Ajker Patrika

পুঁজিবাজার: প্রাণ ফেরাতে আসছে একগুচ্ছ উদ্যোগ

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১২: ০৮
পুঁজিবাজার: প্রাণ ফেরাতে আসছে একগুচ্ছ উদ্যোগ

নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। রাজনৈতিক সংকটের শঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা, ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগ আটকে থাকা এবং বিভিন্ন গুজবে আস্থা সংকটে আরও প্রকট হয়েছে।

পুঁজিবাজারের লেনদেন নেমেছে তলানিতে। এ অবস্থায় বাজারে প্রাণ ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। কাজ করছে স্টক এক্সচেঞ্জও।

বিএসইসি, আইসিবি ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী মাসেই বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা সম্মেলন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএসইসি। সম্মেলনটি সমন্বয় করবে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই)। অন্যদিকে পুঁজিবাজারকে ‘সাপোর্ট’ দিতে তিন ধরনের কর্মপন্থার কথা জানিয়েছে আইসিবি।

পদক্ষেপ হিসেবে আগামী মাসে কক্সবাজারে সম্মেলন করতে যাচ্ছে বিএসইসি। সেখানে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, তহবিল ব্যবস্থাপক, ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান এবং মিউচুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষক, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড এবং অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডসংশ্লিষ্টরা অংশ নেবেন।

 

ডিএসইর মুখপাত্র শফিকুর রহমান বলেন, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সম্মেলনটি আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার হোটেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পাতে অনুষ্ঠিত হবে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘বহুমুখী চাপে আছে শেয়ারবাজার। তবে এত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। মূল সমস্যা হলো ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট। এরপর ডলারের দাম বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও সঞ্চয় কমে যাওয়া, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কিছু ইস্যু বাজারের জন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করছে।’

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেয় আইসিবি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তিন ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রথমত, কলমানি মার্কেট থেকে টাকা এনেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগারীদের স্বার্থে শেয়ার কিনে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, আইসিবির কাছে থাকা শেয়ার ক্রেতা খুঁজে বের করে ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার কিনে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, স্বল্প সুদে সরকারে কাছে ৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড চাওয়া হয়েছে। মার্কেট সাপোর্টের জন্য সরকার এই টাকা দিলে বিনিয়োগ করা হবে।

স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে বাজারে যেন কোনো রকমের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে প্রথমে মার্চেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পর্যায়ক্রমে বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করব। সবাইকে যাতে বাজারে সক্রিয় রাখা যায় সেই চেষ্টা করব।’

গত বছরের জুলাইয়ের শেষে দ্বিতীয়বারের মতো শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। অর্থাৎ নির্ধারিত ফ্লোর প্রাইসের নিচে শেয়ারের দাম কমতে পারবে না। এরপর পুঁজিবাজারে একটা উত্থান দেখা দেয়। তবে তা ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না। ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর লেনদেন ৩ হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই হয়।

সে সময় ফ্লোর প্রাইস আশীর্বাদ মনে করা হলেও ধীরে ধীরে এর নেতিবাচক দিক সামনে আসতে থাকে। মৌলভিত্তির শেয়ারগুলো ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। হাজার হাজার বিক্রেতা থাকলে ক্রেতাশূন্য হয়ে বাজারে লেনদেন কমতে থাকে। এমন লেনদেন খরা দেখা দেয় যে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম তিন দিনই ২০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২ জানুয়ারি লেনদেন হয় কেবল ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ ৯ হাজার টাকা।

পরে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে লেনদেনে কিছু গতি পেলেও আর সেই জায়গায় ফিরতে পারেনি। এক মাসের বেশি সময় ধরে লেনদেনে ভাটা। সদ্যবিদায়ী সপ্তাহে উত্থান হলেও তার আগে টানা চার সপ্তাহ পতন হয় পুঁজিবাজারে। আর সর্বশেষ ২৭ কর্মদিবস আগে ১৮ জুলাই ডিএসইতে লেনদেন হয় হাজার কোটি টাকার ঘরে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে ফান্ড আটকে গেছে। লেনদেন হচ্ছে না। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিত কোন দিকে যায়, তা মাথায় রেখে বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষণ করছেন।

এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের হাতে খুব বেশি অর্থও নেই, যার প্রভাব রয়েছে পুঁজিবাজারে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবং বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে, এই ধরনের চিন্তাভাবনা থাকতে পারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত