Ajker Patrika

আসল খেজুর রসের রং ও স্বাদ মধুর মতো

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আসল খেজুর রসের রং ও স্বাদ মধুর মতো

শীতকাল আসন্ন, গ্রামে সকালের শিশিরের সঙ্গে মৃদু শীত অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পরপরই কনকনে শীতের আবহ। শীতের সকাল মানেই খেজুর রস, ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, রসের পায়েসসহ আরও অনেক বাহারি সব পিঠাপুলির আয়োজন। এই খাবারগুলো তৈরি করা হয় খেজুরের রস কিংবা পাটালি গুড় দিয়ে। এ ছাড়া গ্রামে শীত মানেই খোলা চিতই, দুধ চিতই, রস চিতই, দুধ পুলি, তেলে ভাজা পিঠা, কলার পিঠা, মুড়ির মোয়া, খইয়ের মুড়কিসহ প্রতিদিন নানা আয়োজন। সব আয়োজনের সঙ্গেই খেজুর গুড় ও রসের গভীর এক আত্মীয়তা। খেজুর রস বা খেজুর গুড় ছাড়া এসব পিঠা তৈরি চলেই না। 

শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। তবে গ্রামের মানুষের সচেতনতার অভাব ও নির্বিচারে খেজুর গাছ নিধন করায় দিনদিন পরিবেশবান্ধব এ খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। 

টাঙ্গাইলের সখীপুরে অধিকাংশ বাড়ির আঙিনায় রয়েছে খেজুর গাছ। রাস্তার পাশে ও বাড়ির আঙিনায় অনেকটা অনাদরেই বেড়ে ওঠা খেজুর গাছগুলো থেকে প্রতিবার রস সংগ্রহ করা হয়। এবার রাজশাহী থেকে বেশ কয়েকটি দল এসেছে সখীপুরে। তাঁরা খেজুর রস সংগ্রহের উদ্দেশে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে গাছের কাণ্ড পরিষ্কার ও কাঠি বা নলি বসানোর কাজ শেষ। শুরু হয়েছে গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব। 

এ বিষয়ে রাজশাহী থেকে আসা গাছি আবদুস ছালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা পেশাগত কারণে এখানে এসেছি। চাহিদা মত খেজুর গাছ না পাওয়ার কারণে দলের সদস্য অনেকেই হতাশ। যে খেজুর গাছের যে রস পাওয়া যাচ্ছে তাতে আশানুরূপ গুড় তৈরি করতে পরব কিনা এ নিয়ে অনেকের হতাশা রয়েছে। তারপরও এ বছর প্রায় ১৫০ টির মতো গাছ পেয়েছি। এর মধ্যে প্রতিদিন ৬০-৭০টি গাছ থেকে রস পাওয়া যাবে। আশা করছি পূর্ণ মৌসুমে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে গুড় পাওয়া যাবে। 
 
তিনি আরও বলেন, শীত একটু বেশি পড়লে পিঠাপুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। তাই খেজুর রস ও গুড়ের দামও বাড়বে বলে আশা করছি। যে পরিমাণ শ্রম দিতে হয় সেই অনুযায়ী লাভ করতে পারি না। তবুও পেশাগত কারণে এই কাজ করছি। 

উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের আনোয়ার হোসেন স্মৃতিচারণ করে বলেন, এক সময় ভোরবেলায় এক টাকায় গ্লাস কাঁচা রস ও জ্বাল দেওয়া খেজুর রস ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে কিনে খেতাম। এখন বাজারে যে খেজুর রস ও গুড় পাওয়া যায় এতে সেই স্বাদই পাওয়া যায় না। আসল রসের রং ও স্বাদ মধুর মতো লাগত। 

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর শীতেই মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতি-পুতীদের পিঠাপুলির দাওয়াত খাওয়াতে হয়। বছরের ওই এক-দুইটা দিন বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। পরিবারের সবাই একত্রিত হয়। সবার কলকাকলিতে বাড়িটা ভরে উঠে। খরচ করেও শান্তি পাই। মূল আয়োজনই থাকে খেজুর রস-গুড় আর দুধের পিঠাকে (রস আর দুধের মিশ্রণে ভেজানো চিতই পিঠা) কেন্দ্র করে। 

এ বিষয়ে উপজেলার মৌশা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগের মতো খেজুর গাছ এখন আর চোখে পড়ে না। শুধু রাস্তার পাশে কিংবা জমির আইলে কিছু খেজুরগাছ এখনো রয়ে গেছে। গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় খেজুরের রস সংগ্রহের ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশুদ্ধ রস ও গুড় পেতে অবশ্যই খেজুর গাছের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। 

এ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অধিকাংশ অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। অন্তত আসল রস ও গুড়ের জন্য হলেও এসব গাছ রক্ষা করা প্রয়োজন। খেজুর গাছ রক্ষায় স্থানীয়দের আরও সচেতন হতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...