Ajker Patrika

চীন থেকে দুটি জাহাজ কিনতে মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে বিএসসির চুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে জাহাজ ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: পিআইডি
আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে জাহাজ ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: পিআইডি

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুটি জাহাজ কিনছে শিপিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (বিএসসি)। ‘বাংলার প্রগতি’ ও ‘বাংলার নবযাত্রা’ নামের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এ জাহাজ দুটি কেনা হচ্ছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বিএসসির সঙ্গে মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাহাজ কিনছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএসসি। নিজস্ব অর্থায়নে দুটি জাহাজ কিনতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসির সঙ্গে চুক্তি করেছে বিএসসি। আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার এই জাহাজ দুটির নাম হবে ‘বাংলার প্রগতি’ ও ‘বাংলার নবযাত্রা’।

চলতি বছরেই জাহাজ দুটি বিএসসিকে হস্তান্তর করা হবে। জাহাজ দুটি কিনতে ব্যয় হচ্ছে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৩৫ কোটি টাকা। জাহাজ দুটি থেকে বছরে ১৫০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা করছে বিএসসি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিএসসির বহরে যুক্ত হতে যাওয়া জাহাজগুলোতে জ্বালানি খরচ হ্রাস ও পরিচালন দক্ষতা বেশি। প্রধান ইঞ্জিন নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরিবেশদূষণ কমাবে। জাহাজ দুটিতে উচ্চমানের ইউরোপীয় ও জাপানি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মান লাইসেন্সে জাহাজগুলো চীনে উৎপাদন করা হয়েছে। এগুলোতে স্পেনের পাম্প ও নরওয়ের কম্প্রেসর ব্যবহার করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রথম জাহাজ চলতি বছরের অক্টোবরে এবং দ্বিতীয় জাহাজ ডিসেম্বরের দিকে বিএসসিকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে দেশের শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে এটি একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। নতুন দুই জাহাজ বিএসসিতে যুক্ত হলে বছরে ১৫০ কোটি টাকা আয় বাড়বে। বিএসসির নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সমুদ্র-বাণিজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপিংয়ের সম্মান অর্জন করবে।

বিএসসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসসির আরও তিনটি জাহাজ কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকারের সময়ে বিএসসির জন্য পাঁচটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন এই জাহাজগুলো যুক্ত হলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন কেবল আয়ের দিক থেকেই লাভবান হবে না, বরং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাজারে ‘গ্রিন শিপিং নেশন’ হিসেবেও দেশের অবস্থান মজবুত হবে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনা সম্পর্কিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ গত ১৭ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি জুন ২০২৫ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য এর ডিপিপি গত ৩ জুন অনুমোদিত হয়। অনুমোদন অনুযায়ী এর প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। জাহাজ কেনার জন্য চলতি বছরের ৪ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।

প্রতিটি জাহাজের একক মূল্য ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার মার্কিন ডলার। দুটি জাহাজের মোট সমন্বয় করা ও সুপারিশ করা মূল্য ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার ডলার।

গত ৫৪ বছরে কেন বিএসসি জাহাজ কেনেনি, এখানে কি কোনো অবহেলা ছিল, না সক্ষমতার অভাব ছিল—সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটি কোম্পানি চালানোর জন্য যে ম্যানেজমেন্ট দরকার, সেই ম্যানেজমেন্ট গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তো হয়নি, তারপর এখানে নানা ধরনের দুর্নীতি। বিএসসি একসময় দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত