Ajker Patrika

শরীয়তপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি ইউপি চেয়ারম্যানের, ভিডিও ভাইরাল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি ইউপি চেয়ারম্যানের, ভিডিও ভাইরাল

শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন। গত শনিবার রাতে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় একটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্যকালে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়াকে উদ্দেশ করে এ হুমকি দেন। 

তার এ হুমকি দেওয়া ৮ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় ভোটারদের নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। 

এ হুমকির ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়ার স্ত্রী ফেন্সি বেগম। 

হুমকির ভিডিও বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস। নোটিশে আগামী ১৫ মে তারিখে তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। 

তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ‘এডিট’ করা বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান। 

ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওটিতে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খানকে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা যদি এই চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে আসে, ওগো দৌড়াতে পারুম না? চার নম্বর ওয়ার্ড থেকে শূন্য, ওর ভোটটাও যেন ও দিতে আইতে সাহস না পায়, এই ব্যবস্থা করতে পারবেন? পারবেন? ভোট হবে ইবিএমে, পরিষ্কার কথা, ভাই দলে ঢুইকা কেউ চালাকি করবেন না। আপনি বলবেন এ দেয় নাই, এ বলবো হে দেয় নাই। আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন, বুথ থাকুক, বলবেন হেইয়া বুঝিনা, ইভিএমএ আমরা কখনো ভোট দেই নাই। আপনি আসেন আমার ভোট দিয়া যান, এই কথা আপনি ভেতরে বইয়া বইয়া বলবেন আমার এজেন্ট শুনব যে, আমি ভোট দিমু ঘোড়ায়, ভোট দিমু তালায়, ভোট দিমু ফুটবলে, পারবেন? যে এইডা না পারবেন, সে সন্দেহের তালিকা থাকবেন, যে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে না যাবেন, সেও সন্দেহের তালিকায় থাকবেন, বুঝাইতে পারছি, স্পষ্ট কথা। আর দিপু যদি আমাদের এই চন্দ্রপুরের ভেতর ঢোকে, আজকে কিন্তু দিপুর বউ, নিপুর বউ ভোট চাইতে গেছিল, চুন্নু কিন্তু দৌড়াইছে। দৌড়াইছে না মামা? ওদের দৌড়াইছে এবং যা কওয়ার তাই কইছে, হেইডা ভাষায় প্রকাশ করতে পারুম না। 

আর ওরা যদি চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে আসে ওগো দৌড়াতে পারুম না? পারবেন? যাইহোক আজ থেকে ওরা যাতে চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে না আইতে পারে, পারবেন? কেউ হুমকি-টুমকি মারবেন না, যে মারার সামনা-সামনি মারবেন। স্পষ্ট কথা। দল পিরিতি কেউ করবেন না। ভাই একটা কথা বলি, রাজনীতি যারা করেন, দল যারা করেন, যারা দুই কুল রক্ষা করে চলে তাদের কিন্তু কোন কুলই থাকেনা। আপনারা দিপুর মাইরও খাইবেন, আমাগো মাইরও খাইবেন। যারা তলে তলে খাতির রাখেন তারা দুই দলের মাইর খাইবেন। কালকে রাতে আইছে, কে কার লগে ঘুরছে জানিনা? কে ওর লগে ভোট চাইতে গেছে জানিনা? সেকেন্ডের ভেতর খবর আহে। আমি আবারও বলি ভাই, দুই দিকের মাইর খাইয়েন না। যা করেন একদিকে করেন। বুকে সাহস থাকলে ওর দল করবেন, না হয় এমপি সাবের দল করবেন। আমি আর কথা বাড়াবো না। আমরা ভোটের মাধ্যমে এমপি সাহেবকে বুঝাইয়া দেব ওদের মতো তিন কুলাঙ্গার গেলে কি হইবো? আপনার হাজার হাজার ভাই আছে। আপনারা কি চান না ২২ তারিখে এমপি সাব চন্দ্রপুরে আসুক? ভোট যদি আমরা শতভাগ না দিতারি কাস্টিং করে তাইলে কি আইবো? তয় আমরা কি উনারে আনতে চাই না? আমরা আনবো ইনশাল্লাহ? আমরা ওয়াদাবদ্ধ? ওয়াদা করলেন, বদখেলাপ করবেননা।’ 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট পাঁচজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তিন জনের মধ্যে। 

এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল আমীন কোতোয়াল (মোটরসাইকেল প্রতীক), জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান উজ্জ্বল আকন (ঘোড়া প্রতীক) ও সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া (আনারস প্রতীক)। 

অভিযোগ রয়েছে, এ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কামরুজ্জামান উজ্জ্বল আকনকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন এবং নেতা কর্মীদের উজ্জল আকনের প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা ও কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

গত ২ মে প্রতীক বরাদ্দের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর সমর্থকেরা কামরুজ্জামান উজ্জ্বল আকনের ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। 

অন্যদিকে বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা আনারস প্রতীকের প্রচারণা শুরু করেন। 

গত ৭ মে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, এমপি ইকবাল হোসেন অপুর নির্দেশে আনারস প্রতীকের প্রচার-প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মীদের হুমকি ধামকি ও মারধর করা হচ্ছে। এ ছাড়াও তিনি সংবাদ সম্মেলনে তার প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তার মৃত্যু হলে এমপি ইকবাল হোসেন অপু ও তার ভাগিনা চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান দায়ী থাকবেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন দিপু মিয়া। 

আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া করে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর থেকেই আমি ও আমার কর্মীরা বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও মারধরের শিকার হচ্ছি। এমপির ক্যাডার বাহিনী আমাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান আমাকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন। যা আপনারা সবাই ভিডিওতে দেখেছেন। এই অবস্থায় আমি প্রাণনাশের শঙ্কায় আছি। বিষয়টি আমি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অবগত করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি সুষ্ঠু ভোট চাই’। 

এ ব্যাপারে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান বলেন, ‘আমি আসলে ওভাবে হুমকি-ধামকি দেই নাই। এখন প্রযুক্তির যুগ, অনেক কিছু এডিট করে ভাইরাল করা যায়।’ 

এ বিষয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পেয়েছি এবং এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানকে আগামী ১৫ মে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিশুকে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখেন স্কুলশিক্ষক চাচি: পুলিশ

তোফায়েল আহমেদ হাসপাতালে

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

হাজি সেলিমের আজিমপুরের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, ৬টি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার

ধর্ষণ মামলার আসামি এএসপি, তদন্তে হস্তক্ষেপের অভিযোগ নারীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত