Ajker Patrika

মামলা হলেও গ্রেপ্তার নেই, হত্যার নেপথ্যে ৭ কারণ

  • বিষয়টি তদন্ত করছে থানা-পুলিশের দুটি এবং ডিবির একটি টিম।
  • ফুটেজ সংগ্রহ ও খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে: পুলিশ
  • স্থানীয় চরমপন্থীদের সঙ্গেও বিরোধ ছিল মাহবুবের।
খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০০: ৫৬
মাহবুবুর রহমান
মাহবুবুর রহমান

খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি বহিষ্কৃত মাহবুবুর রহমান হত্যার রহস্য ২৪ ঘণ্টায়ও উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনায় মামলা হলেও জড়িত সন্দেহে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার নেপথ্যে সাত কারণ সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে তাদের তিনটি টিম। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, মাহবুবকে গত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে নগরীর মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁর বাবা মো. আব্দুল করিম মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে মামলা করেন।

এদিকে গতকাল দুপুরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় নিহত মাহবুবের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু সালেহ রায়হান বলেন, তাঁরা একাধিক বিষয় সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছেন। হত্যাকাণ্ডে একাধিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন কিলার অংশ নেয়। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় হেলমেট ছিল। আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে খুনিদের ধরা হবে।শিগগির খুনিরা ধরা পড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

হত্যার পেছনে ৭ কারণ

মাহবুব হত্যার নেপথ্যে সাত কারণ থাকতে পারে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, দলীয় কোন্দল, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, চরমপন্থীদের সঙ্গে কানেকশন ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদের সঙ্গে মারামারির ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের আগেও মাহবুবের বাড়িতে হামলা হয়েছিল। এ ছাড়া ৪ আগস্ট বিএল কলেজ রোডে বিএনপি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় ২১ আগস্ট বাদী হয়ে মামলা করেন মাহবুব। মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য মাহবুবকে প্রায়ই হুমকিধমকি দেওয়া হতো। এ ছাড়া গত ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মানিকতলা শহীদ মিনার চত্বরে ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত সুধী সমাবেশে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। পরের দিন ২ অক্টোবর বিএনপি নেতা জাকির হোসেন বাদী হয়ে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য আকার ধারণ করলে জাকির ও মাহবুবকে হুমকি দেওয়া হতো। হুমকির কারণে জাকির প্রায় ৮ মাস বাড়ি থেকে বের হন না। মাহবুবকেও নিষেধ করতেন জাকির, কিন্তু তিনি শোনেননি।

সূত্রটি আরও জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২-৩টি সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে মাহবুবের বিরোধ ছিল। এ ছাড়া মাদকের কেনাবেচা এবং চাঁদাবাজি নিয়ে একাধিক গ্রুপের টার্গেট ছিল মাহবুব। স্থানীয় চরমপন্থীদের সঙ্গেও বিরোধ সৃষ্টি করে রেখেছিলেন তিনি।

সূত্র জানায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় অস্ত্র হাতে একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর মাহবুবকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ওই ঘটনার পর একটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় খুনিরা মহড়া দেয়।

সূত্রটি আরও জানায়, মাহবুবের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশ প্রতি মাসেই ঢাকায় রিপোর্ট পাঠাত। তালিকাভুক্ত অপরাধী ও প্রভাবশালীদের তালিকায় তাঁর নাম ছিল। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে, এ আশঙ্কায় তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখত পুলিশ।

ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, আমরা উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরও কিছু বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছি। থানা-পুলিশের দুটি এবং গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম তদন্ত করছে।

বাড়িতে স্বজনদের মাতম

দুপুরে মাহবুবের বাড়িতে গিয়ে মাতম দেখা যায়। স্ত্রী ও দুই মেয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বাড়িতে উপস্থিত মাহবুবের চাচা শহীদ মোল্লা বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে মাহবুবকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সে সব সময়ই মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলত। এ কারণে শত্রু বেড়ে যায়। তাকে প্রায়ই হুমকি দেওয়া হতো। এলাকার ২-৩টি সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গেও তার বিরোধ ছিল।

শ্বশুর আজাদ বেগ বাবু বলেন, ‘মামলার আসামি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর মাহবুবের ওপর বিরাগভাজন ছিল। এ ছাড়া কুয়েটের ঘটনায় যুবদলের নেতা হিসেবে মাহবুব ছাত্রদলের পাশে দাঁড়ায়। এ কারণে শিবিরের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইলট ইচ্ছা করে বিধ্বস্ত করান এয়ার ইন্ডিয়ার সেই ড্রিমলাইনার: বিশেষজ্ঞ

তবে কি ধরে নেব, মবের পেছনে সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে: তারেক রহমান

৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি: পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা অবরোধ বৈষম্যবিরোধীদের

ইসরায়েল রাষ্ট্রের পতনের ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছিলেন আইনস্টাইন

মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: ‘আমি জড়িত না, ফাঁইসা গেছি’— অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা রবিনের দাবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত