Ajker Patrika

যাদুকাটায় বালু লুটের মহোৎসব

  • হুমকিতে বসতবাড়ি, কৃষিজমি, রাস্তাঘাট।
  • অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি ও আ.লীগের লোকজনের বিরুদ্ধে।
  • প্রয়োজনে ইজারা বাতিলের হুঁশিয়ারি জেলা প্রশাসকের।
বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ০৪
বিন্নাকুলি বাজারসংলগ্ন নদীতীরে নোঙর করা বালু বহনে ব্যবহৃত নৌকা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিন্নাকুলি বাজারসংলগ্ন নদীতীরে নোঙর করা বালু বহনে ব্যবহৃত নৌকা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে চলছে বালু লুটের মহোৎসব। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে রয়েছে নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি ও কৃষিজমি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, ৮৬ কোটি টাকার আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতু এবং ঐতিহ্যবাহী অদ্বৈত মন্দিরের মতো স্থাপনা। দীর্ঘদিন ধরে ইজারাদার এবং বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লোকজন মিলে এই নদীতে লুটপাট চালিয়েছে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি নেতাদের মিত্র হিসেবে পেয়েছেন ইজারাদারেরা। বিশেষ করে সম্প্রতি (৭-১১ অক্টোবর) প্রায় শতকোটি টাকার বালু লুটের ঘটনায় স্থানীয়রা হতভম্ব।

যাদুকাটা নদীর উৎপত্তি ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়ে। তাহিরপুর উপজেলার বারেকটিলা ও লাউড়গড়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এই নদী একসময় ছিল মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫৭ মিটার প্রশস্ত। কিন্তু বছরের পর বছর অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে এর গড় প্রস্থ এখন এক কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। ইজারাদার ও স্থানীয় রাজনীতিকদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের বিরুদ্ধেও এই লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৪ অক্টোবর তাহিরপুর থানায় বালুমহাল ও বালু ব্যবস্থাপনা আইনে মামলা করেন ইজারাদারের লোকজন। যদিও এটিকে লোকদেখানো বলছেন স্থানীয়রা। একই দিন থানার এসআই পংকজ দাশ বাদী হয়ে আরও চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ১৬ অক্টোবর সুনামগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। এই মামলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীদের নাম উঠে এসেছে।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব উদ্দিন, তাঁর ভাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাকাব উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বজিৎ সরকার এবং নদীর তীরসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মোশাহিদ আলম ওরফে রানু মেম্বার। রানু মেম্বার এর আগেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এ ছাড়া অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের আব্দুল কাইয়ুম খেলু মাস্টার, খাজা মাঈন উদ্দিন, আবু বক্কর, বিএনপির রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা গোলাপ মাহমুদের চাচাতো ভাই শিপন, শোভন, শাহান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি প্রার্থী আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

জানা যায়, এই লুটপাটের অগ্রভাগে ছিলেন খেলু মাস্টার ও খাজা মাঈন উদ্দিন। যদিও প্রথমে তারাই বালু সরানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সমঝোতা করে তাঁরাও বালু লুটে শামিল হন।

স্থানীয় পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী আবুল হোসেন বলেন, এখন প্রশাসনের অবস্থা ‘ঠেলার নাম বাবাজি’। নোটিশ দেওয়া, বাঁশের বেড়া দেওয়া; সবই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। পুলিশ, বিজিবি, প্রশাসন সবাই জানে কারা এসবের পেছনে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইজারাদারের খেয়াল-খুশিতেই সব চলছে।

যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা চলার পর গত ১৯ আগস্ট আদালত শ্রমিকদের স্বার্থে এবং যান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া বালু উত্তোলনের শর্তে ইজারার পক্ষে রায় দেন। এরপর জেলা প্রশাসন ১০০ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বালুমহাল ইজারা দেয়। কিন্তু ইজারার শর্ত মানা হয়নি। শ্যালো ইঞ্জিন ও ড্রেজারের মাধ্যমে নদীর বুক ও তীরবর্তী এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে।

গত ২৬ আগস্ট জেলা প্রশাসন ফেসবুকে বালু লুটের আশঙ্কা প্রকাশ করে সতর্ক করলেও তা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। নিরীহ শ্রমিকেরা জেল-জরিমানার শিকার হলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয়রা জানান, হাজার হাজার নৌকা নদীর তীরে ঢুকে পাড় কাটছে। ইজারাদার ও প্রভাবশালীরা প্রতি ফুটে ২০ টাকা এবং রয়্যালটি হিসেবে ২৫ টাকা আদায় করছেন।

ইজারাদার শাহ রুবেল আহমদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা বালু লুট ঠেকাতে পুলিশ ক্যাম্পের আবেদন করেছি। নদীর তীরে বাঁশের বেড়া দিচ্ছি।

সরেজমিনে দেখা যায়, যাদুকাটা যেন এখন তীরহারা এক প্রশস্ত নদী। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে হাওর-বাঁওড়, চর, ছড়া, শিমুলবাগান, বিজিবি ক্যাম্প, ঘাগটিয়া, লাউড়েরগড়, গড়কাটিসহ ১৫-২০টি গ্রাম বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

২০০১ সাল থেকে পাড় কাটা শুরু হলেও ২০২১ সালে বালুমহাল ইজারার পর এটি মহোৎসবে পরিণত হয়। ভূমিমালিকেরা জমি রক্ষা করতে না পেরে বাধ্য হয়ে বালুখেকোদের কাছে জমি বিক্রি করছেন, কেউবা বিনামূল্যে ছেড়ে দিচ্ছেন। তাহিরপুর থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নদীর পাড় কাটার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইনি কার্যক্রম চলছে। পরিবেশ এখন শান্ত।’

সুনামগঞ্জ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাকারিয়া কাদির বলেন, গভীর রাতে অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকানো তাঁদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘ইজারাদারকে শোকজ করা হয়েছে। এভাবে চললে ইজারা বাতিল হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাড়ির পাশে গর্তের পানিতে ডুবে প্রাণ গেল দুই শিশুর

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
এআই দিয়ে বানানো প্রতীকী ছবি
এআই দিয়ে বানানো প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বাড়ির পাশে গর্তে জমা থাকা পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত শিশুরা হলো মোহাম্মদ নোমান (৫) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (৫)। নোমান ওই গ্রামের আব্দুল মাবুদের ছেলে ও জান্নাতুল বেলাল উদ্দিনের মেয়ে।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সাহারবিল ইউপি সদস্য আজিজুল হক বলেন, আব্দুল মাবুদ কিছুদিন আগে বাড়ির পাশ থেকে গভীর গর্ত খুঁড়ে মাটি নেন। পরে গর্তে পানি জমে থাকে। আজ দুপুরে শিশু নোমান ও জান্নাতুল উঠানে খেলা করার সময় গর্তের পানিতে পড়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবরটি শুনে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মৃত দুই শিশুর লাশ নিজেদের বাড়িতে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলি: ফয়সালকে ভারতে পালাতে সহায়তাকারী দুজন ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। ঢাকার সিএমএম আদালত ভবনে। ছবি: সংগৃহীত
সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। ঢাকার সিএমএম আদালত ভবনে। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে অবৈধ পথে ভারতে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজনকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম রিমান্ডে নেওয়ার এই নির্দেশ দেন।

দুই আদিবাসী হলেন সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট থেকে দুইজনকে আটক করে দিবি পুলিশ। আজ এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

এর আগে বুধবার মাইক্রো বাসে করে ফয়সালকে পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার নুরুজ্জামানকে তিন দিন ও মঙ্গলবার ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবিরকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ মামলায় ফয়সাল করিমের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে গ্রেপ্তারের পর গত সোমবার রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তার আগের দিন একটি মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। বুধবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় শরিফ ওসমান বিন হাদি একটি রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল করে আসা দুজনের একজন তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঘটনার পরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত রোববার রাতে ফয়সালকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

উল্লেখ্য, এ মামলায় ফয়সালের মা-বাবা গত বুধবার আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ফয়সালকে পালাতে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। পরে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে রাজশাহীর সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঋত্বিক কুমার ঘটক ক্ষণজন্মা বাঙালি চলচ্চিত্রকারদের অন্যতম, যাঁর সৃষ্টিশীল হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক অবস্থান লাভ করেছে। এমন একজন মহান চলচ্চিত্রকারের স্মৃতি বহনকারী বসতভিটা রাজশাহী শহরের মিঞাপাড়ায় অবস্থিত হলেও তা সংরক্ষণের পরিবর্তে ধ্বংসের মুখে। এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

বক্তারা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঋত্বিক ঘটকের ওই বসতভিটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বসতভিটাটি আগের অবস্থায় সংরক্ষিত থাকবে। অথচ সেই আশ্বাস উপেক্ষা করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ পুনরায় সেখানে থাকা ঋত্বিক ঘটকের শেষ স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা চালায়।

বক্তারা জানান, বসতভিটার ঐতিহ্যবাহী ইটগুলো শহরের অদূরে খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় শাহ মখদুম নার্সিং কলেজের পাশে একটি পুকুর ভরাটের কাজে ফেলে দেওয়া হয়। বক্তারা বলেন, একই সঙ্গে এখানে দুটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। একদিকে ঐতিহ্য ধ্বংস, অন্যদিকে পরিবেশবিরোধীভাবে পুকুর ভরাট। তাঁরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধনে রাজশাহীর চলচ্চিত্র সংসদকর্মী এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও যুব সংগঠনের সদস্যরা বক্তব্য দেন। পরে পাঁচ দফা দাবি-সংবলিত স্মারকলিপি ও প্রস্তাবনা রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো হয়। একই দাবিগুলো উল্লেখ করে আরেকটি স্মারকলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছেও দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্মারকলিপির অনুলিপি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।

এর আগে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির নির্বাহী সদস্য মো. আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় ও সভাপতি আহসান কবীর লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদ হোসেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহীর সভাপতি উপেন রবিদাস প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৬০০ বাউন্ডলি, গ্রেপ্তার ৩

কক্সবাজার প্রতিনিধিনাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
জব্দ বাউন্ডলিসহ গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ বাউন্ডলিসহ গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের রামুতে একটি মিনিট্রাকে তল্লাশি করে পুলিশ ১ হাজার ৬০০টি বাউন্ডলি (সামরিক পোশাকে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন রাখার বেল্ট) উদ্ধার করেছে। এসব বাউন্ডলি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কম্বনিয়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. শাহজাহান (২৫), একই ইউনিয়নের আশারতলী এলাকার মো. বদিউজ্জামানের ছেলে মো. ইলিয়াছ (১৯) ও ঘিলাতলী এলাকার এম এ সামাদের ছেলে আতিকুর রহমান (২৫)।

ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের চা-বাগান এলাকা দিয়ে যানবাহনে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের সরঞ্জাম পাচার করা হবে বলে খবর পায় পুলিশ। পরে চা-বাগান এলাকায় একটি রেস্তোরাঁর সামনে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে পুলিশের একটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম দিক থেকে আসা নাইক্ষ্যংছড়িগামী একটি মিনিট্রাক সেখানে পৌঁছালে থামার সংকেত দেয় পুলিশ। এ সময় গাড়িতে থাকা সন্দেহজনক তিনজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা চালান। ধাওয়া দিয়ে পুলিশ তাঁদের আটক করতে সক্ষম হয়। পরে মিনিট্রাকটি তল্লাশি করে প্লাস্টিকের সাদা চটের ৩২টি ছোট বস্তা পাওয়া যায়। বস্তাগুলো খুলে ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন রাখার ১ হাজার ৬০০টি বাউন্ডলি পাওয়া যায়। মিনিট্রাকটি জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওসি বলেন, উদ্ধার করা ম্যাগাজিন রাখার বাউন্ডলিগুলো নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির কাছে পৌঁছে দিতে নিয়ে যাচ্ছিল। আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে রামু থানায় মামলা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত