Ajker Patrika

সিগন্যাল নেই, ঘড়ি দেখে লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার ফেলেন গেটকিপাররা 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ১২: ১২
সিগন্যাল নেই, ঘড়ি দেখে লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার ফেলেন গেটকিপাররা 

থাকেন জরাজীর্ণ স্যাঁতসেঁতে অবস্থায়, বিদ্যুৎহীন ঘরে নেই আলো-বাতাস। ওয়াশরুমের ব্যবস্থাও নেই। বছরের পর বছর এভাবেই বসবাস করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন ময়মনসিংহ রেলওয়ে বিভাগের গেটকিপাররা। ট্রেন আসার আগে সংকেত না পাওয়া গেটকিপাররা ঘড়ি দেখেই লেভেল ক্রসিংয়ে গেট ব্যারিয়ার ফেলছেন। ট্রেন আসতে অনেক সময় বিলম্ব হলে মারধরেরও শিকার হন তাঁরা।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে অঞ্চলে ২০০টির মতো লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১০৫টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। এর মধ্যে প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ দেওয়া গেটকিপার দিয়ে চলছে ৬০টি লেভেল ক্রসিং। ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় তাঁরা কোনো সিগন্যাল না পাওয়ায় ঘড়ি দেখে গেট ব্যারিয়ার ফেলেন। এতে প্রায় সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনিশ্চিত চাকরি আর সামান্য বেতন নিয়েও গেটকিপারদের নানা ক্ষোভ। 

পলাশ কাজী। বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে। ২০১৮ সালে প্রকল্পের আওতায় গেটম্যানের চাকরি পান। বর্তমানে কর্মরত আছেন ময়মনসিংহ নগরীর কলেজ রোড লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপার হিসেবে। যোগদানের দুই বছর পর গেট ব্যারিয়ার দেওয়া হয় কলেজ রোড লেভেল ক্রসিংয়ে। পূর্বের দুই বছর ট্রেন এলে রাস্তার মধ্যে দুই হাত মেলে অন্যান্য গাড়ি থামাতেন। এখন দুটি গেট ব্যারিয়ারের মধ্যে একটি একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অন্যটির অর্ধেক পর্যন্ত ভেঙে গেছে। চাকরির দীর্ঘ সাড়ে চার বছরেও কোনো দিন ট্রেন এলে সিগন্যাল পাননি। ঘড়ি দেখে ট্রেন আসার সময় হয়েছে ধারণা নিয়ে গেট ব্যারিয়ার ফেলেন তিনি। অনেক সময় ট্রেন আসতে একটু বিলম্ব হওয়ায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াতে হয়। সাধারণ মানুষের মারধরেরও শিকার হন। 

পালশ কাজী বলেন, ‘রেলওয়ের সবচেয়ে অবহেলিত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাকরি গেটকিপারদের। আমাদের একটু অবহেলায় অনেকের প্রাণ যেতে পারে। কিন্তু বছরের পর বছর প্রকল্পের আওতায় সার্ভিস দিয়ে আমাদের চলছে না। গেটকিপারের চাকরির সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একটা পতাকা, বাঁশি, কোদাল, শাবল ও বালতি—এগুলো আজও পর্যন্ত পাইনি। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কিনে চলছি। বিশ্রামের জন্য যে ঘরটি রয়েছে, সেখানে বাথরুম ও বিদ্যুৎ নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় আমাদের থাকতে হচ্ছে।’ 

সানকিপাড়া লেভেল ক্রসিং-২-এর গেটকিপার কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই লাইন দিয়ে ৪৮ বার ট্রেন চলাচল করে। আমরা কোনো সংকেত পাই না। অনুমান করে গেট ব্যারিয়ার ফেলে ট্রেন পাড় করি। এটি একটি ব্যস্ত রাস্তা হওয়ায় অনেক আগে ব্যারিয়ার ফেললে মানুষ অনেক বকাবকি করে। কিছুদিন আগে স্থানীয় একজন আমাকে মারছেও। শুধু আছি পেটের তাগিদে। সরকার যদি চাকরিটা রাজস্বকরণ করে দেয়, তাহলে আমরা কিছুটা চিন্তামুক্ত হতাম।’ 

সানকিপাড়া লেভেল ক্রসিং-১-এর গেটকিপার সাহেব আলী বলেন, ‘অনেক দিন চাকরি করার পর আমার চাকরিটা রাজস্ব খাতে গেছে। এখন নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছি। বেতন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমরা ট্রেন আসলে সংকেতও পাই। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ঘুমের ঘরের বেহাল অবস্থা। বসে থাকার মতোও পরিবেশ নেই। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বারবার বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।’ 

জরাজীর্ণ স্যাঁতসেঁতে ঘরেই থাকতে হচ্ছে গেটকিপারদের। কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা মশিউর রহমান রাসেল বলেন, ‘গেটকিপারের কাছে একটা পতাকা ও বাঁশি থাকবে না এটা কী করে হয়! প্রায় সময় যেতে দেখি গেটকিপার হাত মেলে যানবাহন থামাচ্ছেন। একটা গেট ব্যারিয়ার আছে, তা-ও আবার অর্ধেকটা ভাঙা। যাঁদের জন্য লোকজন নিরাপদে চলাচল করছে, তাঁদের এমন অবস্থা হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ 

এখানকার আরেক বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, ‘গেটকিপারদের চাকরিটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের এমন করুণ অবস্থা হলে রেল বিভাগের কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দাবি, বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আগে গেটকিপারদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক।’ 

জেলা জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘নিরাপদ যাত্রার অন্যতম বাহন ট্রেন। একটি মাফিয়া চক্রের কারণে রেল বিভাগ জিম্মি হয়ে আছে। বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা দুঃখজনক। রেলে প্রাণ যাওয়া মানে প্রত্যক্ষভাবে সরকার দায়ী। গেটকিপাররা রেলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাই প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য সরকারকে জোড় আহ্বান জানাচ্ছি।’

ময়মনসিংহ রেলওয়ে অঞ্চলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার বলেন, ‘অনেক সময় বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রেললাইন ওভার করে রাস্তা করায় সেখানে প্রকল্পের আওতায় গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয়। এমন লেভেল ক্রসিং ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৬০টির মতো রয়েছে। তাঁরা ট্রেন যাওয়া-আসা করলে সংকেত পান না। তাঁদের সব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বিষয়টি তড়িৎ গতিতে সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার প্রতারণা ও মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গ্রেপ্তার তুরিন আফরোজ। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার তুরিন আফরোজ। ছবি: সংগৃহীত

একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রতারণা এবং তাঁর বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর ও মারধরের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান এই নির্দেশ দেন।

তুরিন আফরোজকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার বাদী তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করেন।

তুরিন আফরোজের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোর্শেদ হাসান শাহীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

২০২২ সালে তুরিন আফরোজ ও তাঁর গাড়িচালক আমির হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন মনজুর আলম নাহিদ নামের একজন ব্যবসায়ী। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আদালত তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আমলে নেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদী মনজুর আলম নাহিদ দীর্ঘদিন ধরে ‘নাবিশা এন্টারপ্রাইজ’-এর মাধ্যমে বহুমুখী ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তাঁর অন্যতম ব্যবসা হলো ভারত থেকে তৈরি বাস ও ট্রাক আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি ও লিজ দেওয়া।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তুরিন আফরোজ তাঁর কাছ থেকে নগদে ৭৮ লাখ টাকায় দুটি বাস কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে ২০২১ সালের ১ জুলাই কিস্তির ভিত্তিতে ৭৮ লাখ টাকায় বাস দুটি ক্রয় করেন। এর মধ্যে তিনি ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও বাকি কিস্তির টাকা পরিশোধ থেকে বিরত থাকেন। ২০২২ সালের ২৯ মার্চ মনজুর আলম নাহিদ কিস্তির টাকা পরিশোধের বিষয়ে তুরিন আফরোজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাঁকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়। এরপর ২ এপ্রিল আবারও টাকা পরিশোধের অনুরোধ জানানো হলেও তিনি তা উপেক্ষা করেন।

মামলায় আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল তুরিন আফরোজের গাড়িচালক আমির হোসেন ৭–৮ জনকে সঙ্গে নিয়ে মনজুর আলম নাহিদকে হুমকি দেন। পরদিন সকাল সোয়া ৮টার দিকে তুরিন আফরোজ ও আমির হোসেন ২০–২৫ জনকে নিয়ে বসুন্ধরায় মনজুর আলম নাহিদের বাসায় গিয়ে প্রায় ৩২ লাখ টাকার আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে মারধর করেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের বাসা থেকে তুরিন আফরোজকে আটক করে পুলিশ। আব্দুল জব্বার নামে এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় পরদিন তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ১২ এপ্রিল তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পরে গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে শান্তি রক্ষা মিশনে নিহত পাকুন্দিয়ার জাহাঙ্গীরের বাড়িতে মাতম

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে চলছে মাতম (ইনসেটে জাহাঙ্গীর)। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে চলছে মাতম (ইনসেটে জাহাঙ্গীর)। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন এবং আটজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের (৩০) বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে। তিনি মো. হজরত আলী রহমানের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়। তাঁর বড় ভাই মোস্তফা কামাল সৌদিপ্রবাসী। ছোট ভাই শাহীন আলম গাড়িচালক। সন্ত্রাসীদের হামলায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্বরত সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর খবর জানার পর তাঁর গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম।

নিহত জাহাঙ্গীরের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের অক্টোবরে জাহাঙ্গীর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আটজন। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ চলমান রয়েছে।

নিহত জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই আরিফুর ইসলাম বাধন বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাতে আমার ফুফাতো ভাই ও জাহাঙ্গীরের সহকর্মী মনির হোসেন এবং ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমরান টেলিফোনে ঘটনাটি জানান। এর পর থেকে পরিবারের কান্না থামছে না। বৃদ্ধ বাবা হজরত আলী বাক্‌রুদ্ধ।’

আরিফুর ইসলাম আরও বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার স্বামীর ছবি ও তিন বছরের ছেলে ইফরানকে বুকে আঁকড়ে ধরে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন।’

নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মামা ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘অফিশিয়ালি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন ইমরান আমাদের বিষয়টা জানান। এর আগে গতকাল (শনিবার) রাতে আমাদের আত্মীয়স্বজন জানান যে জাহাঙ্গীর মারা গেছে।’

জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মো. শাহীন বলেন, ‘রাত দেড়টায় বাসায় ফিরে দেখি সবাই কান্নাকাটি করছে। পরে জানতে পারি, আমার ভাই বোমা হামলায় মারা গেছে।’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহীন।

নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা হজরত আলী রহমান বলেন, ‘রাতে আমার এক ভাই ফোন দিয়ে বলছে সুদানে বোমা ফুটছে। পরে আমি বাড়িতে আইসা বলি, জাহাঙ্গীর যেহানো থাহে, ওইহানো বোমা ফুটছে বুলে। পরে শুনছি, বোম ফালাইয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে। আমার ছেলে যেখানে থাকত, এর থেকে একটু দূরে যারা থাকত, তারা রাতে জানাইছে।’

এই খবর আসার পর থেকে জাহাঙ্গীরের পরিবারে চলছে মাতম। জাহাঙ্গীরের পরিবার মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুপম দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মরদেহ কীভাবে আনা হবে, এ ব্যাপারে কোনো সরকারি নির্দেশনা এখনো পাইনি। আমরা যোগাযোগ রাখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাগেরহাটে জাপানপ্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট

বাগেরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩২
ঘরে তছনছ করে রাখা আসবাব। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘরে তছনছ করে রাখা আসবাব। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা এলাকায় জাপানপ্রবাসী খন্দকার রবিউল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে রেখে ডাকাতেরা প্রায় ১৬ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা লুট করে নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

জাপানপ্রবাসীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা খন্দকার আবু জাফর জানান, ঘটনার সময় তিনি, তাঁর স্ত্রী, বড় ছেলে ও পুত্রবধূ বাড়িতে ছিলেন। ভোরে বাথরুমে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতেই কয়েকজন ডাকাত তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে তাঁর হাত-পা ও মুখ বেঁধে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও জিম্মি করা হয়।

ডাকাতেরা বসতঘরের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নেয়। এতে আনুমানিক ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। ডাকাতেরা ছাদে উঠে গেট ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বড় ছেলে ব্যবসায়ী খন্দকার মাইনুল ইসলাম জানান, ডাকাতেরা তাঁর কক্ষও তছনছ করেছে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতররা তাঁদের হত্যার হুমকি দেয় এবং পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে আবারও এসে ডাকাতি ও হত্যার হুমকি দেয়।

খন্দকার আবু জাফরের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, ‘ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে কম্বল দিয়ে তাঁর মুখ ঢেকে রাখে। ডাকাত দলে ছয়জন পুরুষ ও একজন নারী ছিল। তারা বারবার বলছিল, শারীরিক ক্ষতি করবে না, তবে বেশি বাড়াবাড়ি করলে হত্যা করবে এবং পুলিশে জানালে আবারও আসবে।’

বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুম খান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

এর আগে, ৯ ডিসেম্বর বাগেরহাট শহরের দশানী এলাকায় পুলিশ সুপারের বাংলোর বিপরীতে ডয়চে ভেলের প্রবাসী সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলামের বাড়িতে দিনদুপুরে তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ছোট ভাই প্রটেকশন বাড়াও’— রাকসু জিএসকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার হুমকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৯
সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারকে হত্যার হুমকি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে গালিব এই হুমকি দেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই এই ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ওই দিনই গালিব ফেসবুকে রাকসু জিএসকে লক্ষ্য করে এই হুমকি দেন।

আসাদুল্লা-হিল-গালিব তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘দয়া করে আমার ক্যাম্পাসেরটাকে কেউ কিছু করবেন না, অনুরোধ রইল। ওইটা শুধু আমার আর আমার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর ভাগ।’

তিনি সালাহউদ্দিন আম্মারকে সতর্ক করে আরও লিখেছেন, ‘ছোট ভাই প্রটেকশন বাড়াও। ৮০ সিসি বাইক নিয়ে একা একা ঘোরাঘুরি করো না। আর তোমার আব্বা সাদিক কায়েম হেলিকপ্টারে যাতায়াত করে, তুমি অন্তত প্লেনে ঢাকা যাবা, তা না হলে যমুনার আগে ও পরে একটা কিছু হলেও হতে পারে। আমি চাই, তুমি বেঁচে থাকো, অনেক হিসাব আছে।’

গালিবের এই পোস্টে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু মন্তব্য করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া কর, যেন ওকে বাঁচিয়ে রাখে।’

এদিকে রাকসু জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারও ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এর জবাব দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘প্রথম টার্গেট কেন হইলাম না? আমার হাদি ভাই তো সাবধান হয়ে যেতে পারত! ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই জারি থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। হাদিদের প্রত্যেকটা ফোঁটা রক্তে বিপ্লবের ইতিহাস লিখবে। আরে আল্লাহর জান আল্লাহ নিবে, আমি আটকানোর কে?’

গতকাল রোববার সকালে সালাহউদ্দিন আম্মার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাইয়ের তিন মাস পর থেকেই কল, মেসেজ, ই-মেইলসহ নানা মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচারেরা হুমকি দিয়ে আসছে। এক পোস্টে হাদি ভাইয়ের পর আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। এ জায়গায় কিছুটা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি। আমরা এমন পথ বেছে নিয়েছি, হুমকি তো আসবেই। এগুলো এত গুরুত্ব দিচ্ছি না।’

উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিক ফেসবুক পোস্টে সালাহউদ্দিন আম্মারের ছবি দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি এবং বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টে একই রকম মন্তব্য করেছিলেন আসাদুল্লা-হিল-গালিব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত