Ajker Patrika

গরু কেনার সামর্থ্য নেই, তিন যুগ ধরে নিজেই ঘানি টানছেন বৃদ্ধ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিনীলফামারী প্রতিনিধি
তেলের ঘানি টেনে চলেছেন মোস্তকিন আলী। এ কাজে সহায়তা করছেন স্ত্রী ছকিনা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা
তেলের ঘানি টেনে চলেছেন মোস্তকিন আলী। এ কাজে সহায়তা করছেন স্ত্রী ছকিনা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর। তবু টানছেন তেলের ঘানি। একটু টান দিলেই হাঁপিয়ে ওঠেন। তারপরও বিশ্রাম নেই। দুপুর থেকে বিকেল অবধি ঘানি টেনে চলেছেন

বৃদ্ধ মোস্তকিন আলী (৬৫)। টানাটানির সংসারে গরুর কেনার সামর্থ্য কখনো হয়নি তাঁর। গরু না থাকায় তিন যুগ ধরে নিজেই তেলের ঘানি টেনে চলেছেন তিনি।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারি গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাকিন আলী। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘মোস্তাকিম তেলি’ নামে। সংসার খরচ, প্রতিবন্ধী সন্তানদের দেখভাল আর মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে রোজগারের সব টাকা খরচ করতে হয়েছে তাঁকে। তাই গরু কেনার সামর্থ্য কখনোই হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এখন বয়স হওয়ায় শরীরের শক্তিতে কুলায় না।

বৃদ্ধ মোস্তাকিন আলীর দিন শুরু হয় সরিষা সংগ্রহ দিয়ে। আশপাশের গ্রাম ঘুরে সংগ্রহ করেন সরিষা। দুপুর নাগাদ বাড়ি ফিরে শুরু হয় ঘানি টানা। কাঠের গুঁড়ি আর ভারী পাথরের সঙ্গে শরীরের জোরে চলে এই সংগ্রাম। পাশে থেকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী ছকিনা বেগম।

দিনে পাঁচ কেজি সরিষা ভেঙে এক লিটার ২৫০ গ্রাম তেল আর তিন কেজির মতো খৈল পাওয়া যায়। বিকেলে বাজারে গিয়ে তেল বিক্রি করেন। খরচ বাদে হাতে থাকে দুই থেকে আড়াই শ টাকা। এই টাকা দিয়েই চলে সংসার। তবে বয়সের ভারে এখন ঘানি টানতে পারেন না বৃদ্ধ মোস্তাকিম। তার ওপর বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসারের খরচ কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খান।

সরেজমিন দেখা যায়, মোস্তাকিন আলীর বাড়ির আঙিনায় জোড়াতালি দেওয়া টিনের ছাপরার ভেতরে রয়েছে কাঠের ঘানি। ঘামে ভিজে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘানি টেনে চলেন এ বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁদের সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা এই ঘানি। টিনের ঘরটিতে ঝুপঝাপ বৃষ্টিতে পানি চুইয়ে পড়ে।

কথা বলে জানা গেছে, ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জমিজমা নেই এই দম্পতির। সংসারে তিন ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে এই দম্পতির। তার মধ্যে দুই ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে ঘাড়ে টিউমার নিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছেন। দীর্ঘদিনের উপার্জনের জমানো টাকা দিয়ে কোনো রকমে চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন মোস্তাকিম। তবে বিয়ের বছর দু-এক পরে যৌতুক দিতে না পারায় এক মেয়েকে বাবার সংসারে ফিরে আসেন।

মোস্তাকিন বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ঘানি টানা শুরু করি। এখন প্রায় তিন যুগ ধরে এভাবে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু বয়সের কারণে শরীর আর সায় দেয় না। হাঁপিয়ে যাই। কেউ যদি একটা গরু কিনে দিত, তাহলে সেই গরু দিয়েই ঘানি টেনে সংসারটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। আমার গরু কেনার টাকা নাই, তাই নিজেই ঘানি টানতে হয়।’

স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, ‘আমরা বিয়ের পর থেকে একসঙ্গে বুক দিয়ে ঘানি টেনে তেল বানাই। বয়স হয়েছে, শরীর আর পারছে না। তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি, তাঁরা এভাবে নিজেই ঘানি টানেন। আমরা এলাকাবাসী মাঝেমধ্যে সহায়তা করি। তবে কেউ একটা গরু দিয়ে সহায়তা করলে তাঁদের জন্য ভালো হতো।’

প্রতিবেশী হালিম মিয়া বলেন, ‘এই স্বামী-স্ত্রীর বয়স হয়েছে। এই বয়সে ঘানি টানা খুবই কষ্টদায়ক। আমি দীর্ঘ সময় ধরে দেখছি, তারা এভাবে ঘানি টেনে সংসার চালাচ্ছে।’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দ্রুতই তাদের সরকারি সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রতি রাতে সাপ হয়ে দংশন করেন স্ত্রী, প্রশাসনে অভিযোগ স্বামীর

বিসিবির পরিচালক হলেন রুবাবা দৌলা

আওয়ামী লীগ নেতার হিমাগারে মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ‘হাতুড়িপেটা’ ও দুই বোনকে ‘সেফটি পিন ফুটিয়ে’ নির্যাতন

ইসির চিঠির জবাবে শাপলা প্রতীক চেয়ে ৭টি নমুনা পাঠাল এনসিপি

একটি বিশ্বমোড়লসহ তিন পরাশক্তি বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত