জাহিদ হাসান, যশোর

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
জাহিদ হাসান, যশোর

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। বাড়ির গা ঘেঁষেই সাদা রঙের একতলা ভবন। ভেতরে ভাঙচুর ও আগুনের ক্ষতচিহ্ন। এ ভবনটির মালিকও শাহীন। এটি তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।
গত বুধবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাঙা ও পোড়া বাড়িটি দেখছিলেন। তাঁর কাছে যেতেই বলে উঠলেন, ‘কয়েক দিন আগেও এখানে কত ক্ষমতা, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হতো। চাকলাদারের কথায় কতজনের মায়ের কোল খালি হয়েছে! আর এখন বাড়িতে কেউ নেই। হাহাকার করছে। সবই সৃষ্টিকর্তার খেল!’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট শাহীনের ওই বাড়ি ও পাশের অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁকে আর যশোরে দেখা যায়নি। শাহীন চাকলাদার গা ঢাকা দিলেও যশোরবাসীর কাছে তিনি আতঙ্কের নাম। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে হঠাৎ আগন্তুক শাহীন
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার নিয়মিত পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। হঠাৎ ২০০১ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শাহীন চাকলাদার। এর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। এরপর ২০২০ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেশবপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কারণে তিনি হারেন বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
এই পরাজয়ের আগে যশোরের সবকিছুতে একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন শাহীন। জেলায় ২০০৯ থেকেই শুরু শাহীন চাকলাদারের একক আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। তাঁর এই পথে যাঁরা বাধা হয়েছিলেন তাঁদের সরাতে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে শাহীন চাকলাদার নিজেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারে পরিণত হন। তিনি নিজেও সব সময় সন্ত্রাসী-আতঙ্কে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরা এবং চলাফেরার ধরন দেখেই এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য সরকার অনুমোদিত গানম্যান ছিল তাঁর। এর বাইরেও তিনি যখন চলাফেরা করতেন, তাঁর আগে-পিছে গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বহর দেখা যেত।
‘অবৈধ’ সম্পদের পাহাড়
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শাহীন চাকলাদার অবৈধভাবে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হন। সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহীন শহরের কাজিপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির বাইরেও বহু স্থানে বানিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা হোটেল, কাঁঠালতলায় অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি। কিনেছেন যশোরের ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। আরবপুর মোড়ে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি, বিমান অফিসের পাশে রয়েছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তাঁরই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রলপাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার কলাবাগান ও মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, আত্মীয়স্বজনের নামেও দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন শাহীন। সম্পত্তি গড়া ও আধিপত্য বিস্তারে অন্যকে দমন করে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তারে তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। জেলার রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব ক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে তিনি গড়েন পৃথক বাহিনী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা সবাই গা ঢাকা দেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আনোয়ারা বেগম নামের এক স্কুলশিক্ষিকা শহরের চিত্রা মোড়ে তাঁর জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন শাহীন চাকলাদারের কাছে। একপর্যায়ে কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি থেকে আগের দখলদারের পাশাপাশি ওই শিক্ষিকাকেও উচ্ছেদ করে নিজেই দখল করে নেন শাহীন চাকলাদার। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’; যা জুয়া ও বড় বড় অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামের এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামের এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলামে চাকলাদারের লোকজন ছাড়া কাউকে ভিড়তে দেওয়া হতো না। যশোরের ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকেরা শাহীনের লোকজনকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। এমনকি কোচিং সেন্টারও তাঁদের চাঁদাবাজির বাইরে ছিল না। শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ মুড়লি, চাঁচড়া চেকপোস্ট, পালবাড়ী, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও মণিহারসহ মূল শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন চাকলাদারের ক্যাডাররা। এমনকি ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন।
যশোরের সব সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রিত হতো শাহীন চাকলাদারের বাড়ি কাঁঠালতলা থেকে। চাকলাদারের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজী সুমন, মোস্তফা, সন্তোষ দত্ত, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন, চূড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, মশিয়ার রহমান সাগর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকলাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর বাহিনী খুনোখুনিতেও ছিল বেপরোয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে বহু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।তাঁর বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) আসামি। শাহীন চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সমাবেশে বিরোধী রাজনৈতিক মত-পথের লোকজনকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাৎ-কর্মীরা বরাবরই তাঁর কাছে ছিলেন উপেক্ষিত।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের দুটি ছাত্রাবাস ছিল শাহীন চাকলাদারের ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখান থেকে শহরের সব মেস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। শিক্ষার্থীদের শাহীন চাকলাদারের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হতো। ছাত্রলীগের নামধারীরা নিয়ন্ত্রণ করত সব ক্যাম্পাস।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনও চলতে বাধ্য হতো তাঁদের ইশারায়। কলেজের ৪টি পুকুর চাকলাদারের অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও সাবেক সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল দখল করে বিনা ইজারায় মাছ চাষের ব্যবসা করেছেন।
কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। সদরে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই মূলত দুজনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ছিল। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড শাহীন চাকলাদারকে প্রার্থী করে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন বছরের মেয়াদে কেশবপুরের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মশিয়ুর রহমান ১৯ জনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৬৪ লাখ টাকা দিতে অঙ্গীকারনামা দেন।
সেই অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেছেন, ‘কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিতে নজরুল ইসলামকে এমপিওভুক্ত করাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকীর কাছে দিয়েছেন তিনি।’ এটি গত তিন বছরের নিয়োগ-বাণিজ্যের একটি প্রমাণ। এ ব্যাপারে শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, তিনি কোনো টাকা মশিয়ুর রহমানের কাছ থেকে নেননি। মশিয়ুর রহমান সরাসরি শাহীন চাকলাদারের কাছে টাকা দিয়েছেন।
শাহীন কেশবপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কখনো বসেননি। তিনি পৌরসভার মেয়রের কক্ষে বসতেন। এ বিষয়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, শেষ তিন বছরে দলের সঙ্গে শাহীন চাকলাদারের সম্পর্ক ছিল অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মতো। তাঁর কথাই ছিল শেষকথা।
এ ছাড়া সরকারি কাবিখা, কাবিটাসহ সব প্রকল্প সম্পন্ন করতেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ক্ষমতার দাপটে তিনি একের পর এক দখল করতে থাকেন সেখানকার সব মাছের ঘের। তাঁর অপকর্মে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরই ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বয়সে তরুণ আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন শাহীন।
শাহীন চাকলাদার দেশে না বিদেশে, এ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য মিলছে। কেউ বলছেন, তাঁর ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর মাধ্যমে তিনি পুটখালী সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউবা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ভারতে যাওয়ার কথা প্রচার করে যশোরেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ শহরে বসেই এখনো সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শাহীন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস অ্যাপেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, শাহীন দানবীয় রাজনীতি করেছেন, যশোরবাসীর আতঙ্কের নাম ছিল শাহীন চাকলাদার। যশোর সন্ত্রাসীর জনপদে রূপ নেয় তাঁর হাত ধরে। তাঁর বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। শহরের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তাঁর এই সম্পত্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তিনি এখন এ শহরে না থাকায় মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত সময়ে নির্যাতিনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
১৫ মিনিট আগে
আহত সেনা কর্মকর্তার বড় বোন শামীমা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, সন্ত্রাসী হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে খালেকুজ্জামানের বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারে করে তাঁকে আবি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
১৮ মিনিট আগে
ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি একে একে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি কার্যত আশ্রয়হীন। একসময় যাঁর নিজের জমি ছিল, আজ তিনি অন্যের দেওয়া সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন।
২১ মিনিট আগে
খুলনার পূর্ব রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাগর শেখ (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা চৌরাস্তা সিএনজি স্টেশনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক গ্রিন বাংলা আবাসিকের পেছনের বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ।
২৪ মিনিট আগেপঞ্চগড় প্রতিনিধি

উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার, যা শীতের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশাহীন ভোরে সূর্যের ঝলমলে আলোয় প্রকৃতি স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। রোদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্যও লক্ষ্য করা গেছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের তথ্যে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রায় ওঠানামা দেখা গেছে। আজ সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার ও শনিবার ৯ দশমিক ৩, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫, বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৯, বুধবার ও মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭ এবং আগের সোমবার ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকাল রোববার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কয়েক দিনে জেলার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। রাত ও ভোরে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের দাপট বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার, যা শীতের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশাহীন ভোরে সূর্যের ঝলমলে আলোয় প্রকৃতি স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। রোদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্যও লক্ষ্য করা গেছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের তথ্যে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রায় ওঠানামা দেখা গেছে। আজ সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার ও শনিবার ৯ দশমিক ৩, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫, বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৯, বুধবার ও মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭ এবং আগের সোমবার ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকাল রোববার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কয়েক দিনে জেলার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। রাত ও ভোরে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের দাপট বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
আহত সেনা কর্মকর্তার বড় বোন শামীমা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, সন্ত্রাসী হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে খালেকুজ্জামানের বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারে করে তাঁকে আবি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
১৮ মিনিট আগে
ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি একে একে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি কার্যত আশ্রয়হীন। একসময় যাঁর নিজের জমি ছিল, আজ তিনি অন্যের দেওয়া সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন।
২১ মিনিট আগে
খুলনার পূর্ব রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাগর শেখ (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা চৌরাস্তা সিএনজি স্টেশনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক গ্রিন বাংলা আবাসিকের পেছনের বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ।
২৪ মিনিট আগেকুষ্টিয়া প্রতিনিধি

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসী হামলায় আহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল খালেকুজ্জামানের পরিবার দিন কাটাচ্ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ পাড়ায়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন। এর আগে তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার (সিও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ছবি প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পারে পরিবার। এর পর থেকেই স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
আহত সেনা কর্মকর্তার বড় বোন শামীমা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, সন্ত্রাসী হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে খালেকুজ্জামানের বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারে করে তাঁকে আবি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। পরিবারের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাঁর বাবা খন্দকার আক্তারুজ্জামান (মৃত)। পরিবারের সদস্যরা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করেন।
রোববার বিকেল ৪টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ পাড়ায় খালেকুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় পাশের বাড়িতে বসবাসরত তাঁর চাচা ও খালাতো বোনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, খালেকুজ্জামানের মা বর্তমানে শহরের গোশালা রোড এলাকায় থাকেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। মোবাইল ফোনে শুধু জানান, ছেলের আহত হওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন।
খালেকুজ্জামানের খালাতো বোন গুলশান আরা হাসান বলেন, ‘খালেকুজ্জামান আমাদের সামনে মানুষ হয়েছে। খুব ভালো ছেলে। শুনেছি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দোয়া করি, সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’
চাচা খন্দকার আসাদুজ্জামান খোকন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘খালেকুজ্জামান আমার মেজো ভাইয়ের ছেলে। শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। সেখানে তার কয়েকজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি। সে নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, খালেকুজ্জামান বিবাহিত এবং তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসী হামলায় আহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল খালেকুজ্জামানের পরিবার দিন কাটাচ্ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ পাড়ায়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন। এর আগে তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার (সিও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ছবি প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পারে পরিবার। এর পর থেকেই স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
আহত সেনা কর্মকর্তার বড় বোন শামীমা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, সন্ত্রাসী হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে খালেকুজ্জামানের বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারে করে তাঁকে আবি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। পরিবারের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাঁর বাবা খন্দকার আক্তারুজ্জামান (মৃত)। পরিবারের সদস্যরা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করেন।
রোববার বিকেল ৪টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ পাড়ায় খালেকুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় পাশের বাড়িতে বসবাসরত তাঁর চাচা ও খালাতো বোনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, খালেকুজ্জামানের মা বর্তমানে শহরের গোশালা রোড এলাকায় থাকেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। মোবাইল ফোনে শুধু জানান, ছেলের আহত হওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন।
খালেকুজ্জামানের খালাতো বোন গুলশান আরা হাসান বলেন, ‘খালেকুজ্জামান আমাদের সামনে মানুষ হয়েছে। খুব ভালো ছেলে। শুনেছি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দোয়া করি, সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’
চাচা খন্দকার আসাদুজ্জামান খোকন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘খালেকুজ্জামান আমার মেজো ভাইয়ের ছেলে। শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। সেখানে তার কয়েকজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি। সে নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, খালেকুজ্জামান বিবাহিত এবং তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
১৫ মিনিট আগে
ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি একে একে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি কার্যত আশ্রয়হীন। একসময় যাঁর নিজের জমি ছিল, আজ তিনি অন্যের দেওয়া সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন।
২১ মিনিট আগে
খুলনার পূর্ব রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাগর শেখ (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা চৌরাস্তা সিএনজি স্টেশনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক গ্রিন বাংলা আবাসিকের পেছনের বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ।
২৪ মিনিট আগেআব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ

সাদা দাড়িতে অর্ধেক মেহেদি, কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ। ডান পায়ে ফোঁড়ার// কারণে বাঁধা ব্যান্ডেজ। কাঠের টুলে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই—মাত্র এক বছর আগেও তিনি ছিলেন সাড়ে চার বিঘা আবাদি জমির মালিক।
৬৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের নাম আব্দুল রাজ্জাক। স্ত্রী মর্জিনা বেগমের বয়স ৫৫। চার ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে একসময় ভালোই চলছিল তাঁদের সংসার। জমিতে বছরে বিভিন্ন সময়ে গম, ভুট্টা, খেসারি, কালাই ও বাদামের চাষ হতো। পরিশ্রম করেই চলত জীবন। তবে হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে দেয় যমুনা নদীর ভাঙন।
ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি একে একে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি কার্যত আশ্রয়হীন। একসময় যাঁর নিজের জমি ছিল, আজ তিনি অন্যের দেওয়া সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন। বন, বস্তার চাটাই আর পলিথিনে মোড়ানো ছোট একটি ঘরই তাঁদের বর্তমান ঠিকানা। আব্দুল রাজ্জাক সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়নের দোরতা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মৃত রহিজ তালুকদারের ছেলে।
শনিবার দুপুর গড়িয়ে বিকেলে সিরাজগঞ্জ ক্রসবার এলাকায় প্লাস্টিকের টুলে বসে কথা বলছিলেন আব্দুল রাজ্জাক। তিনি জানান, তাঁর দাদার প্রায় ২৪ বিঘা জমি ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি পান সাড়ে চার বিঘা। গত বছরেও সেই জমিতে গম, ভুট্টা, কালাইসহ নানা ফসল আবাদ করেছিলেন। ‘বুড়া-বুড়ির ভালোই চলছিল,’ বলেন তিনি।
সন্তানদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কিছুক্ষণ নীরব থাকেন আব্দুল রাজ্জাক। এরপর ধীর কণ্ঠে বলেন, ‘ওদের নিজেদেরই খুব কষ্ট। আমাদের দেখবে কীভাবে?’
বর্তমানে ফুফাতো ভাইয়ের জমির ওপর কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। শীত এলে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। আয়ের একমাত্র সম্বল পাঁচটি গরু। তবে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না তিনি।
আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘তোমার চাচি যমুনার চরে গিয়ে গরুর জন্য ঘাস কেটে আনে। আর অন্যদের সামান্য সহযোগিতা আর মেয়েরা মাঝে মাঝে যা দেয়, তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে।’
কথার একপর্যায়ে তাঁর কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। শেষবারের মতো বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ একটা ঘর আর মাসে মাসে একটু খাবার বা কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে সারা জীবন দোয়া করতাম।’
যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য জীবনের ভিড়ে আব্দুল রাজ্জাক ও মর্জিনা বেগমের গল্পটি শুধু একটি উদাহরণ—নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের নীরব দীর্ঘশ্বাসের গল্প।

সাদা দাড়িতে অর্ধেক মেহেদি, কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ। ডান পায়ে ফোঁড়ার// কারণে বাঁধা ব্যান্ডেজ। কাঠের টুলে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই—মাত্র এক বছর আগেও তিনি ছিলেন সাড়ে চার বিঘা আবাদি জমির মালিক।
৬৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের নাম আব্দুল রাজ্জাক। স্ত্রী মর্জিনা বেগমের বয়স ৫৫। চার ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে একসময় ভালোই চলছিল তাঁদের সংসার। জমিতে বছরে বিভিন্ন সময়ে গম, ভুট্টা, খেসারি, কালাই ও বাদামের চাষ হতো। পরিশ্রম করেই চলত জীবন। তবে হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে দেয় যমুনা নদীর ভাঙন।
ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি একে একে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি কার্যত আশ্রয়হীন। একসময় যাঁর নিজের জমি ছিল, আজ তিনি অন্যের দেওয়া সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন। বন, বস্তার চাটাই আর পলিথিনে মোড়ানো ছোট একটি ঘরই তাঁদের বর্তমান ঠিকানা। আব্দুল রাজ্জাক সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়নের দোরতা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মৃত রহিজ তালুকদারের ছেলে।
শনিবার দুপুর গড়িয়ে বিকেলে সিরাজগঞ্জ ক্রসবার এলাকায় প্লাস্টিকের টুলে বসে কথা বলছিলেন আব্দুল রাজ্জাক। তিনি জানান, তাঁর দাদার প্রায় ২৪ বিঘা জমি ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি পান সাড়ে চার বিঘা। গত বছরেও সেই জমিতে গম, ভুট্টা, কালাইসহ নানা ফসল আবাদ করেছিলেন। ‘বুড়া-বুড়ির ভালোই চলছিল,’ বলেন তিনি।
সন্তানদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কিছুক্ষণ নীরব থাকেন আব্দুল রাজ্জাক। এরপর ধীর কণ্ঠে বলেন, ‘ওদের নিজেদেরই খুব কষ্ট। আমাদের দেখবে কীভাবে?’
বর্তমানে ফুফাতো ভাইয়ের জমির ওপর কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। শীত এলে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। আয়ের একমাত্র সম্বল পাঁচটি গরু। তবে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না তিনি।
আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘তোমার চাচি যমুনার চরে গিয়ে গরুর জন্য ঘাস কেটে আনে। আর অন্যদের সামান্য সহযোগিতা আর মেয়েরা মাঝে মাঝে যা দেয়, তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে।’
কথার একপর্যায়ে তাঁর কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। শেষবারের মতো বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ একটা ঘর আর মাসে মাসে একটু খাবার বা কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে সারা জীবন দোয়া করতাম।’
যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য জীবনের ভিড়ে আব্দুল রাজ্জাক ও মর্জিনা বেগমের গল্পটি শুধু একটি উদাহরণ—নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের নীরব দীর্ঘশ্বাসের গল্প।

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
১৫ মিনিট আগে
আহত সেনা কর্মকর্তার বড় বোন শামীমা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, সন্ত্রাসী হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে খালেকুজ্জামানের বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারে করে তাঁকে আবি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
১৮ মিনিট আগে
খুলনার পূর্ব রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাগর শেখ (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা চৌরাস্তা সিএনজি স্টেশনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক গ্রিন বাংলা আবাসিকের পেছনের বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ।
২৪ মিনিট আগেখুলনা প্রতিনিধি

খুলনার পূর্ব রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাগর শেখ (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা চৌরাস্তা সিএনজি স্টেশনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক গ্রিন বাংলা আবাসিকের পেছনের বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাগর বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে রাত ১১টায় কয়েকজন যুবক তার গতি রোধ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। একটি গুলি তার মাথায় এবং অপরটি তার হাঁটুতে লাগে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রূপসা থানার এএসআই গৌতম বলেন, গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা আ. রহমান রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। পরে ৯৯৯ থেকে আমাদের ফোন দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়।
রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ বলেন, ‘রাতে জাপুসা এলাকায় ডিউটি করছিলাম। থানা থেকে ফোন আসলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারলাম তারা এখানে জায়গা কিনে নতুন বাড়ি করেছে।’ তবে কারা এবং কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রকৃত কারণ তিনি বলতে পারেনি।
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. রাজ্জাক মীর বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। খুনিদের গ্রেপ্তারে আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।’

খুলনার পূর্ব রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাগর শেখ (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা চৌরাস্তা সিএনজি স্টেশনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক গ্রিন বাংলা আবাসিকের পেছনের বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাগর বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে রাত ১১টায় কয়েকজন যুবক তার গতি রোধ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। একটি গুলি তার মাথায় এবং অপরটি তার হাঁটুতে লাগে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রূপসা থানার এএসআই গৌতম বলেন, গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা আ. রহমান রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। পরে ৯৯৯ থেকে আমাদের ফোন দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়।
রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ বলেন, ‘রাতে জাপুসা এলাকায় ডিউটি করছিলাম। থানা থেকে ফোন আসলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারলাম তারা এখানে জায়গা কিনে নতুন বাড়ি করেছে।’ তবে কারা এবং কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রকৃত কারণ তিনি বলতে পারেনি।
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. রাজ্জাক মীর বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। খুনিদের গ্রেপ্তারে আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।’

যশোর শহরের কাজিপাড়ার কাঁঠালতলা মোড়। এখানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে ভাঙা আর আগুনে পোড়া তিনতলা বাড়ি। তালাবদ্ধ এ বাড়িটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
২১ অক্টোবর ২০২৪
উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
১৫ মিনিট আগে
আহত সেনা কর্মকর্তার বড় বোন শামীমা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, সন্ত্রাসী হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে খালেকুজ্জামানের বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারে করে তাঁকে আবি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
১৮ মিনিট আগে
ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি একে একে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি কার্যত আশ্রয়হীন। একসময় যাঁর নিজের জমি ছিল, আজ তিনি অন্যের দেওয়া সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন।
২১ মিনিট আগে