Ajker Patrika

৩ হাজার ২০০ কোটির কাচের বাজার

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ২৬
কাচ দিয়ে ঘেরা স্থাপনা। ছবি: সংগৃহীত
কাচ দিয়ে ঘেরা স্থাপনা। ছবি: সংগৃহীত

আয়না মানুষকে তার প্রতিবিম্ব দেখায়, তবে সে শুধু একটি মুখ নয়—প্রতিটি মুহূর্তের বদলে যাওয়া অস্তিত্বের ছায়া ফুটে ওঠে তাতে। তাই আয়না যেন প্রত্যেক নারীজীবনের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে দেখে না, এমন পুরুষও পৃথিবীতে খুব কম। কাচের এক পৃষ্ঠে অ্যালুমিনিয়াম বা রুপার মতো ধাতুর সূক্ষ্ম প্রলেপেই তৈরি হয় এই জাদুকরি বস্তু। মূলত কাচ একটি স্বচ্ছ, নমনীয় এবং অ-স্ফটিক নিরাকার কঠিন পদার্থ।

মানবজীবনে এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল আয়নায় মুখ দেখার মাধ্যমে। তবে সময়ের বিবর্তনে প্রযুক্তি আর শিল্পের ছোঁয়ায় এটি পেয়েছে নতুন রূপ। একসময় কাচ নারীর জীবনে ছিল কেবল একটি আসবাব; এখন তা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গভীরে প্রবেশ করে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে। কাচের ব্যবহার ঘর-গৃহস্থালির অন্দরসজ্জা থেকে শুরু করে ভবনের কাঠামো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

একসময় বাড়ির জানালা-দরজা কাঠ দিয়ে তৈরি হতো, পরে তাতে আধিপত্য বাড়ে কাচের। কিন্তু সেটিও এখন অতীত। নতুন যুগে কাচ ব্যবহৃত হচ্ছে বাড়ির দেয়াল নির্মাণেও। এই দেয়াল কেবল আলো-বাতাস প্রবাহ এবং তাপমাত্রা রক্ষায় নয়, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই আজ অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন কিংবা অফিস—সব ক্ষেত্রে জানালা, দরজা, বাইরের দেয়াল এবং বিভাজক হিসেবে কাচ হয়ে উঠেছে এক অনিবার্য অনুষঙ্গ।

তা ছাড়া কাচের বহুমুখী ব্যবহার দৈনন্দিন সেবাতেও স্পষ্ট। গণপরিবহনের সাধারণ যানবাহন থেকে শুরু করে বিলাসবহুল ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক গাড়িতে মানানসই, দৃষ্টিনন্দন কাচের গ্লাস বাড়িয়েছে সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা।

এ ছাড়া ইলেকট্রনিক পণ্য; যেমন ফ্রিজ, টেলিভিশন এবং গ্যাস স্টোভ, বাটি, ফুলদানি, ফ্রেম, বোতল, জার, পানির গ্লাস কিংবা পেপারওয়েট—কী নেই কাচের তৈরি! কালের পরিক্রমায় কাচ তার প্রয়োজনীয়তার গণ্ডি ছাড়িয়ে আলংকারিক এবং বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে। আজ এই স্বচ্ছ বস্তু যেন ক্যারিশমা দেখানোর মতো মানুষের জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে, সব মানুষের যাপিত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই কাচ।

এই ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ছোঁয়ায় দেশের কাচশিল্প আজ এক নতুন দিকে পৌঁছে গেছে। একসময় যে কাচের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হতো, এখন সেই চাহিদার প্রায় সমান অংশই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। কাচশিল্পের এই সক্ষমতা শুধু দেশের চাহিদা পূরণেই থেমে নেই, বরং শিল্পের বিস্তারে নতুন নতুন কোম্পানির উত্থানে এর ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়েছে।

পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন জানান, সরকারি নীতিসহায়তার ফলে কাচশিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে, ফলে রপ্তানি বেড়েছে। দেশের চাহিদা বাড়লেও দেশীয় কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা তা পূরণে সক্ষম। বিশেষায়িত কাচও এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে এবং কাচশিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হয়েছে, যার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

ভবনে কাচ: আধুনিক নির্মাণের স্বচ্ছ সমাধান

ভবনে কাচের ব্যবহার জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ এর স্বচ্ছতা। এটি ভবনের ভেতরে ধুলা প্রবেশ বন্ধ করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক আলো প্রবাহ নিশ্চিত করে। প্রথমে জানালায় ব্যবহৃত হলেও সহজলভ্যতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে কাচ দ্রুত ভবনের বাইরের অংশের অন্যতম উপাদানে পরিণত হয়েছে।

ইট বা কংক্রিটের নির্মাণে যেখানে একাধিক উপকরণ, প্রচুর অর্থ, সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়, সেখানে কাচের নির্মাণ তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। ফিনিশিং ম্যাটেরিয়ালের বাড়তি ঝামেলা এড়িয়ে কেবল স্থাপন ও পরিষ্কার করলেই এটি প্রস্তুত। এই সুবিধার জন্য ব্যবসায়িক ভবনের ক্ষেত্রে কাচ বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কাচ কীভাবে তৈরি হয়

কাচ একটি শিল্পজাত পণ্য, যা বালু গলিয়ে তৈরি করা হয়। ইসলামি কাচশিল্পীরা এই প্রক্রিয়া সহজ করেছিলেন। বর্তমানে কাচ তৈরি হয় সিলিকা, সোডা, ডলোমাইট, চুনাপাথর, ফেল্ডস্পার, সোডিয়াম নাইট্রেট ও কয়লার পাউডার মিশিয়ে। বাংলাদেশের বাজারে সাধারণ কাচ ও ক্রিস্টাল গ্লাস পাওয়া যায়, যেখানে সাধারণ কাচে সবুজাভ রং থাকে এবং ক্রিস্টাল গ্লাস একদম পরিষ্কার। গ্লাসের পুরুত্ব সাধারণত ৩ থেকে ১২ মিলিমিটার হয় এবং ভবনের বাইরে ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত গ্লাস প্যানেল ব্যবহার করা হয়।

কাচের ধরন ও ব্যবহার

অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় সাধারণত রঙিন প্রতিফলনকারী কাচ ব্যবহৃত হয়; যা গোপনীয়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করায়। এটি অধিক সূর্যালোক থেকে চোখ সুরক্ষা দেয় এবং জানালার পর্দার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনে। অ্যাপার্টমেন্টে ডাবল গ্লেইজড কাচ ব্যবহার করা হয়, তবে তা শুধু তাপ প্রতিরোধ করবে না, বরং এর ঘনত্বের কারণে শব্দদূষণ কমাবে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে, ভঙ্গুর না হওয়ায় এটি অধিক নিরাপত্তা দেয়। লেমিনেটেড কাচ, খালি চোখে সাধারণ কাচের মতো দেখালেও ভবনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা বাড়াতে কার্যকর। সূর্যালোক প্রতিরোধী কাচ ঘরে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করিয়ে দেয়, কিন্তু সূর্যের তাপ আটকে রাখে, ফলে ঘর ঠান্ডা থাকে। শব্দ প্রতিরোধে প্রয়োজন হলে ব্যবহৃত হয় অ্যাকুস্টিক কাচ, যা পরিবেশকে শান্ত ও আরামদায়ক করে তোলে। আর ঘরকে নান্দনিক রূপ দিতে চাইলে বেছে নিতে হবে নকশাযুক্ত কাচ। এই সব ধরনের কাচ আধুনিক স্থাপত্যে কেবল কার্যকারিতা নয়, শৈল্পিকতার ছোঁয়াও এনে দেয়।

কাচের-ব্যাবহার-ও-বাজার

দেশে উৎপাদন সক্ষমতা

বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ৬০০ টন বা ৬ লাখ বর্গফুট কাচের চাহিদা রয়েছে। আর প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ৫০০ টন বা ৫ লাখ বর্গফুট বিভিন্ন ধরনের কাচ। একসময় চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ৬টি প্রধান কারখানা—উসমানিয়া গ্লাস শিট, মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স (এমইবি), আকিজ অ্যান্ড বশির গ্রুপ, নাসির গ্লাস, পিএইচপি ফ্লোটিং গ্লাস এবং এবি গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ কাচ উৎপাদন করত। বর্তমানে উসমানিয়া ও এমইবি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তবে চাহিদা পূরণের জন্য চারটি কারখানায় উৎপাদিত কাচই যথেষ্ট হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশীয় কারখানাগুলোর মধ্যে আকিজ ও নাসির গ্রুপ প্রতিদিন ২০০ টন করে মোট ৪০০ টন কাচ উৎপাদন করে। বাকি ১০০ টন উৎপাদিত হয় পিএইচপি ফ্লোটিং গ্লাস ও এবি গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজে।

বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেইন আলমগীর বলেন, দেশে কাচ বা গ্লাসের চাহিদা প্রতিবছর ১০-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ গ্লাস ব্যবহৃত হয় আবাসন এবং ভবন নির্মাণে, ২০ শতাংশ শিল্প খাতের প্যাকেজিং ও আসবাব তৈরিতে, ২০ শতাংশ ফটোফ্রেম এবং অন্যান্য কাজে, আর বাকি ১০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় অন্যান্য কাজে।

বাজারের আকার

বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও বিক্রেতাদের সরবরাহ করা তথ্যমতে, কাচের দাম মিলিমিটার ও মান অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। যদি গড়ে ১০০ টাকা ধরা হয়, তবে দেশে প্রতিদিন উৎপাদিত কাচের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকা, যা বছরে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। এদিকে আমদানি হওয়া কাচের মূল্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ফলে দেশে কাচের বাজারের মোট পরিমাণ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি।

তবু আমদানি

একসময় বাংলাদেশে কাচের পুরো বাজারই ছিল আমদানিনির্ভর। তবে দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন শুরু করার পর থেকে আমদানির পরিমাণ দ্রুত কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশের কাচের চাহিদার ১৫-২০ শতাংশই আমদানি হচ্ছে, যেখানে একসময় ৯০ শতাংশ কাচ আমদানি করা হতো। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি কাচ আমদানি হয়। বিশেষত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে, যখন ১ লাখ ২১ হাজার টন কাচ আমদানি হয়েছিল। এরপর থেকেই আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর ৩৬ হাজার টনের বেশি কাচ আমদানি হয়, যার বাজারমূল্য ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বেশি কাচ আমদানি করছে, বিশেষত ইলেকট্রনিক পণ্য ও গাড়ির জন্য। অধিকাংশ কাচ আসে চীন থেকে এবং কিছুটা আমদানি হয় তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। তবে উদ্যোক্তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এসব কাচের আমদানিনির্ভরতা কমবে।

হচ্ছে রপ্তানিও

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের গ্লাস রপ্তানি হয়, যা ২০০৫ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। তবে চলতি বছরের প্রথমার্ধে রপ্তানি ৩৭ শতাংশ কমেছে এবং ডিসেম্বরে এটি প্রায় ৬৪ শতাংশ কমেছে। ২০০৫ সালে পিএইচপি পরিবার রপ্তানি শুরু করে, কিন্তু বর্তমানে নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ শীর্ষে রয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের গ্লাস রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ সালে ৩ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। রপ্তানির ৭২ শতাংশ ভারত ও নেপালে যায়। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও আফ্রিকার কিছু দেশে; যেমন উগান্ডা, তানজানিয়া ও কেনিয়ায়ও রপ্তানি হচ্ছে। নতুন বাজার হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতও যুক্ত হয়েছে।

বাড়ছে বিনিয়োগ সম্ভাবনা

দেশে গ্লাস বাজারে প্রবেশের জন্য প্রাণ-আরএফএলসহ আরও বড় কোম্পানিগুলোর আগ্রহ রয়েছে। তারা এরই মধ্যে টেম্পার্ড গ্লাস তৈরি করছে, বিশেষ করে আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণ-আরএফএল টেম্পার্ড গ্লাস তৈরি করছে আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য। ইলেকট্রনিক পণ্যে এর চাহিদা বাড়ছে, তাই আমরা বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করতে চাই। এ ছাড়া ফ্লোট গ্লাস তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের, যা কিছু কারণে একটু পিছিয়ে গেছে।

আছে চ্যালেঞ্জ

কাচশিল্পে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ১২-১৫ বছর ধরে উৎপাদন চালু রাখা। যদি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তবে চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং নতুন বিনিয়োগ করতে হবে। এ জন্য কারখানায় তিন থেকে ছয় মাসের কাঁচামাল মজুত রাখতে হয়। দেশে সিলিকা বালু ছাড়া সব কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেশি। বিনিয়োগ ঝুঁকিও বেশি। তবে চীনে কাঁচামাল সহজলভ্য, তাই তারা কম সময় মজুত রাখে এবং উৎপাদন ব্যয়ও তাদের কম হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনে ভোটার ও রাজনীতিবিদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে: দেবপ্রিয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’

সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’

তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেতাদের হাতে উপহারের ফ্রিজ-টিভি হস্তান্তর করল ওয়ালটন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত

ইলেকট্রনিকস পণ্য ক্রয়ে গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিতে দেশব্যাপী চলছে ওয়ালটনের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনের ২৩তম সিজনে ওয়ালটন ফ্রিজ, এসি, টিভি, ওয়াশিং মেশিন বা বিএলডিসি ফ্যান কিনে গ্রাহকেরা পাচ্ছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাইড বাই সাইড ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ফ্রি ও নিশ্চিত উপহার। গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতার হাতে উপহারের পণ্য তুলে দিচ্ছে ওয়ালটন।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন এলাকার ওয়ালটন প্লাজা থেকে ফ্রিজ কিনে সাইড বাই সাইড ফ্রিজ ও টিভি ফ্রি পাওয়া পণ্য ছয় ক্রেতার হাতে তুলে দিয়েছে ওয়ালটন। তাঁরা হলেন— মুন্সিগঞ্জের গোলাম রাব্বানি সিফাত ও গৃহিণী আফসানা আক্তার, নারায়ণগঞ্জের আজমির খান, রূপগঞ্জের সবুর হোসাইন এবং সিদ্ধিরগঞ্জের তারিকুল ইসলাম ও আসমা জাহান বিথী।

গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের হাতে উপহার পাওয়া পণ্য তুলে দেন চিত্রনায়ক ও ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান। সে সময় আরও ছিলেন ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের প্রধান মো. ফিরোজ আলম প্রমুখ।

বিজয়ী ক্রেতাদের মধ্যে গোলাম রাব্বানি সিফাত, আফসানা, আজমির খান ও আসমা জাহান বিথী ফ্রিজ কিনে উপহার পেয়েছেন ওয়ালটনের অত্যাধুনিক সিক্সএনাইন মডেলের সাইড বাই সাইড স্মার্ট ফ্রিজ। অন্যদিকে তারিকুল ইসলাম ফ্রিজ কিনে ফ্রি পেয়েছেন ২১৩ লিটারের ফ্রিজ এবং সবুর হোসাইন ফ্রিজ কিনে পেয়েছেন ওয়ালটনের ৪৩ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন।

উপহারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রায়হান বলেন, ‘ওয়ালটন ক্রেতাদের সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং সম্মান করে। সারা দেশে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা ওয়ালটন পণ্য কিনে নানান উপহার পাচ্ছেন যা তাদের যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাঝে কয়েকজনের হাতে করপোরেট অফিসে অনুষ্ঠান করে প্রাপ্য পণ্য বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। গ্রাহকদের জন্য আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’

অনুষ্ঠানে সাধারণ ক্রেতাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপহারের পণ্য তুলে দেওয়ায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান বিজয়ীরা।

কর্মকর্তারা জানান, সিজন-২৩ এর আওতায় ক্রেতারা দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক শোরুম কিংবা অনলাইনে ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন ও বিএলডিসি ফ্যান কেনার পর পণ্যটির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। এরপর ক্রেতাদের মোবাইলে ওয়ালটন থেকে উপহার পাওয়ার এসএমএস পাঠানো হচ্ছে।

পাশাপাশি ওয়ালটনের ক্রেতাদের জন্য তৈরি ‘আমার আওয়াজ’ মোবাইল অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী ক্রেতাদের জন্যও এবারের ক্যাম্পেইনে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। ২০২৬ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়ালটন পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের জন্য এই বিশেষ সুবিধা থাকছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের ওপর কেন ৫০ শতাংশ শুল্ক দিল মেক্সিকো, নয়াদিল্লির ক্ষতি কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৩
ভারতের ওপর মেক্সিকোর শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির বেশ বড় রকমের ক্ষতিই হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ওপর মেক্সিকোর শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির বেশ বড় রকমের ক্ষতিই হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। এই শুল্ক বহাল থাকলে মেক্সিকোর বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশ অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। মূলত, ভারতের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি থাকায়, তা পুষিয়ে নিতেই ট্রাম্পের মতো করেই ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর মেক্সিকোর এই শুল্ক।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের খবরে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর জবাবে নয়াদিল্লিও জানিয়েছে, তারা নিজেদের রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে পারে। এক সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এই কথা জানিয়েছেন।

এর আগে, এ সপ্তাহের শুরুতে মেক্সিকোর সিনেট এক নতুন শুল্ক ব্যবস্থা অনুমোদন করে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াসহ যেসব দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নেই, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর এই শুল্ক বসানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারত মেক্সিকোর সঙ্গে তাদের অংশীদারত্বকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ এক বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি করতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে দুই দেশের ব্যবসা ও সাধারণ মানুষ লাভবান হয়।’

এই শুল্কের প্রভাব কমাতে ভারত ইতিমধ্যেই মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে মেক্সিকোতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করে, যাতে ভারতীয় রপ্তানি সুরক্ষিত করার জন্য বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়। ভারতীয় ওই কর্মকর্তা জানান, ‘বাণিজ্য দপ্তর মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশ্ব বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারস্পরিক সুবিধাজনক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।’

দুই দেশই একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে তৈরি হচ্ছে। আলোচনা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা যায়, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই শুল্ক থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করতে পারে।

ইতিমধ্যেই বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল ও মেক্সিকোর উপ-অর্থমন্ত্রী লুইস রোসেন্ডোর মধ্যে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও প্রযুক্তিগত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও যোগ করেন, ‘গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে চললেও, ভারত তার রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার নিজের হাতে রেখেছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই শুল্কের প্রভাব নির্ভর করবে ‘মেক্সিকোর অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতীয় রপ্তানির গুরুত্ব কতখানি এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলি শুল্কের ছাড় পেতে বা এই বাড়তি খরচ মেক্সিকোর উপভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে কতটা সক্ষম, তার ওপর।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সতর্কবার্তার পরই এই শুল্ক বাড়ানো হলো, যেখানে বলা হয়েছিল যে, সস্তায় চীনা পণ্য মেক্সিকো হয়ে আমেরিকাতে ঢুকছে। মেক্সিকো এটিকে তাদের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষা, চাকরি সংরক্ষণ এবং সস্তা আমদানির কারণে তৈরি হওয়া বাজারের ভারসাম্যহীনতা দূর করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখিয়েছে। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সাহাই বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে অটোমোবাইল, অটো যন্ত্রাংশ, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস, অরগানিক কেমিক্যাল, ওষুধ, টেক্সটাইল এবং প্লাস্টিকের মতো ক্ষেত্রগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সাহাই পিটিআইকে বলেন, ‘এত বেশি শুল্ক আমাদের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা কমিয়ে দেবে এবং বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা তৈরির ঝুঁকি বাড়াবে।’

এদিকে, ২০২৪ সালে ভারত মেক্সিকোতে ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যেখানে মেক্সিকো থেকে আমদানি হয়েছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ভারত ও মেক্সিকোর মধ্যে চলমান আলোচনা, যার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার সম্ভাবনাও যুক্ত, তা এই ক্রমবর্ধমান শুল্কের মুখে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে স্থিতিশীল করতে এবং ভারতীয় রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষা করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তাঁর আইটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেডের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।

আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন এক সূত্র আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলার পর যেহেতু ফয়সাল করিম মাসুদ প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত, সেহেতু গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাঁর বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করবে। আমরাও তাঁর আর্থিক কোনো অপরাধ আছে কি না, সেগুলোর অনুসন্ধান করব।’

এনবিআরের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে এবং অনেক আলোচনা রয়েছে যে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার জন্য এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য ভারত থেকে অনেক ফান্ডিং হচ্ছে। ফলে সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য মূলত হিসাবগুলো ফ্রিজ করা হয়েছে।’

জানা গেছে, ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্য।

এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ করে তথ্য চাওয়া হয়েছে। পুলিশের বিবৃতিতে সন্দেহভাজন তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদির সঙ্গে দেখা গেছে। তবে কয়েক দিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণই যে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত