Ajker Patrika

সাদাপাথর লুট

৫১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক

  • ১০ সুপারিশসহ ৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির।
  • ৫ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
  • বিজিবির সহযোগিতা পায়নি তদন্ত কমিটি, চিঠি দিয়েও সাড়া মেলেনি।
ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট 
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০১: ০৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সিলেটের বিখ্যাত সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের পাথর লুটের ঘটনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ৫১ ব্যক্তি ও সংস্থার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও (৪ জন; ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব পালনকারী), ওসি, বিজিবির সদস্য ও স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির শীর্ষ নেতা ছাড়াও রয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতারাও। একমাত্র প্রতিষ্ঠা হিসেবে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকেও (বিএমডি) দায়ী করা হয়েছে। সাদাপাথর লুটপাটের সঙ্গে জড়িত/সুবিধাভোগী হিসেবে কয়েকজন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার ব্যক্তিবর্গের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। পাথর কোয়ারি লিজ (ইজারা) পাওয়ার নিমিত্তে ইজারামূল্যের কয়েক গুণ অর্থ উৎকোচ দিতে হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানকালে প্রাপ্ত তথ্যে এদের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে দেওয়া প্রতিবেদনে অনুসন্ধান নথি চালুর অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি পেলে এদের প্রত্যেকের বিষয়ে আলাদা তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দুদক সূত্র আজকের পত্রিকা'কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, এ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনসহ ১০টি সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে সাত পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পদ্মাসন সিংহ। বদলির আদেশ হওয়া দায়িত্বরত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বিকেলে আজকের পত্রিকাকে প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি এখনো পড়ে দেখা হয়নি। দেখার পর তা আজই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হবে।’

জেলা প্রশাসনের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, তদন্ত কমিটিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ ও সুপারিশ পেশ তিনটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তালিকার ভিত্তিতে তারা দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে ১০ টি সুপারিশ করেছে। এতে জড়িতদের নামের তালিকাও রয়েছে। তবে বিজিবির সহযোগিতা পায়নি তদন্ত কমিটি। এমনকি চিঠি দিয়েও সাড়া মেলেনি বিজিবির।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন
  • সাদাপাথরে বিএমডির অফিস স্থাপন
  • টাস্কফোর্সের অভিযান বৃদ্ধি, চেকপোস্ট বাড়ানো
  • গাছ-পালার সংখ্যা বৃদ্ধি
  • এ ছাড়া প্রত্যেক সংস্থাকে নিজ দায় নিজেদের তদন্তের মাধ্যমে নিরূপণ করতে হবে

পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে ৮০ শতাংশ পাথর লুটের খবর প্রচার হলে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনা তদন্তে ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।

অন্যদিকে, সাদাপাথর ও রেলওয়ে বাংকার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশ ও পর্যটন স্থানের নান্দনিকতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মঙ্গলবার গঠিত কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীনকে আহ্বায়ক ও সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) দেবজিৎ সিংহকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

দুদকের প্রতিবেদন

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু পর্যটন সেবা ও নদীর তীরেই বিজিবি ক্যাম্পের টহল চলমান থাকলেও পর্যটন স্পট থেকে বিগত কয়েক মাসে কয়েক শত কোটি টাকা মূল্যের পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রায় ৮০% পাথর তুলে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইন্ধন ও সরাসরি সম্পৃক্ততায় এটি হয়েছে। পাথর আত্মাসাৎ প্রক্রিয়াটি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশে সংঘটিত হয়।

বিএনপি ২০ নেতার নাম

প্রতিবেদনে বিএনপির ২০ নেতার নাম এসেছে। মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেও বিষয় অস্বীকার করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ সময় নেতারা বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী কোনো ভাবেই এই অপকর্মে সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।’

জামায়াতের দুই নেতার নাম

সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনের নাম রয়েছে। বুধবার রাতে বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াত নেতারা। তাঁরা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পাথর লুটে জড়িত প্রকৃত আসামিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানান তাঁরা।

দুদক সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সা’দাৎ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে অনুসন্ধান নথি চালুর জন্য অনুমতি চেয়ে আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। অনুমতি পেলে প্রত্যেকের বিষয়ে আলাদা তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দাম্পত্যকলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত