Ajker Patrika

৩০ কোটি ডলার বাড়াতেই ৫ বছর

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
৩০ কোটি ডলার বাড়াতেই ৫ বছর
প্রতীকী ছবি

পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি দেখিয়েছে; কিন্তু সেবা রপ্তানি এখনো হতাশাজনকভাবে থমকে রয়েছে। গত পাঁচ বছরে খাতটির আয় কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু সেই বৃদ্ধি এত সীমিত যে বৈশ্বিক মানদণ্ডে এর গুরুত্ব প্রায় নগণ্য। এ সময়ে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৯৫২.৫৬ কোটি ডলার বা ২৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। কিন্তু একই সময়ে সেবা রপ্তানি বেড়েছে ৩০ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যা পুরো পাঁচ বছরে নামমাত্র বৃদ্ধি ছাড়া কিছু নয়। অর্থাৎ সেবা খাতের এগোনো যেন হাঁটতে হাঁটতে এগোনোর মতো। যেখানে দ্রুত দৌড়ানোর দরকার ছিল, সেখানে গতি কচ্ছপের মতো ধীর।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট সেবা রপ্তানি এখন পণ্য রপ্তানির মাত্র ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। টেলিযোগাযোগ, নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তি, মেধাস্বত্ব, পরিবহন, পর্যটন, ব্যাংক-বিমা, শিক্ষা—এমন নানা খাত সেবা রপ্তানির আওতায় আসে। বিদেশি জাহাজ বা বিমানের জ্বালানি সরবরাহ এমনকি দেশের ফ্রিল্যান্সিং খাতও এই আয়ের অংশ। তবে ফ্রিল্যান্সারদের বেশির ভাগ আয় অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে আসে, যেমন ক্রেডিট কার্ড বা সরাসরি লেনদেন। ফলে প্রকৃত রপ্তানি আয় আরও কম দেখায়।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে সেবা রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৬৬০.৮৮ কোটি ডলার, আর পণ্য রপ্তানি ছিল ৩৮৭৫.৮৩ কোটি ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬৯০.৭৩ কোটি ডলার সেবা রপ্তানিতে এবং ৪৮২৮.৩৯ কোটি ডলার পণ্য রপ্তানিতে। অর্থাৎ পণ্য রপ্তানির তুলনায় সেবা খাতের আয় প্রায় ৭ গুণ কম।

এই ফারাক দেখায় সেবা রপ্তানি এখনো সম্ভাবনার স্তরে আটকে রয়েছে। যেখানে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষতা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির গুরুত্ব বাড়ছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো দুর্বল। টেকসই বৈদেশিক আয় এবং অর্থনীতির বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে খাতটির উন্নতি অপরিহার্য।

বিশ্বের সেবা রপ্তানির বাজারের আকার এখন ৮-৯ ট্রিলিয়ন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব ৭ বিলিয়ন ডলারের কম। অথচ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সেবা খাতের অবদান ৫১ শতাংশের বেশি। অর্থনৈতিক কাঠামোয় এত বড় অবদান থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি আয়ের অংশ ১২-১৪ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনা ও সহায়তার ঘাটতি এর মূল কারণ।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ মনে করেন, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব সেবা রপ্তানির বড় বাধা। প্রকৌশল, স্থাপত্য, চিকিৎসা, জীবনবিজ্ঞান ও আইটি—প্রতিটি খাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি কম। এ ছাড়া সেবার মূল্য তুলনামূলক বেশি এবং ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর কার্যত ৫০-৯০ শতাংশের সমতুল্য বোঝা তৈরি করে, যেখানে পণ্য রপ্তানিতে করহার ১ শতাংশের কম। আশরাফ আহমেদ বলেন, করহার হ্রাস, নগদ প্রণোদনা, দক্ষতা উন্নয়ন ও আইনের আধুনিকায়ন ছাড়া খাতটি এগোবে না।

অন্যদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (এইউএপি) সভাপতি ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, শিক্ষা খাত সেবা রপ্তানির বড় সম্ভাবনা রাখে। করোনার আগে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০০ বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তেন, কিন্তু এখন সংখ্যা হাতে গোনা। ভিসার জটিলতা ও সরকারি অনুৎসাহ খাতটিকে পিছিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, সমন্বিত পরিকল্পনা ও সঠিক গাইডলাইন ছাড়া শিক্ষা ও আইটি খাত থেকে প্রত্যাশিত রপ্তানি সম্ভব নয়।

তবে সরকার আশাবাদী। বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, পণ্য পরিবহনে জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদেশি এয়ারলাইনসের সেবা সম্প্রসারণে আয় বাড়তে পারে। নতুন টার্মিনাল চালু হলে এভিয়েশন খাত থেকেও দ্বিগুণ আয় আশা করা হচ্ছে। তাই চলতি বছরের জন্য সেবা খাতের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৫০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‎ডিভোর্সের পরও জোর করে রাতযাপন, বর্তমান স্বামীকে নিয়ে প্রাক্তন স্বামীকে হত্যা ‎

৯ পুলিশ পরিদর্শক বাধ্যতামূলক অবসরে

গণবিক্ষোভ আতঙ্কে মোদি সরকার, ১৯৭৪-পরবর্তী সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ‘সন্ত্রাসী খেল’ ফাঁস করে দিলেন জঙ্গিগোষ্ঠী জইশের সদস্য

নিজের বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি কলেজশিক্ষকের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত