Ajker Patrika

বৃষ্টিতে তলিয়েছে খেত: কোমরপানিতে দাঁড়িয়ে ধান কাটছেন কৃষক

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ মে ২০২৫, ২০: ২৮
কোমরপানিতে দাঁড়িয়ে ফসল তুলছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোমরপানিতে দাঁড়িয়ে ফসল তুলছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ১ হাজার ৫০০ বিঘা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু ফসল তুলতে পারলেও এখনো প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ইরি-বোরো পাকা ধান পানিতে ডুবে আছে। কষ্টের ফসল ঘরে তোলার আগে খেতে ডুবে যাওয়ায় দুই শতাধিক কৃষকের কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গড়পিংলাই, বারাইপাড়া, গণিপুর, আড়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, পলিপাড়া ও খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, মহেশপুর, মহদীপুরসহ ১০টি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিঘা ফসলি জমি পানিতে ডুবে আছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে ধান এখনো পানির নিচে। অনেক কৃষক কোমরপানিতে নেমে গত চার দিন ধরে ডুবে যাওয়া ধান কাটছেন। ডুবে থাকা ধান পচে নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এসব জমিতে তাঁরা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারছেন না। বোরো মৌসমে সময়মতো কিছু ধান ঘরে তুলতে পারলেও বেশির ভাগ জলে ডুবে নষ্ট হয়। সে কারণে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করতে চান না। বর্ষাকালের পানি ওই সব ফসলি জমিতে জমে থাকায় বছরে ঝুঁকি নিয়ে শুধু ইরি চাষ করতে পারলেও আমন চাষ করতে পারেন না তাঁরা। জমিগুলো প্রায় অনাবাদি হওয়ার কারণে কৃষকেরা তা বেচাকেনাও করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে তাঁরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এদিকে খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মহদীপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি মো. সুজন, রফিকুল, মো. বাচ্চু মিয়া ও বেলাল হোসেন ও আলম বলেন, জমিতে সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকলেও ইরি মৌসুমে কোনোমতে ইরি চাষ করেন। কিন্তু ফসল কাটার আগমুহূর্তে মাত্র ৪-৫ দিনের বৃষ্টিতে ডুবে গেছে তাঁদের পাকা ধানের খেত। বর্তমানে তাঁদের প্রায় ১৫ বিঘা জমি পানিতে ডুবে আছে। কোমরপানিতে নেমে তাঁরা ডুবে যাওয়া ইরি ধান কাটার চেষ্টা করছেন। তাঁরা বলেন, এমনিতে ফসল ডুবে গেছে। তার ওপর ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিক পাওয়া গেলেও পানির কারণে দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। এক বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ চাওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।

দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া গ্রামের মহিদুল, মান্নান ও মইদুল বলেন, ‘এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। জমি আছে অথচ সারা বছর ফসল ফলাতে পারি না। যদিও-বা কষ্ট করে ইরি চাষ করে পাকা ধান ঘরে তুলব, ঠিক সেই মুহূর্তে টানা বৃষ্টিতে চার দিন ধরে পাকা ধানের খেত ডুবে আছে। কোমরপানিতে নেমে ডুবে যাওয়া ধান কাটতেও পারছি না। পানিতে ধান কাটাও ঝুঁকি। যেকোনো সময় কাস্তে দিয়ে হাত কেটে যেতে পারে।’

জানা গেছে, স্থানীয় কৃষকেরা পানি নিষ্কাশন সমস্যার সুরাহা করতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে ফসলি জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতায় উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া এলাকায় ১৬৩ মিটার ক্যানেল (ড্রেন) নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৩ মিটার ক্যানেল সম্প্রসারণ করা হয়। এতে মোট ক্যানেলে দৈর্ঘ্য হয় ২০৬ মিটার এবং ব্যয় হয় ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আবাদি জমির চেয়ে ক্যানেলটি উঁচু হওয়ায় তা তেমন কাজে আসছে না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ক্যানেলটি আবাদি জমির চেয়ে উঁচু হওয়ায় অল্প পরিমাণ পানি নিষ্কাশন হলেও বেশির ভাগ ফসলি জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকছে। অপরিকল্পিত ক্যানেল নির্মাণের কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে বলে দাবি কৃষকদের।

কৃষকদের তথ্যমতে, ইরি মৌসুমে তাঁদের প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ প্রায় ১২ হাজার টাকা। ওই হিসাবে চলতি ইরি মৌসুমে ৩০০ বিঘা জমিতে তাঁদের খরচ হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। ধান ডুবে না গেলে ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রতি বিঘায় ২৫ মণ হিসেবে ফসল আসত সাড়ে ৭ হাজার মণ; যা সরকারনির্ধারিত মূল্যে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। জলাবদ্ধ ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমির মধ্যে ১ হাজার ২০০ বিঘা জমির ধান কেটে নিতে পারলেও বাকি ৩০০ বিঘা জমির ধান এখনো পানিতে ডুবে আছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে ওই সব এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ ওই এলাকার অপরিকল্পিত পুকুর খনন। পানি নিষ্কাশনের সমস্যা হচ্ছে। এর আগে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা কৃষি দপ্তর ওই এলাকা পরিদর্শন করে আমাদের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি ক্যানেল নির্মাণ করা হয়। এবার দেখতে পাচ্ছি, ওই ক্যানেলে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আবারও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। আশা করব, কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা করবে এবং শিগগির এই সমস্যার সমাধান হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসাহাক আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। আমরা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান

শেখ হাসিনাসহ ৩৯৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপি নেতা

৪ ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি চাকরিচ্যুতি

বদলে গেল স্কুল-কলেজের শপথ, বাদ মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত