Ajker Patrika

সাফকোর শেয়ার কারসাজিতে ১২ জনকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সাফকোর শেয়ার কারসাজিতে ১২ জনকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ১২ ব্যক্তিকে মোট ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই ১ মাস ১৮ দিনে তাঁরা কোম্পানির শেয়ারের দাম ২১৫ শতাংশ বাড়ায়। তদন্ত সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুঁজিবাজারে ২০২১ সালের মে ও জুন মাসে গুঞ্জন ছিল সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ পর্যন্ত সময়ে সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ১২ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. সজিব হোসেনকে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, মো. সুলেমানকে মোট ৬৬ লাখ টাকা, মো. শরিফকে মোট ৩৩ লাখ টাকা, তসলিমা বেগম ও মো. সজিব হোসেনকে ২৭ লাখ টাকা, মো. আব্দুল কুদ্দুস আমিনকে ২৭ লাখ টাকা, এ কে এম খলিলুর রহমানকে ২৪ লাখ টাকা, নুরুন্নেসা সাকিকে ১৯ লাখ টাকা, মো. বেলাল হোসেনকে মোট ৯ লাখ টাকা, আরিফা বেগম লাকিকে ৮ লাখ টাকা, তারান্নুম সাফিকে মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মাহমুদা আক্তারকে মোট ২ লাখ টাকা ও কাজী মহিউদ্দীন আহমেদকে মোট ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই হিসাবে অভিযুক্তদের মোট ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

জানা গেছে, এই শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. সজিব হোসেন ও মো. সুলেমান। তাঁদের সহায়তা করেছেন বাকিরা। তাঁরা সবাই শেয়ার ব্যবসায়ী। তারা সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায়।

বিএসইসির তদন্তে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে আলোচ্য সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩১ টাকা ৫০ পয়সায় নিয়ে যায় কারসাজি চক্র। ওই সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ২১ টাকা ৫০ পয়সা বা ২১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। বিএসইসির তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে।

বিএসইসির আদেশে বলা হয়, অভিযুক্তরা ২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কারসাজি করে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এই কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। তাই অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। অভিযুক্তদের এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২), ১৭(ই)(৫) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০২৮ ভঙ্গ করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জরিমানা ধার্য করা হলো। এই আদেশ জারির ৩০ দিনের মধ্যে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ এর অনুকূলে ইস্যুকৃত ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত