Ajker Patrika

ময়মনসিংহের ডিআইজির সঙ্গে সমন্বয়কদের এক পক্ষের দ্বন্দ্ব, নেপথ্যে কী

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের কক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল সমন্বয়ক। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত
ময়মনসিংহের রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের কক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল সমন্বয়ক। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

নতুন বছরের প্রথম দিনেই আত্মগোপনে থাকা ময়মনসিংহ সদর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেন, ‘আমাদের ময়মনসিংহের ডিআইজি সাহেবের সঙ্গে মেধাবীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়।’

গত বুধবার আপলোড করা ৬ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ১৫-২০ জনের একটি দল ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’—স্লোগান দিতে দিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের কক্ষে প্রবেশ করেন।

তখন কয়েকজন যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি (ডিআইজি) প্রতি সপ্তাহে শুক্র-শনিবার নিজের উপজেলায় গিয়ে নির্বাচনী কাজকর্ম করেন। তারাকান্দার ওসি আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহে নিহত রেদোয়ান হোসেন সাগর হত্যা মামলার আসামিরা কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। গৌরীপুরে আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করলেও কেন তারা গ্রেপ্তার হয়নি।’

এ সময় ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। পুলিশ একটি দলকে সমর্থন করে কাজ করছে এমন কথা বলে দলটি। তাঁরা বলতে থাকেন, ‘আপনারা (পুলিশ) এমনভাবে কাজ করছেন, টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের না ধরে আপনারা ধরতাছেন কারে, জাসদের মতো ছোট দলের লোককে।’

গত ২৮ ডিসেম্বর দুপুরের এই ঘটনাটি ১ জানুয়ারি সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তের ভেরিফাইড ফেসবুকে আপলোড হওয়ার পরপরেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, কী কারণে, কেন হঠাৎ করে সমন্বয়কদের সঙ্গে রেঞ্জ ডিআইজির বাদানুবাদের ঘটনা ঘটল।

গত বছরের ১৯ জুলাই নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ কলেজছাত্র রেদোয়ান হোসেন সাগর হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মহানগর জাসদের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টুকে ২৭ ডিসেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। গ্রেপ্তারের পরপরই মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে ছাড়াতে কোতোয়ালি মডেল থানায় জোরালো তদবির করেন সমন্বয়কদের একটি পক্ষ।

মিন্টু গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুদিন পূর্বে বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেশের বাইরে ব্যারিস্টার অধ্যয়নরত তাঁর দুই ছেলে জয় ও পিয়াল ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। সে সময় তাঁরা দেশে থেকে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় নগরীর আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টায়ের বাসায় প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ জন সমন্বয়ক থাকতেন। তাঁদের খাওয়াদাওয়াসহ সমস্ত খরচ তিনিই বহন করতেন।

তখন তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সাগর হত্যা মামলা হওয়ায় ক্ষুব্ধ সমন্বয়কেরা আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। সাগর হত্যা মামলার বাদী বিএনপির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমার অন্যতম সহযোদ্ধা ছিলেন।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘২৭ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে যৌথ বাহিনী নিজ বাসা থেকে লাইসেন্সকৃত শটগানসহ জাসদ নেতা সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু ও তাঁর ভাতিজাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরপরই সমন্বয়ক পরিচয়ে একটি দল তাঁকে ছাড়াতে থানায় তদবির করতে আসে। আর অন্য সমন্বয়কেরা তাঁকে যেন কোনোভাবেই ছাড়া না হয়—সে বিষয়ে আমাদের জানান।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা মিন্টুকে ছাড়াতে এসেছিলেন তাঁরাই ডিআইজি স্যারের কার্যালয়ে গিয়ে হট্টগোল করেছেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান বলেন, ‘সমন্বয়ক পরিচয়ে আমার অফিসে আসা দলটি সাবেক কাউন্সিলর মিন্টুকে ছেড়ে দিতে তদবির করে, বিগত সময়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো কাউন্সিলরকে যেন গ্রেপ্তার না করা হয়, সে দাবিও তাঁরা জানান। ছাত্ররা যে আচরণ করে আমার কার্যালয়ে এসেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর আগেও সদর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে গিয়ে তাঁরা এমনটি করেছে। তাঁদের উদ্দেশ্য অন্য কিছু। ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিআইজি অফিসে যাওয়া দলটিতে নেতৃত্ব দেন সায়েবে রাকাত ও আল নূর আয়াশ। আল নূর আয়াশ আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেন। এর আগেও তিনি আহত সমন্বয়কদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সায়েবে রাকাতের মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া আল নূর আয়াশ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশেই আমরা ডিআইজি কার্যালয়ে গিয়েছি। কারণ হচ্ছে, সাগর হত্যায় প্রকৃত আসামিদের পুলিশ ধরছে না। পুলিশ তিনজন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমরা যখন ডিআইজির কক্ষে প্রবেশ করি তখন পুলিশের কিছু সদস্য ভিডিও করছিল, তখন একটু হট্টগোল হয়েছিল, এর বেশি কিছু না। আর আজকে আমরা যেই মুক্ত দেশ পেয়েছি এবং ডিআইজি মহোদয় যে চেয়ারটি পেয়েছেন, সেটি আমার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জাসদ নেতা মিন্টুকে ছাড়ানোর জন্য তদবির করিনি। কোনো অফিসে গিয়েও কাউকে বিরক্ত করিনি, যারা এসব করে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।’

ময়মনসিংহের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক গোকূল সূত্রধর মানিক বলেন, ‘একটি পক্ষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অর্জন ম্লান করার জন্য এমনটি করছে। এর আগে কিছু অফিসে গিয়ে তাঁরা হট্টগোল করেছেন। তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ডিআইজি অফিসে গিয়ে যাঁরা বাদানুবাদে জড়িয়েছেন, তাঁরা আমাদের কেউ নন। আমরা চাই বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় স্ত্রী ও ছেলের লাঠির আঘাতে স্বামী নিহত

বগুড়া প্রতিনিধি
নিহত মিলন রহমান ওরফে টাইগার মিলন। ছবি: সংগৃহীত
নিহত মিলন রহমান ওরফে টাইগার মিলন। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার কাহালুতে স্ত্রী ও ছেলের লাঠির আঘাতে স্বামী মিলন রহমান ওরফে টাইগার মিলন (৪৫) নিহত হয়েছেন। তিনি এক সপ্তাহ আগে কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ স্ত্রী মেঘনা বেগম ও তাঁর ছেলে শামিমকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে কাহালু উপজেলার পালপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিতাই চন্দ্র সরকার এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তিন বছর আগে মিলন ও মেঘনা বিয়ের মাধ্যমে উভয়েই তৃতীয়বারের মতো সংসার শুরু করেন। বিয়ের পর থেকেই নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। মিলন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি মারামারির এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি এক সপ্তাহ আগে জামিনে মুক্তি পান।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মিলন ও মেঘনার মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। খবর পেয়ে মেঘনার প্রথম পক্ষের ছেলে শামিম সেখানে গিয়ে মা মেঘনার পক্ষ নিয়ে লাঠি দিয়ে মিলনের মাথায় একাধিক আঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ মেঘনা ও তাঁর ছেলে শামিমকে গ্রেপ্তার করে।

কাহালু থানার ওসি নিতাই চন্দ্র সরকার বলেন, এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির মা মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে মেঘনা ও তাঁর ছেলে শামিমের নামে মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদেরকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাকচাপায় অটোরিকশার চালকসহ নিহত ২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ট্রাকচাপায় অটোরিকশার চালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে সরাইল-নাসিরনগর আঞ্চলিক সড়কের বড্ডাবাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন অটোরিকশার চালক মোহাম্মদ ইউসুফ (৫০) ও যাত্রী মুসলিম মিয়া (৫২)। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে মুসলিম মিয়া পাইকারি সবজি কেনার জন্য ইউসুফের অটোরিকশা নিয়ে সরাইল বাজারের উদ্দেশে রওনা হন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা নাসিরনগরগামী একটি মাছবাহী ট্রাক অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁদের দুজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদুল আলম বলেন, এই ঘটনায় ট্রাক জব্দসহ ঘাতক চালককে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশার চাদরে পঞ্চগড়: হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড় পূর্ব জলাসি সেতু থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় পূর্ব জলাসি সেতু থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বইছে হিমেল হাওয়া, আর ভোর থেকে চারদিক ঢেকে আছে ঘন কুয়াশার চাদরে। ঘন কুয়াশার কারণে সড়কপথে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে অত্যন্ত ধীরে চলতে হচ্ছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মন্থরতা এনেছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সকাল ৬টা ও ৯টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৯ শতাংশ, যার কারণে ঠান্ডা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

পঞ্চগড় করতোয়া সেতু থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় করতোয়া সেতু থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সকালে জেলা শহর, খেতখামার ও নদীর ধারে কুয়াশা এত ঘন ছিল যে ২০ থেকে ৩০ মিটার দূরত্বের বেশি কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে বাজারে মানুষের উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলক কম। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে চাদর, জ্যাকেট বা উলের শাল জড়িয়ে বাইরে বের হয়েছেন।

এমন পরিবেশে পঞ্চগড়ে পর্যটকদের আগমন বাড়তে শুরু করেছে। কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এই জেলায় আসছেন।

টাঙ্গাইল থেকে আসা পর্যটক ইমরান বলেন, ‘পঞ্চগড়ে ঢোকার পর থেকেই কুয়াশা আর ঠান্ডা লাগছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি, আর এই তীব্র শীত তো আমাদের জন্য বোনাস।’

রংপুর থেকে আসা শিমু আক্তার বলেন, ‘শুনেছিলাম এখানকার শীতের অনুভূতি আলাদা। এসে দেখলাম সত্যিই তাই।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, উত্তর দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস নামতে শুরু করায় তাপমাত্রা কমছে। সকাল ৬টা ও ৯টার তাপমাত্রা একই রয়েছে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমবে এবং শীতের তীব্রতা বাড়বে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রায় ১৪ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ: কালিয়াকৈর পৌরসভায় দুদকের অভিযান

গাজীপুর প্রতিনিধি
গতকাল দুপুরে কালিয়াকৈর পৌরসভা কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল দুপুরে কালিয়াকৈর পৌরসভা কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভা থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকার একাধিক উন্নয়নকাজের কার্যাদেশ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে কালিয়াকৈর পৌরসভা কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তৎকালীন মেয়র মজিবুর রহমান এই কাজগুলো দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

অভিযানের সময় দুদকের কর্মকর্তারা পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন এবং পরে তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যান।

কালিয়াকৈর পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের এপ্রিলে আইইউজিপি প্রকল্পের চতুর্থ প্যাকেজের অধীনে ১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে দুটি রাস্তা নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই কাজের মধ্যে ছিল কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক, আনসার একাডেমির অভ্যন্তরীণ রাস্তা, আনসার একাডেমির ৩ নম্বর গেটের বিপরীত পাশের রাস্তা ও ড্রেন, পাশা গেটের রাস্তা, এপেক্স ওয়েভিং রাস্তা, কোহিনূর স মিলের রাস্তা এবং টান কালিয়াকৈর লালটেকির এলাকার ড্রেনসহ রাস্তা নির্মাণ।

দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাই না করেই ব্রাউন ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি. নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি না পেয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদার সম্প্রতি দুদকের ঢাকা কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করলে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক।

দুদকের গাজীপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কোনো প্রমাণও পৌরসভার কর্মকর্তারা উপস্থাপন করতে পারেননি।’

এনামুল হক জানান, পৌর কর্মকর্তাদের দুই দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের গাজীপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রকল্পে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে আমাদের টিম অভিযান চালায়। আমরা রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের বিষয়ে দুদকের একটি টিম পৌরসভার কয়েকটি প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ে এক ঠিকাদারের অভিযোগ তদন্ত করেছে। আমরা তাদের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছি।’

জানা গেছে, মজিবুর রহমান কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি আওয়ামী লীগের তিন আমলে পৌর মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমলে যেখানে বিএনপি নেতারা জেল-জুলুমের শিকার হয়েছিলেন, সে সময় মজিবুর ছিলেন রাজার হালতে। সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে ছিল তাঁর দহরম-মহরম সম্পর্ক। স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাঁকে মোজাম্মেল হকের ‘পুত্র’ বলে ডাকেন। মোজাম্মেল হকের ছায়ায় কালিয়াকৈরের সবই ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। টেন্ডার-বাণিজ্য, ঝুট-বাণিজ্য, ভুয়া প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ লোপাট, জনবল নিয়োগে অনিয়ম, বনের জমি জবরদখল করে শিল্পকারখানায় বিক্রি করে দুই হাতে কামিয়েছেন টাকা। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। কালিয়াকৈরে গড়েছেন আটটি বহুতল ভবন ও আলিশান বাড়ি। এ ছাড়া রাজধানী ও বিদেশেও রয়েছে ফ্ল্যাট-বাড়ি। চতুর মজিবুর বেশির ভাগ সম্পদ করেছেন স্ত্রী আজমেরি বেগম, নিকটাত্মীয় ও অনুসারীদের নামে।

সূত্র জানায়, এর আগে গত ৫ জানুয়ারি স্ত্রী-সন্তান ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমানকে তলব করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পরে সবকিছু চাপা পড়ে যায়।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র মজিবুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত