Ajker Patrika

ধোঁয়া-ধুলায় দূষিত রাজশাহীর বাতাস

  • রাজশাহী শহরে গতকাল বাতাস ছিল দেশের সবচেয়ে দূষিত।
  • যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় এবং নির্মাণকাজে বাড়ছে দূষণ।
  • কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহনের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় ট্রাফিক পুলিশ।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে বায়ুদূষণ হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে বায়ুদূষণ হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া আর নির্মাণকাজের ধুলার কারণে দূষিত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বাতাস। অথচ ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণা কমানোয় বিশ্বসেরার খেতাব পেয়েছিল রাজশাহী শহর। ৯ বছরের ব্যবধানে এখন নিয়মিতই রাজশাহীর বায়ুদূষণের কথা উঠে আসছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে। গতকাল সোমবারও এখানকার বাতাস ছিল দেশের আট বিভাগীয় শহরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত।

আইকিউএয়ার বাতাসের মান নির্ধারণে একটি তাৎক্ষণিক সূচক তৈরি করে, যা কোনো নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। গতকাল দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে বায়ুর মান সূচক সবচেয়ে বেশি ছিল, ১৬৭। তারপরই ছিল খুলনায়, ১৫৭। এ ছাড়া রংপুরে বায়ুর মান সূচক ১৩৭, বরিশালে ১১৪, ময়মনসিংহে ১১৩, ঢাকায় ১০২, সিলেটে ৮২ এবং চট্টগ্রামে ৭৩ রেকর্ড করা হয়েছে।

গবেষকেরা বলছেন, বায়ুদূষণের নানা নিয়ামকের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো অতিক্ষুদ্র কণা, যা পিএম ২.৫ নামে পরিচিত। বাতাসে মিশে থাকা অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা, গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়া, ইটভাটা ও নির্মাণকাজ থেকে এই কণা তৈরি হয়। রাজশাহীতে এখন ইটভাটাগুলো বন্ধ। কলকারখানাও তেমন নেই। বায়ুদূষণ করছে মূলত যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং শহরজুড়ে চলমান নির্মাণকাজ থেকে তৈরি হওয়া ধূলিকণা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শংকর কে রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজশাহীর মতো শহরে আমরা এমন বায়ুদূষণ কল্পনাও করতে পারি না। এখন এমনিতেই আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে সর্দি, জ্বর, কাশি, ফ্লু, ডেঙ্গু রয়েছে। এর সঙ্গে দূষিত বায়ু ফুসফুসে গেলে শিশু ও বয়স্ক এবং যারা আগে থেকে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত, তাদের নানা অসুখ দেখা দেবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরজুড়ে প্রচুর নির্মাণকাজ হচ্ছে। বালু রাখা হচ্ছে রাস্তার ওপর। গাড়ি সেদিক দিয়ে গেলে চাকা উঠছে বালুর ওপর। এতে বালু উড়ছে। বাতাসে ধূলিকণা বাড়ছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পরিবেশবান্ধব হলেও সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে সেগুলোও চলাচলের কারণে ধুলোবালি ওড়াচ্ছে; পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহন থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তো শোনা যায় না।’

ধোঁয়া দেখে সনদ

রাজশাহী নগরের ভেতর দিয়ে এখনো বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে। শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লক্কড়ঝক্কড় বাস এক জেলা থেকে আরেক জেলায় চলাচল করছে। গতকাল দুপুরে নগরের ভদ্রা এলাকায় একটি বাস থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হতে দেখা যায়।

সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী এসব গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) নূরে আলম সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে মোটরসাইকেল একবার কেনার পর আর কখনো ধোঁয়া পরীক্ষা হয় না। এ ব্যাপারে মামলা হয় না। আমাদের দেশে বিষয়টা ওই পর্যায়ে যায়নি। তবে বাস-ট্রাকের মতো অন্যান্য যানবাহন কালো ধোঁয়া নির্গত করলে আমরা ব্যবস্থা নিই। এটা অবশ্য দেখার মূল দায়িত্ব বিআরটিএর। আমরা বিআরটিএকে বলি, যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া নির্গত করে, তাদের যেন ফিটনেস সার্টিফিকেট না দেওয়া হয়।’

বিআরটিএর রাজশাহী কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা যানবাহনের কালো ধোঁয়া চোখে দেখেই ফিটনেস সনদ দেন। ধোঁয়ার মান পরীক্ষার জন্য তাঁদের কাছে কোনো ডিভাইস নেই। অথচ গ্যাস, পেট্রল বা অকটেনচালিত মোটরযানের ধোঁয়া পরীক্ষার জন্য গ্যাস অ্যানালাইজার ও ডিজেলচালিত গাড়ির জন্য স্মোক মিটার আছে। এ যন্ত্র শুধু বিআরটিএর ঢাকা কার্যালয়ে আছে। দেশের আর কোথাও নেই।

জানতে চাইলে বিআরটিএর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) ফয়সাল হাসান বলেন, প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য আগে একবার তাঁকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) দেওয়া হয়েছিল। তাই প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়া তিনি কথা বলবেন না।

রাসিকে জরুরি বৈঠক

রাজশাহীর বাতাসের মান দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হয়ে পড়ার খবর জানতে পেরে গতকাল দুপুরে জরুরি বৈঠক করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) কর্মকর্তারা। সেখানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্মাণাধীন বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উদ্যোগে নির্মাণাধীন বাসাবাড়ির বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। এ বৈঠকে ধূলিকণা কমানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে রাসিকের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহমুদ-উল-হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাতাসের মান নিয়ে যে খবর এসেছে, তা দুঃখজনক। এখন শহরে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। সে কারণে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় ধুলোবালি উড়ছে। পানি ছিটিয়ে এটা কমানো যায় কি না, সে জন্য সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখাকে বলা হয়েছে। ফ্লাইওভারগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে এটা থাকবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেইলি স্টারে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অধীনে এ মামলা দাখিল করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে সমবেত হয়। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে হামলার আহ্বান জানায়।

রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ভবনের মূল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভবনের বিভিন্ন তলা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বহু আসবাব নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, হামলায় ভবনের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লকারে থাকা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, লিফট, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও ক্ষতি করা হয়।

আসামিদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে ‘দ্য ডেইলি স্টার ভবনে’ সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের আনুমানিক মূল্য ৪০,০০,০০,০০০ (চল্লিশ কোটি টাকা)। যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের হিসাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সন্ত্রাসীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে দ্য ডেইলি স্টারের তৃতীয় তলায় স্টোরে সংরক্ষিত হিসাব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জাতীয় রাজস্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর-সম্পর্কিত যাবতীয় নথি এবং নিউজ পেপার আর্কাইভস পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয় বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রমাণ নষ্টের উদ্দেশ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে ভবনের ভেতর থেকে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। অনলাইন কার্যক্রম ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

মামলার এজাহারে ডেইলি স্টার জানিয়েছে, এই হামলার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেডফোন কানে রেললাইনে যুবক, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত

ফেনী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল্লাহ আল নাহিদ (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নাহিদ সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ এলাকার দেবীপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।  

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেনটি উত্তর শিবপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দীপক দেওয়ান বলেন, নিহত যুবক হেডফোন কানে রেললাইনে হাঁটছিলেন। পরে চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রেললাইনের এক পাশে ছিটকে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত