বরগুনা প্রতিনিধি
পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৪৩) হত্যার ঘটনার পর স্থবির হয়ে পড়েছে সেখানকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভাঙারিপট্টির ব্যবসায়ীরা।
কোটি টাকার ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সোহাগকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। আসামিদের মধ্যে টিটন গাজীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াস রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে এই মামলার আরেক আসামি তারেক রহমান রবিন অস্ত্র মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
দুপুরের পর দুই আসামিকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন। তিনি টিটন গাজীর ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে রবিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আসামি টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে রবিনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত বুধবার সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। নিহত সোহাগ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকা থেকে নিহত লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের মরদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনেরা। পরে সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরের বান্দরগাছিয়া গ্রামে নানাবাড়িতে মায়ের কবরের পাশে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
শনিবার বিকেলে মিটফোর্ট রোডের রজনী বোস লেনে ভাঙারিপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, গলিতে শতাধিক ভাঙারির দোকান। বেশ কিছু দোকান খুললেও নেই তেমন কর্মচাঞ্চল্য। দোকানি ও কর্মচারীরা অনেকে বসে আছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসায়ী সোহাগ খুন হওয়ার পর ভাঙারিপট্টিতে আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য নেই। আগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটত ব্যবসায়ীদের। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর তিন দিন ধরে লোকজন কম আসছে। ব্যবসায়ীরাও কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না।
নিহত সোহাগের সোহানা মেটালের পাশের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুই দিন ধরে ব্যবসা কিছুটা স্থবির হয়ে আছে। বেচাকেনা কম। লোকজনও আসছে না। যাঁরা আসতেছেন, অধিকাংশই বিভিন্ন গণমাধ্যমের লোকজন; ঘটনা জানতে আসছেন।’
মার্কেটের আরেক অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা মালামাল বেচাকেনার বাইরে ভাত খাওয়ার সময় পেতাম না। কিন্তু এই ঘটনার পর এখন তেমন কাজ নেই। অল্প অল্প বেচাকেনা চলে। ঘটনার পর অনেকে আতঙ্কিত।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, সোহাগ হত্যায় জড়িত মাহমুদাল হাসান মহিন চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। দু-তিন বছর ধরে তিনি যুবদলের রাজনীতি করছেন। গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর মা তাহমিনা মিটফোর্ড হাসপাতালের কর্মী। সরোয়ার হোসেন টিটু চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক সদস্য। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নের অনুসারী। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রবিউল কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
সাবাহ করিম লাকি ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। অপু দাস চকবাজার থানা ছাত্রদল দলের সদস্যসচিব। মহিন, অপু, টিটুরা একসঙ্গে চলতেন। তাঁরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। কয়েক মাস আগে ব্যবসা নিয়ে তাঁদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলেও গত কোরবানির ঈদের আগে তা মীমাংসা হয়। তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতেন। এই নিয়ে ব্যবসায়ীরাও কিছুটা বিরক্ত ছিলেন। মহিন বিএনপির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দীন আহম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী সাবেক কমিশনার নাসিমা আক্তার কল্পনা, যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইসহাক সরকার ও হামিদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিত।
ব্যবসায়ী সূত্র জানান, সোহাগ ১০-১২ বছর ধরে ভাঙারি গলিতে ব্যবসা করতেন। ভাঙারির ব্যবসার আড়ালে এ দোকানে অ্যালুমিনিয়ামের চোরাই তার বেচাকেনা হতো। এতে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার ব্যবসা হতো তার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলটির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যান। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এই কোটি টাকার ব্যবসায় ভাগ বসাতেই তাঁর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় মহিন, অপু ও টিটুর।
এ ছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট দেখভাল করতেন নান্নু। মহিনদের ছত্রচ্ছায়ায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নান্নু। আর হত্যায় জড়িত বড় মনির এলাকায় পরোটা মনির নামেও পরিচিত বলে জানা যায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে সোহাগের দোকানে ৮-১০টি মোটরসাইকেলে করে লোক এসে তাঁকে মারধর শুরু করে। মারতে মারতে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাহমুদুল হাসান মহিনের নেতৃত্বে সোহাগের ওপর হামলা চালানো হয়। সোহাগের গায়ে ইট ও পাথর মারেন লম্বা মনির ও আলমগীর। তাঁর শরীরের ওপর লাফালাফি করেন ছোট মনির।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার নিহত সোহাগের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। হত্যায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব। এই নিয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে পুলিশ ও র্যাব। শনিবার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দিন বলেন, সেখানে একটি ভাঙারি দোকানে কারা ব্যবসা করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং যাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁরা পরস্পর সম্পর্কিত। তাঁরা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তাঁরা নিজেদের মতো ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হন এবং এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার
এই হত্যাকাণ্ডে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নাম আসা পাঁচজনকে গত শুক্রবার নিজেদের সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না অভিযোগ করেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং মামলার এজাহার থেকে মূল তিন আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। একই বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও প্রশ্ন তোলেন।
স্ত্রী-সন্তানের আহাজারি
গতকাল আহাজারি করতে করতে স্বামীর কবরের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছেন লাকী আক্তার। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি, আর প্রলাপ বকছিলেন। কান্নায় ভেঙে যাওয়া কণ্ঠে লাকী আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীরে মারতাছে, আর হাজার হাজার লোক চেয়ে চেয়ে দেখল। কেউ এসে একবারও ওই উন্মাদ খুনিদের থামাইল না। সে পাঞ্জাবি পইরা বের হইছিল। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ওরা আমার স্বামীর বুকের ওপর উঠে নৃত্য করেছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? দুইটা অবুঝ শিশু; ওদের কীভাবে মানুষ করব। এই নির্মমতার কি কোনো বিচার করবে এই দেশের মানুষ?
লাকী আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। আর এ কারণেই নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছে তাকে।’
শোকে যেন পাথর হয়ে গেছে সোহাগের দুই শিশুসন্তান। চোখে তীব্র ক্ষোভ ও বুকভরা সাহস নিয়ে তারা পিতৃহত্যার বিচার চেয়েছে দেশবাসীর কাছে।
নিহত সোহাগের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সোহান (১১) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ওরা এতিম বানাইয়া ফালাইছে। আমরা কোথায় থাকব? আমার বাবাকে কী নিষ্ঠুরভাবে পাথর দিয়া মারছে। এই হত্যার বিচার চাই আমরা।’ এটুকু বলেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
এ সময় সোহাগের বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহানা (১৪) বলেন, ‘আমার বাবাকে ব্যবসার জন্য মেরে ফেলেছে। আমার বাবার কাছে হত্যাকারীরা টাকা চাইছে। আমার বাবা বলেছে, আমি কষ্ট করে রোজগার করি আমার সন্তানদের জন্য। তোদের কেন টাকা দিব। আর এ জন্যই আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে। এই নরপিশাচদের ফাঁসি চাই।’
পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৪৩) হত্যার ঘটনার পর স্থবির হয়ে পড়েছে সেখানকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভাঙারিপট্টির ব্যবসায়ীরা।
কোটি টাকার ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সোহাগকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। আসামিদের মধ্যে টিটন গাজীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াস রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে এই মামলার আরেক আসামি তারেক রহমান রবিন অস্ত্র মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
দুপুরের পর দুই আসামিকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন। তিনি টিটন গাজীর ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে রবিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আসামি টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে রবিনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত বুধবার সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। নিহত সোহাগ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকা থেকে নিহত লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের মরদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনেরা। পরে সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরের বান্দরগাছিয়া গ্রামে নানাবাড়িতে মায়ের কবরের পাশে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
শনিবার বিকেলে মিটফোর্ট রোডের রজনী বোস লেনে ভাঙারিপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, গলিতে শতাধিক ভাঙারির দোকান। বেশ কিছু দোকান খুললেও নেই তেমন কর্মচাঞ্চল্য। দোকানি ও কর্মচারীরা অনেকে বসে আছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসায়ী সোহাগ খুন হওয়ার পর ভাঙারিপট্টিতে আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য নেই। আগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটত ব্যবসায়ীদের। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর তিন দিন ধরে লোকজন কম আসছে। ব্যবসায়ীরাও কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না।
নিহত সোহাগের সোহানা মেটালের পাশের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুই দিন ধরে ব্যবসা কিছুটা স্থবির হয়ে আছে। বেচাকেনা কম। লোকজনও আসছে না। যাঁরা আসতেছেন, অধিকাংশই বিভিন্ন গণমাধ্যমের লোকজন; ঘটনা জানতে আসছেন।’
মার্কেটের আরেক অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা মালামাল বেচাকেনার বাইরে ভাত খাওয়ার সময় পেতাম না। কিন্তু এই ঘটনার পর এখন তেমন কাজ নেই। অল্প অল্প বেচাকেনা চলে। ঘটনার পর অনেকে আতঙ্কিত।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, সোহাগ হত্যায় জড়িত মাহমুদাল হাসান মহিন চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। দু-তিন বছর ধরে তিনি যুবদলের রাজনীতি করছেন। গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর মা তাহমিনা মিটফোর্ড হাসপাতালের কর্মী। সরোয়ার হোসেন টিটু চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক সদস্য। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নের অনুসারী। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রবিউল কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
সাবাহ করিম লাকি ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। অপু দাস চকবাজার থানা ছাত্রদল দলের সদস্যসচিব। মহিন, অপু, টিটুরা একসঙ্গে চলতেন। তাঁরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। কয়েক মাস আগে ব্যবসা নিয়ে তাঁদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলেও গত কোরবানির ঈদের আগে তা মীমাংসা হয়। তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতেন। এই নিয়ে ব্যবসায়ীরাও কিছুটা বিরক্ত ছিলেন। মহিন বিএনপির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দীন আহম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী সাবেক কমিশনার নাসিমা আক্তার কল্পনা, যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইসহাক সরকার ও হামিদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিত।
ব্যবসায়ী সূত্র জানান, সোহাগ ১০-১২ বছর ধরে ভাঙারি গলিতে ব্যবসা করতেন। ভাঙারির ব্যবসার আড়ালে এ দোকানে অ্যালুমিনিয়ামের চোরাই তার বেচাকেনা হতো। এতে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার ব্যবসা হতো তার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলটির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যান। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এই কোটি টাকার ব্যবসায় ভাগ বসাতেই তাঁর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় মহিন, অপু ও টিটুর।
এ ছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট দেখভাল করতেন নান্নু। মহিনদের ছত্রচ্ছায়ায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নান্নু। আর হত্যায় জড়িত বড় মনির এলাকায় পরোটা মনির নামেও পরিচিত বলে জানা যায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে সোহাগের দোকানে ৮-১০টি মোটরসাইকেলে করে লোক এসে তাঁকে মারধর শুরু করে। মারতে মারতে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাহমুদুল হাসান মহিনের নেতৃত্বে সোহাগের ওপর হামলা চালানো হয়। সোহাগের গায়ে ইট ও পাথর মারেন লম্বা মনির ও আলমগীর। তাঁর শরীরের ওপর লাফালাফি করেন ছোট মনির।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার নিহত সোহাগের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। হত্যায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব। এই নিয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে পুলিশ ও র্যাব। শনিবার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দিন বলেন, সেখানে একটি ভাঙারি দোকানে কারা ব্যবসা করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং যাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁরা পরস্পর সম্পর্কিত। তাঁরা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তাঁরা নিজেদের মতো ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হন এবং এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার
এই হত্যাকাণ্ডে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নাম আসা পাঁচজনকে গত শুক্রবার নিজেদের সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না অভিযোগ করেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং মামলার এজাহার থেকে মূল তিন আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। একই বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও প্রশ্ন তোলেন।
স্ত্রী-সন্তানের আহাজারি
গতকাল আহাজারি করতে করতে স্বামীর কবরের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছেন লাকী আক্তার। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি, আর প্রলাপ বকছিলেন। কান্নায় ভেঙে যাওয়া কণ্ঠে লাকী আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীরে মারতাছে, আর হাজার হাজার লোক চেয়ে চেয়ে দেখল। কেউ এসে একবারও ওই উন্মাদ খুনিদের থামাইল না। সে পাঞ্জাবি পইরা বের হইছিল। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ওরা আমার স্বামীর বুকের ওপর উঠে নৃত্য করেছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? দুইটা অবুঝ শিশু; ওদের কীভাবে মানুষ করব। এই নির্মমতার কি কোনো বিচার করবে এই দেশের মানুষ?
লাকী আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। আর এ কারণেই নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছে তাকে।’
শোকে যেন পাথর হয়ে গেছে সোহাগের দুই শিশুসন্তান। চোখে তীব্র ক্ষোভ ও বুকভরা সাহস নিয়ে তারা পিতৃহত্যার বিচার চেয়েছে দেশবাসীর কাছে।
নিহত সোহাগের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সোহান (১১) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ওরা এতিম বানাইয়া ফালাইছে। আমরা কোথায় থাকব? আমার বাবাকে কী নিষ্ঠুরভাবে পাথর দিয়া মারছে। এই হত্যার বিচার চাই আমরা।’ এটুকু বলেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
এ সময় সোহাগের বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহানা (১৪) বলেন, ‘আমার বাবাকে ব্যবসার জন্য মেরে ফেলেছে। আমার বাবার কাছে হত্যাকারীরা টাকা চাইছে। আমার বাবা বলেছে, আমি কষ্ট করে রোজগার করি আমার সন্তানদের জন্য। তোদের কেন টাকা দিব। আর এ জন্যই আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে। এই নরপিশাচদের ফাঁসি চাই।’
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে—এই পাঁচ মাসে রাজধানী ঢাকায় খুন, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মতো অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত বছরের (২০২৪) একই সময়ের তুলনায় মোট অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮২.৫ শতাংশ বেশি। পুলিশ সদর দপ্তরের...
৪ ঘণ্টা আগেচুয়াডাঙ্গার জীবননগরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের টিআর-কাবিখা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মির্জা হাকিমুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ২০ শতাংশ অর্থ অফিস খরচের নাম করে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
৪ ঘণ্টা আগেগ্রামীণ সড়কের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কংক্রিটের সেতু। দুই প্রান্তে ঝোপজঙ্গল। সেতুতে যানবাহন ওঠানোর জন্য নেই কোনো সংযোগ সড়ক। মাটির সরু পথে কোনো রকম সেতুতে ওঠেন পথচারীরা। সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় গ্রামবাসীকে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে হয়।
৫ ঘণ্টা আগেছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর চলে যাওয়ার খবরে সারা দেশে রাজপথে নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সর্বস্তরের মানুষ। সারা দেশের মতো সেদিন গাজীপুরেও বিজয় মিছিলে অংশ নেন স্থানীয়রা। শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ২ নম্বর সিএনবি এলাকায় মিছিলে...
৫ ঘণ্টা আগে