Ajker Patrika

শতাধিক ধানের জাত নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা

রুবায়েত হোসেন, খুবি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ০৯
ধানের জাত উন্নয়নে খুলনার বটিয়াঘাটায় মাঠ পরীক্ষায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ধানের জাত উন্নয়নে খুলনার বটিয়াঘাটায় মাঠ পরীক্ষায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ধানের জাত উন্নয়নে ১০০-এর অধিক ধানের জাত নিয়ে গবেষণা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। গবেষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা। তিন ডিসিপ্লিনের ৯ শিক্ষার্থী এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লোকজ’-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের কৃষকদের জন্য গবেষণা করেছেন তাঁরা। এস সঙ্গে এত ধানের জাত নিয়ে গবেষণা করা এই অঞ্চলে প্রথম।

আমন ধানের কোন জাত থেকে কৃষকেরা উপকৃত হবে তার পরীক্ষামূলক চাষের কার্যকারিতা অনুসন্ধানের জন্য ২০২৪ সালের জুলাই থেকে খুলনার বটিয়াঘাটায় মাঠ পরীক্ষা করেছেন এই গবেষকেরা। তাঁরা হলেন—খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের সাবেক শিক্ষার্থী সৈয়দ সাজিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একই ডিসিপ্লিনের সাবেক শিক্ষার্থী মো. রাকিব হাসান, মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আব্দুল খালেক সরকার রাব্বানী, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশা আক্তার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রিমা আক্তার ও নীরব সরকার এবং অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের তৃতীয় ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইসরাফিল হোসেন ও মো. মাহফুজ।

সম্প্রতি তাঁদের এই গবেষণা শেষ হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে আমন মৌসুমে কৃষকদের জন্য বালাম জাতের ভেতর বাঁশফুল, জটাই, চরো, কার্তিক, চরবলেশ্বর, চিনি কানাই, আঁশফল ও মঘাই বালাম জাতগুলো অনেক ভালো ফলন দিয়েছে। পাশাপাশি, রাণী স্যালুট, কুমড়াগোড়, মরিচশাইন, সাহেব কচি, বজ্রমুড়ি, মন্তেশ্বর, তুলশীমালা, কাঁচড়া ও লোনাকচির জাত সংগ্রহে ও চাষে এই অঞ্চলের কৃষকেরা দাম ও মানে লাভবান হবেন।

বার্ষিক ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে স্থানীয় কৃষকদের সংগঠন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লোকজ’ দ্বারা প্রতিবছর আয়োজিত বীজ মেলায় খুবির গবেষকেরা দল তাঁদের পরীক্ষিত বীজ বিনিময় করেন।

লোকজের নির্বাহী পরিচালক দেব প্রসাদ সরকার বলেন, ‘সরকারি পর্যায় থেকে উফশী বা হাইব্রিড জাত লাগানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু উফশী ও হাইব্রিড জাতে বীজ সংরক্ষণ করা যায় না। আমাদের মনে হলো, দেশিও জাতের বীজ এবং ধানের জাত ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নিয়ে আমরা গবেষণা করে দেখেছি স্থানীয় কোন কোন ধানের জাতে কৃষকেরা লাভবান এবং উপকৃত হবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু ধানের জাতের বীজ সংগ্রহ করেছি এবং পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আমরা কৃষকদের ফ্রিতে এগুলো দিয়ে থাকে। এই বীজ সংরক্ষণে এবং ধান চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন এবং তারা নিজেরাও বীজ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। একই সাথে কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করছেন এবং সেই ফসল থেকে বীজ সংরক্ষণ করে আবার আমন মৌসুমে নিজরা ধান উৎপাদন করছেন। এ থেকে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।’

গবেষক সৈয়দ সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখানে ধান লাগানোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ধরনের ডাটা সংগ্রহ করে কৃষকদের জন্য বেস্ট (ভালো) ধানের জাতগুলো নির্বাচন করেছি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৃষকেরা কম খরচ ও পরিশ্রমে তাদের বেস্ট ধানের মানটা যেন সংগ্রহ করতে পারেন। মাঠ দিবসে আমাদের গবেষণা করা বীজ সংগ্রহ করে কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন। আমরা ৯০টির ওপরে আমন জাত এবং মোট ১১৪টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা করেছি। বন্যা ও খরার সময় জাতগুলো ফসল উৎপাদনে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। এমনও সব ধানের জাত নিয়ে গবেষণা ও তার বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে। শতাধিক দেশীয় জাতের ধান নিয়ে গবেষণা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে আর কারওর নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুবির অ্যাগ্রো-টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. মতিউল ইসলাম বলেন, এই গবেষণা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। আবহমান কাল থেকে দেশীয় ধানের জাত আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে খাওয়াতে সবচেয়ে সক্ষম। দেশীয় ধান চাষে পরিবেশের বিপর্যয়কারী এগ্রো কেমিক্যাল তেমন ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। উফশী এবং হাইব্রিডে পরিশ্রম দেওয়া হয় তার বিপরীতে কম পরিশ্রম দিয়েও এর ফলন ভালো হয়। এর বীজ সংরক্ষণ করা যায়। এই ধানের ভাত খুবই সুগন্ধি হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘এমন কিছু কিছু জাত আছে যাতে তরকারি না ব্যবহার করেও ভাত শুধু খাওয়া যায়। দেশীয় ধানের জাতে বাহারি ধরনের পিঠাপুলিও তৈরি করা যায়। এর পুষ্টি উপাদান এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। প্রতিকূল পরিবেশেও কিছু কিছু ধানের জাত তার সঠিক ফলন দিতে সক্ষম। আমার মনে হয় দেশীয় ধানের জাত এবং বীজ সংরক্ষণ করা আমাদের জন্য অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে কারণ এগুলোই আমাদের সোনার খনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত