Ajker Patrika

সিলেট-সুনামগঞ্জে আড়াই লাখেরও বেশি পরিবার বিদ্যুৎহীন

সিলেট প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১৮: ২১
সিলেট-সুনামগঞ্জে আড়াই লাখেরও বেশি পরিবার বিদ্যুৎহীন

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর কুমারগাঁওয়ে ১৩২/৩৩ কেভির মেইন গ্রিডের চার ইঞ্চি নিচে রয়েছে পানি। চারটি উপকেন্দ্রের মধ্যে পানি ঢুকে যাওয়ায় বরইকান্দি ও উপশহর উপকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জের সব কটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পানিতে তলিয়ে গেছে। 

আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুই জেলার প্রায় আড়াই লাখ পরিবার বিদ্যুৎহীন রয়েছে। 

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিডও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনটা হলে পুরো সিলেট বিভাগ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নও হয়ে পড়বে এই জনপদ। তবে কুমারগাঁওস্থ ১৩২/৩৩ কেভির মেইন গ্রিডটি চালু রাখার জন্য কাজ করছে সেনাবাহিনীর একটি দক্ষ টিম। 

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা গেছে, বাসাবাড়ির মিটার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নগরীর উপশহর এলাকায় এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা বিদ্যুতের সাবস্টেশনে পানি ওঠায় পুরো দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। 

সিলেটের চার জেলায় পিডিবির অধীন প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহক আছে। এর মধ্যে সিলেটের দেড় লাখেরও বেশি ও সুনামগঞ্জের ৯০ হাজার গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎহীন আছে। 

পুরো বিভাগ বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কায়সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, সমিতির সিলেট-১-এর অধীন ৪ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক এবং সিলেট-২-এর অধীন ২ লাখ ১২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে অন্তত ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন আছে। 

বিউবো সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট নগরীর কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভির মেইন গ্রিডের ভেতরেও বন্যার পানি ঢুকেছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষ ছুঁই ছুঁই করছে বন্যার পানি। পানি বেড়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষের ভেতরে ঢুকলে পুরো সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভির মেইন গ্রিড রক্ষার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনীর একটি দক্ষ টিম। ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎসংশ্লিষ্টরা এবং সিটি করপোরেশনের লোকজনও কাজ করে যাচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্টদের আশা, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অন্তত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখার একটি উপায় বের হবে। 

বিউবো সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। যদি আরও দুই থেকে তিন ঘণ্টা এমনভাবে চলে, তাহলে নিয়ন্ত্রণকক্ষে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে পুরো সিলেট বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।’ 

এদিকে বিকেলে সিটি করপোরেশন থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন এলাকা বন্যাকবলিত হওয়া ঠেকাতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি অবলোকন করে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে সিলেট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেন। শুক্রবার সকাল থেকে সেখানে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। 

কুমারগাঁওয়ের মেইন গ্রিড সচল রাখার জন্য কাজ করছে সেনাবাহিনীকুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন থেকে ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এখানে সরবরাহ বন্ধ হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট দেখা দেবে। পাশাপাশি সিলেট অঞ্চল পুরোটা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। এরই মধ্যে একাংশ বন্যাকবলিত হওয়ায় সিলেট নগরীর একাংশ ও সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। 

বিদ্যুৎ স্টেশনে বিদ্যুৎসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়লে পুনরায় মেরামত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ জন্য কোনোভাবে যেন পানি না ঢোকে, সেই ব্যবস্থা করার কাজ চলছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশনকে। আর পাঁচ-ছয় ইঞ্চি পানি বাড়লে এই কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে গোটা সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এমনটি হলে কার্যত সিলেট বন্যার ক্ষতির পাশাপাশি বড় ধরনের সংকটে পড়বে।

মেয়র বলেন, ‘গত রাত থেকে এই সংকট মোকাবিলায় আমি প্রশাসনের সব বিভাগ ও শাখার সহযোগিতা চেয়েছি। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুতের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে কাজ শুরু করেছে। এখানে আমার সঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক, সেনা কর্মকর্তাসহ সব দপ্তর সংস্থার কর্তারা আছেন। আমরা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও মাটি দিয়ে সুরমা নদীর পানি যাতে কেন্দ্রে না ঢুকতে পারে তার জন্য অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছি।’ 

সিসিক মেয়র বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ করা হলেই সিসিকের সাকার মেশিন দিয়ে কুমারগাঁও স্টেশনের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করব। আশা করছি সবার সহযোগিতায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারলে বড় ধরনের সংকট থেকে রক্ষা পাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালের ১০ স্থানে অবৈধ বাঁধ

আবুল কাশেম, সাঁথিয়া (পাবনা)
বাঁশ, পলিথিন ও চাটাই দিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত বাঁধ। সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রামের দত্তপাড়া খালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাঁশ, পলিথিন ও চাটাই দিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত বাঁধ। সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রামের দত্তপাড়া খালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাগেশ্বরী-ডি-২ ক্যানালের (কৈটলা পাম্প হাউস থেকে মুক্তার ধর পর্যন্ত খাল) প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ১০টি স্থানে অবৈধভাবে সুতি জালের বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়ে ক্যানাল পাড়ের জমিতে পানি জমে রয়েছে। ফলে পাকা ও আধা পাকা আমন ধান পানির নিচে ডুবে আছে।

এ ছাড়া চলতি রবি মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন ও সরিষার আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এমনটি হচ্ছে অভিযোগ করে বাঁধ অপসারণের দাবিতে ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কৃষকেরা।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, কৈটলা পাম্প হাউস থেকে মুক্তার ধর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ক্যানাল দিয়ে বর্ষা শেষে সাঁথিয়ার প্রায় ১৫টি বিলের পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু মাছ ধরার জন্য প্রায় ১০টি স্থানে সুতি জালের বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি স্থানে ইতিমধ্যে জাল টানানো হয়েছে। ফলে মুক্তার ধর, সোনাই বিল, ঘুঘুদহ বিল, জামাইদহ, বড়গ্রাম বিল, খোলসা খালি বিল, কাটিয়াদহ বিল, গাঙভাঙা বিল ও টেংরাগাড়ী বিলের পানি বের হতে না পারায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

অন্যদিকে পানি না নামায় কৃষকেরা পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। প্রতিবছর কাদামাটির ওপর বীজতলা তৈরি হলেও এবার জমিতে পানি থাকায় কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিলপাড়ে কৃষকেরা বীজতলার জন্য হাজার হাজার বস্তা ছাই মজুত করে রেখেছেন, পানি নামলেই বীজতলা তৈরি করবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ক্যানালের বিভিন্ন অংশে সুফলভোগী মৎস্যজীবীরা লিজ নিয়ে মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন। কিন্তু মৎস্য অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির অভাবে লিজকে পুঁজি করে প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় এসব সুফলভোগী সুতি জালের অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করেন। প্রতিবছর যা কৃষকদের জন্য বড় বিপদ হয়ে দেখা দেয়।

কাশিনাথপুর ইউনিয়নের দোয়ারগাড়ী বিলে দেখা গেছে, কোমরসমান পানিতে আধা পাকা ধান পড়ে আছে। কোথাও কোথাও কৃষকেরা হাঁটুপানিতে জমি পরিষ্কার করে পেঁয়াজের বীজতলা তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, শামুকজানী বাজারের দক্ষিণে, দত্তপাড়া গ্রামের পশ্চিমে, বড়গ্রাম, তালপট্টি নামক স্থানের ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে, সৈয়দপুর মৌজা এবং পুন্ডুরিয়া ব্রিজের পাশে অন্তত ৫টি স্থানে সুতি জালের বাঁধ দেওয়া হয়েছে। তালাই, পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব বাঁধে কচুরিপানা জমে পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে সৈয়দপুর গ্রামের মোস্তফা প্রামাণিক বলেন, ‘মাছের অভয়ারণ্যের জন্য লিজ নিয়ে মাছ শিকার করি। তবে সুতি জালের জন্য লিজ নেওয়া হয়নি।’

অনেক চেষ্টার পরেও অবৈধভাবে সুতি জালের বাঁধ দেওয়া ব্যক্তিদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বাঁধে মাছ শিকার করা ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লিজ নিয়ে মাছ শিকার করছি।’

এ বিষয়ে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে সুতি জালের বাঁধ দিয়ে মাছশিকারের জন্য কাউকে কোনো লিজ দেওয়া হয়নি।’ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুল রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালাই। সুতি জাল কেটে দিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করি। তাঁরা তিন দিনের মধ্যে বাঁশ অপসারণের আশ্বাস দিয়েছেন। তা না করলে আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাঁথিয়া ইউএনও রিজু তামান্না বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানি। এসি ল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা সময় চেয়েছেন। দ্রুত অপসারণ না হলে মৎস্য অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন একসঙ্গে অভিযান চালিয়ে বাঁধ উচ্ছেদ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে খেজুর রসের মৌসুম

২০০ কোটি টাকার গুড়ের বাজার

 রিমন রহমান, রাজশাহী
রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত করছেন গাছি সাইফুল ইসলাম মিলু। বুধবার ভোরে রাজশাহীর পুঠিয়ার জরমডাঙ্গা গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত করছেন গাছি সাইফুল ইসলাম মিলু। বুধবার ভোরে রাজশাহীর পুঠিয়ার জরমডাঙ্গা গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোরের কুয়াশা কাটেনি তখনো। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চকগোচর গ্রামের সরু পথে হাঁটলে দূর থেকে দেখা যায়—সারি সারি খেজুরগাছে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি। গাছের মাথা থেকে ঝরছে রস। একটার পর একটা গাছে উঠে গাছিরা নামিয়ে আনছেন রসের হাঁড়ি।

প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ দিকে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলায় শুরু হয় খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরির মৌসুম। রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করে পাতা হয় মাটির হাঁড়ি। সারা রাত ধরে ফোঁটা ফোঁটা রস জমে হাঁড়িতে। সকালে সেই রস নিয়ে শুরু হয় গুড় তৈরির ব্যস্ততা। বড় চুলায় ফুটন্ত রসের ঘ্রাণে তখন মিষ্টি হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ১১ লাখ ৮ হাজার ১৮টি। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২৫ লিটার রস পাওয়া যায়, যা থেকে প্রায় ১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে রস সংগ্রহ মৌসুম। গত বছর রাজশাহীতে প্রায় ১০ হাজার টন গুড় উৎপাদিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার গাছির আয় হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। চলতি মৌসুমে আরও বেশি গুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

চারঘাট উপজেলার চকগোচর গ্রামের গাছি মো. ওবায়দুল বলেন, গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। চিনির দাম কম হওয়ায় অনেকে আবার রসের সঙ্গে চিনিও মিশিয়ে দিচ্ছেন। এতে লাভ বেশি হচ্ছে। তবে যাঁরা চিনি দিয়ে গুড় তৈরি করেন না, তাঁদের গুড়ের দাম কিছুটা বেশি। এখন অনলাইনে খাঁটি গুড়ের ভালো চাহিদা আছে।

গত বুধবার ভোরে পুঠিয়ার ভুবননগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাছ থেকে রস নামাচ্ছেন মো. রানা। তাঁর বাইসাইকেলে দুটি বড় বড় জার বাঁধা। গাছ থেকে নামানো রস নেওয়া হচ্ছে ওই জারে। রানা বলেন, ‘আমার ইজারা নেওয়া ৫২টি গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লিটার রস পাই। এতে ১০-১১ কেজি গুড় হয়।’ একই গ্রামের জালাল উদ্দিনের বাড়িতে দেখা গেল, তাঁর স্ত্রী রওশন আরা রস জ্বাল দিচ্ছেন। রওশন বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই ১৬০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি হচ্ছে।

পুঠিয়ার জরমডাঙ্গা গ্রামের গাছি সাইফুল ইসলাম মিলু বলেন, যাঁদের গাছ আছে তাঁদের বেশির ভাগই রস নামাতে পারেন না। তাই তাঁরা এক মৌসুমের জন্য গাছ ইজারা দিয়ে দেন। গাছ দেখে ইজারার দাম হয়। কোনো গাছের জন্য দিতে হয় ৫০০ টাকা, কোনোটির ইজারামূল্য ১ হাজার। একজন গাছি সাধারণত ৩০ থেকে ১০০টি গাছ ইজারা নেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহীর খেজুর গুড়ের সুনাম সারা দেশে। গেল মৌসুমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার গুড় বিক্রি হয়েছে। এবার আরও বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। তবে কিছু অসাধু গাছি গুড়ের সঙ্গে চিনি মেশাচ্ছেন, যা রাজশাহীর খাঁটি গুড়ের সুনামের জন্য হুমকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জয়দেবপুর রেলক্রসিং দখলমুক্ত: স্বস্তির নিশ্বাস গাজীপুরবাসীর

গাজীপুর প্রতিনিধি
উচ্ছেদ অভিযান। ছবি: আজকের পত্রিকা
উচ্ছেদ অভিযান। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর মহানগরের জয়দেবপুর রেলক্রসিং এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শতাধিক দোকান, অস্থায়ী স্থাপনা ও হকারদের উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক), জেলা প্রশাসন, মহানগর পুলিশ ও রেলওয়ের সমন্বয়ে উচ্ছেদ চালানো হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন গাসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারিয়া তাসনিম, জয়দেবপুর রেল জংশনের স্টেশনমাস্টার মাহমুদুল হাসান এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বিভাগের ইমরান হোসেন।

গাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল হাসান বলেন, ইতিমধ্যে রেলক্রসিং ও আশপাশের এলাকা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে জয়দেবপুর মোবিলিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ফ্লাইওভার নির্মাণ, বিকল্প সড়ক সম্প্রসারণ, ট্রাফিক সিগন্যাল অটোমেশন ও ফুটপাত সংস্কার করা হবে। ফলে গাজীপুর হবে দখলমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট নগর।

উচ্ছেদের পর ভাসমান হকার ও ফল ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা বছরের পর বছর সেখানে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। এখন তাঁরা কোথায় দাঁড়াবেন। তাই তাঁরা প্রশাসনের কাছে পুনর্বাসনের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে সোহেল হাসান বলেন, ‘আমরা যেমন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে দখল উচ্ছেদ করছি, তেমনি যারা ভাসমান ব্যবসায়ী তাদের বিষয়টিও মানবিকভাবে বিবেচনা করা হবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আইনানুগভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গাজীপুরের উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। নাগরিকদের চলাচল সহজ করা, রাস্তাঘাট ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। আজকের এই সমন্বিত উদ্যোগ শহর পুনরুদ্ধারের একটি দৃষ্টান্ত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুক্রবার ঢাকা ইপিজেড ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
শুক্রবার ঢাকা ইপিজেড ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

ঢাকা ইপিজেড, আশুলিয়া, নবীনগর ও গাজীপুরের আংশিক এলাকায় আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আশুলিয়া জোনের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খালেদ খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সেকশন-৩-এর আওতায় পাইপলাইন স্থানান্তর ও নির্মাণকাজ সম্পাদনের জন্য সাময়িক এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ৭টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ইপিজেডের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারসহ নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের উভয় পাশে সব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে।

যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না:

ঢাকা ইপিজেড, গাজীপুরের কাশিমপুর, সারদাগঞ্জ, হাজী মার্কেট, শ্রীপুর, কবিরপুর, বাড়ইপাড়া, চন্দ্রা, আশুলিয়ার নবীনগর, সাভার ক্যান্টনমেন্ট, কাঠগড়া, জিরাবো, গাজীরচট, নয়াপাড়া, দেওয়ান ইদ্রিস সড়কের উভয় পাশের এলাকা, নয়ারহাট, বলিভদ্র, পল্লীবিদ্যুৎ, ডেণ্ডাবর, ভাদাইল, লতিফপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিদ্যমান সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এর আশপাশের এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে। সাময়িক এই অসুবিধার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত