Ajker Patrika

স্বাধীনতার পর যত বাজেট, অন্তর্বর্তী সরকারগুলোর বাজেট যেভাবে আলাদা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১৫: ২০
স্বাধীনতার পর যত বাজেট, অন্তর্বর্তী সরকারগুলোর বাজেট যেভাবে আলাদা

১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান ২০২৫ সাল পর্যন্ত, বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট দেশের অর্থনৈতিক যাত্রার এক বিশাল চিত্র তুলে ধরে। এই দীর্ঘ সময়ে বাজেট শুধু আকারের দিক থেকেই বাড়েনি, বরং এর দর্শন, অগ্রাধিকার এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও বহুলাংশে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাজেট সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে, যা নির্বাচিত সরকারের বাজেট থেকে ভিন্ন। নিচে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ অর্থ বাজেটের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলো:

প্রথম দশক: যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন (১৯৭১-৮০)

১৯৭১-৭২ অর্থবছর: এটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট। তাজউদ্দীন আহমদ অর্থমন্ত্রী হিসেবে এই বাজেট পেশ করেন। এটি মূলত ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ৩০ জুন ১৯৭২ পর্যন্ত সময়ের জন্য ছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন ছিল এর মূল লক্ষ্য।

১৯৭২-৭৩ অর্থবছর: স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট এটি, পেশ করেন তাজউদ্দীন আহমদ। আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা (উন্নয়ন বাজেট ৫০১ কোটি টাকা)।

১৯৭৩-৭৪ অর্থবছর: তাজউদ্দীন আহমদ, ৯৯৫ কোটি টাকা।

১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর: তাজউদ্দীন আহমদ, ১, ০৮৪ কোটি টাকা।

১৯৭৫-৭৬ অর্থবছর: ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, ১, ৫৪৯ কোটি টাকা।

১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর: মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, ১, ৯৮৯ কোটি টাকা।

১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর: লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান, ২, ১৮৪ কোটি টাকা।

১৯৭৮-৭৯ অর্থবছর: প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, ২, ৪৯৯ কোটি টাকা।

১৯৭৯-৮০ অর্থবছর: ড. এম. এন. হুদা, ৩, ৩১৭ কোটি টাকা।

১৯৮০-৮১ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ৪, ১০৮ কোটি টাকা।

এই দশকে বাজেট মূলত কৃষি, গ্রামীণ উন্নয়ন, অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং শিল্প খাতের প্রাথমিক বিকাশের ওপর জোর দেয়। যুদ্ধকালীন ক্ষতির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতিকে দাঁড় করানোর চেষ্টাই ছিল প্রধান।

দ্বিতীয় দশক: সামরিক শাসন ও অর্থনৈতিক উদারীকরণ শুরু (১৯৮১-৯০)

১৯৮১-৮২ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ৪, ৬৭৭ কোটি টাকা।

১৯৮২-৮৩ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ৪, ৭৩৮ কোটি টাকা। (এরশাদ সরকারের প্রথম বাজেট)

১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ৫, ৮৯৬ কোটি টাকা।

১৯৮৪-৮৫ অর্থবছর: এম. সাইদুজ্জামান, ৬, ৬৯৯ কোটি টাকা।

১৯৮৫-৮৬ অর্থবছর: এম. সাইদুজ্জামান, ৭, ১৩৮ কোটি টাকা।

১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর: এম. সাইদুজ্জামান, ৮, ৫০৪ কোটি টাকা।

১৯৮৭-৮৮ অর্থবছর: এম. সাইদুজ্জামান, ৮, ৫২৭ কোটি টাকা।

১৯৮৮-৮৯ অর্থবছর: মেজর জেনারেল মুনিম, ১০, ৫৬৫ কোটি টাকা।

১৯৮৯-৯০ অর্থবছর: ড. ওয়াহিদুল হক, ১২, ৭০৩ কোটি টাকা।

১৯৯০-৯১ অর্থবছর: মেজর জেনারেল মুনিম, ১২, ৯৬০ কোটি টাকা।

এই দশকে সামরিক সরকারের অধীনে বাজেট পেশ করা হয়। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বেসরকারি খাতের প্রতি কিছুটা মনোযোগ দেখা যেতে শুরু করে। বাজেটের আকার ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায়।

তৃতীয় দশক: গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের যাত্রা (১৯৯১-২০০০)

১৯৯১-৯২ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ১৫, ৫৮৪ কোটি টাকা। (গণতন্ত্রে ফেরার পর প্রথম বাজেট)

১৯৯২-৯৩ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ১৭, ৬০৭ কোটি টাকা।

১৯৯৩-৯৪ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ১৯, ০৫০ কোটি টাকা।

১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ২০, ৯৪৮ কোটি টাকা।

১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ২৩, ১৭০ কোটি টাকা।

১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর: শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া, ২৪, ৬০৩ কোটি টাকা।

১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর: শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া, ২৭, ৭৮৬ কোটি টাকা।

১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর: শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া, ২৯, ৫৩৭ কোটি টাকা।

১৯৯৯-০০ অর্থবছর: শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া, ৩৪, ২৫২ কোটি টাকা।

২০০০-০১ অর্থবছর: শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া, ৩৮, ৫২৪ কোটি টাকা।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর বাজেট প্রণয়নে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। সংস্কার কর্মসূচি, যেমন বেসরকারীকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা বাজেটে প্রতিফলিত হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের গুরুত্ব বাড়তে থাকে।

চতুর্থ দশক: প্রবৃদ্ধি ও চ্যালেঞ্জ (২০০১-১০)

২০০১-০২ অর্থবছর: শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া, ৪২, ৩০৬ কোটি টাকা।

২০০২-০৩ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ৪৪, ৮৫৪ কোটি টাকা।

২০০৩-০৪ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ৫১, ৯৮০ কোটি টাকা।

২০০৪-০৫ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ৫৭, ২৪৮ কোটি টাকা।

২০০৫-০৬ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ৬১, ০৫৮ কোটি টাকা।

২০০৬-০৭ অর্থবছর: এম. সাইফুর রহমান, ৬৯, ৭৪০ কোটি টাকা।

২০০৭-০৮ অর্থবছর: মির্জা আজিজুল ইসলাম (তত্ত্বাবধায়ক সরকার), ৯৯, ৯৬২ কোটি টাকা।

২০০৮-০৯ অর্থবছর: মির্জা আজিজুল ইসলাম (তত্ত্বাবধায়ক সরকার), ৯৯, ৯৬২ কোটি টাকা।

২০০৯-১০ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ১, ১৩,৮১৫ কোটি টাকা। (আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বাজেট)

২০১০-১১ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ১, ৩২,১৭০ কোটি টাকা।

এই দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতি পায়। তবে ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাজেট প্রণয়নে ভিন্নতা দেখা যায়, যেখানে নীতিগত বড় পরিবর্তন পরিহার করা হয়। ২০০৯ সালে নতুন সরকার আসার পর বাজেটের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর বাজেটের সাধারণ বৈশিষ্ট্য:

তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। তাদের প্রধান কাজ দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদন এবং নীতি-নির্ধারণী কোনো বড় সিদ্ধান্ত না নেওয়া। এই কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর বাজেট সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ধারণ করে:

নীতি-নির্ধারণী পরিবর্তন পরিহার: তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো সাধারণত বড় ধরনের নীতি-নির্ধারণী পরিবর্তন বা নতুন কোনো জনমুখী প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। তাদের বাজেট মূলত সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখা এবং অপরিহার্য ব্যয় নির্বাহের ওপর জোর দেয়।

সংযমী বাজেট: যেহেতু তাদের মেয়াদ সীমিত এবং তাদের প্রধান কাজ নির্বাচন আয়োজন, তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো সাধারণত একটি সংযমী বা সংকোচনমূলক বাজেট উপস্থাপন করে। এতে বাজেটের আকার খুব বেশি বৃদ্ধি পায় না এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা হয়।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর: অর্থনীতির মৌলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ঠিক রাখা তাদের বাজেটের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য থাকে। তারা অর্থনৈতিক সংস্কারের বদলে বিদ্যমান ধারাকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে।

ঘাটতি ব্যবস্থাপনা: নির্বাচিত সরকারের মতো তারাও বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য দেশি-বিদেশি ঋণ এবং অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করে, তবে সাধারণত সতর্কতার সঙ্গে।

সংসদের বাইরে বাজেট পেশ: যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোনো নির্বাচিত সংসদ থাকে না, তাই তাদের বাজেট সাধারণত সংসদ ভবনের বাইরে, যেমন টেলিভিশন ও বেতারে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে পেশ করা হয়। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম সেভাবেই বাজেট পেশ করেছিলেন।

পঞ্চম দশক: মেগা প্রকল্প ও উন্নয়ন অগ্রাধিকার (২০১১-২০২০)

২০১১-১২ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ১, ৬১,২১৪ কোটি টাকা।

২০১২-১৩ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ১, ৯১,৭৩৮ কোটি টাকা।

২০১৩-১৪ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ২, ২২,৪৯১ কোটি টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ২, ৫০,৫৬০ কোটি টাকা।

২০১৫-১৬ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ২, ৯৫,১০০ কোটি টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ৩, ৪০,৬০৫ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ৪, ০০,২৬৬ কোটি টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছর: এ. এম. এ. মুহিত, ৪, ৬৪,৫৭৩ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছর: আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৫, ২৩,১৯০ কোটি টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছর: আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৫, ৬৮,০০০ কোটি টাকা।

এই দশকে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যায়। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা বাজেটে প্রতিফলিত হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হয়। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাজেটে স্বাস্থ্য খাত এবং প্রণোদনা প্যাকেজের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

ষষ্ঠ দশক: কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ (২০২১-২৪)

২০২১-২২ অর্থবছর: আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৬, ০৩,৬৮১ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছর: আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৬, ৭৮,০৬৪ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ অর্থবছর: আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৭, ৬১,৭৮৫ কোটি টাকা। (সংশোধিত হতে পারে)

২০২৪-২৫ অর্থবছর (প্রস্তাবিত) : আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ৭, ৯৭,০০০ কোটি টাকা।

এই দশকে কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করা বাজেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ডলার সংকট, রেমিট্যান্স হ্রাস, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের বাজেটের বিবর্তন: একটি সামগ্রিক চিত্র

  • আকারের বৃদ্ধি: ১৯৭১ সালের মাত্র ৭০০ কোটি টাকার বাজেট থেকে ২০২৫ সালে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছানো বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশাল সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেয়।
  • উন্নয়ন অগ্রাধিকার: প্রথম দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেওয়া হলেও, পরবর্তীতে সামাজিক খাত, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • অর্থনীতিতে সরকারের ভূমিকা: প্রথম দিকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকলেও, নব্বইয়ের দশক থেকে ধীরে ধীরে মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বেসরকারি খাতের ভূমিকা বাড়ানো হয়েছে, যা বাজেটের নীতিতেও প্রতিফলিত হয়েছে।
  • চ্যালেঞ্জ: উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাজেট ঘাটতি, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা সর্বদা বাংলাদেশের বাজেটের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

এই দীর্ঘ যাত্রায় বাংলাদেশের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নীতিগত পরিবর্তন এবং বিভিন্ন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টার একটি দলিল হিসেবে কাজ করেছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (২০২৫-২৬) এবং বাজেট:

যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ (এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হয়ে ভিন্ন প্রকৃতির বলে মনে করা হচ্ছে) আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছর (প্রস্তাবিত) বাজেট পেশ করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই বাজেটের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • সংকোচনমূলক বাজেট: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি একটি সংকোচনমূলক বাজেট।
  • মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে বাজেটে প্রাধান্য দেবে।
  • সংসদের বাইরে পেশ: যেহেতু বর্তমানে নির্বাচিত সংসদ নেই, তাই এই বাজেটও সংসদের বাইরে পেশ করা হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর বাজেট সাধারণত দেশের তৎকালীন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল রাখা, অপরিহার্য কার্যক্রম বজায় রাখা এবং বড় নীতিগত পরিবর্তন পরিহার করার ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের ওপর কেন ৫০ শতাংশ শুল্ক দিল মেক্সিকো, নয়াদিল্লির ক্ষতি কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের ওপর মেক্সিকোর শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির বেশ বড় রকমের ক্ষতিই হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ওপর মেক্সিকোর শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির বেশ বড় রকমের ক্ষতিই হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। এই শুল্ক বহাল থাকলে মেক্সিকোর বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশ অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। মূলত, ভারতের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি থাকায়, তা পুষিয়ে নিতেই ট্রাম্পের মতো করেই ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর মেক্সিকোর এই শুল্ক।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের খবরে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর জবাবে নয়াদিল্লিও জানিয়েছে, তারা নিজেদের রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে পারে। এক সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এই কথা জানিয়েছেন।

এর আগে, এ সপ্তাহের শুরুতে মেক্সিকোর সিনেট এক নতুন শুল্ক ব্যবস্থা অনুমোদন করে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াসহ যেসব দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নেই, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর এই শুল্ক বসানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারত মেক্সিকোর সঙ্গে তাদের অংশীদারত্বকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ এক বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি করতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে দুই দেশের ব্যবসা ও সাধারণ মানুষ লাভবান হয়।’

এই শুল্কের প্রভাব কমাতে ভারত ইতিমধ্যেই মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে মেক্সিকোতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করে, যাতে ভারতীয় রপ্তানি সুরক্ষিত করার জন্য বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়। ভারতীয় ওই কর্মকর্তা জানান, ‘বাণিজ্য দপ্তর মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশ্ব বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারস্পরিক সুবিধাজনক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।’

দুই দেশই একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে তৈরি হচ্ছে। আলোচনা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা যায়, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই শুল্ক থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করতে পারে।

ইতিমধ্যেই বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল ও মেক্সিকোর উপ-অর্থমন্ত্রী লুইস রোসেন্ডোর মধ্যে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও প্রযুক্তিগত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও যোগ করেন, ‘গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে চললেও, ভারত তার রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার নিজের হাতে রেখেছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই শুল্কের প্রভাব নির্ভর করবে ‘মেক্সিকোর অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতীয় রপ্তানির গুরুত্ব কতখানি এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলি শুল্কের ছাড় পেতে বা এই বাড়তি খরচ মেক্সিকোর উপভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে কতটা সক্ষম, তার ওপর।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সতর্কবার্তার পরই এই শুল্ক বাড়ানো হলো, যেখানে বলা হয়েছিল যে, সস্তায় চীনা পণ্য মেক্সিকো হয়ে আমেরিকাতে ঢুকছে। মেক্সিকো এটিকে তাদের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষা, চাকরি সংরক্ষণ এবং সস্তা আমদানির কারণে তৈরি হওয়া বাজারের ভারসাম্যহীনতা দূর করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখিয়েছে। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সাহাই বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে অটোমোবাইল, অটো যন্ত্রাংশ, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস, অরগানিক কেমিক্যাল, ওষুধ, টেক্সটাইল এবং প্লাস্টিকের মতো ক্ষেত্রগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সাহাই পিটিআইকে বলেন, ‘এত বেশি শুল্ক আমাদের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা কমিয়ে দেবে এবং বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা তৈরির ঝুঁকি বাড়াবে।’

এদিকে, ২০২৪ সালে ভারত মেক্সিকোতে ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যেখানে মেক্সিকো থেকে আমদানি হয়েছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ভারত ও মেক্সিকোর মধ্যে চলমান আলোচনা, যার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার সম্ভাবনাও যুক্ত, তা এই ক্রমবর্ধমান শুল্কের মুখে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে স্থিতিশীল করতে এবং ভারতীয় রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষা করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৮
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তাঁর আইটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেডের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।

আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলার পর যেহেতু ফয়সাল করিম মাসুদ প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত, সেহেতু গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাঁর বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করবে। আমরাও তাঁর আর্থিক কোনো অপরাধ আছে কি না, সেগুলোর অনুসন্ধান করব।’

এনবিআরের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে এবং অনেক আলোচনা রয়েছে যে, এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার জন্য এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য ভারত থেকে অনেক ফান্ডিং হচ্ছে, ফলে সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য মূলত হিসাবগুলো ফ্রিজ করা হয়েছে।’

জানা গেছে, ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্য।

এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ করে তথ্য চাওয়া হয়েছে। পুলিশের বিবৃতিতে সন্দেহভাজন তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা চেম্বারের সেমিনার: বিদেশে চিকিৎসার ব্যয় বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার

  • স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ে দ. এশিয়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
  • মাথাপিছু সরকারি স্বাস্থ্যব্যয় মাত্র ১,০৭০ টাকা
  • মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় না ৪৯ শতাংশ মানুষ
  • দেশের স্বাস্থ্যসেবার বাজার ১৪ বিলিয়ন ডলারের
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক গতকালের সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক গতকালের সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ এবং মাথাপিছু সরকারি ব্যয় মাত্র ১,০৭০ টাকা। দেশের প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ এখনো মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়ে ব্যয় করছে বাংলাদেশি রোগীরা। অথচ দেশের স্বাস্থ্যসেবার বাজার বর্তমানে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী আট বছরে আরও ৯ বিলিয়ন ডলার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ২০৩৩ সালে ২৩ বিলিয়নে উন্নীত হতে পারে।

গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান প্রধান অতিথি ছিলেন।

আলোচকেরা বলেন, অবকাঠামোর ঘাটতি, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পশ্চাৎপদতা, দক্ষ মানবসম্পদের সংকট, সেবার উচ্চ ব্যয়, কার্যকর তদারকির অভাব—এসব মিলিয়েই কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য উন্নয়ন অর্জিত হয়নি। অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, কিছু ক্ষেত্রে অর্জন থাকলেও সামগ্রিকভাবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। উন্নত দেশ তো দূরের কথা, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। তাঁর মতে, ইউনিভার্সেল হেলথকেয়ার বাস্তবায়ন বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়, তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় জোর দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। তিনি জানান, সীমিত বাজেট, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, মানের ঘাটতি, শহর-গ্রামের বৈষম্য, বাড়তি ব্যয়, দুর্বল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা—এসব কারণেই স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যার ফলে তুলনামূলক উন্নত চিকিৎসার জন্য বিপুলসংখ্যক রোগী বিদেশমুখী হওয়ায় বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার বাইরে চলে যাচ্ছে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, মানসম্মত ও রোগীবান্ধব সেবা নিশ্চিতে কাঠামোগত ঘাটতি, দক্ষ জনবলস্বল্পতা, অনুমোদনহীন ক্লিনিক-ফার্মেসির বিস্তার, ভুল রোগনির্ণয়, ভুয়া ওষুধ এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা জনস্বাস্থ্য আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। স্বাস্থ্যবিমা কার্যকর না হওয়ায় ৭৪ শতাংশ ব্যয় রোগীকেই বহন করতে হয়, যা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য বড় ঝুঁকি।

নির্ধারিত আলোচনায় অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক সরকারি হাসপাতালের মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ জরুরি বলে মনে করেন। ইউনিভার্সেল মেডিকেলের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী স্বাস্থ্য খাতে আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় ও পিপিপি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বছরের বড় হাটে দুই কোটি বেচাকেনা, ঊর্ধ্বমুখী দাম

­যশোর প্রতিনিধি
গাঁদা ফুলের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় এর দাম কম। মানভেদে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। বিপরীতে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে অন্যান্য ফুল। গতকাল যশোরের গদখালী বাজার থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাঁদা ফুলের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় এর দাম কম। মানভেদে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। বিপরীতে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে অন্যান্য ফুল। গতকাল যশোরের গদখালী বাজার থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্রহায়ণের শীতের সকাল। সাইকেল ও ভ্যানের ওপরে থরে থরে সাজানো রঙিন ফুলে ভরে উঠেছে যশোরের গদখালীর বাজার। গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা—ফুলের ঘ্রাণ আর দরদামের হাঁকডাকে মুখর পুরো এলাকা। বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালীতে গতকাল শনিবার জমে ওঠে বছরের বড় হাট।

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে বসা এই বাজারে এদিন প্রায় ২ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। চাহিদা বাড়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ফুলের সরবরাহ ও কেনাবেচা হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে চলতি মৌসুমে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন ফুলচাষিরা।

গতকাল বাজারে সবচেয়ে বেশি এসেছে গাঁদা ফুল। মানভেদে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। তবে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম তুলনামূলক কম। বিপরীতে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে অন্যান্য ফুল।

চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয় ২, জারবেরা ১৬-১৮, গ্লাডিওলাস ১৬-২০, রজনীগন্ধা ১০-১৪, গোলাপ ৮-১০ এবং ভুট্টা ফুল প্রতিটি সর্বোচ্চ ১৫ টাকা দরে।

ফুলচাষি খালেদুর রহমান টিটু বলেন, ‘বিজয় দিবস ও বুদ্ধিজীবী দিবসের বাজার ধরার জন্য কয়েক মাস ধরে গাঁদা ফুলের পরিচর্যা করেছি। গাঁদার কাঙ্ক্ষিত দাম পাইনি, তবে অন্য ফুলের দাম ভালো থাকায় ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।’

রজনীগন্ধার চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, দুই বিঘা জমিতে চাষ করা ফুল এবার ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আজ ৯০০টি রজনীগন্ধা ১৪ টাকা পিস দরে বিক্রি করেছি। গতকাল ছিল ৯ টাকা। সামনে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, যশোর জেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুলের বাণিজ্যিক চাষ হয়। ডিসেম্বর থেকে মার্চ—এই চার মাসই ফুলের প্রধান মৌসুম। এ সময় অন্তত ৭-৮টি গুরুত্বপূর্ণ দিবসকে ঘিরে ১৫০-২০০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনার লক্ষ্য থাকে স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীদের।

গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মঞ্জুর আলম বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দিবসকে সামনে রেখে চাষিরা ফুল উৎপাদন করেন। এবার গাঁদা ফুলের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় এর দাম কম। তবে গাঁদা ছাড়া প্রায় সব ফুলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গতকালের হাটে প্রায় ২ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত