Ajker Patrika

কুড়িগ্রাম হাসপাতাল

ভর্তির পর চিকিৎসা পেতে ১২ ঘণ্টা

  • ২০১৭ সালে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়।
  • শয্যার সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও শৌচাগার নিয়ে ক্ষোভ রোগীদের।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জনবলসহ বিভিন্ন সংকটে ভুগছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার এই কেন্দ্রটিতে প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক গুণ কম চিকিৎসক, কর্মচারী আছেন। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার কুড়িগ্রাম হাসপাতালটি পরবর্তী সময়ে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৭ সালে এটিকে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যার মঞ্জুর করা ৪৩ পদের বিপরীতে তত্ত্বাবধায়কসহ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। অন্যান্য জনবলেরও সংকট প্রচণ্ড।

বহির্বিভাগসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক ও জনবলসংকটের সত্যতা পাওয়া গেছে। সংকট মোকাবিলায় মজুরিভিত্তিতে নেওয়া উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা (স্যাকমো) দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। চিকিৎসক সংকটে বহির্বিভাগ রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও অন্যদের।

হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, সারা দিনে মাত্র একবার চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়। দুপুরের পর হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি হলে তার কপালে শুধু একবারের জন্য জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের সেবা মেলে। পরের দিন সকালের আগে ওয়ার্ডে আর কোনো চিকিৎসক আসেন না। কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিলে তার রিপোর্ট দেখাতে হয় পরের দিন। ফলে মূল চিকিৎসা পেতে অনেক রোগীকে ভর্তির পর ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। মেলে না ওষুধ-স্যালাইন। ওয়ার্ডের শয্যার সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও শৌচাগার নিয়েও ক্ষোভ জানায় রোগীরা।

হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী আনিছুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রায় দুই দিন আগে তিনি ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার পর আর কোনো ডাক্তারের দেখা মেলেনি। একই রকম অভিযোগ সার্জারি ও কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি রোগীদের।

গাইনি বিভাগে ভর্তি রোগী আমিনা বলেন, ‘তীব্র ব্যথা নিয়ে দুই দিন আগে সন্ধ্যায় হাসপাতালে আসি। জরুরি বিভাগের ডাক্তার দেখে ভর্তি করান। কিন্তু রাতভর কোনো গাইনি ডাক্তারের দেখা পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি।’ আমিনা আরও বলেন, ওয়ার্ডে সব সময় দুর্গন্ধ। টয়লেটে যাওয়া যায় না। সিঁড়ি থেকে শুরু করে বারান্দা ও রুমের ভেতরও ময়লা।

হাসপাতালটিতে দেখা গেছে, কোনো কোনো ওয়ার্ডে রোগীরা মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। কক্ষগুলো অপরিচ্ছন্ন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালের চাহিদা কাঠামো অনুযায়ী ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে বর্তমানে চিকিৎসক প্রয়োজন ১৭৭ জন। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরেও এই জনবলের অনুমোদন মেলেনি। ১০০ শয্যার মঞ্জুর করা ৪৩টি পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৮ জন। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও কার্ডিওলজি বিভাগের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে নেই কোনো সিনিয়র কনসালট্যান্ট। অ্যানেসথেটিস্ট ও অর্থো-সার্জারি ছাড়া সিনিয়র কনসালট্যান্টের ৮টি পদ শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১২টি পদের ৬টি পদ শূন্য।

শুধু চিকিৎসক নয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকটও তীব্র। আয়া, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার আর সিকিউরিটি গার্ড পদেও প্রয়োজনীয় জনবল নেই। ১০০ শয্যার মঞ্জুর করা ৩য় শ্রেণির ৫১টি পদের বিপরীতে আছে মাত্র ১৭ জন। আর চতুর্থ শ্রেণির ২৯টির বিপরীতে ১১ জন। ফলে হাসপাতালে আসা শত শত রোগীর প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জনবলসংকটের কথা স্বীকার করে সদ্য যোগদানকারী হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ‘শুধু কুড়িগ্রাম নয়, সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি। শিগগির কিছু চিকিৎসক পেতে পারি। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে আউট আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত