Ajker Patrika

শিশুকে কবিরাজের ধর্ষণ, ৫০ হাজারে রফা করে টাকা মেরে দিলেন মেম্বার-দফাদার

কালীগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২: ০৫
শিশুকে কবিরাজের ধর্ষণ, ৫০ হাজারে রফা করে টাকা মেরে দিলেন মেম্বার-দফাদার

স্থানীয় ভাষায় উপরি দোষের চিকিৎসা করার নামে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে কথিত কবিরাজের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে নিজের বাড়িতে নিয়ে শিশুটিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করেন তিনি। কবিরাজের নাম গুনিন বাবু (২৩)। এ ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৫০ হাজার টাকায় মীমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে এলাকার দফাদার এবং ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। স্থানীয় ওই ইউপি সদস্যের নাম আবু বক্কার এবং দফাদারের নাম তপন দে। 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ১২টার সময় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের ঘুষুড়ি ১০ শয্যা হাসপাতাল সংলগ্ন ঋষি পাড়া ঘুষুড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর খবর পেয়ে শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে ভুক্তভোগীর পরিবারের বাড়িতে যান এ প্রতিবেদক। এ সময় ঘটনা সম্পর্কে ভুক্তভোগীর পরিবার জানান, বরেয়া গ্রামের মৃত বয়ে গাজীর ছেলে কবিরাজ গুনিন বাবু (২৩) পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাদের বাড়িতে আসেন। তিনি ভুক্তভোগী মেয়েটির উপরি দোষ আছে, এক্ষুণি ভালো চিকিৎসা ঝাড়ফুঁক না করলে মেয়ে বাঁচবে না বলে ভয় দেখান। ভুক্তভোগীর পরিবারের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে বাবু তাদের বাড়িতে কিছু বাজার সদাই কিনে দেন এবং চিকিৎসার নামে শিশুটিকে নিয়ে যান নিজের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কয়েকবার ধর্ষণ করেন বাবু। বিকেলে শিশুটির ঘুম ভেঙে ব্যথা ও যন্ত্রণায় কাঁদতে শুরু করলে মোটরসাইকেল যোগে আবার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে দ্রুত চলে যান তিনি। 

শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে তাৎক্ষণিক স্থানীয় তারালী বাজার গ্রাম্য চিকিৎসক নাজমুছ শাহাদাত রাহানের কাছে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। 

ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা বলেন, পুরো বিষয়টি চাম্পাফুল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আবু বক্করকে জানালে তিনি ও তপন দফাদার, বাবু কবিরাজকে ডেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন। অন্যথায় তাঁকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন এবং তাঁর মোটরসাইকেলটি আটকে রাখেন। পরে গুনিন বাবু তাঁদের ৫০ হাজার টাকা দেন। এর থেকে মাত্র ১৫ হাজার টাকা তাঁকে দেন মেম্বর ও দফাদার। এরপর এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করেন মেম্বর। এখন অসুস্থ মেয়েকে বাড়িতে রেখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। 

স্থানীয় রেজাউল করিম, চাল ব্যবসায়ী আবু হাসানসহ আরও অনেকেই জানান, গুনিন বাবু একজন প্রতারক। তিনি গরিব মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মেয়েদের চিকিৎসার নাম করে যৌন হয়রানি করে। 

তপন দফাদারের এই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে দফাদার তপন দে বলেন, ওই শিশুর বাবাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল, ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি থানার উপসহকারী পরিদর্শক তরুণ বাবুকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে মেম্বর এটার মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ সময় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন দফাদার তপন। 

টাকা নিয়ে ঘটনা চাপার দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ইউপি সদস্য আবু বক্কার বলেন, দফাদার তপন বিষয়টি তাঁকে জানানোর পর তিনি ১৫ হাজার টাকা ভুক্তভোগীর বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন। দফাদার তপন দে ফাঁড়ি থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানানো হয়েছে। এ কারণে কবিরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

একজন ইউপি সদস্য ধর্ষণের ঘটনায় জরিমানা দিয়ে মীমাংসা করতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নে নীরব থাকেন ইউপি সদস্য আবু বক্কার। 

চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইনের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার কাছেই প্রথম এই বিষয়ে জানলাম। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। এ সময় পাশেই দাঁড়ানো দফাদার তপনের কাছে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই জানতে চাইলে ভুল স্বীকার করে চুপ হয়ে যান দফাদার। 

থানার উপপরিদর্শক তরুণের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, একদিন তপন দফাদার ফোন করে বলেন, ছোট একটি নারীঘটিত ব্যাপার, মীমাংসা করে ফেলা হয়েছে। এত বড় ঘটনা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নাই। 

থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমানের কাছে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগও কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কয়েকবার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করা হলেও গুনিন বাবুকে পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত