Ajker Patrika

ইছামতীর গর্ভে সীমান্তবর্তী জমি, ছোট হচ্ছে দেবহাটা

মীর খায়রুল আলম, দেবহাটা (সাতক্ষীরা) 
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৪, ২০: ২৮
ইছামতীর গর্ভে সীমান্তবর্তী জমি, ছোট হচ্ছে দেবহাটা

ফেরদৌসী বেগমের ৪০ বছরের সংসার। ভাতশালা গ্রামের ইছামতী পাড়ের বাসিন্দা এই নারী গত চার দশকে চোখের সামনে বসতবাড়ি, মাছের ঘের, খেলার মাঠ, মাছভরা পুকুর, চাষের জমি নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখেছেন। এবার ভাঙতে বসেছে তাঁর বসতবাড়ি। এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রাতের ঘুম ছুটে গেছে তাঁর! 

ইছামতীর গর্ভে ফেরদৌসী বেগমের মতো অনেক কিছুই হারিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। প্রায় তিন বছরের ব্যবধানে তিনি হারিয়েছেন পূর্বপুরুষের কবরস্থান, মৎস্য ঘেরসহ অনেক জমি। চোখের সামনে বিলীন হতে দেখেছেন আব্দুল গফ্ফার সরদার, আব্দুর রউফসহ পাটনিদের বসতবাড়ি। 

একসময় নদীর দুই পাড়ের বেড়িবাঁধে বসে দুই দেশের মানুষ খোশগল্প করতেন। আজ সেই স্থান নদীগর্ভে। নদী বড় হতে হতে এপার থেকে ওপারে তাকালে ঝাপসা লাগে। 

নদীপাড়ের মানুষের যেখানে পারিবারিক কবরস্থান ছিল, তার বিপরীতে ছিল ভারতের জালালপুর ট্যাঁক নামক এলাকা। সেখানে এখন বিস্তীর্ণ চর। আর গোয়ালাটি, স্বৈতপুর, শাকচূড়া এলাকা বসবাসের উপযোগী হয়ে পড়েছে। আর বাংলাদেশের ভাতশালা, কোমরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার নদীর পাড় ক্রমেই ভেঙে একাকার হয়ে যাচ্ছে। 

সাম্প্রতিক ভাতশালা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের বাড়ির প্রাচীর, গোয়ালঘরের দেয়ালে বড় ফাটল দেখে দেয়। সেই সঙ্গে নদীপাড়ের মাটি ধসে গিয়ে মূল বাঁধ চৌচির হয়ে গেছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা পরিদর্শনে এসে দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়ে যায়। পরে কিছু বালুর বস্তা ফেলে কোনো রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাঁধ রক্ষায় এটি কিছুই নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, যে পরিমাণ বরাদ্দ হয়, তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না। কোনো কাজই ঠিকঠাক করা হয় না, এ কারণে বছরের পর বছর ভাঙছে নদী। নদীর পাড় রক্ষায় যে বস্তা ব্যবহার করা হয় তা টেকসই হয় না। 

আরও অভিযোগ রয়েছে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে ভাগ্য খোলে অনেকেরই। আর তাই ভেঙে যাওয়ার আগে কাজও শুরু হয় না। ফলে নদী পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ কোনো কালে ঘুচবে বলে কেউ আর আশা করেন না! 

বাংলাদেশ-ভারত সীমানা ইছামতী নদী সাতক্ষীরা জেলার গা ঘেঁষে বয়ে গেছে। জেলার একমাত্র সীমান্তবর্তী নদী এটি। ইছামতী জেলার কয়েকটি বহমান নদীর মধ্যে অন্যতম। আর এই নদীর বড় একটি অংশ এলাকাজুড়ে রয়েছে দেবহাটা উপজেলা। কিন্তু বর্তমানে সর্বনাশা রূপ নিয়েছে ইছামতী। প্রতিবছর ইছামতীতে দেখা দেয় তীব্র ফাটল ও ভাঙন। 

নদীভাঙনের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, ঠেলা জাল, অবৈধভাবে নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট-বড় মৎস্য ঘের ও পুকুর খননের কারণেই ইছামতীর ভাঙন দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এর ফলে দেবহাটা সীমান্তে ইছামতীর পাড়ের গ্রামগুলোর জনসাধারণ প্রতিনিয়ত উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্য দিন কাটাচ্ছেন। বালু উত্তোলনের ফলে দেবহাটা সদর ইউনিয়নের রাজনগর ও চর দেবহাটা মৌজা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ২৪টি মৌজার স্থলে বর্তমানে আছে ২২টি। 

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যায় পাঁচ-ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ধান, মৎস্য ঘের, খামার, বাড়ির আঙিনা ডুবে যায়। এরপর ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবছরই ইছামতীর দেবহাটা সীমান্তে ছোট-বড় ভাঙন দেখা দেয়। প্রায় প্রতিবছর সংস্কারও হয়। কিন্তু তাতে তেমন কোনো লাভ হয় না। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপা রানী সরকার বলেন, ইছামতী নদী দুই দেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় নদীর মাঝখান থেকে উভয় দেশের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। আর এতে বাংলাদেশের পাড়ের জমি নদীতে বিলীন হয়ে নদীর অংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জমি কমছে। অপর দিকে ভারতের পাড়ের জমি বেড়ে চলেছে। এভাবে এই সীমান্তে বাংলাদেশ ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। 

বাঁধ নির্মাণে ও সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) মাহাবুব রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে নদীভাঙন দেখা দেয়। আর নদীভাঙন রক্ষায় যেভাবে শিডিউল করা হয় সেভাবে কাজ হয়। কোনো অনিয়ম হয় না। 

এদিকে, চলতি বছরের গত ১০ মার্চ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আগামী পয়লা বৈশাখ থেকে নতুনভাবে বালুমহাল ইজারা নিতে একটি শ্রেণি বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছে বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত