Ajker Patrika

সমালোচনার মুখে ২০০ বছরের পুরোনো বাড়ি ভাঙা বন্ধ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
স্মৃতিবিজড়িত একটি বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্মৃতিবিজড়িত একটি বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের ২০০ বছরের পুরোনো বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ কারও নয়। তবে সেখানে শিশু একাডেমি নির্মাণ হবে কি না, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আজ বুধবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সুশীল সমাজের নেতাদের সভা শেষে এই কথা জানানো হয়।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা দাবি করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দেওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। বিবৃতিতে তিনি বাড়িটি রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চান।

পরে রাতেই জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটি পরিদর্শন করেন। বাড়িটির মালিকানা নিয়ে জটিলতার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। আজ স্থাপনাটি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের প্রাচীন এই বাড়ি শিশু একাডেমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জেলার গবেষক, সুশীল সমাজের নেতারা জানান, বাড়িটি টাঙ্গাইলের দানবীর রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহার অস্থায়ী বাসভবন। সম্প্রতি শিশু একাডেমি বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হলে সমালোচনা শুরু হয়।

জানতে চাইলে গবেষক স্বপন ধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৬ ও ২০১৭—এই দুই বছর জার্মানের একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে ১০ সদস্যের একটি টিম গবেষণা করি। সেই টিমে ফান্সের বিশিষ্ট পুরাকীর্তিবিদ রোমেন লারছা প্রধান ছিলেন।

তিনি এসব স্থাপনাগুলোকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছিলেন। জেলায় এসব ৩২০টি স্থাপনার মধ্যে ‘‘এ’’ ক্যাটাগরিতে ছয়টি বিল্ডিং এবং ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৫৪টি বিল্ডিং শনাক্ত করা হয়। অন্যগুলো ‘‘সি’’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। অর্থাৎ প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকেও এ বাড়ি ভাঙার কোনো সুযোগ নেই।’

স্বপন ধর আরও বলেন, ‘এ বাড়িকে বলা হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়ি। বিষয়টি কোনোভাবেই সত্য নয়। এটি রণদা প্রসাদ সাহার বাড়ি। সেটি পানির মতো পরিষ্কার। সেখানে বিন্দুপরিমাণ ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন ময়মনসিংহ নগর শাখার সভাপতি আলী ইউসুফ বলেন, ‘একটি পক্ষ বাড়িটিকে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ভুল তথ্যের কারণে বাংলাদেশ বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড় হচ্ছে। আমরা চাই, সরকার দ্রুত এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবে। এখানে যে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি ভাঙা হয়নি, তা ক্লিয়ার করবেন।’

সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, একটি বাড়ি ভাঙাকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্থাপনাটির সবকিছু ঠিকঠাক রেখে এখানে সুন্দরভাবে শিশু একাডেমি তাদের কার্যক্রম চালাতে পারত। ইতিহাস-ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য।

জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেখানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ২০১২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া ২৪ শতাংশ জায়গার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত বাড়িটি শিশু একাডেমির নামে লিজ দিয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডির) অর্থায়নে একতলা ভবন নির্মাণের জন্য বাড়িটি ভাঙা হচ্ছিল। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭০ লাখ টাকা।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের শশীলজ জাদুঘরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাড়িটির এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়িটি ভাঙা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করি। তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবর্তন কার্যক্রম করা হবে।’ এর আগে গত সোমবার তিনি বাড়িটি ভাঙার ব্যাপারে তথ্য চেয়ে জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন।

জেলা প্রশাসক মো. মুফিদুল আলম বলেন, বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেঁটে এবং গবেষক, লেখক ও সুশীল সমাজের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িটি সত্যজিৎ রায় অথবা তাঁর পূর্বপুরুষের নয়। সেখানে কী হবে না হবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম চলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নয়াদিল্লিতে আফগানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিক নিষিদ্ধ, ভারত সরকার বলছে—কিছু করার নেই

ওকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: মাচাদোর সঙ্গে ফোনালাপ শেষে বললেন ট্রাম্প

চীনা পণ্যে আরও ১০০ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা ট্রাম্পের, অস্থির বিশ্ববাজার

‘গাজার শাসক ঠিক করবে ফিলিস্তিনের জনগণ’, ট্রাম্পের ‘পিস বোর্ড’ প্রত্যাখ্যান

সনদ, সংসদ, গণভোট ও সেফ এক্সিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত