Ajker Patrika

অবশেষে চালু হলো কাজীপুরের সেই এতিমখানা

সিরাজগঞ্জ ও কাজীপুর প্রতিনিধি
এতিমখানার কক্ষে শিশুদের আরবি পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
এতিমখানার কক্ষে শিশুদের আরবি পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের ‘মোহাম্মদ আলী শিশু সদন’ নামের এতিমখানাটি আবার চালু হয়েছে। মাসখানেক আগেও এতিমখানাটিতে কোনো শিশু ছিল না। কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। অথচ ভুয়া নথিপত্রের মাধ্যমে তিন অর্থবছরে প্রায় ১৩ লাখ টাকার বেশি সরকারি বরাদ্দ উত্তোলন করা হয়। এ নিয়ে গত ১৯ আগস্ট দৈনিক আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এতিমখানাটি নতুন করে কার্যক্রম শুরু করে।

আজ রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এতিমখানার কক্ষে শিশুদের আরবি পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক। ১২-১৩ জন এতিম শিশু সেখানে অবস্থান করছে। তাদের খাবারের জন্য একজন নারী বাবুর্চিও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি নিবাসীর শিশুদের সকালের খাবারের জন্য মুরগির মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না করছিলেন।

এতিমখানায় থাকা শিশুদের মধ্যে আরাফাত নামের একজন বলে, ‘আমরা প্রায় এক মাস হইল এখানে থাকি, নিয়মিত খাবার পাই। শিক্ষকরা আমাদের পড়ান।’

অন্যদিকে ইসমাইল নামের আরেক শিশু জানায়, ‘আমি এখানে থাকি। তিন বেলা মাছ, মাংস আর ডিম দিয়ে ভাত খাই।’

শিক্ষক মামুনুর রশিদ জানান, প্রায় এক মাস আগে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিদিন সকালে শিশুদের আরবি পড়ান।

আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, তিনি ১ সেপ্টেম্বর থেকে এতিমখানায় শিশুদের দেখাশোনা করছেন। তাঁর মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন বন্ধ ছিল এতিমখানা। এখন আবার চালু হয়েছে। শিক্ষক আছেন, শিশুরাও আছে। সব মিলিয়ে মন্দ নয়।’

এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক ও কুনকুনিয়া আল-ফালাহ নূরানিয়া হাফিজিয়া কওমি মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘মাদ্রাসা কমিটির দ্বন্দ্বের কারণে এতিমখানা বন্ধ ছিল। এখন আবার চালু করা হয়েছে। শিক্ষক, বাবুর্চি সব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

তবে এতিম না থাকা অবস্থায় বরাদ্দের টাকা কীভাবে উত্তোলন করা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করেন, ‘সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী আবুল কালাম আজাদ সব ব্যবস্থা করেছিলেন। আমরা শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। টাকা তিনিই নিয়েছেন। কয়েক মাস আগে তিনি মারা গেছেন।’

এতিমখানার সভাপতি জহুরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘এতিমখানার হাজিরা খাতা ও জমির দলিল আলমারি থেকে চুরি হয়ে গেছে। তবে এতিমখানা আবার চালু করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে কাজীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সোহেল রানা বলেন, ‘তদন্ত কমিটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই বিস্তারিত বলতে পারবেন।’

শিশুদের খাবার রান্নার জন্য একজন নারী বাবুর্চি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি সকালের খাবার রান্না করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুদের খাবার রান্নার জন্য একজন নারী বাবুর্চি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি সকালের খাবার রান্না করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

তদন্ত কমিটির প্রধান ও কাজীপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ইউএনওকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। অর্থের কিছু গরমিল ধরা পড়েছে।’

তবে এ বিষয়ে জানতে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাঈমা জাহান সুমাইয়াকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিরাজগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের পর আমরা নতুন কমিটি গঠন করেছিলাম। তদন্ত শেষ হয়েছে। তবে প্রতিবেদন হাতে পাইনি। দ্রুতই পাব বলে আশা করছি।’

উল্লেখ্য, গত তিন অর্থবছরে ভুয়া নথি ও ভাউচার দেখিয়ে মোহাম্মদ আলী শিশু সদনের নামে প্রায় ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন। পরে গত ১৯ আগস্ট আজকের পত্রিকার ছাপা সংস্করণে ‘এতিম নেই, ভুয়া নথিতে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অবশেষে এতিমখানাটি নতুন করে কার্যক্রম শুরু করল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীর মিরপুরে যাত্রী নামিয়ে গুলি ছুড়ে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা

দিল্লির সংকটকালে ভারতীয়-আমেরিকানদের বিস্ময়কর নীরবতা

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের শর্তেই কেবল ট্রাম্পের গাজা প্রস্তাব মানতে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন

মানচিত্র থেকে পাকিস্তানকে মুছে ফেলার হুমকি দিলেন ভারতের সেনাপ্রধান

জনসংখ্যার সংকট, তারপরও বিদেশিদের প্রতি ঘৃণা এখন তীব্র জাপানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত