Ajker Patrika

এক বছরের ব্যবধানে কলমানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

এক বছরের ব্যবধানে (অক্টোবর থেকে অক্টোবর) দেশের ব্যাংকগুলোর স্বল্পকালীন (কলমানি) ঋণ বিপুল হারে বেড়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত কলমানি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ বা ৬৩ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে এক দিনের জন্য ওভারনাইট ধার বেড়েছে ৪৯ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা আর আন্তব্যাংক রেপোতে ধার বেড়েছে ৫৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে কলমানিতে এক দিন থেকে এক বছরের কম সময়ের জন্য ব্যাংকগুলো ধার করেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮০ হাজার ২৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কলমানিতে ধার বেড়েছে ৬৩ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক দিনের জন্য ওভারনাইটে ধার ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, যা তার আগের বছরের অক্টোবরে ছিল ৭২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে ওভারনাইট ধার বেড়েছে ৪৯ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, পলিসি রেট (নীতি সুদহার) বাড়ার প্রভাব কলমানি মার্কেটে পড়েছে। এখন ঋণের খরচ বেড়েছে। অনেক ব্যাংক নগদ টাকার চাপ সামলাতে চড়া সুদে ঋণ করে ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অক্টোবরে ২ থেকে ১৪ দিনের জন্য শর্ট নোটিশে ধারের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। একইভাবে ১৫ দিন থেকে এক বছরের কম সময়ের জন্য টার্ম কল ঋণ গত অক্টোবরে ছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছিল ১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৩৯৪ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকট রয়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। তারল্যসংকটের মোকাবিলা করতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে চড়া সুদেও টাকা ধার নিচ্ছে। কারণ বাজারে খুব বেশি তারল্য নেই। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকও রেপোর নিলাম কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো খুব বেশি টাকা ধার করতে পারছে। সব মিলিয়ে কলমানি বাজারে চড়া সুদে যেসব ব্যাংক টাকা ধার নিয়েছে তারা ধার পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কলমানিতে সুদহার বেশি হলেও নিরুপায় হয়ে কলমানিতে লেনদেন করে অস্বস্তিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অক্টোবরে কলমানির মধ্যে ওভারনাইটের গড় সুদহার (ডব্লিইএআর) ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, শর্ট নোটিশের গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং টার্ম কলে সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর আন্তব্যাংক রেপোতে সুদের গড় হার ছিল ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে আন্তব্যাংক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ৩২ কোটি টাকা। সে হিসাবে আন্তব্যাংক লেনদেন বেড়েছে ৫৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এখন কিছু ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। তবে অন্য ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তারাই ধার নিচ্ছে। এখন যেসব ব্যাংকের ধার প্রয়োজন, তাদের বেশির ভাগেরই পর্যাপ্ত জামানত নেই। তারা কলমানির ধারের টাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ডলারের দর বেড়েছে, এতে টাকার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। যে কারণে কিছু ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো তারল্যসুবিধা নিচ্ছে, স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ করতে কলমানিতে ধার করছে। চাহিদা বাড়লে ধার বাড়ে, আবার চাহিদা কমলে ধার কমে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...