Ajker Patrika

রাজশাহীতে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম, ভাঙচুর–গুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
বাগমারা থানা । ফাইল ছবি
বাগমারা থানা । ফাইল ছবি

রাজশাহীর বাগমারায় সাবেক এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত ওই যুবদল নেতাকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল রোববার স্থানীয় কথিত সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যরা এ ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ।

আহত এস এম আরিফুল ইসলাম আরিফ রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ আলম ও বারিক নামের দুই যুবক নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে রাতে আহত যুবদল নেতা চারজনের নাম উল্লেখসহ ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। থানায় অবস্থানকালে যুবদল নেতার তাহেরপুর বাড়িতেও হামলা করে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় যুবদল নেতা আরিফের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি তাঁর ওপর হামলা ও রেস্টুরেন্টে ভাঙচুরের সঙ্গে তাহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আ ন ম শামছুর রহমান মিন্টুর মদদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুরের পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর উপজেলার ঝিনার মোড় এলাকায় একটি বিলে পুকুর খনন চলছে। তাহেরপুরের বিএনপি নেতা মিন্টুর ক্যাডার বাহিনী পুকুর খননের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ। বিলের জমির মালিকদের সঙ্গে কথা না বলে এবং লিজের টাকা না দেওয়ায় এলাকার যুবক আলমসহ স্থানীয় কৃষকেরা পুকুর খনন করতে বাধা দেন।

এ সময় আলম তাঁর ঘনিষ্ঠ বাগমারার বড়বিহানিলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবদল নেতা মাহমুদুল রহমান মিলন; তাহেরপুর পৌর যুবদলের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জিল্লুর রহমানসহ আরও কয়েকজনকে ডাকেন।

সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুললে কথিত সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় ওই বাহিনীর সদস্য রাসেল ফরাসিসহ কয়েকজন পিস্তল বের করে গুলিবর্ষণ করেন। এতে আলম ও বারিক নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিতে আরও কয়েকজন আহত হন। এরপর রাত ৩টার দিকে সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে তাহেরপুর চলে যান।

তাঁদের ধারণা, যুবদল নেতা আরিফের নির্দেশে তাঁরা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছেন। পরে তাঁরা তাহেরপুরে পৌঁছে তাঁর চায়নিজ রেস্তোরাঁয় হামলা করেন। এ সময় আরিফকে কুপিয়ে আহত করা হয়।

জানতে চাইলে আহত আরিফ বলেন, ‘আমি রাতে রেস্টুরেন্টে ছিলাম। এ সময় সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্য তাহেরপুর পৌর কৃষক দলের সিনিয়র সহসভাপতি রাসেল ফরাসি, তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক আহ্বায়ক আবু বাশার, বর্তমান আহ্বায়ক ওহাব সর্দার এবং ছাত্রদল কর্মী লিখন আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে। রাসেল ও বাশারের হাতে পিস্তল ছিল। ওহাবের হাতে ছিল চাপাতি। আর লিখনের হাতে ছিল রড।’

আরিফ আরও বলেন, ‘হামলার সময় আমি চিৎকার করেছিলাম। সে সময় তাহেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির একটি পিকআপ আমার রেস্টুরেন্টের নিচে ছিল। চিৎকার শুনে পুলিশ সদস্যরা আমার রেস্টুরেন্টে উঠে এলে সিক্স স্টার বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়।

‘তবে এর পাঁচ মিনিট পরেই রাসেল ফরাসির নেতৃত্বে আবারও ১৫-২০ জনের একটি দল রেস্টুরেন্টে এসে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা আমার রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও ডেকোরেশন ভাঙচুর করে। এর ফলে আমার ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা আ ন ম শামসুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘আরিফের ওপর হামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার কোনো বাহিনী নেই। আমি সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না। সাধারণ জীবনযাপনে আমি অভ্যস্ত। যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’

এ বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে রাজশাহী পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘একজনের ওপর হামলা ও রেস্টুরেন্টে ভাঙচুরের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। তবে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কি না, জানা নেই। মামলা রেকর্ড করার জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...