Ajker Patrika

ভাঙাচোরা ভবনে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম, জীবন রক্ষাকারীরাই ঝুঁকিতে

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৮
সিরাজগঞ্জ শহরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের বাহিনীর পুরোনো ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিরাজগঞ্জ শহরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের বাহিনীর পুরোনো ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর পুরোনো একটি ভবন। এই ভবন থেকেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মীরা প্রতিদিন মানুষের জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে দৌড়ে যান আগুন বা দুর্যোগের সময়। কিন্তু যেসব মানুষ সবার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি নেন, তাঁদের নিজস্ব ঠিকানাটিই এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া, দেয়ালে ফাটল—এমন ঝুঁকিতেই চলছে কার্যক্রম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফায়ার স্টেশন ও সিভিল ডিফেন্স ভবনের স্টেশন অফিস, পরিদর্শন কক্ষ, ব্যারাক, স্টোর রুম, গ্যারেজ, দাপ্তরিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে পড়েছে, বিমের রড বের হয়ে এসেছে। কর্মীরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্প ছাড়াও ভবনটি হঠাৎ ভেঙে পড়তে পারে।

ফায়ার স্টেশনের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬১ সালে নির্মিত হয় ভবনটি। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ ফায়ার স্টেশনে কর্মরত আছেন ১৬ জন ফায়ার ফাইটার, পাঁচজন চালক, তিনজন লিডার, একজন সাব-অফিসার, একজন স্টেশন অফিসার এবং একজন উপসহকারী পরিচালক। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে কাজ করছেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও দুজন বাবুর্চি। তাঁরা সবাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজ করছেন। এমনকি স্টেশন অফিসের বাসভবনে স্টেশন ইনচার্জের একটি পরিবারও বসবাস করে।

ফায়ার ফাইটার মহন আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ঝুঁকি নিয়েই দিনে-রাতে ডিউটি করি। ভবনটি অনেক পুরোনো। বৃষ্টি হলেই অফিসরুম ও স্যারের রুমে পানি পড়ে।’ অন্য ফায়ার ফাইটার আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘মানুষকে দুর্যোগকালে আমরা সেবা দেই, কিন্তু নিজেরা আছি ঝুঁকির মধ্যে। ছাদ ধসে পড়ে, বৃষ্টির পানি ঢোকে। টয়লেট, গ্যারেজ, স্টোররুমেও একই অবস্থা। আমরা সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক।’

সিরাজগঞ্জ শহরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের বাহিনীর পুরোনো ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিরাজগঞ্জ শহরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের বাহিনীর পুরোনো ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ওয়ারহাউস ইন্সপেক্টর মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘ভবনের বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে, রড বের হয়ে গেছে। যেকোনো সময় ভবন ধসে পড়তে পারে। জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন তৈরি করা হলে আমরা চিন্তামুক্ত থাকতাম।’ লিডার মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ছাদের বিম ভেঙে আমাদের গাড়ির ওপরে পড়েছে। এতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্যারেজ, স্টোররুম, এমনকি উপসহকারী পরিচালক স্যারের রুমেও বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। আমরা চাই জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন তৈরি হোক।’

এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুল হককে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে সচেতন নাগরিক হিসেবে কথা হয় সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদ হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকলে সেবা কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত