Ajker Patrika

ঢাকায় খুন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে—এই পাঁচ মাসে রাজধানী ঢাকায় খুন, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মতো অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত বছরের (২০২৪) একই সময়ের তুলনায় মোট অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮২.৫ শতাংশ বেশি। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান থেকেই এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে সোহাগকে হত্যা করার নির্মম ধরনের কারণে এ নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

পুলিশ কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ঢাকায় খুনসহ কোনো কোনো অপরাধ তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। সহিংস ও প্রাণঘাতী অপরাধ যেমন হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির হার বেড়েছে গড়পড়তা ১৭৮%। বিষয়টি জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। চুরির মতো অপরাধ কিছুটা কমেছে। তবে হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা সমাজবিজ্ঞানীর।

সহিংস অপরাধের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি

ঢাকায় হত্যাকাণ্ড বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। রাজধানীতে গত বছর যেখানে গড়ে প্রতি মাসে ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটত, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.৬টিতে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ঢাকায় ৬৩ জন খুন হয়। এ বছর একই সময়ে খুন হয়েছে ১৭৮ জন।

৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যুক্ত) সামনে মো. সোহাগকে (৪০) নির্মমভাবে পিটিয়ে ও ইটপাথরের আঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত সোহাগ পুরোনো অ্যালুমিনিয়াম, বিদ্যুতের কেবলসহ ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। সোহাগ নিজে ও তাঁর হত্যাকারীদের অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে নিহত সোহাগের পরিবার ও এলাকার মানুষ জানিয়েছে।

Untitled-5

খুনের পাশাপাশি ঢাকায় অপহরণ বেড়েছে ২২০ শতাংশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও অর্থসংক্রান্ত জটিলতা এসব ঘটনার পেছনের অন্যতম কারণ। গত বছর প্রথম পাঁচ মাসে মাত্র ৩৫টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১১২টি।

ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বিশেষ করে নগরীর ব্যস্ত সড়ক, গলি ও পরিবহন ঘন এলাকাগুলোতে ছিনতাই বেড়েছে বলে অভিযোগ।

চুরি কমলেও এখনো উদ্বেগজনক

পুলিশের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী চুরির পরিসংখ্যানে কিছুটা কমতির ইঙ্গিত মিলেছে। বাসাবাড়িতে চুরি কমেছে ২১ শতাংশ ও সাধারণ চুরি কমেছে ১৬ শতাংশ। এরপরও এই দুই ধরন মিলিয়ে মোট ৮৮৩টি চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা মোট অপরাধের ৬২ শতাংশ।

ঢাকায় অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির চেয়ে ছিনতাই ও চুরির ঘটনা বর্তমানে কম। আরও কমে আসবে।’

এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জোর দিচ্ছি। বিশেষ অভিযান চলছে। কিছু সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় হয়েছে, যাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে নাগরিকদের সচেতন থাকাও জরুরি।’

রাজধানীতে অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান শুধু পুলিশের নথিভুক্ত ঘটনা। বাস্তবে অপরাধের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির অভাব অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রেখেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইলট ইচ্ছা করে বিধ্বস্ত করান এয়ার ইন্ডিয়ার সেই ড্রিমলাইনার: বিশেষজ্ঞ

তবে কি ধরে নেব, মবের পেছনে সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে: তারেক রহমান

৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি: পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা অবরোধ বৈষম্যবিরোধীদের

ইসরায়েল রাষ্ট্রের পতনের ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছিলেন আইনস্টাইন

মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: ‘আমি জড়িত না, ফাঁইসা গেছি’— অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা রবিনের দাবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত