Ajker Patrika

ব্রিটিশ ফৌজদারি আইনের খোলস ছাড়ল ভারত, বিচারব্যবস্থার অবনতির শঙ্কা

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪, ২১: ০৮
ব্রিটিশ ফৌজদারি আইনের খোলস ছাড়ল ভারত, বিচারব্যবস্থার অবনতির শঙ্কা

ভারতে একগুচ্ছ নতুন ফৌজদারি আইন করা হয়েছে। বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এবং আধুনিক অপরাধের ধরন বিবেচনা করে আজ সোমবার এসব আইন কার্যকর করা হয়।

একপক্ষ বলছে, এটি ভারতের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনবে। তবে অপরপক্ষ বলছে, এই আইনে ফৌজদারি মামলার আমলযোগ্যতা নির্ধারণের ভার বিচারকদের থেকে পুলিশের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে, যা বিচারব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। 

নতুন আইনের মধ্যে রয়েছে—ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম (বিএসএ)। 

নতুন আইনগুলো যথাক্রমে ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনকে প্রতিস্থাপন করেছে।

দ্য ইকোনমিক টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। 

নারী ও শিশু অপরাধ
নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে অপরাধ সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায় এতে যুক্ত করা হয়েছে। শিশু ক্রয়–বিক্রয়কে জঘন্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে এবং কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে অপরাধ, হত্যা ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে নতুন আইনে।

ধর্ষণের সত্যাসত্য বিচার
একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা অভিভাবক বা আত্মীয়ের উপস্থিতিতে ধর্ষণের শিকারদের বক্তব্য রেকর্ড করবেন এবং সাত দিনের মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। নতুন আইনে সব হাসপাতালে বিনা মূল্যে ভুক্তভোগী নারী বা শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসা বা পূর্ণ চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। নতুন আইনের অধীনে ভুক্তভোগী নারীকে ৯০ দিনের মধ্যে তাঁর মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত হালনাগাদ জানানোর বিধান রাখা হয়েছে। 

জিরো এফআইআর
ভারতের আইনের নতুন ও উল্লেখযোগ্য সংযোজন ‘জিরো এফআইআর’। এর অধীনে ভুক্তভোগী ঘটনা সংঘটিত হওয়া থানা এলাকা ছাড়াও যেকোনো থানায় এফআইআর করতে পারবেন। এটি আইনি প্রক্রিয়া শুরুর গড়িমসি দূর এবং দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল নিশ্চিত করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নতুন আইনের অধীনে, একজন ব্যক্তি এখন সশরীরে থানায় না গিয়ে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে (ফোন বা অনলাইন) ঘটনা জানাতে বা অভিযোগ দিতে পারবেন। এটি সহজ এবং দ্রুত রিপোর্টিং করার সুযোগ তৈরি করবে, এতে পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতেও সুবিধা হবে। 

সন্ত্রাস, রাষ্ট্রদ্রোহ ও অন্যান্য
নতুন আইনে পরিকল্পিত অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সরকার বিরোধিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এসব অপরাধের সমস্ত অনুসন্ধান এবং আটকের ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংহিতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি অজামিনযোগ্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। সংহিতাতে আরও বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী অপরাধও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি স্পষ্ট করেছে যে, ব্যক্তিগত বা সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা বেআইনি। 

গণপিটুনি
ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় পাঁচ বা ততোধিক লোক মিলে হত্যা বা গুরুতর আঘাতকে গণপিটুনি বলে গণ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। 

মিথ্যা প্রতিশ্রুতি
সংহিতার ৬৯ ধারায় প্রতারণামূলক যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই বিধানের অধীনে, কেউ বাস্তবায়নের অভিপ্রায় ছাড়া চাকরি বা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুললে তাঁর জরিমানাসহ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। 

বিচার, গ্রেপ্তার ও অফিশিয়াল প্রক্রিয়া
নতুন আইন অনুসারে, ফৌজদারি মামলায় বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে হবে এবং প্রথম শুনানির ৬০ দিনের মধ্যে অভিযোগ গঠন করতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত, নথিপত্রের বাহুল্য কমানো এবং মামলার উভয় পক্ষের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করতে এখন ইলেকট্রনিকভাবে সমন (পরোয়ানা) পাঠানো যেতে পারে। বিলম্ব এড়াতে ও যথাসময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আদালত এখন মামলার শুনানি দুইবারের বেশি স্থগিত করতে পারবেন না।

সমস্ত তল্লাশি এবং আলামত জব্দের ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগী উভয়েরই ১৪ দিনের মধ্যে এফআইআর, পুলিশ রিপোর্ট, চার্জশিট, বিবৃতি, স্বীকারোক্তি এবং অন্যান্য নথির কপি পাওয়ার অধিকার রাখা রয়েছে। 

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘নতুন আইনগুলো ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় পরিণত করতে সাহায্য করবে।’ 

দেশটির প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, ‘এসব আইন আমাদের সমাজের জন্য নব জলধারা।’ 

তবে নতুন এসব ফৌজদারি আইন নিয়ে ভিন্ন কথাও বলছেন আইনজীবী ও বিশ্লেষকেরা। থানায় দেওয়া কোনো লিখিত অভিযোগ বা এফআইআর মামলা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত একজন বিচারকের ওপর ন্যস্ত ছিল। কিন্তু নতুন আইনে এখন সেই সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ। এ নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিপুণ সাক্সেনা সমালোচনা করেছেন। সাক্সেনা বলেন, ‘বিচারিক কার্যাবলি এভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা যায় না।’ 

সমালোচকেরা বলছেন, নতুন আইনগুলো বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। কারণ আগের ব্যবস্থার অধীনে অভিযুক্তদের বেলাতেও এসব কার্যকর করার বিধান করা হয়েছে। 

ভারত এমনিতেই বিচার প্রক্রিয়া বেশ ধীরগতির। বছরের যেকোনো সময় আদালতে লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন থাকে। এ বিষয়ে সাক্সেনা সতর্ক করে বলেন, এই পরিবর্তন বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩০–৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। 

বিরোধী দলগুলো বলছে, আইনগুলো পাস করার সময় ১০০ জনেরও বেশি আইনপ্রণেতাকে লোকসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। অর্থাৎ, মূল বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক হয়নি। 

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের লোকসভায় দুই বহিরাগত প্রবেশ করে গ্যাস স্প্রে করে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক এমপি তাঁদের দর্শনার্থী পাস দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্লামেন্টের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে অধিবেশনে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন বিরোধী দলের এমপিরা। এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পার্লামেন্ট। একপর্যায়ে বিরোধী ১৪১ জন এমপির সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। আর এই সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু আইন পাস করে বিজেপি। সেই পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি।

আইনজীবী সাক্সেনা বলেন, ‘আইন থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন আইনগুলো সংবিধানের অন্তত চারটি অনুচ্ছেদ এবং সুপ্রিম কোর্টের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আদেশ লঙ্ঘন করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত