Ajker Patrika

‘প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব, তবু পদত্যাগ করব না’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ৩৯
‘প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব, তবু পদত্যাগ করব না’

কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ ও চাকরিচ্যুতির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে স্কুলটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এই প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন বলেছেন, ‘আমি পদত্যাগ করব না। যদি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করতে হয় তা-ও আমি পদত্যাগ করব না।’

‘কোনো স্টুডেন্ট পদত্যাগ করাতে পারে না। একটা আইন আছে, সরকারি স্কুলের একটা প্রসিডিউর আছে। তবে আমি কুড়িগ্রামে এক সেকেন্ডও থাকতে চাই না। কিন্তু আমি জীবন থাকতে সাইন করব না।’ যোগ করেন এই প্রধান শিক্ষক।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তার পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলায়। স্বামীর বাড়ি লালমনিরহাট জেলা সদরে।

লালমনিরহাট থেকে প্রাইভেট কারে করে স্বামী রেজাউল করিমসহ নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি স্কুলটিকে অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার আঁতুড়ঘরে পরিণত করেন বলে অভিযোগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এমনকি স্কুলের বিজ্ঞানাগারে নিজ স্বামীর বিশ্রামের জন্য তৈরি করেছেন বিশ্রামাগার।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। স্কুলের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন কক্ষে তালা লাগিয়ে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বকালীন গত ১৫ বছরে স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আঁচ করতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। কয়েক দিন ধরে তিনি স্কুলে অনুপস্থিত।

রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
স্কুলটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বলছেন, ‘স্কুলটি যেন প্রধান শিক্ষকের প্রমোদখানা! কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্কুলে একরকম ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বেপরোয়াভাবে স্কুল পরিচালনা করছেন। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় তিনি সবসময় শিক্ষকদের হুমকির ওপর রাখতেন। শিফট পরিবর্তনসহ বদলির ভয় দেখাতেন। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না।’

অর্থ আত্মসাৎ 
শিক্ষক ও অন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘স্কুলটিতে দুই শিফটে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। গত ১৫ বছরে প্রধান শিক্ষক স্কুল ফান্ডের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন প্রকার খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বাৎসরিক ও মাসিক যে টাকা আদায় করা হতো তার কোনো আয়ব্যয়ের হিসাব তিনি দেননি। প্রতিমাসে কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি ২০ টাকা করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু ব্যয় হয় সামান্য। স্কুলে শিক্ষার্থীদের কোনো কমনরুম না থাকলেও কমনরুম ফি আদায় করা হয়। আরো বেশ কয়েকটি খাতের লাখ লাখ টাকার কোনও হিসাব তিনি দিচ্ছেন না।’ 

ভর্তি ও শিফট পরিবর্তনে বাণিজ্য 
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি, যোগদানের কয়েক বছরের পর থেকেই প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন স্কুলে ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেন। এ ছাড়াও টাকার বিনিময়ে তিনি মর্নিং শিফটের শিক্ষার্থীকে ডে শিফটে এবং ডে শিফটের শিক্ষার্থীদের মর্নিং শিফটে দিতেন। এসব কাজে কুড়িগ্রামের কয়েকজন সাংবাদিক নেতা, একজন সাবেক তথ্য কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ মিলে একটি সিন্ডিকেট কাজ করত। অপেক্ষমান তালিকার ক্রম ভঙ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হত। এ ছাড়াও লটারিতে টেকেটি এমন শিক্ষার্থীও ভর্তির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। 

রুখসানার ভয়ে তটস্থ থাকতেন শিক্ষকেরা 
চোখের সামনে নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চললেও রুখসানার ভয়ে মুখ খুলতে পারতেন না সাধারণ শিক্ষকরা। জেলার বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য থাকায় রুখসানা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কোনো শিক্ষক মুখ খোলার চেষ্টা করলেই তাদেরকে বদলির হুমকি দিতেন। এমনকি শিক্ষকদেরকে নিরাপত্তা নিয়েও ভয় দেখাতেন। ফলে ভয়ে সাধারণ শিক্ষকেরা কিছু বলতে পারতেন না। তবে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর শিক্ষকেরা সাহস ফিরে পেয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত) তুষার কুমার রক্ষিত বলেন, ‘আমাদের সবার মুখ এতোদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। কথা বললেই বদলির হুমকি, মর্নিং থেকে দিবা, দিবা থেকে মর্নিং শিফটে দেওয়া সহ নানা ধরণের হয়রানির হুমকি আমাদের দমিয়ে রেখেছিল। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালককে লিখিত আকারে জানিয়েছি।’

অভিযোগ অস্বীকার প্রধান শিক্ষকের
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুখসানা পারভীন। আগে সকল শিক্ষক-কর্মচারী তাঁর পাশে থাকলেও এখন বিপক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব অভিযোগ করছেন বলে দাবি তাঁর।

তিনি বলেন, ‘গার্লস স্কুলে কী হয় তা সকলেই জানে। আমি স্কুলটিকে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে আমি ভর্তি-বাণিজ্য করে কারও কাছে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছি, আমি তার জন্য সই দিতে রাজি আছি।’

গত ১৫ বছরের হিসাব প্রসঙ্গে এই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার কর্তৃপক্ষ চাইলে আমি সকল হিসাব দিতে প্রস্তুত। অভিযোগের সত্যতা পেলে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে তা মাথা পেতে নেব।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত