Ajker Patrika

দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত হলো দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত 

দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত হলো দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত 

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে অনুষ্ঠিত হলো দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত। আজ মঙ্গলবার সেখানে প্রায় ছয় লক্ষাধিক মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। এই ঈদগাহের আয়তন ২২ একর! 

চমৎকার আবহাওয়া ও দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীতে নির্মিত এ ঈদগাহে ব্যাপক প্রচারণা থাকায় সকাল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোকজন সমবেত হন। নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ের সব রকম ব্যবস্থা থাকায় ঈদগাহ মাঠে মুসল্লিদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। আজ সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত জামাতে প্রায় ছয় লাখ মুসল্লি অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন দিনাজপুরের জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম শামসুল হক কাসেমি। 

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণে গত দুই বছর এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বছর বিধিনিষেধ না থাকায় ঐতিহাসিক এ ময়দানে মুসল্লিদের ঢল নামে। 

নামাজে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। 

ঐতিহাসিক এ ঈদের নামাজে অংশ নিতে সদর উপজেলা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলার মুসল্লিরা ছুটে আসেন। বৃহৎ এ ঈদ জামাতকে ঘিরে ঈদগাহ মাঠজুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ছিল কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি। মাঠের আশপাশে র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন তৎপর। মাঠে যে কোনো দুর্ঘটনায় ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত ছিল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। প্রস্তুত ছিল অ্যাম্বুলেন্স টিমও। 

আয়োজকেরা বলেন, একসঙ্গে এত লোক নামাজ আদায় করার মতো ঈদগাহ মাঠ উপমহাদেশে আর একটিও নেই। এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। ঈদগাহটি তৈরি করা হয়েছে মোগল স্থাপত্যরীতির অনুসরণে। মেহরাবের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট এই ঈদগাহে রয়েছে দুটি মিনার, প্রতিটির উচ্চতা ৬০ ফুট। মাঝের ফটক দুটি ৪৭ ফুট করে চওড়া। এতে খিলান আছে ৩২ টি। জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের পরিকল্পনায় ঈদগাহটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঈদগাহ মিনারের মূল অংশ নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। ফটক দুটির উচ্চতা ৩০ ফুট। 

গোর-এ-শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকের প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মিনারটি। দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করতে প্রতিটি গম্বুজে আছে আলোকসজ্জা। সন্ধ্যার পর থেকেই মিনার আলো ঝলমল করে ওঠে। এ ছাড়া ৫১৬ ফুট লম্বায় ৩২টি খিলান নির্মাণ করা হয়েছে। 

ঈদের নামাজের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। 

হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘আয়তনের দিক দিয়ে দিনাজপুর ঈদগাহ ময়দান উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ। গোর-এ শহীদ ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ আর নেই। এবার ঈদের নামাজে দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রায় ৬ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থায়নে এ মিনারটি নির্মিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটিকে আরও সুন্দর করার পরিকল্পনা রয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত