Ajker Patrika

উলিপুরে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পচা, দুর্গন্ধময় চাল সরবরাহের অভিযোগ

শিমুল দেব, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৮
খাদ্য গুদাম থেকে আনা ছাতা ধরা, দুর্গন্ধযুক্ত, ভাঙা, পাথর মেশানো নিন্মমানের চাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাদ্য গুদাম থেকে আনা ছাতা ধরা, দুর্গন্ধযুক্ত, ভাঙা, পাথর মেশানো নিন্মমানের চাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে দুস্থ ও অসহায় নারীদের মধ্যে বিতরণের জন্য পচা, দুর্গন্ধময় ও ছাতা পড়ে যাওয়া চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় দুস্থ নারীদের মধ্যে বিতরণের জন্য খাদ্যগুদাম থেকে ৩০ কেজি করে চালের বস্তা সংগ্রহ করে ইউনিয়ন পরিষদ। তবে গুদাম থেকে আনা বস্তার চাল খাবার অযোগ্য হওয়ায় তা এখনো বিতরণ করা হয়নি বলে জানান ইউপি সদস্যরা। উপজেলার বজরা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মোহাম্মদ আলী বিরুদ্ধে বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

বজরা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে অতিদরিদ্র ও অসচ্ছল নারীদের খাদ্যসহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। সেই হিসেবে জুলাই ও আগস্ট মাসের জন্য বজরা ইউনিয়নের ২৯০ জন সুবিধাভোগীর ৬০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। সে মোতাবেক ১০ সেপ্টেম্বর উলিপুর খাদ্যগুদাম থেকে ৩০ কেজি ওজনের ৫৮০ বস্তায় ১৭ টন ৪০০ কেজি চাল বজরা ইউপির গুদামে আনা হয়।

বজরা ইউপির সদস্য আরজু মিয়া, লুৎফর রহমান ও এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে জানান, উলিপুর সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে জুলাই ও আগস্ট মাসের জন্য ভিডব্লিউবির চাল আনা হয়। পরিষদের গুদামে চালগুলো আনার পর দেখা যায়, অধিকাংশ বস্তায় পচা ও দুর্গন্ধময় চাল সরবরাহ করা হয়েছে। চালগুলো একেক বস্তায় একেক ধরনের। বস্তার চালগুলো ছাতা ধরা, দুর্গন্ধযুক্ত, ভাঙা, পাথর মেশানো। এসব চাল কোনো মানুষের পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই চালগুলো বিতরণ করা হয়নি। বিষয়টি চেয়ারম্যানসহ ইউএনওকে অবগত করা হয়েছে।

উলিপুর ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা হিসেবে মোহাম্মদ আলী গত এপ্রিল যোগ দেন। এরপর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। শুরুতেই চলতি বছরের বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম করেন। বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের লটারি হয়। সেখানে ৫২৩ জন কৃষক নির্বাচিত হন। তাঁদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৫৬৫ টন ধান সংগ্রহ করা হয়। একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন করে ধান খাদ্যগুদামে বিক্রি করেছেন। গুদামসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলী লটারিতে নাম ওঠা কৃষকের নাম বাদ দিয়ে প্রায় ভুয়া ৫০ জনের নাম দেখিয়ে ধান সংগ্রহের বিল তুলে করে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মিলমালিক সমিতির সদস্য বলেন, লটারিতে নাম ওঠা যেসব কৃষক খাদ্যগুদামে ধান দিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে টনপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা করে প্রায় ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন গুদাম কর্মকর্তা। বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৪৬৯ টন চাল সংগ্রহ করা হয়। সরকারি বিধি মোতাবেক চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে শুটার (পালিশ) চাল সংগ্রহ করার নিয়ম। কিন্তু গুদাম কর্মকর্তা মিলারদের কাছে বেশির ভাগ নন-শুটার ও নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করেন। এর বিনিময়ে টনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেন। এভাবে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। বর্তমানে খাদ্যগুদামে থাকা নন-শুটার নিম্নমানের পচা চালগুলো ভিডব্লিউবি কর্মসূচির চাল হিসেবে বজরা ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সরবরাহ করা হচ্ছে।

নিম্নমানের চাল সরবরাহের কথা অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, পরিষদের লোকজনের সঙ্গে পজিটিভ আলোচনা হয়েছে। খারাপ চাল যাওয়ার কথা নয়। গুদাম থেকে চালগুলো সরবরাহের সময় আপনি দেখেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখে দিয়েছি, একটু উনিশ-বিশ হতে পারে। বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে অনিয়ম ও উৎকোচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মিসবাহুল হুসাইন বজরা ইউনিয়নে নিম্নমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে পরিষদে গিয়ে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, ‘নিম্নমানের চালের বিষয়ে বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে অবগত করেছেন। উপজেলা খাদ্য বিভাগকে সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই খারাপ চাল বিতরণ করা যাবে না।’

উল্লেখ্য, ভিডব্লিউবি কর্মসূচি হলো বাংলাদেশে দুস্থ ও দরিদ্র নারীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পরিচালিত একটি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, যা আগে ভিজিডি (দুস্থ মহিলা উন্নয়ন) কর্মসূচি নামে পরিচিত ছিল। এ কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ দুস্থ নারীদের খাদ্য ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত