Ajker Patrika

সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের কক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সংসার!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
হাতীবান্ধা সহর উদ্দিন সরকার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী বিদ্যালয়ের কক্ষে গড়ে তুলেছেন সংসার। ইনসেটে ইমরান আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাতীবান্ধা সহর উদ্দিন সরকার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী বিদ্যালয়ের কক্ষে গড়ে তুলেছেন সংসার। ইনসেটে ইমরান আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি অর্থে সংস্কার করা একটি কক্ষ দখল করে নিজের সংসার সাজানোর অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সহর উদ্দিন সরকার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলীর বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, তাঁর দায়িত্বহীনতার কারণে বিদ্যালয়ের মাঠ এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, অর্থ আত্মসাৎ এবং নারী শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে ১৯৪৬ সালে সহর উদ্দিন সরকার উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়; যা ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয়করণ করা হয়। ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ইমরান আলী। এরপর প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম প্রধান ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে গেলে সহকারী শিক্ষক ইমরান আলী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে পুরোনো ভবন সংস্কার করা হয়। সেই সংস্কারকাজ চলাকালীন ঠিকাদারকে ‘বাগিয়ে’ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষকে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিজের আবাসন হিসেবে ব্যবহার করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী।

সরকারি ভবন বা আবাসনে বসবাস করলে বিধি অনুযায়ী বাড়িভাড়া কর্তন করার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী বলেন, ‘দূর থেকে এসেছি, একটি রুম মুসাফির হিসেবে ব্যবহার করতেই পারি, এটা কোনো অপরাধ নয়। আবাসিক নয়, তাই বাড়িভাড়া কেন কর্তন হবে?’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন ইমরান আলী। প্রায় অর্ধকোটি টাকা বার্ষিক আয়ের এই প্রতিষ্ঠানের কৃষিজ ও বাণিজ্যিক স্থাপনার আদায় করা অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করে একটি বেসরকারি (বিএম শাখার) ব্যাংক হিসাবে জমা করা হচ্ছে এবং তিনি একক স্বাক্ষরে তা উত্তোলন করছেন।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যয় পরিচালনা বিধি অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি (তিন সদস্যের) গঠনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও দীর্ঘদিনেও এই প্রতিষ্ঠানে তা করা হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, এ কারণে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একক সিদ্ধান্তে বিদ্যালয় পরিচালনা করে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিরীক্ষণের কথা বললেও তিনি কর্ণপাত করেন না। পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র ফি পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের কোনো হিসাব কাউকে দেন না।’

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী অবশ্য বলেন, ‘অর্থ আত্মসাৎ করার ইচ্ছে আমার নেই। আগামী ডিসেম্বরে অডিট কমিটি গঠন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের কোড বা নির্দেশনা না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের আয় একটি ব্যাংক হিসাবে জমা করা হচ্ছে।’ তবে তিনি হিসাব নম্বর দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিদ্যালয় খোলার দিনেও মাঠে গরু-ছাগল বিচরণ করে। এর জন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেই দায়ী করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যালয় খোলার দিনেও মাঠে গরু-ছাগল বিচরণ করে। এর জন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেই দায়ী করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। সম্প্রতি অষ্টম শ্রেণির ১৬৭ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ জনপ্রতি প্রায় ৫৫ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া বিগত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সময় জোরপূর্বক জনপ্রতি দুই হাজার টাকা কোচিং ফি আদায় করার অভিযোগও রয়েছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহি মোহাম্মদ আকতারুদোজা বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে সহকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। তাঁর অশালীন আচরণ থেকে নারী শিক্ষকেরাও মুক্তি পাননি। যদিও আমার সঙ্গে কখনো এমনটা করেননি।’

গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা যায়, বিশাল মাঠের ওপর দিয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে। সেই মাঠে অবাধে বিচরণ করছে গরু-ছাগল। মাঠে গবাদিপশুর বিষ্ঠার দুর্গন্ধের কারণে খেলাধুলা তো দূরে থাক, চলাচল করাও কষ্টকর। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পা পিছলে পড়ে গিয়ে পোশাক নোংরা করছে।

হাতীবান্ধা ২ নম্বর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী আহেদ আলী বলেন, ‘মাঠটি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে। প্রাচীর দেওয়া থাকলেও দুটি পকেট গেট দিয়ে স্থানীয়রা গরু-ছাগল চরায়। এসব বন্ধে লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রতিকার পাইনি।’

নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বলে, ‘গৌরবের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় জৌলুশ হারাচ্ছে। গোবরের দুর্গন্ধের মধ্যে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চাই।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক রোকসানা বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের রুমে বসবাস করার সুযোগ নেই। আমি নতুন যোগদান করেছি, তাই বিষয়গুলো জানা নেই। তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।’

উল্লেখ্য, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী নিজেকে ভারমুক্ত করে সরাসরি প্রধান শিক্ষক দাবি করছেন। প্রধান শিক্ষকদের অনার বোর্ডেও তিনি ‘ভারপ্রাপ্ত’ শব্দটি লেখেননি বলে সমালোচনা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাইয়ের গাদ্দারদের সব রেকর্ড প্রকাশ করা হবে—অব্যাহতির পর এনসিপি নেতার হুমকি

মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

‘ছোট ছোট চান্দাবাজি আমি হইতে দিছি’—বিএনপি নেতা সান্টুর বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল

চট্টগ্রাম বন্দর: বিদেশিদের কাছে লিজে যাচ্ছে তিন টার্মিনাল

নাটোরে হোটেল কক্ষ থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত