Ajker Patrika

সিরাজদিখানে তড়কা রোগের ঝুঁকি: ৮০% গবাদিপশু এখনো টিকার বাইরে

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় গবাদিপশুতে তড়কা (অ্যানথ্রাক্স) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগেই টিকাদানের আহ্বান জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এটি একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। যা গরু, ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণীর পাশাপাশি মানুষেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, তড়কা রোগ প্রতিরোধে টিকাদান সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলেও খামারিদের অনীহার কারণে এখনো প্রায় ৮০ শতাংশ গবাদিপশু টিকার আওতার বাইরে রয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিরাজদিখানে বর্তমানে গরু ৭০ হাজার ৫০০টি, মহিষ ১১৫টি, ছাগল ১ হাজার ৪৮০টি এবং ভেড়া ২ হাজার ১৫০টি—মোট ৮৭ হাজার ৫৬৫টি গবাদিপশু রয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত গরু-মহিষে ১৭ হাজার ৫০০ ডোজ এবং ছাগল-ভেড়ায় ১ হাজার ২০০ ডোজ—মোট ১৮ হাজার ৭০০ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। যা মোট গবাদিপশুর মাত্র ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

মাঠপর্যায়ের কর্মী ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টিকা দেওয়ার পর পশুর দুধ কমে যাওয়া বা জ্বর আসার মতো ভুল ধারণার কারণেই খামারিদের মধ্যে টিকাদানে অনীহা কাজ করছে।

গোবরদী গ্রামের গরু পালনকারী আব্দুল সাত্তার বলেন, ‘টিকা দিলে গরুর দুধ কমে যায়, অনেক সময় জ্বরও হয়—এ কারণে আমরা টিকা দিতে আগ্রহ পাই না। তবে সরকার সচেতনতা বাড়ালে অনেকে রাজি হবে।’

শিয়ালদী গ্রামের খামারি তপন দাস বলেন, ‘আমার ২০টি গরু আছে। অন্যান্য টিকা দিলেও তড়কার টিকা সাধারণত দিই না। টিকা দেওয়ার পর দুধ কমে যাওয়া ও জ্বর আসার ভয়ে অনেক খামারি টিকা দিতে চায় না।’

তবে মধ্যপাড়া ইউনিয়নের খামারি আজিম আল রাজি বলেন, ‘আমি প্রতিবছর নিয়মিতভাবে তড়কা টিকা দিই। এতে গরু সুস্থ থাকে ও রোগ ছড়ায় না। সব খামারিরই টিকা দেওয়া উচিত—এতে গবাদিপশু বাঁচবে, ক্ষতিও কমবে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন মাঠকর্মী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘টিকা দিলে গবাদিপশু তড়কা রোগ থেকে নিরাপদ থাকে এবং মানুষও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। ভুল ধারণা দূর করে নিয়মিত টিকা দেওয়া প্রয়োজন।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তড়কা রোগ মূলত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রমিত ঘাস, পানি, রক্ত, চামড়া বা মাংসের সংস্পর্শে মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত পশুর হঠাৎ মৃত্যু, শরীর ফুলে যাওয়া এবং রক্ত জমাট না হওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শবনম সুলতানা বলেন, ‘তড়কা রোগ অত্যন্ত সংক্রামক ও প্রাণঘাতী। এই রোগ প্রতিরোধে টিকাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আমরা সব খামারিকে আহ্বান জানাচ্ছি—যত দ্রুত সম্ভব গবাদিপশুকে তড়কা টিকা দিন এবং কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে দপ্তরে যোগাযোগ করুন।’

তিনি আরও জানান, অসুস্থ পশু জবাই করা বা মৃত পশু খোলা জায়গায় ফেলা যাবে না। মৃত পশুকে অন্তত পাঁচ ফুট গভীরে চুন ছিটিয়ে মাটিচাপা দিতে হবে।

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, গবাদিপশু, তড়কা (অ্যানথ্রাক্স), টিকাদানের আহ্বান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত