছু করার প্রস্তুতির যে বিষয়, সেগুলো শেষ করে ফেলেছি। আরেকটি বিষয় হলো প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ। ইতিমধ্যে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে আটটি আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে। আমরা ১০টায় উন্নীত করতে চাই। আশা করি এগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ৭০ শতাংশ শিক্ষা একটি সন্তোষজনক মানে উঠে আসবে।

কলেজগুলোতে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং চালু করব। জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম, নতুন বই লেখা প্রকল্প, গবেষণা প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয় চালু করব। আমাদের নতুন দুটি প্রকল্পের একটি হলো ভূমি অধিগ্রহণ, আরেকটি হলো এলএমএস বা লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এই দুটো করা হলে আমি মনে করি, ২০ থেকে ২৫ বছরের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা আমাদের করা হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের বিষয়ে আপনার ভাষ্য কী? 
মশিউর রহমান: গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করে দক্ষতাভিত্তিক, কর্মমুখী এবং বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের সঙ্গে মিল রেখে দ্রুত কর্মসংস্থানমুখী একটি শিক্ষাক্রম তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশব্যাপী ৩২টি কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষকদের মতামত সংগ্রহ এবং দেশের বিশিষ্টজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে। নতুন কারিকুলাম তৈরি হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থী আধুনিক ও যুগোপযোগী কর্মমুখী কারিকুলাম অনুযায়ী পড়াশোনা করতে সক্ষম হবে। 

প্রশ্ন: অন ক্যাম্পাস অনার্স কোর্স চালু নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মশিউর রহমান: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশের ৮৫০টি কলেজে অনার্স পড়ায়। এই কাজের জন্য আমাদের প্রশ্ন প্রণয়ন, খাতা মূল্যায়ন—এসব কাজ করতে হয়। এসবের জন্য যদি নিজেদের দক্ষতা তৈরি না হয়, তাহলে এর জন্য আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। এভাবে অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভরশীল থেকে ৮৫০টি কলেজের অনার্স পড়ানোতে নেতৃত্ব দেওয়া খুব দুর্বল কাঠামোতে থাকে।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত বিষয়ের ওপর অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এর শিক্ষা একটি মানের ওপর দাঁড়াবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ১৫০ জনের মতো শিক্ষক রয়েছেন। তাঁরা যদি ক্লাসে না পড়ান বা ক্লাস রিসার্চ না থাকে, তাহলে তাঁরা একসময় কর্মকর্তা হয়ে উঠবেন। আরেকটি বিষয় হলো, কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় অনেক নতুন ক্লাসরুম গাজীপুরে করতে পেরেছি। এসব কক্ষ ব্যবহার করা দরকার। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এখানে কয়েকটি বিষয়ে অন ক্যাম্পাস অনার্স কোর্স চালু করেছি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা, গবেষণা করা, সরাসরি শিক্ষাদান একটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার। এসব যদি না থাকে, তাহলে তো একটা বিশ্ববিদ্যালয় হয় না। ইতিমধ্যেই ইউজিসিকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে জবাব দেওয়া হয়েছে। আশা করি, ইউজিসি আমাদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হবে এবং এই সমস্যার সমাধান হবে।

প্রশ্নকর্তা: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। 
মশিউর রহমান: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের চীনা জে-১০ দিয়ে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস, যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নজরে এই টক্কর

একটি দলের ওপর ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব: মাহফুজ আলম

গতকাল রাতে ৪৮টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

অহনার দাবি, নিজের দোষ ঢাকতে ডাবল টাইমিংয়ের কথা বলেছেন শামীম

পাকিস্তানে হামলায় ভারত এক দিনেই হারিয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি রুপির সামরিক সরঞ্জাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত