চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দুর্ভোগে জনজীবন

দেশে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। সীমান্তবর্তী এই জেলায় এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল বাতাসের সঙ্গে বেড়েছে শীতের দাপট। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।

একই তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জ জেলারও। এই দুই জেলায় আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুদিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমে জেলার ও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরেই চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন বুধবার তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে আজ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। সকাল ৯টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আজ চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে যৌথভাবে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে তীব্র ঠান্ডায় এ অঞ্চলের মানুষের জবুথবু অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ভোরে দিনমজুর ও শ্রমিকদের কাজে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ঘন কুয়াশায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। শীত নিবারণে অনেকে আবার খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, ‘শীতে বাইরে বের হতে পারছি না। হাত কালা (ঠান্ডা) হয়ে যাচ্ছে। রিকশায় প্যাডেল মারা যাচ্ছে না। আয়রোজগার কমে গেছে। আর দুপুর পর্যন্ত তেমন ভাড়া-ভুতো হচ্ছে না।’

চা-দোকানি আলফাজ আলী বলেন, ‘সকালে চায়ের খরিদ্দার (ক্রেতা) কমে গেছে। আমার শীতে চা বানাতেও প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।’

দিনমজুর সোহান আলী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে কামলা খাটার জন্যে বাড়ি থেকে বড় বাজারে আসি। এখান থেকে কোনো একটা কাজ হয়। লোকজন দিনমজুর লাগলে এখান থেকে আমাদের নিয়ে যায়। গড়ে প্রতিদিন বড় বাজারে এক শ থেকে দেড় শ দিনমজুর আসে। তবে শীতের কারণে কদিন বেশির ভাগের কাজ হচ্ছে না। খুব বিপদে আছি।’

বৃদ্ধ দিনমজুর আবুল কাশেম বলেন, ‘বয়স বেশি বাপু, কাম (কাজ) করব কীভাবে। পরিবার চালাতে গিয়ে তাও কষ্ট করছি। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার শীত সহ্য করতেই পারছিনে। কেউ কেউ ইয়ার্কি করে বলছে, কাশেম এবারের শীতে মরবে।’

অন্যদিকে গোপালগঞ্জে সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি, রয়েছে ঘন কুয়াশাও। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। স্কুল-কলেজে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। শীতে কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আজ গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগামী দুই দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।’