Ajker Patrika

ব্যাংক খাতের দুর্বলতা সুশাসনের অভাব থেকে উদ্ভূত: ঢাবি অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ব্যাংক খাতের দুর্বলতা সুশাসনের অভাব থেকে উদ্ভূত: ঢাবি অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন

দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা মূলত ‘সুশাসনের অভাব থেকে উদ্ভূত, শুধু বহিরাগত অর্থনৈতিক আঘাত থেকে নয়’ বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক ড. মো. মাঈন উদ্দিন। তিনি বলেছেন, ব্যাংক খাতের সংস্কারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ঋণসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বাইরের প্রভাব থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটরিয়ামে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও প্রযুক্তি সম্মেলন (আইসিবিটি ২০২৫) সমাপ্তিতে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্মেলনটি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ-ওয়েইডেনের যৌথ উদ্যাগে আয়োজন করা হয়।

ঢাবির ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমামের পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহাইল আর কে হোসেন, সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন, পূবালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মুহাম্মদ আলী, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি মতি উল হাসান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বক্তরা দেশের ব্যাংকিং খাতের করপোরেট সুশাসন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর দুর্বলতা ও সংস্কারের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ কোটি টাকা, এর মধ্যে প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকা সমস্যাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বিদেশি ব্যাংক বাদে ৫০টি স্থানীয় ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে কমবেশি ৪০টি ব্যাংক মানসম্মত নয়। এগুলোর মধ্যে প্রায় ১৫টি ব্যাংককে বলা হচ্ছে একেবারে ‘জম্বি ব্যাংক’। এসব ব্যাংকের অর্ধেকেই সরাসরি লুটপাট হয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের কথা উল্লেখ করে মাসরুর আরেফিন বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়ায় ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকার কথা বলা হয়েছে। ভালো ব্যাংকেও কেন এ নিয়ম মানতে হবে? নতুন খসড়ায় আরও বলা হয়, একটি পরিবার একটি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার রাখতে পারবে। তবে পরিবারের সংজ্ঞায় বিভিন্ন ধরনের আত্মীয়স্বজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাস্তবে দেশের ব্যাংক খাতে বড় লুটপাট হয়েছে বেনামি নামে, বৈধ শেয়ার মালিকানার কারণে নয়।

সভায় অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের কাঠামো শক্তিশালী করা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

ঢাবির ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হোসাইন আহমেদ এনামুল হুদা বলেন, কার্যকর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা শুধু নিয়ম প্রণয়নের ওপর নির্ভর করে না, বরং নৈতিক আচরণ, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে হবে।

স্বতন্ত্র পরিচালক ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘হুইসেল ব্লোয়িং’ নীতিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে বলে মনে করেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসেন। তিনি বলেন, ‘হুইসেলব্লোয়িং’ নীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি রেটিং এজেন্সিগুলোর জবাবদিহি বাড়াতে হবে। বর্তমানে ১২টি ব্যাংক কার্যত দেউলিয়া, তারা আমানত ফেরত দিতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবেও তা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো, যেগুলো বড় অনিয়মের জন্য দায়ী, সেগুলোর ওপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। শুধু পরিদর্শন নয়, অনিয়ম হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তাৎক্ষণিক ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত