Ajker Patrika

চাঁদা না দিলে আন্দোলনের মামলার আসামি

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ১৫
চাঁদা না দিলে আন্দোলনের মামলার আসামি

খুলনার বিভিন্ন এলাকায় চরমপন্থীদের নামে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিএনপির নেতা পরিচয়েও বিভিন্ন এলাকায় চলছে চাঁদাবাজি। চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়ায় ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না জেলার শীর্ষ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, স্কুলশিক্ষক, ব্যাংকার, সাংবাদিকেরাও। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবসায়ী থানায় এবং বিএনপি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিলেও অনেকে কোথাও অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে অগ্রণী ব্যাংক ফুলবাড়ী গেট শাখার কর্মকর্তা পল্লব বাবুর কাছে দুটি মোটরসাইকেল দাবি করা হয়েছে। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) নামে এই দাবি করার পর তিনি আতঙ্কে আছেন। দৌলতপুর মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়ার গোলকধাম এলাকার ব্যবসায়ী নুর ইসলামের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ায় তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছেন। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হানিফের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাসের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দাবির ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। পাশাপাশি ২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এ ছাড়া রাজনীতি না করেও চাঁদাবাজি ও মামলার শিকার হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাজী বেলায়েত হোসেনের কাছে মহানগর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে তিনি ৩ লাখ টাকা দিয়ে আপাতত রক্ষা পান। খুলনা চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমানের কাছে একই নেতারা ১০ লাখ টাকা দাবি করলে তিনি দেড় লাখ টাকা দেন চার-পাঁচ দিন আগে। এতে ওই নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩০ আগস্ট নগরীর খালিশপুর থানা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের মামলায় আতিয়ারকে আসামি করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

একই মামলায় খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের পরিচালক শেখ শাহ আলম তুহিনকে আসামি করা হয়। তাঁর কাছেও মোটা অঙ্কের চাঁদা চাওয়া হয়েছে। খুলনায় জামায়াত সমর্থিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হ্যামকো গ্রুপের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তিনি চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়ায় ফুলতলা থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। একই মামলায় আসামি করা হয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ খানকে। তাঁর কাছেও ১০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল।

এদিকে পাঁচ দিন আগে ট্যাংক-লরি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জ্বালানি তেল পরিবেশক সুলতান মাহমুদ পিন্টুর কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মহানগর বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক। চাঁদা দিতে দেরি হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়। খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে গত বুধবার খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক রিয়াজ শাহেদকে শোকজ করা হয়েছে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। চাঁদা না দেওয়ায় খালিশপুর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠুর বিরুদ্ধে খালিশপুর থানা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের মামলাসহ একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন। খুলনা বড় বাজারের আড়তদার সহিদুল ও কালামের কাছ থেকে বিএনপির পরিচয়দানকারী কিছু নেতা ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া জেলার শীর্ষ ব্যবসায়ী সরোয়ার কাজীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে। টুটুল নামের এক দোকানদারের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। শহরের নিক্সন মার্কেটের এক দোকানে ৫ লাখ টাকা ও খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে তালা দেওয়া হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল গিয়ে দোকানগুলো খুলে দেয়। নগরীর পাওয়ার হাউস মোড়ের পেট্রলপাম্পটি গত ৫ আগস্ট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন মালিক সৈয়দ মাসুদ। তখন বাধা দিয়ে তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন সদর থানা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা। কৃষ্ণ নামের একজন খুদে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন এক নেতা। আড়তদার তোতা মিয়ার আড়তে তালা দিয়ে চাওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

অন্যদিকে সম্প্রতি নগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কাছে সোনাডাঙ্গার বাসিন্দা শাওন হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তোলেন তিনি।

জানতে চাইলে খুলনা চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমান বলেন, এখন ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ও খালিশপুর থানা বিএনপির সাবেক সম্পাদক এস এম আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, ‘যে মামলাগুলো করা হচ্ছে, তা হাস্যকর। এখানে ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো টাকা না দিতে পারলেই মামলার আসামি হতে হচ্ছে। আমার টাকায় খালিশপুর থানা বিএনপির অফিস নির্মাণ হয়েছে, অথচ সেই অফিস ভাঙার মামলায় আমাকেই আসামি করা হয়েছে। এর চেয়ে ন্যক্কারজনক কাজ আর কী হতে পারে!’

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাফিকুল আলম মনা বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যাঁরা চাঁদাবাজি করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কার ও শোকজ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের নামে হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে খালিশপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশীষ কুমার মিত্র বলেন, মামলায় নিরীহ কারও নাম থাকলে তদন্তে অবশ্যই বাদ যাবে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত