Ajker Patrika

কাঠের দুর্বল স্লিপারের কারণে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ভয়, ট্রেন চলছে ধীরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ৩৩
কাঠের দুর্বল স্লিপারের কারণে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ভয়, ট্রেন চলছে ধীরে

প্রচণ্ড তাপে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কায় পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেন চলছে ধীর গতিতে। তাতে কোনো ট্রেনেরই শিডিউল ঠিক থাকছে না। রেল কর্মকর্তারা বলছেন, কাঠের স্লিপার থাকা রেললাইনেই ভয় বেশি। তাই ট্রেন চালাতে হচ্ছে ধীর গতিতে। তবে স্টিল কিংবা কংক্রিট স্লিপারের রেললাইনে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে এখনো সমস্যা দেখা দেয়নি। 

রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, পশ্চিমাঞ্চলে ২ হাজার ২৮৬ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা-চিলাহাটি-পঞ্চগড় ও রাজবাড়ী-ঢাকা রুটের রেললাইনে কংক্রিট স্লিপার আছে। আর ঈশ্বরদী-খুলনা রুটে আছে স্টিলের স্লিপার। বাকি পথে আছে প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো কাঠের স্লিপার। এর সঙ্গে মাঝেমধ্যে কংক্রিটের স্লিপারও বসানো হয়েছে। তবে কাঠের স্লিপারই বেশি। এই কাঠের স্লিপারের কারণে দুর্বল ট্র্যাকে ট্রেনে গতি আনা যাচ্ছে না। চলমান প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে এসব রেললাইনই বেশি বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। 

রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, অনেক দিনের পুরোনো কাঠের স্লিপার রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব স্লিপার আর ঠিকমতো রেললাইন ধরে রাখতে পারে না। নাট-বল্টু ও ক্লিপ খুলে যায়। এখন তাপপ্রবাহে এসব রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। সাধারণত বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে রেললাইনে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি হয়। তাই দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে রেললাইনে তা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়। কংক্রিট ও স্টিলের স্লিপারের রেললাইনে এই তাপমাত্রাতেও ট্রেন ঠিকঠাকমতো চালানো যায়। কিন্তু কাঠের স্লিপার থাকলে কমিয়ে দিতে হয় গতি। 

রাজশাহী-ঢাকা রেলপথের পুরোটাই কাঠের স্লিপার। তাপপ্রবাহের মাঝে এই রুটে এখন ট্রেন চলছে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। গতি কমিয়ে দেওয়ার কারণে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে প্রতিটি ট্রেন। কাঠের স্লিপারের কারণে এই রুটে মাঝেমধ্যে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় এ ধরনের একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

গত বুধবার রাজশাহীর বাঘার আড়ানি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক কাঠের স্লিপারই পচে গেছে। পর্যাপ্ত পাথর না থাকায় ওই স্লিপার নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া নাট-বল্টু ও ক্লিপ নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। অনেক দিনের পুরোনো এই স্লিপার বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। এর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। রাজশাহীর হরিয়ান এলাকায় গিয়েও রেললাইনে স্লিপারের একই অবস্থা দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, অনেক দিন ধরেই এসব এলাকায় রেললাইনে বড় কোনো সংস্কার দেখা যায় না। নাট-বল্টু খুলে গেলে কিংবা ট্রেন লাইনচ্যুত হলে তখন সংস্কার করা হয়। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, ‘১৯৭৩ সালে রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। একটি রেললাইনের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ থেকে ২৫ বছর। কিন্তু এই স্লিপার ও রেললাইনের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে। ফলে ট্রেন চালাতে স্বাভাবিকভাবেই সতর্ক থাকতে হচ্ছে। কারণ, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে কাঠের স্লিপারের লাইনেরই বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।’ তাই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে বলে দাবি তাঁর। 

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড তাপে ঈশ্বরদী-বাইপাস রেললাইনের একটি স্থান বেঁকে যায়। তাই দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই চার কিলোমিটার রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ঝুঁকি থাকায় এই লাইনে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর কয়েক দিন আগে দর্শনা-যশোর রেলরুটে লাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কায় ট্রেনের গতি ৬০ কিলোমিটারে নামিয়ে চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এখনো এই রুটটিতে সতর্কতার সঙ্গে ট্রেন চালানো হচ্ছে। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আহসান জাবির বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত গরম বা শীতে লাইন বেঁকে বা ফেটে যায়। এমন লাইনগুলোতে রেলের গতি কমিয়ে আনা হয়। শীত বা গরমের কারণে লাইনে স্ট্রেচিং ও ডিস্ট্রেচিংয়ের ফলে “রেল ব্রোকেন” ও “বাকলিং” (লাইন বেঁকে যাওয়া) হয়ে থাকে। এই অবস্থায় রেল কীভাবে চলবে তার একটি গাইডলাইন আছে। সে অনুযায়ীই এখন ট্রেন চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের কাজও চলছে।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে রেললাইনের তাপমাত্রা সব সময় সাত থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি হয়। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে কাঠের স্লিপার এলাকার রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এখনো বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। ঈশ্বরদীতে আগে থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। তাই সেখানে রেললাইন বেঁকে যায়। পরে মেরামত করা হয়েছে। 

বাঁশের বাতা দিয়ে আটকে রাখা রেললাইনের পাত।অসীম কুমার তালুকদার আরও বলেন, ‘কংক্রিট স্লিপার অনেক বেশি লোড নিতে পারে। তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হলেও লাইন বেঁকে যায় না। কাঠের স্লিপারে তা সম্ভব না। কিন্তু স্লিপার স্বল্পতার করণে মেইন লাইনে কাঠের ও স্টিলের স্লিপার বসাতে বাধ্য হই। এখন আমাদের চেষ্টা আছে যেন পরিবর্তনের সময় কংক্রিটের স্লিপারই বসানো যায়। কাজটা একবারে করতে পারলে ভালো। তাহলে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা কমে আসবে। ট্রেনও গতিতে চালানো যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুই নদের ২০ স্থানে মাটি লুট, ঝুঁকিতে ফসলি জমি

  • প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবাধে মাটি কেটে ট্রলারে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়।
  • মাটি কেটে নেওয়ায় ওই সব গ্রামের মানুষ নদের পাড় ভাঙনের আশঙ্কা করছে।
  • প্রতিবাদ জানালে হুমকির অভিযোগ।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী,মাদারীপুর প্রতিনিধি
মাদারীপুরের মহিষেরচরে আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদারীপুরের মহিষেরচরে আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পাড়ের অন্তত ২০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবাধে মাটি কেটে ট্রলারে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। মাটি কেটে নেওয়ায় ওই সব গ্রামের মানুষ নদের পাড় ভাঙনের আশঙ্কা করছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় থেকে স্থানীয় আবু চৌকিদারের ছেলে ইলিয়াস চৌকিদার তাঁর নিজস্ব লোকজন নিয়ে রাতে, আবার কখনো ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মাটি কেটে ট্রলারে করে নৌপথে সেই মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তাঁর নিজস্ব জমি থেকে মাটি কাটলেও পরে স্থানীয় মো. খলিল চৌকিদার, মো. বাবুল চৌকিদারের জমি থেকেও মাটি কাটা হয়েছে। তাঁরা ইলিয়াসকে মাটি কাটতে নিষেধ করলেও তিনি তা শোনেননি।

এদিকে নদের পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে পাশেই কাদের সরদারের সবজির খেত ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া পাশেই মিন্টু সরদারের বসতবাড়িও হুমকির মধ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদরের পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচরের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে দুটি স্থানে, একই ইউনিয়নের কাতলা বাহেরচরে দুটি স্থান থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়। এ ছাড়া কুমার নদের তীরবর্তী রাজারচর, পখিরা, তিন নদীর মুখ, চর কালকিনি, চর হোগলপাতিয়া, চর ব্রাহ্মন্দীসহ আরও একাধিক স্থানে মাটি কেটে নেওয়া হয়। এসব মাটির বেশি ভাগ ইটভাটায় বিক্রি করা হয়।

পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর গ্রামের উত্তর মহিষেরচর শিকদারবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলমগীর শিকদার বলেন, ‘আমাদের এই গ্রামে স্থানীয় ইলিয়াস চৌকিদার রাতের আঁধারে আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে তিনি আমাকে নানা ধরনের হুমকি দিয়েছেন। এমনকি আমার চোখ তুলে ফেলারও হুমকি দেন।’

মহিষেরচর গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সাইফ বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু মাটি চুরি থামেনি। প্রতিদিন রাতের আঁধারে নদের পাড়ের মাটি কেটে ট্রলারে করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। এই গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদের চার-পাঁচটি স্থান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এভাবে নির্বিচারে মাটি কাটা যদি বন্ধ না হয়, পুরো গ্রাম হুমকির মধ্যে পড়বে।’

আরেক বাসিন্দা মিন্টু সরদার বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে এখান থেকে মাটি লুট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি—সব নদে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা এর প্রতিকার চাই।’

মো. বাবুল চৌকিদার নামের একজন বলেন, ‘আমার প্রায় তিন কড়া জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছেন ইলিয়াস চৌকিদার। তাঁকে নিষেধ করার পরও শুনছেন না।’

ভুক্তভোগী খলিল চৌকিদার বলেন, ‘আমার জমি থেকেও মাটি কেটে নিয়ে গেছেন ইলিয়াস চৌকিদার। আর আমাদের এলাকায় এগুলো করছেন ইলিয়াস। নদের পাড়ের আমার ফসলি জমি এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।’

মাদারীপুরের স্থানীয় আইনজীবী আবুল হাসান সোহেল বলেন, ‘নদের তীর থেকে মাটি কেটে নেওয়ার মানে হলো নদের স্বাভাবিক প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এতে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ক্রমান্বয়ে নদে ভাঙন বাড়ে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলগুলো মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আইনজীবী মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘নদের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা দরকার। অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে ইলিয়াস চৌকিদার বলেন, ‘আমি অনেক আগে মাটি কেটেছিলাম। কিন্তু এখন আর মাটি কাটি না। যখন দেখেছি মাটি কাটলে অন্যের ক্ষতি হয়, তখন থেকে আর এই কাজ করছি না।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক আফসানা বিলকিস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদের তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে আমরা একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। যাঁরা নদের মাটি কাটছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহের নান্দাইল: অধিগ্রহণ করা জায়গায় আ.লীগ নেতার মার্কেট

  • সড়ক নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালে ভূমি অধিগ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
  • অভিযুক্ত একজন উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
  • ১২ বছর ধরে মার্কেট নির্মাণ করে ভোগদখল, আর ১০ কক্ষবিশিষ্ট মার্কেটের কাজ চলছে।
মিন্টু মিয়া, নান্দাইল (ময়মনসিংহ)
ময়মনসিংহের নান্দাইলে সওজের অধিগ্রহণ করা জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহের নান্দাইলে সওজের অধিগ্রহণ করা জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের নান্দাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধিগ্রহণ করা জায়গায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর ভাই মার্কেট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কিশোরগঞ্জ সওজে অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার লোকজন। সম্প্রতি তাঁরা এ অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান ও তাঁর ভাই হাসিম উদ্দিন। হাসিম উদ্দিনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। সরেজমিনে মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কিশোরগঞ্জ সওজ সূত্রে জানা যায়, নান্দাইল উপজেলার কানুরামপুর থেকে ত্রিশাল আঞ্চলিক সড়কের চর বেতাগৈর ইউনিয়নের চরশ্রীরামপুর এলাকায় সড়ক নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালে ভূমি অধিগ্রহণ করে সওজ। পরে অধিগ্রহণ করা জায়গার সব টাকাও বুঝিয়ে দেয়।

গতকাল বুধবার উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়নের চরভেলামারী আতাউরের মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, কানুরামপুর-ত্রিশাল সড়কের আতাউরের মোড়সংলগ্ন সওজের জায়গায় ১০ কক্ষবিশিষ্ট বিশাল মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে। সেখানে ৭-৮ জন কর্মচারী পুরোদমে কাজ করছেন।

সওজের কাছে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, আতাউরের মোড় সংলগ্ন এলাকায় ওই দুই ভাই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ১২ বছর আগে থেকে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে ভোগদখল করে আসছে। বর্তমানেও মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে। অভিযোগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানা হয়।

অভিযোগকারীদের একজন শাপলা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার ১০ শতাংশ জমির ৩ শতাংশ অধিগ্রহণ করে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান ও তার ভাই হাসিম উদ্দিন প্রভাব খাটিয়ে সওজের জায়গা দখল করে মার্কেট করেছে।’ স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে দুই ভাই মিলে সওজের বিশাল জায়গাজুড়ে মার্কেট করে রেখেছেন। নতুন করে আবার জায়গা দখল করে মার্কেট হচ্ছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আতাউর রহমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযুক্ত হাসিম উদ্দিনের দাবি, জায়গাটি সওজের অধিকৃত না। তিনি বলেন, ‘সওজ রাস্তা নির্মাণের আগে ভূমি অধিগ্রহণ করে টাকা দিয়েছে। সেই জায়গা রেখেই মার্কেট নির্মাণ করছি। অধিগ্রহণকৃত জায়গায় আমি যাইনি। তারপরেও যদি সওজ এসে তদন্ত করে, সেটা পরে দেখা যাবে।’

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সওজের উপসহকারী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল কবির মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
স্ত্রীর সঙ্গে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত
স্ত্রীর সঙ্গে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গণসংযোগের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় তাঁর পাশেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন সরওয়ার হোসেন বাবলা (৪৩) নামের এক যুবক। আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরের চালিতাতলী এলাকার মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকেছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। হাত থেকে লিফলেট দিয়ে দোকানদারের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ১৫–২০ জন নেতা-কর্মী।

বিএনপি প্রার্থীর খুব কাছাকাছি ছিলেন এক ডজনের বেশি মামলার আসামি সরওয়ার হোসেন বাবলা। তাঁর গায়ে ছিল সাদা প্যান্ট ও গেঞ্জি। গেঞ্জির পেছনে বড় অক্ষরের ইংরেজি লেখা। বাবলার পিঠের কাছাকাছি একজন সেলফিতে ব্যস্ত, আচমকা পেছন থেকে একটি হাত ওঠে, বাড়ন্ত ওই হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় পিস্তল। কেউ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠাস ঠাস আওয়াজ। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাবলা। মুহূর্তের মধ্যে সটকে পড়ে হামলাকারীরা। সবার মুখে মাস্ক ছিল। সংখ্যায় তাঁরা ৭-৮ জন ছিল। এ ঘটনায় পাশে থাকা বিএনপি প্রার্থী এরশাদের সঙ্গে শান্ত নামের আরও একজন গুলিবিদ্ধ হন।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. শাহাবুদ্দিন ও মো. ইসমাইল জানান, গণসংযোগকালে ৭-৮ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ খুব কাছ থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বায়েজিদ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে কাউকে ঘটনাস্থল থেকে কিংবা অন্য কোনো স্থান থেকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

কে এই বাবলা

গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন প্রাইভেট কারে সরওয়ার থাকলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরে এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে ও পুলিশকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে বাবলাকে গুলি করা হয়।

বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ জানিয়েছে, সরোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত সরোয়ার বাবলা গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ে করেন। তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ, আবু সুফিয়ানসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। দীর্ঘদিন সন্ত্রাসী তকমা নিয়ে থাকা বাবলা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায় সরোয়ারকে।

এর ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেন সরোয়ার। তবে মাগরিবের নামাজের পরপর এলোপাতাড়ি গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে নগরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে অন্য দুজনের অবস্থা এখন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এজিএম রাম প্রসাদ।

সর্বশেষ এ ঘটনায় বাবলার প্রতিপক্ষ ছোট সাজ্জাদ গ্রুপের রায়হান, ইমনসহ আরও কয়েকজনের নাম সামনে এসেছে। সম্প্রতি এই দুজনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম নগর ও রাউজানে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপি বলছে, সরোয়ার তাদের কেউ নন। জনসংযোগে শত শত লোক অংশ নেন। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁর প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে গুলি করা হয়।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগের সময় সেখানে শত শত লোক অংশ নেন। ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর খিলক্ষেতে সাবেক এক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে মারধর, অশ্লীল দৃশ্য ধারণ করে প্রায় চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সাজিদ হাসান সৌরভ (৩০) ও রাসেল মুন্সি (৩২) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ভুক্তভোগী সাবেক সেনাসদস্য মোহাম্মদ মোরশেদ আলম খান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পরে খিলক্ষেতের নামাপাড়া এলাকায় আজ দুপুরে অভিযান চালিয়ে সৌরভ ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শিবপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে সাজিদ হাসান সৌরভ ও একই উপজেলার কুড়াতলা গ্রামের কামরুল মুন্সির ছেলে রাসেল মুন্সি। তাঁরা বর্তমানে খিলক্ষেতের পূর্ব নামাপাড়ার বাবুলের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন।

মামলার অভিযোগে ভুক্তভোগী সাবেক সেনাসদস্য জানান, একটি অপরিচিত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে নওশিন (২৬) নামের এক নারীর সঙ্গে পরিচয় ও কথাবার্তা হতো তাঁর। একপর্যায়ে নওশিন তাঁকে দেখা করার প্রস্তাব দেন। পরে তিনি গত ৬ অক্টোবর বেলা ১১টায় খিলক্ষেতের বটতলা এলাকায় দেখা করেন। তারপর তাঁকে খিলক্ষেতের নামাপাড়া এলাকার বাবুলের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান ওই নারী।

সেখানে যাওয়া মাত্রই সৌরভ, রাসেল, জাফর, তালহাসহ তাঁদের আরও দুই থেকে তিনজন সহযোগী পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভুক্তভোগী মোরশেদ আলমকে মারধর করে পকেট থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। তারপর তাঁর বিকাশ থেকে ৫ হাজার ৫০ টাকা নেন। এ ছাড়া তাঁর অশ্লীল দৃশ্য ধারণ করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। না দিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব দৃশ্য ছড়িয়ে দেওয়া ও হত্যার হুমকি দেন।

অতঃপর আটকে রেখে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৩ লাখ ৮০ হাজার ৫২০ টাকা নিয়ে নেন। এর পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছেড়ে দেন। ওই সময় থানা-পুলিশ করলে বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশিকুর রহমান দেওয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নারী দিয়ে ডেকে নিয়ে মারধর করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও অশ্লীল দৃশ্য ধারণ করে হুমকির অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার পরপর খিলক্ষেতের নামাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে সৌরভ ও রাসেল নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে সঙ্গে চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাঁদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত