Ajker Patrika

রাকসু নির্বাচন: প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে আগ্রহ নেই শিক্ষার্থীদের

  • প্রচারণা শেষ আজ, বৃহস্পতিবার ভোট।
  • ভোটে নিরাপত্তায় থাকছে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি।
 রিমন রহমান, রাজশাহীদীন ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে বৃহস্পতিবার। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের হাতে মেহেদি দিয়ে এঁকে দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীর ব্যালট নম্বর। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে বৃহস্পতিবার। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের হাতে মেহেদি দিয়ে এঁকে দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীর ব্যালট নম্বর। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হন, তবে একসঙ্গে আবাসনের ব্যবস্থা; অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মাসিক ভর্তুকি প্রদান; লাইব্রেরি, সেমিনার ও রিডিং রুম ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা, প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বৈধ সিট নিশ্চিত করা—এমন শত শত প্রতিশ্রুতি উঠে এল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ইশতেহারে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থী এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী নন।

রাকসুর সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৯টি ভবনে ১৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। ভোট গ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করা হবে। এর আগে বিভিন্ন প্যানেল থেকে দেওয়া হয়েছে ইশতেহার। এসেছে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি।

রাকসু নির্বাচনে মোট প্যানেল ১১টি। ছাত্রদল, বামধারার গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ, সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খানের নেতৃত্বে আসা স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সংসদ, ছাত্রশিবির-সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট, সাবেক দুই সমন্বয়ক মেহেদী সজিব ও সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে আসা আধিপত্যবিরোধী ঐক্য ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন-সমর্থিত প্যানেল সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ এবং গণঅধিকার ও ছাত্র ফেডারেশন-সমর্থিত রাকসু ফর র‍্যাডিক্যাল চেঞ্জ আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার দিয়েছে। বাকিরা আনুষ্ঠানিক ইশতেহার ঘোষণা না করলেও নির্বাচনী প্রচারপত্রে নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজভিত্তিক ছাত্র সংসদের মেয়াদ সাধারণত এক বছর ধরা হয়। অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ছাত্র সংসদ এক বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করে। এই সময়ের মধ্যে এত সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এগুলো শুনতে অনেকটা রূপকথার মতো। তাদের আকৃষ্ট করার জন্যই বিভিন্ন প্যানেল এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে অবাস্তব ও উচ্চাভিলাষী নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

রাকসু নির্বাচনে ছাত্র-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ইশতেহারে বলা হয়েছে, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মাসিক ভর্তুকি প্রদান, লাইব্রেরি, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সেবা উন্নয়নসহ সেন্ট্রাল লাইব্রেরি ও হল লাইব্রেরিতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা হবে।

ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ‘১২ মাস, ২৪ সংস্কার’ শীর্ষক ইশতেহার দিয়েছে। তারা জয়ী হলে রাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন বাস্তবায়ন করা, প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বৈধ সিট নিশ্চিত করা, আবাসন সংকটের অস্থায়ী সমাধান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে অস্থায়ী হোস্টেল বা মাসিক আবাসন ভাতার ব্যবস্থা করা এবং স্থায়ী সমাধান হিসেবে হল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অন্যদিকে বামধারার গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ তাদের ইশতেহারে লাইব্রেরি, সেমিনার ও রিডিং রুম ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা, হলগুলোর ক্যানটিনের পাশাপাশি প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে ডাইনিং চালু রাখা, রাবি মেডিকেল সেন্টারকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, এসব ইশতেহারের বেশির ভাগই এক বছরের মেয়াদে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে এর মধ্যেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, খাবারের মান উন্নয়ন, ক্যাম্পাসের রাস্তাঘাট সংস্কারের মতো কিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যা ইচ্ছা থাকলে এক বছরের মধ্যেই সম্ভব করা যায়।

জানতে চাইলে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন বলেন, ‘আমরা যে ইশতেহার ঘোষণা করেছি, তা এক বছরে বাস্তবায়ন করা অনেকটাই সম্ভব। রেলস্টেশন সংস্কার, লাইব্রেরি আধুনিকায়নের বিষয়গুলোসহ অন্যান্য যে ইশতেহার আছে, তা কয়েক মাসেই করা সম্ভব হবে।’

ক্ষমতার কেন্দ্র উপাচার্য

রাকসুর প্রথম গঠনতন্ত্র হয়েছিল ১৯৬২ সালে। এর প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে—শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করা, শিক্ষার্থীদের সমস্যা, মতামত ও দাবি প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা। শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, পাঠদান, পরীক্ষা, হলজীবন, স্বাস্থ্যসেবা, খাবার ও পরিবহন-সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তদারকি করা। আর গঠনতন্ত্রের ৭(১)(ই) ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, সভাপতির (উপাচার্য) অনুমোদন ছাড়া নির্বাহী কমিটির কোনো সিদ্ধান্তই বৈধ বলে গণ্য হবে না। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যাঁদের ভোটে নির্বাচিত করবেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে শুধু উপাচার্যের অনুমোদনের পরই। এ প্রসঙ্গে রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না বলেন, রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন না করে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

নিরাপত্তায় থাকবে তিন বাহিনী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ছয় প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র‍্যাব মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরাও নিরাপত্তা কার্যক্রমে অংশ নেবেন।

গতকাল বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি), র‍্যাব ও বিজিবির প্রতিনিধিদের মধ্যে এক সমন্বয় সভা শেষে এসব তথ্য জানান আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে কিছু বস্তি এলাকা রয়েছে, যেখানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে আমরা মনে করছি। সেই এলাকাগুলোতেও তল্লাশি চালানো হবে। এ ছাড়া আবাসিক হলে যেন কোনো বহিরাগত অবস্থান না করে, সে বিষয়েও আমরা নজরদারি করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের জন্য সেনানিবাসে সাময়িকভাবে কারাগার হচ্ছে

জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে স্বাক্ষর করবেন যাঁরা

বাটা শুর ৬৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী এমডি হলেন ফারিয়া ইয়াসমিন

ময়মনসিংহে ১১ দৈনিক পত্রিকায় ‘হুবহু একই সংবাদ’, সবগুলোর ডিক্লারেশন বাতিল

চীনের পর ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ নির্মাণের মহাপরিকল্পনা ভারতের, বাংলাদেশের বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত