Ajker Patrika

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়: গাছ আম মাছ ইট সবই চক্রের পেটে

  • লুটপাটের কবলে ক্যাম্পাসের ২০৫ বিঘা জমি।
  • ইজারা ছাড়াই ৭ পুকুরের মাছ বিক্রি।
  • জমি ভাড়া দিয়ে শাকসবজি চাষ।
  • সমালোচনার মুখে গাছ কাটা বন্ধ, তদন্ত কমিটি গঠন।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়: গাছ আম মাছ ইট 
সবই চক্রের পেটে

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য অধিগ্রহণ করা ২০৫ বিঘা জমিতে চলছে ব্যাপক লুটপাট। সহস্রাধিক গাছ কেটে নেওয়ার পাশাপাশি নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেখিয়ে প্রায় ৪ হাজার গাছের আম লোপাট করে একটি চক্র। ইজারা ছাড়াই সাতটি পুকুরে চাষ করা হয় মাছ। শাকসবজি চাষের জন্যও ভাড়া দেওয়া হয়েছে ক্যাম্পাসের জমি। বাদ যায়নি দোকান ভাড়া তোলাও। তবে এসবের কোনো অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা পড়েনি। জমা পড়েছে শুধু আমগাছ ইজারার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও রামেবির কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে।

বাজেসিলিন্দা এলাকায় ২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে এই ক্যাম্পাস। জেলা প্রশাসন জায়গা অধিগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে দেয় গত বছর। গত ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু এত দিনে নির্মিত হয়েছে শুধু এক কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানাপ্রাচীর ও একটি ড্রেন। কাজের অগ্রগতি মাত্র ৭ শতাংশ। নির্মাণকাজের স্থবিরতার সুযোগ নিচ্ছে লুটেরা চক্র।

স্থানীয়রা বলছেন, গত ৯ মাস ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসের গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি গাছ কাটার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে এক শ্রমিককে বলতে শোনা যায়, তারা ‘হাফিজ (হাফিজুল ইসলাম) ভাইয়ের লোক।’ এ নিয়ে সমালোচনার মুখে ১৩ আগস্ট ক্যাম্পাসে বালু ভরাটের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় রামেবি। ২১ আগস্ট গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে জবাব দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার ছত্রচ্ছায়ায় হাফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি গাছ কাটা, আম বিক্রি ও মাছ চাষের মূল হোতা। অধিগ্রহণ করা জায়গার এক কোণে তাঁর খামার ছিল। অধিগ্রহণ করা হলেও সেই জায়গাকে কেন্দ্র করে এখন পুরো এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করেছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আম বিক্রি থেকে আয় হয়েছে কোটি টাকার বেশি। প্রতিটি বড় আমগাছ থেকে ৩০-৩৫ হাজার টাকার আম পাওয়া গেছে। অথচ ইজারা বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। শ্রমিকদের দাবি, সব আম বিক্রি হয়েছে হাফিজুলের নির্দেশে, যার পেছনে আছেন প্রভাবশালী ওই নেতা। আম বিক্রির অর্থে উপাচার্যের দপ্তরে ভূরিভোজেরও আয়োজন করা হয়।

হাফিজুলের দাবি, খাওয়াদাওয়ার খরচ দিয়েছেন ওই নেতা, যিনি আবার উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেনের আত্মীয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীর ও ড্রেন নির্মাণকাজেরও অংশীদার।

লুটপাট শুধু গাছ ও আমেই থেমে নেই। ক্যাম্পাসের পুরোনো অধিগ্রহণ করা ভবন ভাঙার পর ইটও লোপাট করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, ক্যাম্পাসের ১৫-২০ শতাংশ জায়গা জলাধার। এর মধ্যে প্রায় ৩০ বিঘা জমির সাতটি বড় পুকুর আছে। সেগুলো ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, একই চক্র সেখানে মাছ চাষ করে লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছে। উঠিয়েছে বড় অঙ্কের দোকান ভাড়া। এমনকি কিছু জমি শাকসবজি চাষের জন্য স্থানীয়দের ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এত বড় লুটপাট সম্ভব নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামেবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর গাছ কাটা আপাতত বন্ধ আছে। তবে ঘটনা অন্য খাতে ঘোরাতে ওই প্রভাবশালী নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও উপপ্রকল্প পরিচালককে ফোন করে এ ঘটনায় যুক্ত শ্রমিকদের ধরার নাটক সাজান। পরে পুলিশ গিয়ে দেখে, ধরা পড়া শ্রমিকেরা গাছ কাটছিলেন না; তাঁরা পুনরায় গাছ রোপণের কাজ করছিলেন। এ ঘটনায় গতকাল রোববার পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কোষাধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন খন্দকারের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলতে গতকাল রামেবির উপাচার্য ও ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহা. জাওয়াদুল হকের দপ্তরে যান এই প্রতিবেদক। তবে তাঁর সহকারী মো. শিহাব জানান, তিনি একটি সভায় আছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না।

উপপ্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর বলেন, ‘পুকুরগুলো সংস্কার হবে, তাই ইজারা দেওয়া হয়নি। কারা মাছ চাষ করেছে জানি না। ইট লুটের সময় আমরা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। দোকান থেকে কারা ভাড়া তুলছে, কারা সবজি চাষে জমি ভাড়া দিয়েছে, সেটাও জানি না। আমগাছ ইজারা দেওয়া হয়েছিল নিয়ম-বিধি অনুসরণ করে।’

গতকাল রবিবার ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে সাত দফা দাবি জানান কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্যরা। এলাকা সিলগালা করে প্রমাণ সংরক্ষণ, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ আদায়, অবৈধভাবে কাটা কাঠ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া এবং ক্ষতির বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নের দাবি জানান তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে পাকিস্তানের দাবি নাকচ করল সরকার

১৫ বছর যাদের জন্য লড়াই করলাম, তারা এখন আমাকে ধাক্কা দেয়: রুমিন ফারহানা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত