Ajker Patrika

সাতক্ষীরায় জমিতে উচ্চ মাত্রায় লবণাক্ততা, ফলনে প্রভাব

  • ভূগর্ভস্থ পানিতেও লবণের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে।
  • জমির অধিকাংশ ধানগাছ শুকিয়ে গেছে।
  • অতি মাত্রার লবণের কারণে বোরো ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন হবে না: কৃষক
  • ব্রি উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু ধান চাষের পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
  • বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি গাছ লাগানোর পরামর্শ।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
জমিতে উচ্চ মাত্রায় লবণ থাকায় শুকিয়ে গেছে ধানগাছ। সম্প্রতি উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কামারগাতি গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমিতে উচ্চ মাত্রায় লবণ থাকায় শুকিয়ে গেছে ধানগাছ। সম্প্রতি উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কামারগাতি গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। জেলার অধিকাংশ কৃষিজমিতে মিলছে উচ্চ মাত্রায় লবণ। এতে ফসলের উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে গেছে। কৃষিজমির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানিতেও লবণের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। কৃষকেরা বলছেন, অতি মাত্রার লবণের কারণে খেতের অধিকাংশ ধানগাছ শুকিয়ে গেছে। এতে খরচই উঠবে না। এই পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও। তাঁরা ব্রি উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু ধান চাষসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণের দেখা মিলছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার খাজাবাড়িয়া এলাকার বোরো চাষের জমিতে সর্বোচ্চ ২৫ ডিএস পর্যন্ত লবণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় ভূগর্ভের পানিতে লবণের উপস্থিতি ২৫ ডিএসের বেশি। ফলে ২০২৪-২৫ মৌসুমে বোরো ধান গবেষণা প্রকল্পের অধীনে পরীক্ষামূলক ধান চাষে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি।

কালীগঞ্জ উপজেলার কামারগাতি গ্রামের বোরোচাষি ফজর আলী জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৩ একর জমিতে বোরো চাষ করেছেন। কিন্তু জমিতে অতি মাত্রার লবণের কারণে বোরো ধানের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হবে না। খেতের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ধানগাছ লবণের কারণে শুকিয়ে গেছে।

একই গ্রামের চাষি অমল কুমার বলেন, ‘৮ বিঘা জমিতে ইরি ধান লাগিয়েছিলাম। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ ছিল। তাই ফলন ভালো হয়নি। ধান কেটে বাড়ি তোলা পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৫০ হাজার টাকার ধান পাব কি না সন্দেহ।’

ব্রি সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণের দেখা মিলেছে। খাজাবাড়িয়া এলাকার বোরো চাষের জমিতে ২৫ ডিএস পর্যন্ত লবণ পাওয়া গেছে, যা ভয়াবহ। ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণের মাত্রাও বাড়ছে। ফলে ২০২৪-২৫ মৌসুমে বোরো ধান গবেষণা প্রকল্পের অধীনে লবণ এলাকাতে পরীক্ষামূলক বিভিন্ন ধান চাষ করা হলেও তাতে কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়নি।’

সাজ্জাদুর বলেন, ‘লবণাক্ততার কারণে ধানের গাছ শুকিয়ে গেছে। তবে ওই সব লবণাক্ত এলাকায় ব্রি উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু ধানের জাত যেমন, ব্রি-ধান ৬৭, ৯৯, ৬৩ ও ১০৮ চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি। এসব জাত যেমন লবণ সহ্য করতে পারবে, তেমনি উৎপাদনও খুব ভালো হবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর, সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি উজান থেকে মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে সাতক্ষীরার কৃষি অঞ্চলে। এই ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। এ ছাড়া টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে হবে।’

সাতক্ষীরার মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সামছুন নাহার বলেন, ‘সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার জমিতে লবণাক্ততা ব্যাপক হারে বাড়ছে। কালীগঞ্জ উপজেলার জমিতে ২০২২ সালে লবণের উপস্থিতি ছিল ৪.১ ডিএস। অথচ ২০২৫ সালে আমরা পাচ্ছি ১০.৯ ডিএস মাত্রায়।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, উপকূলীয় এলাকার কৃষিজমির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানিতেও অতি মাত্রার লবণ পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার কৃষকদের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বোরো চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া বিলের মধ্যে সরকারি খালগুলো উন্মুক্ত করার পাশাপাশি জলাশয় এবং বেশি বেশি পুকুর বা দিঘি খননের সুপারিশ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

উদ্দীপনের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সচিব মিহির কান্তির বিরুদ্ধে ৬ মামলা

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইন উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত