Ajker Patrika

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনা: ঘাতক ট্রাকচালকের লাইসেন্স ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২২, ১৮: ০৯
ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনা: ঘাতক ট্রাকচালকের লাইসেন্স ছিল না

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বেপরোয়া গতির ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে গত শনিবার প্রাণ হারান বাবা, অন্তঃসত্ত্বা মা ও তাঁদের এক সন্তান। অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর পেট ফেটে সন্তান বের হয়ে যায়। নবজাতক এখনো বেঁচে আছে। দেশজুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় ঘাতক ট্রাকচালক মো. রাজু আহমেদ ওরফে শিপনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গতকাল সোমবার রাতে সাভার এলাকার একটি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, ঘাতক ট্রাকটির ধারণক্ষমতা সাত টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটিতে অতিরিক্ত সাড়ে পাঁচ টন পণ্য ছিল। ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ছিল না। গাড়িটির বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল। দুর্ঘটনার আগে ট্রাকের হেলপার ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে বাঁয়ে চাপলে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ট্রাকটি তাঁদের ওপর উঠিয়ে দেন চালক রাজু। 

খন্দকার আল মইন বলেন, ১৬ জুলাই দুপুরে ত্রিশাল উপজেলার রামনা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম তাঁর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তানকে নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থানকালীন ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে তাঁদের চাপা দেয়। এতে নিহত হন মো. জাহাঙ্গীর (৩৫), তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না বেগম (২৬) ও তাঁর তিন বছর বয়সী কন্যাসন্তান সানজিদা আক্তার। দুর্ঘটনার সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ায় চাকার চাপে গর্ভে থাকা কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। ভূমিষ্ঠ নবজাতককে আহত অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ সদরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৮। 

জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন নির্মাণশ্রমিক। দুর্ঘটনায় নিহত কন্যাসন্তান ছাড়াও তাঁদের পরিবারে ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুইজন ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। দুর্ঘটনায় ভূমিষ্ঠ শিশুর ডান হাতের কনুইয়ের ওপরের হাড়ে ফ্র্যাকচার ও কলার বোন ভেঙে যায়। বর্তমানে শিশুটি ময়মনসিংহের লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

দেশবাসী অসহায় ও নিষ্পাপ শিশুর নির্মমভাবে ভূমিষ্ঠ হওয়া ও মা-বাবার মৃত্যুর ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। র‍্যাব দুর্ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। 

গ্রেপ্তারের পর চালক রাজুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ১১ জুলাই থেকে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিলেন। এরই মধ্যে একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মালামাল আনলোড করে আবার রাজশাহীতে ফিরে আসেন। ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে গাড়ির মালিকের আমবোঝাই করে এবং রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলুবোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১২টার দিকে রওনা হন রাজু। পথে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার আগপর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। কিশোরগঞ্জে যাওয়ার পথে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে পেছনে থাকা দ্রুতগতির একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে সড়কের পাশে চলে যায়। ট্রাকটির গতি নিয়ন্ত্রণে চালক রাজু ব্রেক কষার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত ওজনের কারণে ব্রেক কাজ করেনি, ফলে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়ে। পরে বাস থেকে চালক ময়মনসিংহ বাইপাসে নেমে সেখান থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে আরেকটি বাসে করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় পৌঁছান। 

সেখান থেকে রাজু তাঁর পরিচিত বিভিন্ন ট্রাকচালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকেন। গতকাল সোমবার এমন একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ছয়-সাত মাস আগে থেকে রাজু শতকরা ১০ শতাংশ কমিশনে বর্তমান ট্রাকটি চালিয়ে আসছিলেন। গাড়িটিতে করে সব সময় কাঁচামাল পরিবহন করা হতো। বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ। গাড়িটির ধারণক্ষমতা সাত টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন সাড়ে ১৩ টন ছিল। 

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, ১১ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত টানা ট্রাক চালিয়েছেন। এ কারণে তিনি কিছুটা ক্লান্ত ছিলেন। অন্যদিকে দুর্ঘটনার আগে ট্রাকের হেলপার ঘুমাচ্ছিলেন। এ কারণে বাঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিহত ব্যক্তিদের তিনি দেখাননি বলে দাবি করেন। 

ট্রাকটির অতিরিক্ত ওজন ছাড়াও চালকের ছিল না ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স। 

রাজুর বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০০২ সালে যশোরে একটি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। ওই দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ায় প্রায় ছয় বছর গাড়ি চালাননি। বর্তমানেও বাঁ পায়ে সমস্যা রয়েছে। তিনি ১০ বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে ট্রাক চালাচ্ছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

‘ম্যামের মুখটা দেখলাম, মনে হলো—শুয়ে আছেন, কিছুই হয়নি তাঁর’

তিন ভোটে দায়িত্ব পালনকারীদের ‘যথাসম্ভব’ দূরে রাখতে হবে

৪ বিষয়ে সুরাহা চেয়ে ডাকসুর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিলেন ৯ পোলিং এজেন্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত