Ajker Patrika

পাঁচ সন্তানের জনকের ঠাঁই ভিক্ষুকের ঘরে!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
পাঁচ সন্তানের জনকের ঠাঁই ভিক্ষুকের ঘরে!

আবদুল হালিম নোয়াখালী জেলার মাইজদী থানাধীন পদুয়া গ্রামের সন্তান। শামিম, শফিকুল, রাসেল, খোকন, শাহেদ নামে পাঁচ ছেলের বাবা তিনি। ৫৯ বছর বয়সী আবদুল হালিম দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারণে হাঁটতে পারেন না। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে এক বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছেন বিছানায়। 

এই আবদুল হালিম সারা জীবন চাকরি করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। তার পাঁচ সন্তান এখন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেউ চাকরি করছেন, আবার কেউ করছেন ব্যবসা। 
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্তানেরা কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন কেউ বাবার খোঁজ রাখেন না। এক বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক হাসপাতালে ভর্তি হন আবদুল হালিম। সেখানে অসুস্থ বাবাকে ফেলে রেখে চলে যান তাঁর সন্তানেরা। তাই পাঁচ সন্তানের বাবা আবদুল হালিমের ঠাঁই হয়েছে পরিচিত এক ভিক্ষুকের ঘরে। 

অসহায় ভিক্ষুক এই বৃদ্ধকে নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। আবদুল হালিমের জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা একাধিক বৃদ্ধাশ্রমে যোগাযোগ করে। কিন্তু কোথাও কোন সিট খালি না থাকায় কোন লাভ হয়নি। 

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকার রাজামিয়া কলোনিতে গিয়ে দেখা যায় দুই রুমের ছোট্ট ঘর। সামনের রুমের চকিতে শুয়ে আছেন আবদুল হালিম। পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলে একবার উঠে আবার শুয়ে পড়েন। 

এতে বোঝা গেল ওনার শরীর অনেক দুর্বল, ওঠার শক্তি নেই। তিনি শুয়ে শুয়েই আস্তে আস্তে বলেন, ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করতে শরীরের ঘাম ঝরিয়েছি। টাকা যা ছিল সব তাদের জন্য খরচ করেছি। এখন আমি সন্তানদের ঘরে ‘জঞ্জাল’ হয়ে উঠেছি। তারা আমাকে হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে গেছে’। 
 
চোখের পানি মুছতে মুছতে বৃদ্ধ আরও বলেন, ‘ইউনিলিভারে চাকরির সুবাদে হানিফের পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয়। হানিফ মারা গেছে তবুও তার পরিবার মানবিকতার জায়গা থেকে আমাকে আশ্রয় তাদের ঘরে দিয়েছে। এই দুনিয়ায় এখন আমার কেউই নেই। বয়সও নেই যে কাজ করে খাবো।’ 
 
এ বিষয়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক মো. ইশতিয়াক আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেখান পাঁচ সন্তান তাদের বাবাকে ফেলে চলে যায়। সেখানে একজন ভিক্ষুক তাকে আশ্রয় দিয়ে যে নজির সৃষ্টি করেছে সেটি সত্যিই বিরল। আমরা কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রমে যোগাযোগ করেছি। কোথাও সিট খালি পাইনি। যিনি এই বৃদ্ধকে আশ্রয় দিলেন, সে মহিলাও অসহায়। প্রতিবন্ধী ছেলের ভিক্ষার টাকায় চলে তার সংসার। বৃদ্ধের ছেলেরা তাদের বাবাকে ঘরে না নিলে, এই মহিলার পক্ষে সম্ভব না তাকে দেখভাল করা।’ 
 
আবদুল হালিমকে আশ্রয়দাতা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, গত বছর আবদুল হালিমের ছেলেরা অসুস্থতার কথা বলে আমাকে হাসপাতালে ডেকে নিয়ে যায়। তারা বলেন আন্টি আপনি বাবাকে কয়দিন দেখেন, আমরা পরে এসে নিয়ে যাব। তারা সেই যে গেল এখনো পর্যন্ত কোন খোঁজ খবর নেয় না। টাকা পয়সাও দেয় না।’ 
 
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। আমিও অসহায়। আমার এক ছেলে প্রতিবন্ধী। ছেলেটা ভিক্ষা করে যা আনে আমি তা দিয়ে চলি। আশপাশের কিছু মানুষ আমাকে সাহায্য করে। বাসা ভাড়া বাকি ছয় মাসের। এর ওপর আবদুল হালিমের ওষুধ কিনতে হয়। এই অবস্থায় আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।’ 
 
আবদুল হালিমের পাঁচ সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, চার সন্তান পরিচয় দিতেই কল কেটে দেন। বাকি একজন রাসেল কথা বললেও এই বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...