Ajker Patrika

সুনামগঞ্জে বাড়ছে নদীর পানি: কেউ আশায়, কেউ শঙ্কায়

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জে নদ–নদীর পানি বাড়লেও এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
সুনামগঞ্জে নদ–নদীর পানি বাড়লেও এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জে ও উজানে কয়েক দিন ধরে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতে নদ–নদীর পানি বাড়লেও এখনো তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। এদিকে নদীর পানি বাড়ায় হাওরের স্লুইসগেট খুলে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এখন মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এতে বন্যার কোনো শঙ্কা নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৭৯ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় জালখালী নদীর পানি বেড়েছে ৮৪ সেন্টিমিটার, যাদুকাটা নদীর পানি বেড়েছে ৫৮ সেন্টিমিটার। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০২ সেন্টিমিটার, যাদুকাটা ১৯১ সেন্টিমিটার এবং জালখালী ১৮৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে আগের বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় সুনামগঞ্জের নদীতীরবর্তী ও হাওরাঞ্চলের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ আলী বলেন, ‘হাওরে ধান কাটা শেষ। এখন পানি এলে সমস্যা নেই। কিন্তু বন্যা হলে তো কষ্ট বাড়বে। ঘরে ধান তুলেছি, ঘরটাও ঠিক করার দরকার ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুই করতে পারছি না। পানি খবরে এখন ভয় লাগে।’

সুরমা নদীর তীরবর্তী বড়পাড়ার গৃহবধূ সুরেজান বিবি বলেন, ‘আমার ঘর নদীর একদম পাশে। প্রতিবছর বন্যা হলে পানি ঢুকে পড়ে। পানি বাড়ছে দেখে ভয় পাচ্ছি। যে পরিমাণ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রাতে চিন্তায় ঘুম আসে না।’

অন্যদিকে অনেকেই বলছেন, এই পানি হাওরের জন্য আশীর্বাদ। বৃষ্টির পানির কারণে হাওর জীবন্ত হয়ে ওঠে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী মুসা মিয়া বলেন, ‘বর্ষায় ধীরে ধীরে যখন হাওরে পানি বাড়ে, তখনই আমরা মাছ ধরার জাল, ফাঁদ তৈরি করি। এই সময়টায় মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই, অনেকে দেনা-পাওনাও মিটাই। হাওরের পানিতে এখন কৈ, টেংরা, শিং, চিংড়িসহ অনেক ধরনের দেশি মাছ ওঠে। এসব মাছ বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। তাই আমরা চাই পানি আসুক, কিন্তু এই পানি বেড়ে যেন বন্যা না হয়।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘ফেসবুকে খালি পানির খবর দেখি। কিন্তু হাওরে পানি একটু একটু করে ঢুকছে। খুব বেশি পানি নেই, যা আছে তা স্বাভাবিক পানি। বরং এই পানিতে আমরা মাছ পাব, জীবিকা চলবে।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম বলেন, ‘নদীতে পানি আসায় আমরা শনি ও মাটিয়ান হাওরের সবগুলো স্লুইসগেট খুলে রেখেছি। ধীরে ধীরে পানি ঢুকছে। তবুও যদি কোনো বাঁধ কাটা লাগে, আমরা কাটব। এখন পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।’

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘ভারতের চেরাপুঞ্জি এবং দেশের সুনামগঞ্জে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা বর্ষা মৌসুমের স্বাভাবিক চিত্র। এই বৃষ্টির কারণে নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে তা বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আমাদের হাওরে পানি ধারণের যথেষ্ট জায়গা আছে, হাওর পরিপূর্ণ হতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।’

প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার আরও বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার শঙ্কা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্যার যে তথ্য প্রকাশ হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করলে আগেই সতর্কবার্তা দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি বাসভবনে একাই থাকতেন শরীয়তপুরের ডিসি, পরিবার থাকত ঢাকায়

স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে ফাঁস দিলেন স্ত্রী

‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারধর

ইরানে ভূমিকম্প নিয়ে পারমাণবিক পরীক্ষার জল্পনা, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত