Ajker Patrika

‘এক চিমটি নুন মোর সংসার পুড়িল’

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ২২: ৪৭
‘এক চিমটি নুন মোর সংসার পুড়িল’

ঘুম থেকে উঠে পান্তাভাত খেয়ে দিনমজুরির কাজে যান মুকুল হোসেন। বাসি বাসন পরিষ্কার করে চুলায় ভাতের হাঁড়ি বসান তাঁর স্ত্রী রওশন আরা। এরপর তরকারি প্রস্তুত করেন। এ সময় দেখেন ঘরে লবণ নেই। তাই পাশের বাড়িতে যান লবণ আনতে। সেখান থেকে বাড়ির আকাশে দেখতে পান আগুনের শিখা উঠছে। লবণ হাতে শঙ্কা মনে ছুটে আসেন বাড়ির দিকে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে নেমে পড়েন আগুন নেভাতে। আগুন নেভানোর আগেই রওশন আরার সব শেষ। তিনটি ঘর, একটি গরু, আসবাবসহ সবকিছু পড়ে ছাই হয়ে গেছে। আজ রোববার সকালে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ছোট জুম্মাপাড়া গ্রামে রওশন আরার বাড়িতে লাগা আগুনের দৃশ্যের বর্ণনা এভাবেই দেন প্রতিবেশী ফুলমতি বেগম। 

ফুলমতি বেগম বলেন, ‘দেখতে দেখতে সউগ শ্যাষ হয়া গেল। কিছু পুড়া বাকি থাকিল না। আগুন রওশন আরাক শ্যাষ করি দেইল। এমনি কষ্ট, এ্যালা ছাওয়াগুলাক নিয়া আরও কষ্ট বাড়িল।’ 

পোড়া ভিটায় বিলাপ করতে করতে রওশন আরা বলেন, ‘এক চিমটি নুন (লবণ) মোর সংসার পুড়িল। নুন কোনা খুঁজার যায় মোর ঘর, গরু পুড়ি গেল। মুই এখন নিঃস্ব।’ ওই গ্রামের বাসিন্দা হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাজু মিয়া বলেন, ‘যখন আগুন লাগে তখন আমরা মাঠে আমন রোপণ করছিলাম। খবর পেয়ে ছুটে এসে সবাই আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি। কিন্তু ততক্ষণে যা পোড়ার সব পুড়ে গেছে।’ 

অপর দিকে একই উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি কালাম হোসেনের ঘরে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এতে কালাম ও তাঁর ভাই নওশাদ হোসেনের তিনটি গরু, চারটি ছাগল, ধান, চালসহ চারটি ঘর পুড়ে যায়। 

বালাপাড়া গ্রামের নওশাদ হোসেন বলেন, ‘ঘরোত চোর পড়লে কিছু বাঁচে। কিন্তু আগুন ধরলেও কিছুই থাকে না। শরীরোত যে কাপড় পড়ি আছি একনায় বাঁচিছে। আগুন ঘরের সাথে গরু-ছাগল, ধান-চাল সউগ পুড়ি ছাই করছে। আল্লাহর রহমত আছলো তকনে মধ্যে রাইতের আগুনোত জীবন বাঁচিছে।’ 

তারাগঞ্জ উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের অগ্নিকাণ্ড পুড়ে যাওয়া ঘর। ছবি: আজকরে পত্রিকাকালাম হোসেনের প্রতিবেশী খয়রন বেগম বলেন, ‘গভীর রাইত ঘুম কোনা কেবল ধরছে। তকনে ভাকাউ করি গোটায় দুনিয়া উজাল হইল। উঠি দেখি আগুন দাউ দাউ করি জ্বলোছে।’ 

ইকরচালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শোনার পর বালাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখি কালাম ও নওশাদের গরু-ছাগল ঘর পুড়ে গেছে। ইউএনও স্যারও পরিদর্শন করে গেছেন।’ 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানিয়েছে, দুটি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

জানতে চাইলে ইউএনও রাসেল মিয়া বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, ৫০ কেজি করে চাল ও ৫ হাজার করে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে।’ 

তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার এস এম শরিফুজ্জামান বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের টিম সেখানে ছুটে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার দিবাগত রাতে ইকরচালী ইউনিয়নের বালাপাড়া ও আজ রোববার সকালে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ছোট জুম্মাপাড়া গ্রামে পৃথক দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

বাহাত্তরের সংবিধান, জুলাই সনদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা নিয়ে আইন উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাকে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত